somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির মিনার

১৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[link|https://www.facebook.com/abulkashemmuhammad.shaheen/|view this link
#ঘাটাইল_ডায়েরি_০২
(লেখাটা বড়। একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন)
বিষয়ঃ শহীদ মিনার
১। ২০১৭ সালের ১২ জুন। ঘাটাইল উপজেলা পরিষদ- এর চেয়ারম্যান সাহেবের বাসায় লোকজনের আনাগোনা হঠাৎ বেড়ে গেল। তোফাজ্জল এসে বললঃ স্যার, আপনার তো চেয়ারম্যান স্যারের বাসায় যাওয়া দরকার।
:কেন, কি হয়েছে?
:গিয়েই দেখেন।
গেলাম। গিয়ে দেখলাম চেয়ারম্যান মহোদয় দু’তলার খোলা বারান্দায় জলচৌকিতে বসা। তার ছেলে মেয়েরাও ঢাকা থেকে চলে এসেছেন। দেখলাম, মমরেজ গলগন্ডা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও আছেন। চেয়ারম্যান মহোদয় সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন। কেন? কারণ, তাঁর মনে হয়েছে তিনি আজ মারা যাবেন। অনেক জটিল অবস্থা। আমি আমার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললাম, ওঠেন। সবাইকেই মরতে হবে। তবে আপনার মরার সময় এখনো হয়নি মনে হচ্ছে। ওঠেন, ওযু করেন, নামাজ পড়েন। তাঁকে নিয়ে তাঁর বেড রুমে গেলাম। ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলাম। তিনি ওযু করলেন। নামাজ পড়লেন। আজ ১৮ জুন ২০২০। ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামু খাঁ তাঁর সংগ্রামপুরের বাড়ীতে শান্তিতে অবসর জীবন কাটিয়ে যাচ্ছেন।
২। উপরের বিষয়টা অবতরণের কারণ আছে বৈকি। অসুস্থ চেয়ারম্যান মহোদয়কে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব খান মোঃ নুরুল আমীন স্যার দেখতে এসেছিলেন। চেয়ারম্যান মহোদয় তাঁর নিকট দু’টি দাবী করেছিলেন।
(১) উপজেলা পরিষদের প্রাঙ্গনে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ।
(২) মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া।
জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন।
৩। শহীদ মিনার বাস্তবায়ন শুরু হলো। জায়গা চেয়ারম্যান মহোদয় দেখিয়ে দিলেন। উপজেলা পরিষদের সভায় অনুমোদন, বাজেট সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। আমি আর সবুজ মিলে ডিজাইনটি করলাম (ছবি নীচে দেওয়া হলো)। অনুমোদন নিলাম পরিষদের। বাজেট লাগবে প্রায় ১৫ লাখ। উপজেলা পরিষদের টেস্ট রিলিফ কার্যক্রম হতে ২.৫ লাখ টাকা নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করলাম। Samuel Somerset Maughm এর বিখ্যাত গল্প Luncheon এর মতো অবস্থা তখন আমার। “I have the whole month before me but not a penny in my pocket”.
৪। আস্তে আস্তে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। শের আলী ঠিকাদার রাজমিস্ত্রির দায়িত্বপালন করে। সে ইতঃপূর্বে এমন স্পর্শকাতর কাজ করেনি। আমাদের তার উপরই ভরসা। কারণ তার রেট কম। বা তাকে কম দিয়ে ম্যানেজ করা যাবে। কারণ উপজেলা পরিষদের সব কাজ তো শের আলীই করে। শের আলীও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইল। উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনটাও তার নির্মাণ। ডিজাইন বুঝিয়ে দেই। করে। ভুল হয়। ভাঙ্গে। আবার করে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জনাব এনামুল হক খুব খেটেছেন। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। ডিজাইন এর সাথে কাজ মিলিয়ে দেখেছেন। ভুল হলে ভেঙ্গেছেন। আবার ডিজাইন মতো গড়িয়েছেন। শহীদ মিনারের মূল বেদি নির্মিত হলো। অনেক উঁচু। মূল শহীদ মিনারের মা এবং দু’পাশে দু’টি সন্তান নির্মিত হলো। আমার মনে হলো, কি যেন নেই। কি যেন নেই। শের আলী বলল, ডিজাইন- এ তো এমনই আছে। আমি বললাম, ডিজাইন নিয়ে আসো। আসল। আমি ডিজাইন দেখে তো হতবাক। বৃষ্টির পানিতে ডিজাইন ধুয়ে মুছে একাকার। এই বৃষ্টির পানিতে মুছে যাওয়া ডিজাইন অনুযায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ ঠিক আছে। এখন দেখতে হবে, কস্পিউটারে করা আমার ডিজাইন। তাকে নিয়ে রাত দশটায় অফিসে গেলাম। কম্পিউটার খুললাম। To my horror যা দেখলাম তাতে আমাদের উভয়ের চোখ ছানাবড়া। মূল শহীদ মিনারের মায়ের দু’পাশে দুটি করে সন্তান। অর্থাৎ শের আলীর নকশায় দু’পাশের দু’টি সন্তান/পিলার মুছে গিয়েছিল। যাক, পরবর্তীতে আবার মূল বেদি থেকে সন্তান দু’টি বানানো হয়েছে। শের আলীর কষ্ট হয়েছে। করতেই হতো। এতো শহীদ মিনার। স্পর্শকাতর বিষয়।
