somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত - বাংলাদেশের পর্যটনের এক লুকানো রত্ন

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের আমার দেখা সবচেয়ে সিনিক বিউটি এবং ল্যাণ্ডস্কেপ ভিউ সম্পন্ন সমুদ্র সৈকত "শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত"। কক্সবাজার আর ইনানি সৈকতের ভীড়, ঘোলাটে পানি আর অন্যদিকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সীমাবদ্ধ অনুমতি এবং দীর্ঘ সমুদ্রপথ যাত্রা'র বিপরীতে বিকল্প হতে পারে এই শাহপরীর দ্বীপ এর সমুদ্র সৈকত। নীল আকাশে শুভ্র মেঘদলের আচ্ছাদনের নীচে মায়ানমারের সবুজ পাহাড়ের দেয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীল জলরাশির এই সৈকতের মনোমুগ্ধকর রূপ বিমোহিত করবে যে কাউকে।

শাহপরীর দ্বীপের এই সৈকতকে যদি “বাংলাদেশের লুকানো সমুদ্র-রূপ” বলা হয়, তাতে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই। ভীড়–ঝামেলা, কোলাহল, বাণিজ্যিকতার হাতছানি—এসব থেকে দূরে দাঁড়ানো এই সৈকত যেন একান্ত স্বচ্ছ নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। পর্যটনের প্রস্তাবনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে তিনটি জিনিস স্পষ্ট—প্রকৃতির বিশুদ্ধতা, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটকদের জন্য তুলনাহীন প্রশান্তি। সাথে অষ্টগ্রাম মিঠামাইন এর মতো করে নির্মিত সড়ক যোগাযোগ টেকনাফ এর সাথে দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের।

নীল আকাশের নিচে শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানো ছায়া, তার নিচে গাঢ় নীল সমুদ্র—সবকিছুর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মিয়ানমারের সবুজ পাহাড়শ্রেণীর দীর্ঘ দেয়াল। ঠিক এমন ভিজ্যুয়াল কম্পোজিশন বাংলাদেশে একটাই—শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত। ঢেউয়ের শব্দ এখানে গম্ভীর নয়, বরং সমান ছন্দে ধীরে ধীরে তীরে এসে থামে—এক ধরনের সম্মান প্রদর্শনের মতো। হাঁটতে হাঁটতে যতদূর চোখ যায়, তটে ভীড় নেই, অবাঞ্ছিত শব্দ নেই, শুধু বাতাসে নোনাজলের কোমলতা আর সমুদ্রের আদিম সৌন্দর্য।

যারা কক্সবাজারের অতিরিক্ত মানুষের ভিড়, ঘোলাটে জলরাশি এবং একঘেয়ে বাণিজ্যিকীকরণে ক্লান্ত—তাদের জন্য এটি এক নিঃশব্দ বিকল্প। আর যারা সেন্টমার্টিন যেতে চান কিন্তু যাতায়াতের সীমিত অনুমতি, দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা বা মৌসুমি ঝুঁকির জন্য দ্বিধায়—তাদের কাছে শাহপরীর দ্বীপ একটি বাস্তবসম্মত, সহজ এবং অনন্য সমুদ্রগন্তব্য।

এই সৈকতের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো—এখানে দাঁড়ালে মনে হয় প্রকৃতি যেন সরাসরি দর্শনার্থীর সাথে কথা বলছে। দূরের পাহাড়, মাঝখানের সমুদ্র আর সামনে অবারিত তটরেখা—সব মিলিয়ে এটি এমন এক দৃশ্য যা শুধু দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। বিকেলের মায়াময় আলো, সূর্যাস্তের কমলা আভা আর রাতের নিস্তব্ধতায় একমাত্র সঙ্গী ঢেউয়ের মৃদু শব্দ—শাহপরীর দ্বীপ এমনই এক অভিজ্ঞতা দেয়, যা পর্যটকের উপলব্ধিকে গভীর করে এবং স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে।

বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে এই সৈকতকে নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার—কারণ এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে শান্ত, সবচেয়ে সিনিক এবং সবচেয়ে ফোটোজেনিক সমুদ্রদৃশ্যগুলোর একটি। যে কেউ প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে চান, বিশুদ্ধ প্রশান্তি খুঁজছেন, বা শুধু নীরবে সমুদ্রকে অনুভব করতে চান—তাদের জন্য শাহপরীর দ্বীপই হতে পারে পরবর্তী যাত্রার ঠিকানা।

আসুন দুটো ট্য ট্যুর প্ল্যান–১


প্ল্যান ০১ (২ রাত - ১ দিন)
ওভারনাইট বাস + ফুল ডে শাহপরীর দ্বীপ + নাইট বাসে ঢাকা ফেরা
(সময় কম, বাজেট কন্ট্রোল, কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স কমপ্রেসড)

