somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদঃ ম্যান ফ্রম দ্যা সাউথ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনুবাদ করা যে-সে কম্ম নহে।একটা ছোটগল্প অনুবাদ করতে গিয়ে রীতিমত ঘাম ছুটে গেল।অনুবাদকারীদের প্রতি রেসপেক্ট।এটি লেখকের বিখ্যাত একটি থ্রিলার গল্প।
ম্যান ফ্রম দ্য সাউথ
==============
মূলঃ Roald Dahl...
ছয়টা বাজতে চলছে,তাই ভাবলাম একটা বীয়ার কিনে সুইমিং পুলের ধারে ডেক-চেয়ারে বসে থাকবো আর সূর্যাস্ত দেখব।

বারে গেলাম,বীয়ার টা কিনলাম।সাথে করে নিয়ে বাগানের পথ ধরে পুলের দিকে আগালাম।

চমৎকার বাগান। অনেক লন,এজেলিয়ার বেডস,আর বড় বড় কোকোনাট পাম গাছে ভর্তি।পামগাছের উপর দিয়ে বাতাস খুব জোরে বইছিল,তাই,পাতার ঘষঘষে
শব্দে মনে হচ্ছিল আগুন লেগেছে। পাতার নীচে নীচে ফলগুলোও চোখে পড়ছিল।

পুলের চারদিকে অনেক ডেকচেয়ার,সাথে সাদারঙের টেবিল আর বিশালাকার ঝলমলে রঙের ছাতা। বেইদিং স্যূট পরা লোক আর মহিলারা চারধারে বসে আছে।পুলের
মধ্যে জনাতিনেক মেয়ে আর ডজনখানেক ছেলে হইচই করছে,একটা রাবারের বল ছোঁড়াছুড়ি করছে।
দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দেখলাম।মেয়েগুলো হোটেলেরই,ব্রিটিশ।আর ছেলেগুলোকে জানিনা,কথা শুনে আমেরিকান মনে হচ্ছে।সকালে ইউ.এস.নেভাল এর একটা ট্রেইনিং
ভেসেল তীরে এসেছিল।ছেলেগুলো বোধহয় ওখানকার নেভাল ক্যাডেট।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তারপর একটা হলদেরঙ্গা ছাতার নিচে বসে পড়লাম,আশেপাশে আরো খালি সীট আছে।বীয়ার ঢেলে আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম।

সূর্য,বীয়ার আর সিগারেট।ভালই জমেছে।আর,সবুজাভ পানিতে লোকের ঝাঁপাঝাপি।

আমেরিকান সেইলারগুলো ব্রিটিশ মেয়েদের কে ভালই পটিয়েছে। পানিতে ডাইভ দেয়ার জন্য তৈরী জায়গাটাতে গিয়ে তারা মেয়েদের সাথে খুনসুটি শুরু করে দিয়েছে।
তখনই খেয়াল করলাম,ছোটখাট,বয়স্কমতন এক লোক পুলের একধার দিয়ে দ্রুত হেঁটে আসছে।পরনে সাদা স্যুট। বেশ দ্রুত হাঁটছে,হাঁটার তালে তালে
শরীর ও ছন্দে উঠছে-নামছে লোকটির।মাথায় বিশাল পানামা হ্যাট।পুলের চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে হাঁটছে লোকটি।

আমার পাশে এসেই থামল।তাকিয়ে একটু হাসল। বিচ্ছিরি দাঁত।ক্ষয়ে গেছে। আমিও হেসে উত্তর দিলাম।

"বসতে পারি?"
"অবশ্যই" আমি বললাম- "বসুন "
লোকটা চেয়ারের চারপাশ ঘুরে কী যেন পরীক্ষা করে দেখল,তারপর পা গুটিয়ে বসে পড়ল। তার সাদা রঙের বাকস্কিন শ্যুয়ের গায়ে অনেক ছিদ্র করা,ভেন্টিলেশানের জন্য।

