somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমলগঞ্জের "মনিপুরী রাসমেলা" ভ্রমণ

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেদিন সবে মাত্র সপ্তাহখানেকের একটা লম্বা ভ্রমণ শেষ করে বাসায় ফিরে একটু আয়েশি বিশ্রামে কাটিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইকো ট্রাভেলার্স এর স্বত্তাধিকারী আবু বকুর সিদ্দিক ভাই এর ফোন পেলাম, "ভাই শ্রীমংগল যাবেন? রাশমেলা উৎসবের খুব রঙিন একটা আয়োজন হয় সেখানে"। কখন? জানতে চাইলে বললেন, আগামীকাল ভোর ছয়টায়, শাহবাগ থেকে আমাকে পিক করা হবে। ঘড়িতে রাত পৌনে বারোটা, হাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুমানোর জন্য আছে। দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমাতে গেলাম। সাত সকালে উঠে বের হলাম দেশের ভেতরে বছরের দ্বিতীয় ট্রিপে।

গত ছয়দিন, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঘুরে এলাম বান্দারবান-কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন দ্বীপ এ আবু বকর ভাই এবং কিছু ভ্রমণ সাথী এবং তার পরিবারের সাথেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ২০১৫-২০১৮ চার বছরে দেশের ভেতর ০৩/০৪ দিনের ট্রিপ দিয়েছিলাম মাত্র একটা! যেখানে ২০১৩ সালে ছোট বড় মিলে ২৫টা ট্রিপ ছিল!! দেশের ভেতর শেষ বড় ট্রিপ ২০১৬ সালের দিকে, শাহরিয়ার ভাই ওরফে রাজা মশাই আর আমার দেশের ভেতর সবচেয়ে বেশী ভ্রমণের সঙ্গী হাসিব এর সাথে "কুমীরা-সন্দীপ-হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপ-মনপুরা-ঢাকা সদরঘাট" ট্রিপটি (এই পোস্টে সেই ভ্রমণের সকল গল্পের লিংক সংযুক্ত আছে)। সেই অসম্ভব সুন্দর ট্রিপের পর দেশের ভেতর দুয়েকটা ডে লং ট্যুর ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন ট্যুরই দেই নাই! অথচ এই সময়ে ভারতের ১১টি প্রদেশের প্রায় ৫০টি শহরে ভ্রমণ করেছি... গুণিজনেরা আবার না দেশদ্রোহী বলে! :(

শাহবাগ পৌঁছে গেলাম সময়মতই, কিছু সময় পর আবু বকর ভাই চলে এলেন রিজার্ভ মাইক্রোবাস নিয়ে। এবারের ভ্রমণ দল খুবই ছোট, সর্ব সাকুল্যে আমরা সাতজন। রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় গাড়ী ছুটে চললো দ্রুতই ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে। পথে নাস্তা সেরে নিয়ে আমরা বেলা বারোটার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে গেলাম শ্রীমঙ্গল, প্রায় বছর চারেক পর এখানে আসা হলো। শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডে "হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন" এ আমাদের জন্য রুম বুক করাই ছিলো। সুন্দর পরিপাটি নতুন গড়ে ওঠা ভবনে ভালোই ছিলো হোটেলটি। ফ্রেশ হয়ে গল্প করে কিছুটা সময় কাটানোর পর দুপুরে লাঞ্চ শেষে দলনেতা সবাইকে কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিলেন। ঘুমের সাথে চিরশত্রুতার এই বোকা মানুষ কিছুটা সময় বিছানায় গড়াগড়ি করে সময় কাটাতে না পেরে হোটেল হতে বাহির হয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলাম। বিকেলের চা নাস্তা শেষে আমরা সন্ধ্যার আগে আগেই পৌঁছে গেলাম মাধবপুর, কমলগঞ্জ এ। এখানকার শিববাজার জোড়ামন্ডপ এলাকার রাসমেলার আয়োজনই আমাদের আজকের মূল গন্তব্য।











আগে থেকেই বেশ লোক সমাগম ছিলো, সন্ধ্যার পরপর আরো বাড়তে লাগলো। মেলায় নানান পণ্য এবং খাবারের দোকান বসেছে। সেগুলো পেরিয়ে সামনে গিয়ে দেখা মিললো কিছু দূরত্বে তৈরী হওয়া জোড়া মন্ডপ। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজারে জোড়ামণ্ডপে ১৮৫ বছর ধরে মণিপুরীদের রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। এই রাসলীলা উৎসবের ইতিহাস খোঁজ করতে জানা গেল, ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের তৎকালীন মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাস প্রথমবারের মতো এই লীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। এরপর থেকে অগ্রহায়ণ পূর্ণিমা তিথিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাস লীলা পালিত হয়ে আসছে।











