somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডে ট্রিপ টু "আড়িয়াল বিল" ভায়া মাওয়া-ইদ্রাকপুর উইথ "ভ্রমণ বাংলাদেশ"

১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত অক্টোবর-নভেম্বরে রাজাস্থানে লম্বা সলো ট্রিপ দিয়ে আসার পর কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় নাই। আক্ষরিক অর্থে বাসা-অফিস এর বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছিলো না। গত মহররমের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হয় নাই। তাই ১৫ আগস্টের ছুটিতে ভ্রমণ বাংলাদেশ এর দিনব্যাপী একটা ট্যুর এর ঘোষণায় আগ্রহী হয়ে তাদের সাথে যোগ দিলাম। প্রায় ০৬ বছর পর তাদের সাথে ডে লং ট্রিপে গেলাম, করোনা পরবর্তী সময়ে তাদেরও এটা প্রথম ডে লং ট্রিপ ছিল যতদূর জানলাম। মোট জনা পঞ্চাশের দল নিয়ে একদিনের এই ভ্রমণের রুট ছিলো ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ (ইদ্রাকপুর)-মাওয়া ঘাট-আড়িয়াল বিল-ঢাকা। চারটি রিজার্ভ মাইক্রোবাসে করে ভিন্ন ভিন্ন স্থান হতে পিক করে সবাই জড়ো হবে ইদ্রাকপুরে এমনটাই ছিলো পরিকল্পনা।

১৫ আগস্ট সকাল সোয়া সাতটার দিকে বাসা হতে বের হয়ে লালবাগ কেল্লার পশ্চিম পাশে অবস্থিত বিখ্যাত 'মদীনা হোটেল' এর লুচি পরাটা ভাজি দিয়ে নাস্তা করে দলের অন্যদের সাথে 'ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল' এর নিকট হতে গাড়ীতে চড়ে বসলাম যখন ঘড়িতে তখন সকাল ০৮ঃ০৫। এই গাড়ীর নেতৃত্বে ছিলেন ভ্রমণ বাংলাদেশের সভাপতি আরশাদ হোসেন টুটুল ভাই। পথিমধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সন্নিকট হতে আরও তিনজন আমাদের গাড়ীতে চড়ে বসলে আমাদের গাড়ীর সদস্য সংখ্যা হলো ০৯ জনে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে নারায়ণগঞ্জ এর ভেতর দিয়ে ইদ্রাকপুর পৌঁছলাম যখন তখন সকাল সাড়ে নয়টার বেশী, ইদ্রাকপুর দুর্গ'র গেট ওপেন হবে সকাল ১০ঃ০০টায়। পথিমধ্যে নানান জায়গায় ১৫ আগস্ট "শোক দিবস" উপলক্ষ্যে নানান আয়োজন দেখলাম, দুয়েক জায়গায় শোক সভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মিছিলের পেছনে গাড়ী ধীর গতিতেও চললো। আমাদের মাইক্রোবাসই প্রথমে পৌঁছল ইদ্রাকপুর, তখন বাকীরা অন দ্যা ওয়ে'তে। এই ফাঁকে আমরা কয়েকজন মিলে পাশের চৌরাস্তামত জায়গা হতে দুধ মালাই চা খেয়ে নিলাম। দশটার পর টিকেট কেটে ইদ্রাকপুরের ভেতরে প্রবেশ করলাম।









ইদ্রাকপুর কেল্লা মুন্সীগঞ্জ জেলার মুন্সীগন্জ শহরে অবস্থিত একটি মোঘল স্থাপত্য। বাংলার সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে বর্তমানে মুন্সীগন্জ জেলা সদরে তদানীন্তন ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে এই দুর্গটি নির্মান করেন। দুর্গটি নারায়নগন্জের হাজীগন্জ ও সোনাকান্দা দূর্গের চেয়ে আয়তনে কিছুটা ছোট। ৮২ মি. বাই ৭২ মি. আয়তাকার নির্মিত ইটের তৈরি এই দূর্গটি তৎকালীন মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজ আক্রমণের হাত থেকে ঢাকা ও নারায়নগন্জ সহ সমগ্র এলাকাকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়। সুরঙ্গ পথে ঢাকার লালবাগ দুর্গের সাথে এই দুর্গের যোগাযোগ ছিল বলে একটি জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। সুউচ্চ প্রাচীর বিশিষ্ট এই দুর্গের প্রত্যেক কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী। দূর্গাভ্যন্তর থেকে শত্রুর প্রতি গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রাচীরের মধ্যে অসংখ্য চতুষ্কোনাকার ফোঁকর রয়েছে। একমাত্র খিলানাকার দরজাটির অবস্থান উত্তর দিকে। মূল প্রাচীরের পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ৩৩ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উঁচু মঞ্চ রয়েছে। দুর থেকে শত্রুর চলাচল পর্যবেক্ষনের জন্য প্রায় প্রতি দূর্গে এই ব্যবস্থা ছিল। এই মঞ্চকে ঘিরে আর একটি অতিরিক্ত প্রাচীর মূল দেয়ালের সাথে মিলিত হয়েছে। দূর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সূদৃঢ় করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল। মোঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য কীর্তি হিসেবে ইদ্রাকপুর দূর্গটি ১৯০৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।