"বিকেল টা দারুণ!" -লোকটা বলল।"জ্যামাইকার সব বিকেল-ই এমন দারুণ"
কথার টান শুনে ইতালীয় না স্প্যানিশ বুঝতে পারছিনা,তবে এটা সাউথ আমেরিকান একটা ভাব আছে।বয়স ভালই হয়েছে। আটষট্টি কি সত্তর হতে পারে।

"হ্যাঁ" উত্তর দিলাম।"জায়গাটা ভালই"

"কিন্তু,এরা কারা?দেখে তো হোটেলের লোক মনে হচ্ছে না"--- বেইদিং করা লোকগুলোকে দেখিয়ে বলল।

"মনে হয় আমেরিকান সেইলার এরা" -আমি বললাম " নভিশ"

"আমেরিকানই বটে।ওরা ছাড়া এত হই-হট্টা আর কে করবে,আপনি তো আমেরিকান নন,তাই না?"
"না,আমেরিকান না"-আমি বললাম।
হঠাত আমেরেকিয়ান ক্যাডেটদের একজন আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল।পুল থেকে ভেজা শরীর নিয়ে উঠে এসেছে,সাথে ব্রিটিশ মেয়েদের একজন।

"এই চেয়ারগুলি কি খালি আছে?"জিজ্ঞেস করল ছেলেটি।
"হ্যাঁ"-আমি বললাম।
"বসতে পারি?"
"অবশ্যই পারো"

"ধন্যবাদ" বলল ছেলেটি।তার হাতে একটা তোয়ালে,প্যাঁচানো অবস্থায়। সেটা খুলে এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা লাইটার বের করল সে।মেয়েটাকে একটা সাধল,নিলনা মেয়েটি। তারপর আমাকে একটা সাধল,আমি নিলাম। ছোটখাট লোকটি বলে উঠল," ধন্যবাদ,নাহ,আমার কাছে সিগার আছে" । সে একটা কেস বের করে একটা সিগার নিল, তারপর একটা বিশেষ ধরণের ছুরি বের করল যাতে অনেক ছোট সাইজের কেচি আছে।তারপর সিগারের মাথা কাটল।
"নিন,আগুন ধরিয়ে দিই" ছেলেটি বলল।
"এ বাতাসে ধরবে না"
"আরে,ধরবে,সবসময় ধরে"

লোকটি মুখ থেকে সিগার সরিয়ে মাথাটা একপাশে কাত করে ছেলেটার দিকে তাকাল।
"সব-সময়?"ধীরে ধীরে বলল লোকটা
"হ্যা,কখনো ব্যর্থ হইনি আমি"

লোকটা একই ভঙ্গিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে-"আচ্ছা,আচ্ছা!তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে এই লাইটার কখনো ব্যর্থ হয়না? এটাই বলতে চাইছ?"

"হ্যা",ছেলেটি বলে- "এটাই"।ছেলেটার বয়স আঠার কি ঊনিশ হবে। চেহারাটা লম্বাটে,খানিক রোদেপোড়া আর নাক পাখির মত তীক্ষ্ণ।শরীর অতটা রোদেপোড়া না।বুকে হাল্কা লালচে লোম।ডানহাতে লাইটারটা ধরে আছে। লাইটার টা জ্বালাতে গিয়ে বলে,"এটা কখনোই ব্যর্থ হয়না"। এবার একটু আসে,কারণ সে ইচ্ছাকরেই একটু বাড়িয়ে বলছে,"সত্যি বলছি,এটা ব্যর্থ হবে না"

"এক সেকেন্ড প্লিজ" সিগারধরা হাতটা উঁচু করল লোকটি -"জাস্ট এক সেকেন্ড";লোকটির কন্ঠ কেমন যেন শোনাল-হাল্কা,নিষ্প্রাণ।ছেলেটির দিকে তাকিয়েই আছে।

"একটা ছোট্ট বাজি হয়ে যাক?"-ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাসল।"তোমার লাইটারখানা জ্বলবে কিনা তার উপর একটা বাজি,কী বল?"
"অবশ্যই,আমি রাজি"
"রাজি আছ তাহলে?"
"হ্যাঁ,রাজি"

লোকটা একটু চুপ থেকে তার সিগার টা নেড়েচেড়ে দেখল। টেনে টেনে বলল,"বাজি ধরতে আমার বেশ লাগে।একটা বড়সড় বাজি ধরা যাক,কী বল?"

