আবুল হাসামের জন্ম ১৯৫২ সালে কুষ্টিয়াতে। তিনি বড় হয়েছেন সেখানেই এবং প্রাথমিকভাবে তার পড়াশুনাও কুষ্টিয়তে । ১৯৭৫ সালে তিনি রসায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং মাষ্টারস করেন একই জায়গা থেকে ১৯৭৬ সালে । তারপর ১৯৮৬ সালে পেনিসেলভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ থেকে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ইউনিভার্সিটি অফ মিনিসোটার কেমিষ্ট্রি ডিপার্টমেন্ট থেকে নেন তার পোষ্ট-ডক্টরাল ট্রেনিং। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি কাজ করে আসছেন জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির কেমিষ্ট্রি ও বায়োকেমিষ্ট্রি ডিপার্টমেন্টে। এছাড়া তিনি রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি এবং কেস ওয়েষ্টার্ন রিসার্ভ ইউনিভার্সিটিতে। ড: হাসেম এই ইউনিভার্সিটিতে আনাডারগ্রাজুয়েট ও গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়ান কোয়ান্টিটেটিভ কেমিক্যাল এনালাইসিস, ইন্স্রুমেন্টাল এনালাইসিস, ইলেকট্রো-এনালাইটিক্যাল কেমিষ্ট্রি এবং থিওরি অফ এনালাইটিকাল প্রসেস। তিনি গবেষনা করেছেন ইলেক্ট্রো-এনালাইটিকাল কেমিষ্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল কেমিষ্ট্রি ও অর্গানাইজড মিডিয়ার কেমিষ্ট্রি নিয়ে। প্রথমদিকে তার কাজগুলো ছিলো মূলত নন-এক্যুয়াস মিডিয়াতে ইলেকট্রোকেমিষ্ট্রির প্রভাব, হাইড্রোজেনযুক্ত পানির স্পেকট্রোস্কোপিক ক্যারাকটারাইজেশন এবং মাইসেল ও মাইক্রোইমালশনের ব্যাপন প্রকৃতি। এছাড়া তিনি তৈরী করেন বেশ কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রোকেমিক্যাল এনালাইজার, অটোমেটেড টাইট্রেশন সিস্টেম এবং বেশ মূল্যবান এক ধরনের গ্লাস ক্রোমাটোগ্রাফ যার মাধ্যমে যার মাধ্যমে তিনি জটিল কোন ধরনের মিডিয়াতে প্রবাহি পদার্থের অবস্থা পর্যবেন করতে পারেন । তার এই আবিস্কারটিই তাকে সূযোগ করে দেয় ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেন করার। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ৯০ টির মতন প্রকাশনা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আলোচনাতে এসেছেন মূলত টাইম ম্যাগাজিনের চোখে গ্লোবাল হিরো অফ দ্যা এনভায়রনমেন্ট নির্বাচিত হয়ে। তিনি তার আবিস্কৃত খাবার পানি থেকে আর্সেনিক দুর করার জন্য তৈরী ফিল্টারের জন্য পেয়েছেন এই এওয়ার্ড। তিনি এবং তার ছোট ভাই ড: আবুল মূনির দুইজনে মিলে তৈরী করেন ’সনো ফিল্টার’ নামের এই খাবার পানির থেকে আর্সোনিক নিস্কাশন করার যন্ত্র। আর তাদের এই যন্ত্র টাইমের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিস্কারে। আগামি ২৫ শে অক্টোবর প্রদান করা হবে এই পুরস্কার। আবুল হাসামের সাথে সাথে আরো পুরস্কার পেয়েছেন বিলুপ্ত সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচভ, আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আল গোর, ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স চার্লস, জার্মান চ্যান্সেলের এঞ্জেলা মার্কেল সহ আরো ৪৩ জনকে দেয়া হচ্ছে এই এওয়ার্ড। লিডারস এন্ড ভিশনারিজ, একটিভিস্ট, সাইন্টিস্ট এন্ড ইনভেনটরস এবং মোগলস এন্ড এন্টারপ্রেনিয়ারস এই চারটি ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হচ্ছে এওয়ার্ডগুলি । আবুল হাসামকে সাইন্টিস্ট এন্ড ইনভেনটরস ক্যাটাগরিতে আরো ৯ জনের সাথে দেয়া হচ্ছে এই এওয়ার্ড।
