somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপূর্ণতায় বৃষ্টি ভেজা

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল থেকেই গোমড়া মুখে বসে আসে প্রকৃতি। যে কোন সময় ঝরঝর করে ঝড়িয়ে দিবে বৃষ্টি নামক অশ্রু। বাহিরে বের হবে কি হবেনা দোটানায় মাহিন। কিন্তু বের যে তাকে হতেই হবে….. আজ তার ভার্সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। বাসায় বসে থাকার সুযোগ নেই, তাইতো বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রেইনকোটটা ঝুলিয়ে নিয়ে নিলো বাইকের সাথে।
রাস্তায় তেমন জ্যাম নেই, পথে নামতেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। এখনো রেইনকোর্ট গায়ে জড়ানোর সময় হয়নি। আরো বেশ কিছুটা পথ যেতেই বাড়লো বৃষ্টির তীব্রতা, এখন আর উপায় নেই, থামতেই হবে। রেইট কোট গায়ে দেয়ার জন্য বাইক সাইড করে রাস্তার পাশে গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো।
রেইন কোট গায়ে চাপিয়ে রাস্তায় নামতেই চোখ চলে গেলো পেছন থেকে আসতে থাকা রিকশার দিকে।
একজোড়া তরুন তরুনী রিকশা হুড ফেলে বৃষ্টির স্বাদ উপভোগ করছে। চলন্ত বাইকেই মাহিন ডুব দিলো ভাবনার সাগরে। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো প্রায় ১৭/১৮ বছর আগের এরকম বৃষ্টিভেজা এক দুপুরের কথা।

***
মাহিন ও মৌরি খালাতো ভাইবোন।দু’জনের বয়স মাত্র ৭-১০ বছর। কাছাকাছি বাসা না হলেও মাঝেমাঝেই খালার বাসার যাওয়া আসা হয় ওদের।প্রায় এককুড়ি কাজিনদের মাঝে অন্য কাজিনদের চেয়ে একটু বেশী সম্পর্ক মাহিন আর মৌরিদের ভাইবোন আর মা খালাদের মাঝে।
দুইদিন হলো ছোটখালার সাথে মাহিনদের বাসায় এসেছে মৌরি।তারপর থেকেই চলছে খেলাধুলা, আড্ডা, আশে পাশে ঘুরতে যাওয়া সবকিছুই। কিন্তু বর্ষার এই দিনে কিছুটা হলেও আনন্দটা ভাটা পড়েছে।গতকাল ভালোই ছিলো কিন্তু আজ আর আকাশের মন ভালো নেই।
সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।খুব ভোড়ে মাহিন স্কুলে গিয়েছিলো। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে ১১ টা বেজে গেলো। বাসায় যে সে খেলার সাথী রেখে গেছে তাইতো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে দ্রুতই ফিরলো বাসায়। ক্লাসে ওর মন বসছিলো না, আজকের ক্লাসগুলো ওর কাছে বেশ লম্বা মনে হচ্ছিল, কখন বাসায় ফিরবে সে জন্য উদগ্রীব ছিলো স্কুলে যাওয়ার পর থেকে।



***
বাসায় ফিরে মেতে উঠলো আনন্দে। গল্প আড্ডা, চোর পুলিশ খেলা, সাপ লুডু খেলা আরো কত কি। টিনের চালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির হালকা আওয়াজ। খেলার ফাঁকে বৃষ্টির মাঝেই মাহিন আর মৌরি নেমে পড়লো বাসার সামনে গাছ গাছালিতে ভরা ছোট্ট উঠোনটাতে, সেখান থেকে সামনের স্কুল মাঠটাতে।গুড়ি বৃষ্টিতে কৈশরের দুরন্তপনায় মেতে উঠলো দুজনে, ছুটোছুটিতে ক্লান্ত ওরা। দুপুর হতেই হাঁক ছাড়লেন মাহিনের মা।
ঃ তোমরা এখনো গোসল করছো না কেন?
ইতিমধ্যে নামলো মুশল ধরে বৃষ্টি। আরো বেশ কিছুটা সময় দুষ্টমিতে মেতে মাহিন আর মৌরি ফন্দি আটলে বৃষ্টিতে ভিজবে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পাশের বাড়ীর সনিয়াদের ছোট পুকুরটাতে গিয়ে গোসল করবে। যেই ওরা বৃষ্টিতে ভেজার প্রস্তুতি নিলো অমনি বাঁধ সাধলো মাহিনের বড় বোন লিনা। নাহ….. বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না, ঠান্ডা লাগবে, কাল বেড়াতে যাবো, অসুস্থ হলে ঝামেলা আরো কত কি।
মাহিনের অনেক অনুনয় বিনয়ের পরও কাজ হলো না। কড়া হুশিয়ারী…..
তুই ভিজলে ভেজ, মৌরি ভিজতে যাবে না।
মৌরি প্রথম একবার ভিজতে চাইলেও পরে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই বলতে পারলো না।