"একটু দাঁড়ান" ছেলেটি বলে-"সেটা মনে হয় পারবনা,একডলার ধরা যেতে পারে,বা এখানে কিছু শিলিং আছে"
লোকটি হাত নাড়ল,"শোনো।এক কাজ করি।বাজিটা ধরি আমরা।তারপর হোটেলে আমার রুমে যাই,সেখানে কিন্তু কোন বাতাস নেই;আর আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে-তোমার এই বিখ্যাত লাইটার টা দিয়ে পরপর দশবার তুমি ধরাতে পারবে না"

"পারব আমি" ছেলেটি বলে
"তাহলে ঠিক আছে,বাজি।ঠিক?"
"হ্যা,এক ডলার"

"না,না,ঐসব ডলার-টলার না,ভাল বাজি ধরব।টাকাপয়সা প্রচুর আছে আমার,আর আমি এনজয় করি এসব।শোনো,হোটেলের বাইরে আমার গাড়ি রাখা আছে।দারুণ একটা গাড়ী।তোমাদেরই আমেরিকান জাতের-ক্যাডিলাক!"
"আরে!দেখেন!"ছেলেটি চেয়ারে হেলে বসে,"অত বড়সড় বাজি আমি লাগতে পারব না।পুরাই বেমানান"
"মোটেই তা নয়,তুমি পরপর দশবার জ্বালাও,ক্যাডিলাক টা তোমার,ওরকম একটা গাড়ি পেতে ভাল লাগবে না?"
"তা তো লাগবেই" ছেলেটি হাসে।
"তাহলে,সব ঠিক আছে,আমি আমার ক্যাডিলাক বাজি ধরছি"
"আর আমি কি ধরব?"

লোকটি যত্ন করে তার সিগারের মাথা থেকে লালব্যান্ডটি সরাচ্ছে,"তুমি পারবেনা,এমন কিছুতো আমি বলিনি,ঠিক কি না?"
"তাহলে,কি ধরব আমি?"
"তোমার কাজ সহজ করে দিচ্ছি"
"ওকে,দিন"
"এমন একটা জিনিস যেটা তুমি সহজেই দিয়ে দিতে পারবে,মানে,জিনিস টা খোয়া গেলে তোমার কিছুই খারাপ লাগবে না। "
"যেমন?"
"যেমন ধর তোমার বামহাতের কড়ে আঙ্গুল খানা"
"আমার কী!" ছেলেটির মুখ থেকে হাসি মুছে গেল।
"হ্যা,অসুবিধা কী?জিতবে,গাড়ি পাবে।হারবে,তোমার আংগুল নিয়ে নেব আমি"
"বুঝলাম না আমি।কী বলতে চাইছেন,আপনি আমার আঙ্গুল নিয়ে নেবেন?"
"হ্যা,কেটে নেব"
"ওহ,নো!ফালতু বাজি!আমি এক ডলার-ই ধরব"

পিছনে হেলে গিয়ে হাতের তালু উঁচু করে লোকটি।খানিকটা অবজ্ঞার ভঙ্গিতে কাধ নাড়ায়।"আচ্ছা,আচ্ছা,আচ্ছা"সে বলে-"ব্যাপারটা তো বুঝলাম না।তুমিই বললে যে পারবা,এখন বাজি ধরছ না।তাহলে বাদ দেই বরং,ঠিক আছে?"

