বহুদিন আগে একটা গল্পের বই পড়েছিলাম। বইটার নাম হলো আইয়ুব খানের কূমির শিকার। ওখানে একটা গল্প ছিলো। গল্পটার নাম আমার পুরোপুরি মনে নেই, তবে ... খাঁর মর্মর মূর্তি বা এইধরনের কিছূ ছিলো গল্পটার নাম। ধরে নিলাম গল্পের নাম হলো ’ গোলাম খাঁর মর্মর মূর্তি’। গল্পটা ছিলো এইরকম... মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে একদল তরুন ঢাকা থেকে পালিয়ে একটা গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারা ঢাকায় দেখে এসেছে পাকবাহিনীর তান্ডবলীলা, কাজেই সবার মধ্যেই তখন জ্বলছিলো প্রতিশোধের আগুন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তারা যুদ্ধে যাবার। একইসাথে তারা চেষ্টা করে গ্রামের তরুনদেরকে তাদের সাথে নেবার। কিন্তু খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। বেশ অনেক চেষ্টা করে তারা ওদেরকে বোঝানোর । কিন্তু অস্ত্র তুলে নিতে রাজি নয় তারা। আর পাকবাহিনীর নৃশংসতাও তারা অনূভব করতে পারেনি। শেষপর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে আসা ছেলেরা চলে গেলো ট্রেনিং নেবার জন্য। তবে অবস্থার পরিবর্তন হলো। অন্যান্য গ্রামের মতন এখানেও কিছুসংখ্যক সুবিধাবাদি মিলে তৈরী করলো শান্তি বাহিনী আর তাদের নেতা ছিলেন এই গোলাম খাঁ। তারা গ্রামে নিয়ে আসলো পাকবাহিনীর গানবোট। হানাদাররা গ্রামে নেমেই শুরু করলো তাদের স্বভাবসূলভ নারকীয় নির্যাতন। হামলা চালালো গ্রামের প্রধান বাজার সহ অন্যান্য জায়গায় এবং হত্যা করলো অসংখ্য নিরপরাধ মানূষকে। তাদের মধ্যে ছিলো গোলাম খাঁর বড়ো ছেলেও। কিন্তু ছেলে হারানোর পরেও গোলাম খাঁ চালিয়ে গেলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তার কাজ। এদিকে পরেরদিনই গ্রামের ছেলেরা দলে দলে যোগ দিলো মুক্তিবাহিনীতে। এবার তারাও প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। তখন আগে যারা ঢাকা থেকে পালিয়ে এসেছিলো তাদের একজন বললো, তোমাদের কে এরকম কিছু হবে আগেই বলেছিলাম.. সপ্তাহের পর সপ্তাহ পিছনে ঘুরে যে কাজটা করা যায়নি সেটা তো গোলাম খাঁ একদিনে করে দিলো.... গল্পের তারপরে তেমন কিছু মনে নেই .. তবে শেষটা বলে নেই...গল্প শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরে । গোলাম খাঁ চলে যাচ্ছেন দেশ ছেড়ে কিন্তু গল্পের কথক তাকে অনূরোধ করেন দেশে থাকার জন্য। কারন একাত্তরের যে চেতনা হারিয়ে যেতে বসেছে তাকে পুনোরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজয় সেই সময়ের স্মৃতি । গল্পের কথকের আহবান ছিলো জেলায় জেলায় গোলাম খাঁর মতন রাজাকারের মর্মর মূর্তি স্থাপন করি সবাই মিলে যা আমাদের ভিতরে জাগিয়ে তূলবে সেই পুরোন আগুন যা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অনূভব করেছিলো, মনে করিয়ে দিবে কিজন্য তারা যুদ্ধ করেছিলো, আর কি জন্য আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে।
এবার আসা যাক কিছু পোষ্টের ব্যাপারে... গতকাল বিজলার খড়ির পোষ্ট দেখলাম। দেখার সাথে সাথে যা হলো তা হলো প্রচন্ড রাগ... ইচ্ছে হলো একটা স্টাপলার দিয়ে শালার মূখটা সেলাই করে দিতে। আমাদের স্বাধীনতার যোদ্ধারা ভাষা, ধর্ম কোন কিছুর কথা চিন্তু করে যুদ্ধ করেনি। তারা যুদ্ধ করেছিলো অন্যায়ের উপর ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর তারা তা করে ছেড়েছিলো। কিন্তু আমরা যারা জন্মেছি স্বাধীনতার অনেক পরে তারা বুঝতে পারছি না এটা, কারন হলো আমাদের অবস্থা হলো সেই গ্রামের তরুনদের মতন। পাকবাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা অনূভব করার ক্ষমতা নেই। একইসাথে মতা নেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে আদর্শে বলিয়ান হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তাকে অনূভব করা। কিন্তু কিছুটা হলেও আমরা সেটা অনূভব করতে পারি যখন একটা শুনি মুজাহিদি বা হান্নানের মতন দ্বীতিয় শ্রেনীর নাগরিক পাগলের প্রলাপ জনসমক্ষে বলে বেড়ায়। আমরা কি পারি না ক্ষনিকের জন্য জেগে উঠা সেই আগুনকে কাজে লাগাতে।
যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে একটা ব্যাপার আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আর তা হলো বাংলাদেশের যে কোন ধরনের ক্ষতিতে সবচাইতে বেশী খুশি হয় তারা। এখন তাদের বিচারের যে দাবী উঠেছে আমি তার সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত। তবে বিচার করে আমরা হয়তো তাদের জেলে পাঠাতে পারবো বা দেশ থেকে বের করে দিতে পারবো কিন্তু তাতে কি আমরা তাদের যথাযোগ্য শাস্তি তাদের দিতে পারবো। কারন দেশের বাইরে গিয়ে বা জেলে বসে তারা সারাজীবন এই মানসিক আনন্দ পাবে যে, বাংলাদেশ এখনও সল্পন্নত দেশ আর পাকিস্থান উন্নয়নশীল দেশ (বিজলীর খড়ি থেকে).. তাহলে! আচ্ছা আমার যদি ভূল না হয় তাহলে আমাদের স্বাধীনতার পরে তাদের(যুদ্ধাপরাধিদের) কাছে সবচাইতে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন হলো সেইদিন যেদিন বিশ্বকাপে পাকিস্থানকে নাস্তানাবুদ করেছিলাম আমরা। আমাদের প্রত্যেকটি আনন্দের উপলক্ষ্য তাদের মধ্যে জ্বালা তৈরী করে- সেটা হোক রাস্তায় আনন্দ মিছিল, বা আমাদের বাংলাদেশীদের যে কোন অর্জন। কালকে বিজলীর খড়ির পোষ্ট দেখার পর একটা নতুন ধরনের কিছু অনূবব করছি আমার নিজের মধ্যে। আর এটা হলো দেশের জন্য কিছূ করার আকাংখা, দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার আকাংখা। সল্পোন্নত যে সিল গায়ে আছে সেটাকে টেনে তুলে ফেলবার আকাংখ্া । আমি মনে করি , যুদ্ধপরাধিদের সবচাইতে বড় শাস্তি দিতে পারবো যদি মানসিকভাবে আমরা তাদেরকে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারি । আর সেটা করতে পারবো আমাদের দেশকে ক্রমাগত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।এস কাজটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে মুজাহিদিন-হান্নান- বিজলীর খড়িদের জন্য এই দেশটাকে তৈরী করতে পারবো একটা দূ:স্বপ্নের মতন। আমরা আর কিছু না পারি একটা দূ:স্বপ্নও কি তৈরী করতে পারবো না?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