তার আবিস্কার
আবুল হাসামের মতে খাবার পানির বিষক্রিয়া হলো বিশ্বের সবচাইতে জঘন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগগুলোর একটা এবং এর বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে বসে থাকার মতন মানুষ নন তিনি। সেজন্যই বলা যায় তার প্রায় একযুগের গবেষনার ফসল হয়ে এসেছে আর্সেনিক নিস্কাশনের এই বেশ সিম্পল ফিল্টার। তবে আর্সেনিক নিয়ে গবেষনা হাসেমের নিজের জন্য কোন অচেনা জগং ছিলো না। একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে আমেরিকাতে ইলেকট্রোকেমিক্যাল কেমিষ্ট্রিতে তার নিজের কাজই তাকে তার নিজের জেলা কুষ্টিয়ার ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্ত পরিমান সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এই একই সময়ে গঙ্গা-ব্রপুত্র রিজিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গে আর্সেনিক বিষক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছেন অনেক বিজ্ঞানী আর আর্সেনিকের পরিমান সম্পর্কে এসব অঞ্চলেও তারা প্রায় একই রকমের ফলাফল পেয়েছেন । আর্সেনিকের প্রধান সমস্যা হলো এর রং, স্বাদ, গন্ধ কোনটাই নেই, তাই একে খালি চোখে এর পরিমান বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু এটা শরীরে নির্ধারিত সীমার চাইতে বেশি প্রবেশ করলে নার্ভ ড্যামেজ থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তবে হাসামের গবেষনার লক্ষ্য অন্যদের চাইতে একটু ভিন্ন ছিলো আর তা হলো তিনি চেয়েছিলেন তার আবিস্কার করা যন্ত্রটি হবে সাধারন মানুষের ক্রয়মতার মধ্যে, কার্যকরী ও পরিবেশ সহনশীল। আর কারই ফসল হলো এই সনো ফিল্টার। তার এই ফিল্টারটির সাথে অনেকটাই মিল খুজে পাওয়া যাবে আর্সোনিক নিস্কাশনে এর আগে বহুল ব্যাবহৃত তিন কলসি ফিল্টারের। তার ফিল্টারে ব্যাবহার করা হয়েছে কয়েক স্তরের পদার্থ। এতে প্রাথমিক নিস্কাশনের কাজ করে ’কম্পোজিট আয়রন ম্যাট্রিক্স’ ( সিএমএ)। এই জিনিষটা তৈরী করা হয় কাষ্ট আয়রন থেকে এবং এটা বাইরে থেকে আনা লাগে না, লোকাল কারখানা থেকেই তৈরী করা যায়। প্রাথমিকভাবে ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকের মৌলগুলো বিক্রিয়া করে এর ফেরাস হাইড্রোক্সাইড আয়নের সাথে এবং অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্সেনিককে দুর করে পানি থেকে। এই ফিল্টারে আয়রন ম্যাট্রিক্সের সাথে সাথে আরো ব্যাবহার করা হয় নদীর বালু, কাঠকয়লা এবং ভেজা ইটের টুকরা যার সাহায্যে আর্সেনিকের সাথে সাথে আরো নিস্কাশন করা যায় খাবার পানিতে অবস্থিত আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য অজৈব পদার্থগুলো। সাধারনত তিনটা বালতি একটার উপর একটা বসিয়ে তৈরী করা হয় এই সোনো ফিল্টার যেখানে তৃতীয় বালতিতে জমা হতে থাকে বিশুদ্ধ পানি। তবে গ্রামাঞ্চলের জন্য এর