ছেলেটা একেবারে চুপ। আনমনে তাকিয়ে আছে। হঠাত খেয়াল করল তার সিগারেট টাই ধরায়নি সে।ঠোঁটে ধরে,হাত গোল করে ধরালো।লাইটার টা জ্বলে উঠে।একটা ছোট্ট হলদে শিখা।ছেলেটা হাতটাকে এমনভাবে রেখেছে যাতে বাতাস না ঢুকে।

"আমার টা জ্বালতে পারি?" আমি বললাম।
"ওহ,আমি স্যরি ভুলেই গিয়েছিলাম"

লাইটারের জন্য হাত বাড়ালাম। কিন্তু,ছেলেটি নিজেই উঠে আসল ধরিয়ে দিতে।
ধন্যবাদ দিলাম। ছেলেটি তার সীটে গিয়ে বসল।
"কেমন লাগছে এখানে"-জানতে চাইলাম।
"ভালই,খারাপ নয়"

তারপর সব চুপচাপ।লোকটা তার জঘন্য বাজির কথা তুলে ছেলেটাকে ভালই ঝামেলায় ফেলে দিতে পেরেছে।ছেলেটি চুপ করে বসে আছে।বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা নিয়ে তার মধ্যে একটা টেনশান কাজ করছে।তারপর,ছেলেটি সীট বদলাল,বুক চুলকাল কিছুক্ষণ।ঘাড়ে হাত দিয়ে বাড়ি দিতে থাকল।অবশেষে, হাটুর উপর হাত দুখানা রেখে বসল। একটু পরেই আবার পায়ের পাতা দিয়ে মাটিতে শব্দ করতে লাগল।

অবশেষে কথা বলল ছেলেটি,"বাজিটা আসলে কী?আপনি বলছেন,আমরা আপনার রুমে যাব,আর আমি যদি এই লাইটার পরপর দশবার জ্বালাতে পারি তো ক্যাডিলাক আমার,আর যদি একবারো মিস করি তো আমার আঙ্গুল যাবে, এটাই তো?"
"হ্যা,এটাই,কিন্তু তুমি মনে হচ্ছে ঘাবড়ে গেছ"
"আমি হেরে গেলে কী করব?কাটার জন্য হাত বাড়িয়ে দেব?"

"না,না,সেটা উচিত হবেনা।আর,তুমিও হয়ত তখন হাত দিতে চাইবে না।আমি যা করব তা হচ্ছে,শুরুর আগেই তোমার হাতখানা টেবিলে বেধে ফেলব।আর,আমি একটা ছুরি নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকব।একবার মিস করা মাত্রই ..."
"ক্যাডিলাকের কত বয়স"ছেলেটি জিজ্ঞেস করে।
"মানে?"
"আপনার ক্যাডিলাক টি কবের?"
"ও,এটা গেল বছরের।পুরাই নুতন।কিন্তু,তুমি দেখছি বাজিধরা লোক না।অবশ্য আমেরিকান বলে কথা"
ছেলেটি একটু চুপ থেকে প্রথমে মেয়েটির দিকে পরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,"আমি বাজি লাগব"
"বেশ!" লোকটি আস্তে করে একটা তালি দিল -"এখনই শুরু করব,আর,মিস্টার,আপনি",আমার দিকে তাকিয়ে বলল"আপনি মনে হয় কাজটা ভালই পারবেন,কী যেন বলে-ও,রেফারী"।লোকটার নিষ্প্রভ চোখ আর ছোট ছোট কিন্তু গাঢ় কালো রঙের মণি চোখে পড়ল।
"আচ্ছা,কিন্তু এই ব্যাপারটা মোটেই ভাল লাগছে না আমার"-আমি বললাম।
"আমারও না"-মেয়েটি এই প্রথমবারের মত কোন কথা বলল-"পুরো ব্যাপারটাই স্টুপিডিটি আর হাস্যকর"
"হেরে গেলে আংগুল কেটে নেয়ার ব্যাপারে আপনি কী সত্যি সিরিয়াস?"
"অবশ্যই।আর জিতলে ক্যাডিলাক দিয়ে দেব এই ব্যাপারেও।আসুন এখন,রুমে চলুন"