৫। আবার আসি অর্থ সংস্থানের কথায়। অনেক উঁচু শহীদ মিনার। বেদির তিনটি স্তর।তিনদিক দিয়ে নকশাকার সিড়ি। প্রচুর বালি লাগল। প্রচুর ইট লাগল। হিসেব রাখিনি ইটের। মোট ইটের এক-তৃতীয়াংশ ইট ভাটা মালিক সমিতি দিয়েছে। আমি আমার ছয় মাসের ভ্রমণ ভাতা ও মোবাইল কোর্টের বিল দিয়েছি শহীদ মিনার ফান্ডে। কয়েকজন শুভাকাংখী অর্থ সহায়তা করেছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক (বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) আর্থিকভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। সকাল-বিকাল নিজ দায়িত্বে স্বশরীরে শহীদ মিনারে গিয়ে কাজের তদারকি করেছেন। নকশা ভুল হলে ধরিয়ে দিয়েছেন। শ্রমিকদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং নিয়মিত কিউরিং এর পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ২.৫ টাকা নিয়ে শুরু হওয়া বাজেট শেষ পর্যন্ত ১৪ লাখে গিয়ে ঠেকেছিল। উন্নতমানের টাইলস ঢাকা থেকে এনেছিলাম। দুই জিজাইনের টাইলস ব্যবহার করা হয়েছিল। বেদিতে একরকম আর সিড়িতে আরেকরকম।
৬। শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হলো। দেখে চোখে পানি এসে গেল। ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ঘাটাইল উপজেলা হানাদারমুক্ত হওয়ার দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে শহীদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এই শহীদ মিনার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছিল। সুধীজন, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ভি পি রুবেল- এর নেতৃত্বে ছাত্র নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, মেয়র ভি পি শহীদের নেতৃত্বে পৌর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের আহবায়ক শহিদুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, শহিদুল ইসলাম হেস্টিংস- এর নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীগণ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ, স্কুল কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, সাধারণ জনগণ ঐ দিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। সৃষ্টির সুখ এক অনন্য বিষয়। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আমার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আর শহিদুল ইসলাম লেবুর চোখে পানি চলে এসেছিল। তবে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটি লেগেই ছিল। কারণ ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে আমরা গর্বিত। পরবর্তীতে আমার কর্মকালে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেছিলাম। তখনও ছিল বিশাল জনসমাগম । ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছিল পুরো শহীদ মিনার।
৭। শহীদ মিনারে একটি নাম ফলক বসিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী ইউএনও শহীদ মিনারের প্রাঙ্গন সংস্কার করার সময়ে ফলকটি তুলে ফেলেন। পরবর্তীতে সেটি ভেঙ্গে গেছে শুনেছি। একটি নামফলক দরকার বলে মনে করি। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব সামু খাঁ- এর প্রথম স্বপ্নটির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হলো। আর দ্বিতীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ সুগম করে রেখে এসেছিলাম। কিছু দিন আগে সাবেক ইউএনও জনাব কামরুল ইসলাম তা চূড়ান্ত প্রস্তাব জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রেরণ করেছেন।
৮। আজ এক বন্ধু প্রিয় শহীদ মিনারটির কিছু ছবি পাঠিয়েছেন। অনেক অযত্নে পড়ে আছে শহীদ মিনারটি। সম্মানিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, আপনাদের পরশ পাথরের ছোঁয়ায় আবার আলোকিত হবে স্মৃতির মিনারটি।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×