আরো একটা মডেল আছে যেখানে তৃতীয় বালতির বদলে সেখানে একটা কলসি বসানো হয়। এটা খাবার পানি থেকে ৯৮% পর্যন্ত আর্সেনিক ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ নিস্কাশন করতে পারে এবং এর দাম পড়ে ২০০০-৩০০০ টাকা। একটা ফিল্টার দিয়ে দুটো পরিবার তাদের দৈনন্দিন কাজ সারতে পারে এবং একেকটা ফিল্টারের আয়ূ হলো ৫ বছরের মতন। এর আরেকটা সুবিধা হলো এই ৫ বছরে একে কোন ধরনের পরিস্কার করার দরকার হয় না। মূলত ড: আবুল হাসাম এবং তার ছোটভাই ড: আবুল মূনির দুজনে মিলে এই ফিল্টার তৈরী করলেও তাদের আরেক ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবুল বারাকাতও কিন্তু বসে নেই। তিনি গত দশ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন আর্সেনিক বিষক্রিয়াতে আক্রান্ত মানূষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পর্যবেন এবং এই সনো ফিল্টারকে কি করে আরো সস্তা করা যায় সেই কাজে। তবে ড: সত্যিকারার্থে আলোচনাতে আসেন এই বছরের শুরুর দিকে। গত ফেব্রুয়ারিতেই তিনি ইউ এস ন্যাশেনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অর্জন করেন ১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ২০০৭ গ্রেঞ্জার চ্যালেঞ্জ প্রাইজ । তবে এই এক মিলিয়ন ডলারের ৭০% তিনি দান করেন দরিদ্র জনগোষ্টির ঘরে আর্সেনিক ফিল্টার পৌছে দেবার জন্য, ২৫% হলো এ বিষয়ে আরো গবেষনা করার জন্য এবং ৫% দান করেন তার নিজের ইউনিভার্সিটির ফান্ডে। এ পুরস্কারটা দেয়া হয় মূলত ইলিনয়েসে লেক ফরেষ্টে অবস্থিত গ্রেঞ্জার ফাউন্ডেশনে উদ্যেগে আর এই বছর তাদের টার্গেট ছিলো আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে এমন একটা পরিবেশবান্ধব ও ক্রয়সাধ্য ডিভাইস তৈরী করা যা কোন ধরনের বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যাবহার না করে কাজ করে।
বাংলাদেশের হাজারটার বেশি পরিবার এখন ব্যাবহার করছে এই সনো ফিল্টার। ড: হাসামের ইচ্ছা হলো এ ফিল্টারটাকে প্রথমে ইনডিয়া ও নেপাল এবং পরে দনি আফ্রিকাতে আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া। এক সাক্ষাতকারে হাসাম বলেন, ,মানূষজন তাকে বলে কিভাবে এই ফিল্টারটা ব্যাবহার করার পরে তাদের শরীরে আর্সেনিক বিষক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগের বিষক্রিয়ার চিহ্ন বিদায় নিয়েছে । এমনকি কোন কোন জায়গায় মহিলারা নাকি তাদের চুল ধোয়ার কাজে ব্যাবহার করছে এই পানি কারন এটা নাকি তাদের চুলকে সফট করে। তবে যাই হোক টাইমের চোখে ড: আবুল হাসাম হলেন সেই লোক যিনি বেশ ভয়ংকর একটা পরিবেশগত বিপর্যয়ের সহজ সমাধান বের করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি একে তো রা করেছেন অগনিত মানূষের জীবন তার সাথে সাথে বিশ্বের ১৩৭ মিলিয়ন মানূষকে আর্সেনিক বিষক্রিয়ার হাত থেকে মুক্ত করার পথ দেখিয়েছেন। কাজেই কেবল টাইমের চোখেই নয়, সারা বিশ্বের মানূষের চোখে ড: হাসাম হলেন সেই সব হিরোদের একজন যারা অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একে মানূষের বাসযোগ্য করে তোলার কাজে।
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।