লোকটি উঠল-"তুমি কি গায়ে কিছু পরে নেবে আগে?"
"না"-ছেলেটি বলে-"আমি এভাবেই যাব";তারপর আমার দিকে ফিরে বলল-"আপনি যদি রেফারী হিসেবে আসেন,তাহলে ভালই হবে"
"তুমিও আস" মেয়েটিকে বলে ছেলেটি-"দেখো কী হয়"

আমরা লোকটির পিছুপিছু হোটেলে যাচ্ছি।বেজায় আনন্দিত দেখাচ্ছে লোকটিকে,হেলেদুলে যাচ্ছে।
"আমি একেবারে উপরে থাকি,গাড়িটি দেখে যাও,এসো"
হোটেলের ফ্রন্ট-ড্রাইভওয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেল আমাদের,ওখানেই পার্ক করে রাখা চকচকে গ্রীনকালার ক্যাডিলাক টা দেখাল।
"ঐযে,ঐটাই,কেমন?"
"ভালই তো বলতে হচ্ছে"-ছেলেটা বলে।
"ঠিক আছে,এখন তাহলে উপরে যাওয়া যাক,দেখি-গাড়ীখানা তোমার ভাগ্যে আছে কিনা"

আমরা এক এক করে সিঁড়ি পেরিয়ে লোকটার পিছুপিছু উপরে পৌঁছুলাম।দরজা খুলে দিল লোকটি। বিশালাকার ডাবল বেডরুম। একটা বেডের নীচে মহিলাদের ড্রেসিংগাউন পড়ে আছে।
"শুরুতে..."লোকটি বলে-" আমরা একটু মার্টিনি খাই"

এককোণে ছোট্ট একটি টেবিলে মদের বোতলগুলো রাখা।শেইকার,আইস আর পর্যাপ্ত গ্লাসও আছে।লোকটি মার্টিনি বানাতে লেগে গেল,তারমাঝে বেল বাজাল।দরজায় নাড়ছে কেউ।একজন নিগ্রো পরিচারিকা।

"আহ!"-জিনের বোতল থেকে ঢালতে ঢালতে বলে।তারপর,পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে এক পাউন্ড নোট নেয়। "একটা কাজ করে দিতে হবে আমার জন্য"-পরিচারিকাটিকে নোট টি দিয়ে বলে।

"নোটটা তুমি রাখো,আমরা এখন একটা ছোট গেইম খেলব। আর,তুমি একটুখানি গিয়ে আমার জন্য দুটি-না,না,তিনটি জিনিস নিয়ে আস।পেরেক,হাতুড়ি আর একটা ছুরি।মাংস কাটবার যেরকম ছুরি,কিচেনএ পাবে,চেয়ে নিয়ে আস,ঠিক আছে?"
"ছুরি!"পরিচারিকাটি চোখ বড়বড় করে ফেলল-"সত্যিকার ছুরি?"
"হ্যা,হ্যা,নিয়ে আস,প্লিজ।তুমি পারবে"
"ওকে,স্যার,দেখছি আমি" বলে চলে গেল।

লোকটি সবাইকে মার্টিনি দিল।আমরা দাঁড়িয়ে খেতে লাগলাম।মেয়েটি মার্টিনির গ্লাসের উপর দিয়ে বারবার ছেলেটিক দেখছিল।আর,সাদাস্যুট পরা লোকটি মার্টিনি খেতে খেতে দেখছিল বেইদিং স্যুটপরা মেয়েটিকে।কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না আমি।বাজি নিয়ে আসলেই লোকটাকে সিরিয়াস মনে হচ্ছে,আংগুল কাটার ব্যাপারটাও তামাশা না দেখছি। উফ,হেরে গেলে কি হবে ছেলেটি?হয়ত,ঐ ক্যাডিলাক-এ চেপেই ওকে নিয়ে হাসপাতালে ছুট লাগাতে হবে।পুরো ব্যাপারটাই যা-তা হতে যাচ্ছে।

