শীত ,বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসের শহর আয়নাগিরি। তার মাঝে একজন নিজের পড়নের একমাত্র কাপড় লুঙ্গিটা বিভিন্ন ভাবে জড়িয়ে বড় রাস্তার পাশে ল্যাম্পোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে । কাউকে কিছু বলে না , কাউকে ডিস্টার্ব করে না, কেউ সহসা তাঁকে ডিস্টার্ব করে না, দাঁড়িয়ে থাকে, আকাশ দেখে, মশা মারে, লুঙ্গির স্টাইল চেইঞ্জ করে,গা চুকায়,দাঁড়িয়ে থেকে ঝিমায়, সকালের আলো ফুটলে চলে যায়।একেক দিন একে দিকে চলে যায়। আবার পরদিন রাত বারোটায় পাগল হাজির।
বৃষ্টি, ঠান্ডা বাতাস, মশা, শীত, বর্ষায় সাপ জোঁকের ঝুকি মাথায় নিয়ে এই পাগল কেন বছর ব্যাপী এই শহরের বিভিন্ন মোর পাহারা দেয় তার রহস্য নিয়ে যত মুনী তত মত।প্রেমে ছ্যেকা, ভাইদের মধ্যে কলহ, মায়ের মৃত্যু সুখ এইসব নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। সম্ভবত সত্যটা কেউ জানে না। দিনের বেলায় এই পাগলকে দেখা যায় যেখানে দীর্ঘ সময় ছায়া পাওয়া যাবে তেমন একটা জায়গা খুঁজে ঘুমিয়ে পরে।আয়নাগিরির টিলা টালার ভাঁজে ভাঁজে এমন জায়গা অগণিত।
এই পাগলের অনেক বয়স কিন্তু শরীরে তাগড়া। চুল দাঁড়ি শাদা কিন্তু বাহু পেশি বহুল। বয়সের ভাড়ে কিছুটা কুজে দেখালেও লম্বার অন্তত পাঁচ ফিট দশ এর মতো হবে। সবটা দেখলে বুঝা যায় বেচারা যৌবনে সুপুরুষ ছিল। গায়ের রং কালো, দাঁত সুন্দর কিন্তু অপরিষ্কার । চুল দাড়ি হয়তো দুই এক দশক ছুরি কাঁচি লাগান নি।
কাপড় পড়ার অভ্যাস তেমন নাই এক খান লুঙ্গি পড়েই থাকেন, আগে নাকি একটা গামছাও ছিল, কাধে ফেলে রাখতো।
পাগল সম্পর্কে একটা জনপ্রিয় জনশ্রুতি আছে।
"পাগল হাটে কম,
কথা বলে তার চেয়ে কম,
খায় তার চেয়ে আরো কম।"
দিনে ঘুমায়, রাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কদাচিৎ বিড়বিড় করে কথা বলে। কেউ নিজে থেকে কিছু খাবার তাঁকে দিয়ে গেলে দুই এক গ্রাস মুখে নিয়েই তার আহার শেষ।
পাগলের কোন কেরামতি জানা নাই তাই কেউ তেমন একটা খাবার সচরাচর দেয় না। এই শহরে তার রক্তের কেউ নাই, সে কোথা থেকে এসেছে, কোথায় তার বাড়ি ঘর কেউ জানে না। কবে থেকে এই শহরে আসছে সেটা বেওয়ারিশ পাগল এবং বিশাল দেহী এই জন্যে সচারচর কেউ তাঁকে ঘাটাইতে আসে না। তার উপর সে বছর কুড়ি এই শহরের বাসিন্দা। শহরের সবাই তাঁকে চিনে কিন্তু কেউ তাঁর নাম জানে না। তাঁকে সবাই পাগল বলেই চেনে।
আয়নাগিরি পর্ব ০১ পড়তে ক্লিক করুন এখানে
আয়নাগিরি পর্ব ০২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৬