আধঘন্টা পরে দলের দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটি পৌঁছে গেল ভ্রমণ বাংলাদেশের সেক্রেটারী রবিউল হাসান খান মনার নেতৃত্বে। মনা আমার বাল্যবন্ধু, আগেও বহু লেখার তার কথা এসেছে। কিছু সময় পর আমি আর মনা দূর্গ হতে বের হয়ে বাজার এলাকায় গিয়ে ভ্রমণ বাংলাদেশের পক্ষ হতে সকলের জন্য মিষ্টি আর প্লেইন কেক কিনে নিয়ে এলাম, এর মধ্যে মিষ্টিটা ছিলো খুবই সুস্বাদু। বাকী দুইদল এসে পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা এগারোটার পেড়িয়ে গেল। বহুদিন পরে অনেকের সাথে দেখা হল, কুশল বিনিময় হল, অনেকের সাথে চললো খুনসুটি। সেদিনের আবহাওয়াটা ছিলো খুবই বাজে, ভ্যাপসা গরম, ঘাম হচ্ছিলো খুব। এর মাঝেই বেয়ারা বৃষ্টির দল আকাশ থেকে ঝুপ করে নামা শুরু করলে সবাই দ্রুত গাড়ীতে চড়ে বসলাম, রওনা হলাম মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে।



অর্ধেক পথ পাড়ি দেয়ার পর দেখি সেদিকটায় বৃষ্টি পড়ে নাই। দুপুর দেড়াটার দিকে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে 'নিরালা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে' সবাই ঢুকে গেলাম, এখানেই ছিলো দুপুরের আয়োজন। মাওয়া ঘাটের সিগ্নেচার আইটেম সাদাভাত, ইলিশ ভাঁজা, বেগুণ ভাঁজা, ইলিশের লেজ ভর্তা, ঘন ডাল, সালাদ। পেটপূজো শেষ করে সবাই ফের গাড়ীতে চড়ে বসতে বসতে দুপুর তিনটা ক্রস করে গেল।











মাওয়া ঘাট হতে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিলো "আড়িয়াল বিল", মূলতঃ এদিনের মূল ইভেন্টই ছিলো আড়িয়াল বিলে নৌভ্রমণ। বিকেল সাড়ে চারটার পরপর আমরা পৌঁছে গেলাম শ্রীনগর এর 'গাদিঘাট' এলাকার নৌকা ঘাটে। ব্রীজের নীচ হতে দুটি ইঞ্চিন নৌকা ভাড়া করা হলো আমাদের পঞ্চাশ জনের দলের জন্য। শান্ত বিলের জলে জমে থাকা সবুজ গুল্ম, লতা আর গাছের মাঝ দিয়ে শেষ বিকেলে ঘুরে বেড়ালাম ঘন্টাখানেক সময়, যদিও আরো বেশী সময় থাকা গেলে ভালো হতো। এর মাঝে অনেকে নেমে পড়ল বিলের জলে জলকেলি করতে। সন্ধ্যের আগে আগে নৌকা ফিরে এলো তীরে।



এরপর সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে চা-পাণ, আড্ডা-খুনসুটি চললো কিছুটা সময়। মাগরিবের নামাজের শেষে একে একে সবাই নিজেদের গন্তব্যের গাড়ীতে চড়ে বসলাম ফিরতি যাত্রায়। যান্ত্রিক শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনের অবিরাম ছুটে চলার মাঝে এরকম ডে-ট্রিপ'গুলো টনিকের মত কাজ করে, মানসিক প্রশান্তির খোরাক যোগায়। রাত আটটায় পলাশী বাজারের কাছে আমাদের গাড়ী হতে নেমে রিকশা নিয়ে বাড়ির পথে যাত্রার মাধ্যমে শেষ হলো এদিনের এই হুট করে বেড়িয়ে পড়া ডে ট্রিপের। ইচ্ছে আছে খুব শীঘ্রই আবারো এরকম ডে-ট্রিপে যাওয়ার। ধন্যবাদ ভ্রমণ বাংলাদেশ টিম'কে।

























সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×