মণিপুরে রাসলীলা প্রবর্তনের একটি গল্প প্রচলিত আছে। মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র যখন কাঞ্চিপুর নামের এক অঞ্চলে বাস করতেন; তখন এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, শ্রীকৃষ্ণ নিকটবর্তী ভানুমুখ পাহাড়ে কাঁঠাল গাছ হয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরদিনই রাজা সেই পাহাড়ে গিয়ে কাঁঠাল গাছ খুঁজে পেলেন। গাছটি কেটে রাজধানীতে আনা হলো। রাজধানীর খ্যাতনামা শিল্পীকে রাজা তার স্বপ্নে দেখা কৃষ্ণমূর্তির অনুকরণে কাঠের মূর্তি গড়তে আদেশ দিলেন। এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষেই তিনি ওই বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাসলীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। মেয়ে বিম্বাবতীও সেই রাসে অংশ নেন। তবে এই কাহিনির সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাজা ভাগ্যচন্দ্রই মহারাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস ও ভঙ্গীপারেঙ প্রবর্তন করেন।











আমরা প্রায় রাত বারোটার পরে সেখান হতে রওনা ব্যাক করি হোটেলের দিকে। গভীর রাতে শ্রীমঙ্গল এর চা-বাগান আর লাউয়াছড়া বনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে পূর্নিমার আলোয় সেই ফেরার যাত্রাটা আজও মনে গেঁথে আছে। এর মাঝে মেলা প্রাঙ্গনেই গড়ে ওঠা একটা খাবার হোটেলে আমরা রাতের খাবার সেরে নিয়েছিলাম। হোটেলে ফিরে ঘুমের পালা।








খুবই সংক্ষিপ্ত ট্যুরের শেষ ছিলো নাস্তা শেষে ঘন্টা খানেকের জন্য লাউয়াছড়া অভয়ারণ্যে ঘোরাঘুরি। লাউয়াছড়ায় যতবারই যাই, ভালোই লাগে। বিশেষ করে বনের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইন ধরে হাঁটতে ভালো লাগে। বেলা এগারোটার দিকে আমরা ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়ে বিকেলের মধ্যে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে যাই। আর হুট করে শুরু হওয়া এই ভ্রমণ এর সমাপ্তি। সত্যি বলতে গত রাতের হোটেলে ফেরার জার্নিটা আর সাথে মায়াবী হলদেটে রাসপূর্নিমার পূর্ণ চন্দ্রের শোভা এখনো হৃদয়ের মানসপটে জাগ্রত যেন।



সেই চন্দ্রের একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপঃ


ভ্রমণকালঃ নভেম্বর ২০১৮

























সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬

অন্ধ ভিখারি এবং রাজার গল্প....

এক অন্ধ ভিখারি ভিক্ষা করতে করতে একদিন রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়লো। অন্ধ ভিখারিকে দেখে রাজার মনে দয়া হলো। রাজা মন্ত্রী-কে ডেকে বললেন-
"'এই ভিক্ষুক জন্মান্ধ নন, একে চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রক্তজবা ও গোলাপ

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩৭

ভালোবাসার রূপান্তর

তোমার শহরে তুমি বসে আছো,
রক্তজবা হাতে…
আমার শহরে আমি,
একটি গোলাপের বাগান গড়ি—
লাল রঙে রাঙা, নিঃশব্দে ফুলে ভরে।

তুমি একদিন বলেছিলে,
রক্তজবা মানেই চিরন্তন ভালোবাসা,
তোমার অভিমানে লুকোনো ছিল রাগের আগুন,
তবু তার গভীরে ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আ.লীগের মত বিএনপি কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে

লিখেছেন অপলক , ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫

ক্ষমতায় না বসতেই যা শুরু করেছে বিএনপি, মনে হয় না তারা তাদের যোগ্যতা বা উপযোগিতা ধরে রাখতে পারছে। এত এত করাপশন গত আগস্ট থেকে যে, এমন কোন সেক্টর নাই যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইহাকেই বলে আগবাড়িয়ে মাড়া খাওয়া

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯


শিক্ষিত জঙ্গি মোদী ভোটের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হাসিনার মতো জঙ্গি নাটক সাজায়; দুজনের পার্থক্য হলো হাসিনা নিজদেশের জনগন হত্যা করে নিজদেশের জনগনকেই দোষ দেয় অপর দিকে মোদী নিজদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাসুদ(শাহবাজ ) তোমরা কি আর ভালো হবা না ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯


বাংলাদেশপন্থীরা ভারত ও পাকিস্তানপন্থীদের হাউকাউতে অতিষ্ঠ। ভারত ও ভাদা রা মনে করে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিলো। ভারত বাংলাদেশ কে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। গুগলে সার্চ করলেও এমন কিছুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×