"ফালতু ব্যাপার হল না এইটা?"-আমি বললাম।
"আমার মতে বাজিটা আসলেই দারুণ"- এক গ্লাস পুরো খেয়ে ধরেছে মনে হয় ছেলেটিকে।
"হাস্যকর,আর আসলেই ফালতু বাজি"-মেয়েটি বলে"হেরে গেলে তখন?"
"এটা কোন ব্যাপার?এভাবে চিন্তা কর,আম্মার জীবনে এই আঙ্গুল কোন কাজে এসেছে বলে মনে পড়ছে না।এই যে"-বলে তার আঙ্গুল টা ধরে দেখে-"এই আংগুল;কোন কাজেই যখন আসেনি,এটা নিয়ে তো বাজি ধরাই যায়"

লোকটি হাসল,তারপর আমাদের গ্লাস রিফিল করে দিল।

"শুরু করার আগে"লোকটা বলে,"আমি রেফারী-রেফারীকে চাবিখানা দিচ্ছি";তারপর সে পকেট থেকে একটা চাবি বের করে আমাকে দিল।"পেপারস",লোকটি বলল-"আর বাকি কাগজপত্র গাড়িতে আছে"

পরিচারিকাটি আবার ফিরল। একহাতে ছোট একটা ছুরি,মাংস কাটবার জন্য কসাইরা যেটা ইউজ করে,আর অন্য হাতে হাতুড়ি,আর ব্যাগভর্তি পেরেক।

"বেশ!সবকিছুই এনেছ দেখি,তাহলে তুমি এখন যাও",পরিচারিকাটি দরজা লাগিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত লোকটি অপেক্ষা করল,তারপর জিনিসগুলি একটা বিছানায় রেখে বলল,"তাহলে আমরা তৈরী হই,নাকি?"-ছেলেটিকে বলল,"এদিকটায় একটু,প্লিজ,এই টেবিল টা একটু সরাবো"
হোটেলে যেমন থাকে, ফোর বাই থ্রি ফিটের ছোট রাইটিং ডেস্ক। তাতে ব্লটিং পেপার,কালি,কলম,কাগজ-ও আছে।দেয়ালের কাছ থেকে তারা সরিয়ে আনল,টেবিলের জিনিসগুলিও সরিয়ে ফেলল।

"এখন"-লোকটি বল-"একটা চেয়ার"।একটা চেয়ার তুলে এনে টেবিলের পাশেই রাখে।খুব আনন্দে কাজ করছে লোকটা,যেন বাচ্চাদের পার্টিতে গেইমস সাজাচ্ছে।"আর,এখন পেরেক।পেরেক গুলো গাঁথতে হবে।" পেরেক নিয়ে এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে টেবিলে গাঁথা শুরু করল লোকটি।

আমরা বাকি সবাই যার যার মার্টিনি হাতে দাঁড়িয়ে লোকটার কান্ড দেখছিলাম।দুটো পেরেক গেঁথেছে টেবিলে।প্রায় ছ ইঞ্চি দূরত্ব রেখে।পুরোটা গেঁথে ফেলেনি।কিছু বাকি রেখেছে।তারপর,নেড়েচেড়ে দেখছে ঠিকমত লাগল কিনা।

এই হারামজাদা যে এই কাজ আগেও করেছে,যে কেউ ভাববে।মনে মনে ভাবলাম আমি।কোন দ্বিধা নেই তার। টেবিল,পেরেক,হাতুড়ি,কিচেনের ছুরি।সবকিছু আগাগোড়া জানে ঐ লোকটি।