***
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পরিমানও বেড়েছে। লিনা আপু মৌরিকে গোসলের জন্য নিয়ে গেলে মাহিন শুধু মৌরি চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ভেজা হলো না একত্রে। নাহ…… মৌরি না ভিজলেও সে ভিজবে।
বেড়িয়ে আসলো বৃষ্টির মাঝে। খালি পায়ে হেটে চলছে পুকুরের দিকে। একা একা বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে চোখের আদ্রতা অনুভব করলো সে। ফোঁটা অশ্রু জমা হয়েছে চোখের কোণায়। বৃষ্টির সাথে মিশে গিয়ে গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা করছে।
ধীর পায়ে খেজুর গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরী করা ঘাটলায় গিয়ে বসলো মাহিন। দুটি পা ভিজিয়ে দিলো পানিতে। সনিয়াদের ঘর বানানোর জন্য কাঁটা হয়েছিলো মাটি, সেটাই এখন ছোট্ট পুকুরে রূপ লাভ করেছে।সনিয়াদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও মাহিনদের পাশে বাসা হওয়ায় ওদের সাথে সম্পর্ক ভালো। সেই সুবাদেই মাঝে মাঝে ওদের পুকুরে গোসল করতে আসে। বিশাল বিলের পাশে পুকুরটি একনিতেই ফাঁকা থাকে, বৃষ্টির কারণে আশেপাশে কেউ নাই, মাহিন শুধু একা। বসে বসে খালি গায়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।নেমে পড়বে পানিতে, অল্প অল্প সাঁতার জানা মাহিন উঠে পড়বে কম সময়েই কিন্তু পানিতে নামতে ইচ্ছে করছে না। ঘাটে বসে একাকি ভিজছে সে। আদ্র চোখটা যেন আরো আদ্র হয়ে গেলো। চোখ দুটি জলে একাকার। জলে ভরপুর চোখ দুটি থেকে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুধারা।মাহিন মুছার চেষ্টা করলো না অশ্রুধারাকে, বৃষ্টির জলে মিশে একাকার হয়ে গেলো।
বেড়ে গেলো বৃষ্টির তীব্রতা। মাহিনের অশ্রুর সাথে তাল মিলিয়ে আকাশের মেঘেরাও কেঁদে উঠলো আরো জোরে। শীতল হয়ে উঠলো মাহিনের শরীর, আর বসে থাকা সম্ভব না। লাফ দিয়ে নেমে পড়লো পানিতে। পরপর কয়েকটি ডুব দিয়ে চোখের অশ্রুগুলো ধুয়ে ফেললো পুকুরের পানিতে।মৌরিকে ওর সাঁতার শেখানোর কথা অথচ মৌরি আসলো না তাই কি আর করবে ডুবে যাওয়ার সম্ভবনা না থাকায় নিজেই অদক্ষ ভাবে সাঁতার কেটে চললো অগভীর পুকুরের এপাড় ওপাড়ে।



***
লিনা আপুটার সাথে মৌরির খুব ভাব।খুব আদর করে ওকে কিন্তু একটু বেশী কেয়ার নেয় বলে মৌরি মাঝে মাঝে বিরক্তও হয় আপুটার উপরে, যেমনটি হয়েছে আজকেও। কি হতো একটু ভিজলে, একটু মজা করা যেত আর মাহিন আজকে মৌরিকে সাঁতার শেখাবে বলেছিলো কিন্তু লিনা আপুটার জন্য কিছুই আর হলো না। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে চলে গিয়েছিলো লিনা আপুর সাথে গোসল করতে।
গোসল সেড়ে বেড়িয়ে এসে সে খুঁজলো মাহিনকে। নাহ.. এখনো ভিজে পুকুরে গোসল করে ফিরেনি।না জানি কতটা ভিজে সে, জ্বর বাঁধালে একেবার অবস্থা শেষ। কোথায় ওকে খুজে না পেয়ে আবার গিয়ে বসলো অর্ধনির্মিত সামনের রুমটাতে। সুন্দর একটি বেঞ্চি পাতা আছে ওখানে। বেঞ্চিতে বসে টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম বৃষ্টি দেখছিলো আর বৃষ্টির মধুময় শব্দ শুনছিলো।