যাতায়াত সূচি
রাত ৯:০০–১০:০০ → ঢাকা থেকে টেকনাফগামী এসি/নন-এসি বাসে যাত্রা শুরু। ভাড়া ১২০০-২২০০ টাকা।
ভোর ০৭:০০ → টেকনাফ পৌঁছানো
সকাল ০৭:৩০ → ফ্রেশ আপ (লোকাল হোটেল/রেস্ট হাউস – ডে ইউজ)
সকাল ৮:৩০ নাস্তা শেষে টেকনাফ হতে শাহপরীর দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা ইজি বাইক/সিএনজি করে। ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। জনপ্রতি ১০০ টাকা।

ট্যুর আইটেনেরারি (একদিনে)
শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত ধরে হাঁটা, ফটোগ্রাফি
মায়ানমার পাহাড় সংলগ্ন ভিউ পয়েন্ট
স্থানীয় জেলেপাড়া ও সীমান্ত এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য
দুপুরে সি-ফুড লাঞ্চ
বিকেলে আবার টেকনাফ ফেরা এবং টেকনাফ সৈকতে সূর্যাস্ত উপভোগ।

সন্ধ্যা ৮:৩০–৯:০০ → নাইট বাসে ঢাকা রিটার্ন


খাবার
সকালের নাস্তা: টেকনাফ
দুপুরের খাবার: শাহপরীর দ্বীপ (লোকাল রেস্টুরেন্ট)
রাতের খাবার: বাসে ওঠার আগে


সম্ভাব্য খরচ (প্রতি জন)
খাত খরচ (টাকা)
ঢাকা–টেকনাফ–ঢাকা (এসি বাস) ২,৫০০ – ৪,৫০০
লোকাল ট্রান্সপোর্ট ২০০-৫০০
খাবার (৩ বেলা) ৫০০ – ১,০০০
ডে ইউজ রুম/ফ্রেশ আপ ২০০-৫০০
অন্যান্য ১০০-৫০০
মোট ৩,৫০০ – ৭,০০০ টাকা


ট্যুর প্ল্যান–২
টেকনাফে একরাত থাকা + শাহপরীর দ্বীপ রিল্যাক্সড এক্সপ্লোর

যাতায়াত সূচি
ঢাকা থেকে টেকনাফগামী এসি/নন-এসি বাসে যাত্রা শুরু। ভাড়া ১২০০-২২০০ টাকা।
ভোর ০৭:০০ → টেকনাফ পৌঁছানো
সকাল ০৭:৩০ → হোটেলে চেকইন এবং ফ্রেশ আপ (লোকাল হোটেল/রেস্ট হাউস – ডে ইউজ)। ভাড়া ১৫০০-৪৫০০ টাকা ডবল রুম।
সকাল ৮:৩০ নাস্তা শেষে টেকনাফ হতে শাহপরীর দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা ইজি বাইক/সিএনজি করে। ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। জনপ্রতি ১০০ টাকা।

ট্যুর আইটেনেরারি (২ দিন)
দিন–১
শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত
দীর্ঘ সময় সৈকতে থাকা, নীরবতা উপভোগ
স্থানীয় জেলেদের জীবনযাপন দেখা
দুপুরে সি-ফুড
বিকেলে আবার টেকনাফ ফেরা এবং টেকনাফ সৈকতে সূর্যাস্ত উপভোগ।
সন্ধ্যায় নাফ নদীর পাড়ে হাঁটা
রাতের খাবার, বিশ্রাম এবং ঘুম।

দিন–২
সকালবেলা টেকনাফ বাজার ঘোরা
সকালের নাস্তা
চাইলে নাফ নদী পয়েন্ট ভিজিট
দুপুরে লাঞ্চ

বিকেল ৪:০০–৫:০০ → ঢাকার বাস

হোটেলঃ মিড-রেঞ্জ হোটেল/গেস্ট হাউস, ডাবল শেয়ারিং হলে খরচ কমে। বেশ কিছু হোটেল আছে, একটু সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

সম্ভাব্য খরচ (প্রতি জন)
খাত খরচ (টাকা)
ঢাকা–টেকনাফ–ঢাকা (এসি বাস) ২,৫০০ – ৪,৫০০
হোটেল (১ রাত) ৮০০ – ২,২০০
লোকাল ট্রান্সপোর্ট ৪০০-৮০০
খাবার (৫–৬ বেলা) ১,০০০ – ২,০০০
অন্যান্য ৩০০-৫০০
মোট ৫,০০০ – ১০,০০০ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×