"এখন"-লোকটি বলে,"আমার দরকার শুধু একটা রশি"।কিছু রশিও নিয়ে আসে সে।"যাক,আমরা এখন রেডী।তুমি কি এখানে এসে বসবে,টেবিলে?"-ছেলেটিকে ডাকে।

গ্লাস রেখে ছেলেটি বসে পড়ে।

"এখন দুই পেরেকের মাঝে বামহাত রাখ।জায়গামত বেধে রাখতেই পেরেক গেঁথেছি আমি।হ্যা,ঠিক আছে।এবার তোমার হাত আমি বেঁধে ফেলব"

ছেলেটির হাতের কব্জির উপর দিয়ে বারকয়েক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচাল রশিটি। তারপর,দুই পেরেকের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলল।কাজটা ভালভাবেই করল লোকটি,এমনভাবে বেঁধেছে ছেলেটির আর হাত নাড়াবাড় জো নেই।শুধু আংগুলগুলো নাড়াতে পারবে সে।
"এখন,প্লিজ।হাতের মুষ্টি শক্ত কর,কড়ে আঙ্গুল বাদে।ঐ আঙ্গুলটা টানটান করে শুইয়ে রাখ টেবিলে"
"চমৎকার,বাহ।এখন তোমার ডানহাত দিয়ে লাইটার চালাবে।এক সেকেন্ড প্লিজ"
বিছানার উপরে পার হয়ে সে ছুরি নিয়ে এসে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াল।
হাল্কা নীল বেইদিং কসটিউম পরিহিতা মেয়েটি ঠিক ছেলেটির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। ছেলেটি শান্ত হয়ে লাইটার হাতে বসে,ছুরির দিকে তাকিয়ে আছে।আর লোকটি আমাকে দেখছে।
"তুমি রেডী তো?"ছেলেটিকে শুধালাম।
"হ্যা,রেডী"
"আর আপনি?"-লোকটিকে বললাম।
"একদম" - ছুরিটা সে ছেলেটির আংগুলের দু'ফিট বরাবার উপরে ধরল।দেখেও ছেলেটি ভয় করল না,মুখটা শক্ত করে রাখল।তার ভ্রূ দুটো একটু নড়ল।
"সব ঠিক আছে,তাহলে"-আমি বললাম।
ছেলেটি বলল,"আপনি লাইটারের জ্বলাগুলো একটু শব্দ করে গুণে শোনাবেন,প্লিজ"
"হ্যাঁ"-আমি বললাম,"শোনাব"

বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে লাইটারের মাথাটা উঁচু করে তুলল।আংগুল টি দিয়ে লাইটারের চাকায় জোরে ঘষা দিল।স্পার্ক হয়ে আগুন জ্বল্ব উঠল,ছোট্ট হলদে শিখা।
"এক!"-আমি গুণলাম।
পুরোটা না জ্বেলে থামল ছেলেটি।আবার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সে।
এবার আরো জোরে আঙ্গুল চালাল।জ্বলে উঠল লাইটার।
"দুই!"
কেউ কোন কথা বলছে না।লাইটারের দিকে তাকিয়ে আছে ছেলেটি।ছুরিহাতে লোকটির দৃষ্টিও লাইটারের দিকে।
"তিন!"

"চার!"

"পাঁচ!"

"ছয়!"

"সাত!",লাইটার টা পারফেক্ট,কোন সন্দেহ নেই। স্পার্ক টা নিখুঁত ভাবে হয়।আমি দেখেই আছি।আংগুল টা উঠে,চাকাটা ঘুরায়,আবার জ্বলে উঠে।সবই আঙ্গুলের কারসাজি।জোরে শ্বাস নিলাম।আট গোণার জন্য তৈরী হচ্ছি।স্পার্ক হল।শিখা জ্বলে উঠল।