***
ভিজে ভিজে বাসার সামনে আসতেই মাহিনের চোখ পড়লো মাত্র গোসল সেড়ে বেড়ুনো মৌরিকে। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো অপরূপ লাগছিলো তাকে, পবিত্রতার এক আবেশে খেলা করছিলো তার ছোট ছোট অঙ্গগুলি। উদাম গায়ে মাহিনকে দেখে মৌরি কিছুটা লজ্জা পেলো। মাহিন গোসল করতে কিছু নিয়ে যায়নি। ভিজে কাঠ হয়ে গেছে সে, ঠকঠক করে কাঁপছে। মৌরিকে ওর কাপড়গুলো বাথরুমে পৌছে দিতে বলে পিছনের কলপাড়ের দিকে চলে গেলো মাহিন। আরেকবার গায়ে পানি ঢেলে পোষাক পাল্টে ঘরে আসলো সে। শীতে কনকন করছে দেখে আবার খেলো লিনা আপুর বকুনি।
কি.. বলছিলাম না …. বৃষ্টিতে ভেজা লাগবে না? এবার হলো তো? জ্বর হলেই বুঝবে মজা। আরো কত কি..

***
আজ প্রায় ১৭/১৮ বছর পরে আবার ভিজতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো এতোগুলো বছরের আগের স্মৃতি। আর ভেজা হলো না মৌরির সাথে। বৃষ্টির পানিতে নির্মল আনন্দটা অধরাই রয়ে গেলো মাহিনের কাছে। স্মৃতির পটে ভেসে উঠলো আবার সে দিনগুলির কথা আর ভেসে উঠলো আর একটি সুন্দর মুখচ্ছবি। হ্যাঁ … বহু আগে মনের ঘরে বাসা বাধা মৌরির প্রতিচ্ছবিটি প্রতিবিম্ব আকার ধারণ করে বারবার উঁকি দিচ্ছে মাহিনের হৃদয়পটে।
ভিজতে ভিজতে গিয়ে পৌছলো ভার্সিটিতে।বাইকটা রেখে বারান্দায় কনক্রিটের ছাদের নিচে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন। হঠাৎ মনে হলো ভালবাসার মানুষটিকে অনুভূতিটুকু শেয়ার না করলে অপূর্ণতাই থেকে যাবে। হাতে তুলে নিলো সেলফোনটি।
মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখে ফেললো স্মৃতিতে ভেসে ওঠা অনেক বছর আগের কথাগুলি। আক্ষেপটা বলে ফেললো এতো বছরে না ভেজার অপূর্নতা দিয়ে। সাথে সাথে অনুরোধ করলো ……. যদি বৃষ্টি হয় তবে যেন হাতটি বাড়িয়ে দেয় বৃষ্টির মাঝে। দূর থেকে অদৃশ্য ভাবে অনুভুতি দিয়ে ছুয়ে দেবে সে মৌরিকে।
পাঠিয়ে দিলো ক্ষুদে বার্তাটি। কয়েক মিনিট অপেক্ষা, তারপর চলে গেলে বৃষ্টির আরো কাছে….. বাড়িয়ে দিলো হাতটি বৃষ্টির ছোঁয়া নিতে…………
মাহিন এখনো মৌরির ক্ষুদে বার্তার অপেক্ষা করছে, জানেনা সে তার হাতটি বৃষ্টিতে বাড়িয়ে দিলো কিনা?? কিন্তু মাহিনের বৃষ্টিতে বাড়িয়ে দেয়া হাতটিতে বৃষ্টির ছোঁয়া পেতেই এক শিহরণ খেলা করলো!!! শিহরিত হলো তৃষিত হৃদয় আর সমগ্র দেহ………
হয়তো মৌরির বৃষ্টিতে ভেঁজা হাতের ছোয়ার অদৃশ্য ছোয়ায় এ অনুভুতি তৈরী হলো মাহিনের মাঝে……..

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×