"আট!" গোণলাম আমি।সাথে সাথে দরজা খুলে গেল।তাকিয়ে দেখলাম সবাই,একজন ছোটখাট গড়নের,কালোচুলের ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর "কার্লোস!কার্লোস!",ছুটে এসে তিনি লোকটির হাত চেপে ধরলেন।ছুরি কেড়ে নিলেন।ছুঁড়ে ফেলে দিলেন বিছানায়। তারপর,লোকটির স্যুট ধরে প্রচন্ড জোরে ঝাঁকাতে লাগলেন।অস্পষ্ট কিন্তু ঝাঁজালো স্পানিশে বকে চললেন।এতই জোরে মহিলা তাকে ঝাঁকাচ্ছিলেন,তার অবয়বটাই অস্পষ্ট হয়ে আসল।

তারপর শান্ত হল মহিলাটি। লোকটিকে টেন-হিচড়ে বিছানার একপাশে এনে ফেললেন।লোকটি ধাতস্থ হয়ে নিচ্ছে,মাথাটা ধরে যে ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন ঐ মহিলা;লোকটি এখন মাথা ধরে বসে আছে।

"আমি খুব স্যরি" -মহিলাটি বলল,"যা হয়েছে তার জন্য আমি আসলেই স্যরি"-চোস্ত ইংরেজিতে বললেন তিনি।
"কী জঘন্য ব্যাপার হল"- মহিলা বলতে লাগল,"সব আমার-ই দোষ,দশ মিনিটের জন্য ওকে এখানে একা ফেলে গিয়েছিলাম চুলধুতে,এসে দেখি আবার সেই কান্ড শুরু করেছে ও!"-আতঙ্কিত দেখাচ্ছে মহিলাকে।

ছেলেটি ততক্ষণে হাতের বাঁধন খুলে নিয়েছে।আমি আর মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

"ও খুব ভয়ঙ্কর"-মহিলাটি বলে,"আমরা যেখানে থাকি,ওখানে,ও সাতচল্লিশ জনের লোকের আংগুল কেটে নিয়েছে;আর-এগারোটা গাড়িও খুইয়েছে।শেষমেশ,সবাই চাইছিল যেন ওকে সরিয়ে নিই অন্য কোথাও।তাই এখানে আসা।"
"আমরা একটা ছোট বাজি ধরেছিলাম মাত্র"-লোকটা বিড়বিড় করে বলে।
"নিশ্চয়ই ও কোন গাড়ি লাগিয়েছে?"-মহিলাটি শুধায়।
"হ্যাঁ"-ছেলেটি বলে-"ক্যাডিলাক"
"হা,হা,ওর কোন গাড়ি-ই নেই,ওটা আমার।কত জঘন্য ব্যাপার,তাইনা?"-মহিলা বলে,"কিছুই নাই ওর,আর বাজি লাগছে!আমি খুব স্যরি যা হয়েছে তার জন্যে"।না উনি আসলেই চমৎকার একজন মহিলা।
"ঠিক আছে"-আমি বললাম,"এই রইল আপনার চাবি"-রেখে দিলাম টেবিলে।
"আমরা একটা বাজি ধরলাম কেবল"-লোকটা আবারো বলে।
"বাজি ধরার জন্যে ওর আর কিছুই নেই।"-মহিলাটি বলে," সারা দুনিয়ায় ওর একটা কিছু নেই।কিছু না। সত্যি বলতে কি,অনেক আগেই আমি ওর কাছ থেকে ঐ গাড়ি জিতে নিয়েছি। কষ্ট হয়েছে প্রচুর।কিন্তু,জিতেছি শেষ পর্যন্ত" ।মহিলাটি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাসলেন,মৃদু হাসি,সে হাসিতে প্রচন্ড বিষাদ মাখা।তারপর,টেবিলের কাছে এসে চাবিখানা নিতে হাত বাড়ালেন।
তার হাত চোখে পড়ল।কেবল একটা আংগুল-ই অবশিষ্ট আছে,আর একটা বুড়ো আঙ্গুল।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×