খুব নিকটবর্তি অতীতে বাংলাদেশে বি,এন,পি নামের দোর্দন্ড প্রতাপশালী, অতি জনপ্রিয় এক রাজনৈতিক দল ছিল। ডান, বাম, রাজাকার, গাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা, চোর, বাটপার সহ বিভিন্ন রকমের মানুষের সংমিশ্রনে গড়া এই দলটি ভাল মন্দ মিলিয়ে গড় পড়তায় একাধিক বার রাষ্ট্র চালিয়েছে। বিরোধী দল হিসেবেও হাক, ডাক, তর্জন, গর্জন সব মিলিয়ে মন্দের ভাল- চলছিল বেশ। কিন্তু বিগত বছর দশেক ধরে বি,এন,পি নামের এই গর্জন করা বাঘটি যেন নখ-দন্ত হীন, মৃত প্রায়, অসহায় এক প্রানীতে পরিণত হয়েছে। পিল খানা হত্যা কান্ড, শেয়ার বাজার, ব্যাংক লোপাট, হল মার্ক কেলেংকারী, স্বর্ন লোপাট, গুম, খুন, বিচার হীনতা, ভোটার বিহীন নির্বাচন, মধ্যরাতের নির্বাচন সহ আরও অন্ততঃ ডজন খানেক ইস্যুকে এক রত্তি ক্যাশ করতে পারেনি এই দলের নেতারা। বিরোধী দলে এসে যে ক’টা ইস্যু বি,এন,পি পেয়েছে তার দশ ভাগের এক ভাগ ইস্যু, হায়েনার মত হিংস্র, শেয়ালের মত ধূর্ত আরেকটি দল পেলে, একেবারে তেজপাতা বানিয়ে ছাড়ত। জনগনের ইস্যু না হয় বাদই দেওয়া যাক। তাদের নেত্রীর কথায় আসা যাক। যে নেত্রীকে তারা শুধু নেত্রী না, জননী হিসেবে মানে। যার ছায়াতলে এসে দলের নেতাদের অনেকেই ‘তেল চিকচিক্যা’ চেহারা বানিয়েছে, সেই নেত্রীর বাড়ির সামনে বিষ্ঠার ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে দিনের পর দিন আটকে রেখেছে। একটা হাস্যকর দুর্নিতীর মামলায় বয়স্কা এই রমনীকে নাম মাত্র চিকিৎসা নিয়ে জেল হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে। তবুও বি,এন,পি-র চর্বিওয়ালা কেন্দ্রিয় নেতাদের কোন বিকার নেই। কেতা-দুরস্ত, ফিট-ফাট বসন ভূষণে সজ্জিত হয়ে এয়ার কন্ডিশন রুমে সংবাদ সম্মেলনেই এদের রাজনীতি সীমাবদ্ধ।
এক সময়ের পদ্মা প্রমত্তা তটিনী আজ শুষ্ক, বিলীন প্রায়। সেই বিলীন প্রায় পদ্মা প্রমত্তাতেও কালে ভদ্রে জোয়ার আসে, ভাসিয়ে দেয়, প্লাবিত করে, ভেঙ্গে চূরে জানিয়ে দেয় তার অতীত ঐতিহ্যের কথা। কিন্তু বি,এন,পি-র মরা গাঙে জোয়ার আসে না। কাজের অবসরে লাঞ্চ রুমে সহকর্মী বন্ধুর সাথে আলাপ প্রসঙ্গে তাই একদিন বলি, “এদের কি ভূতেও ধরে না? এদের কি লজ্জাও করে না? একটু আধটু নড়াচড়াও কি তেনারা করবেন না? নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য কী এ জীবনে দেখে যেতে পারব না?”
আমার সহকর্মী বন্ধুটি আবার বেশ জ্ঞানী। চশমার উপরি ভাগ দিয়ে বুদ্ধিজীবীর মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে আমার দিকে। আমার চেহারায় যথেষ্ট মাত্রার সিরিয়াসনেস কনফার্ম করে বিজ্ঞের মত জানান দেয়, “বি,এন,পি নেতাদের নড়া চড়া করানোর উপায় একটা আছে।“
“কী উপায়?”, বি,এন,পি নড়ুক না নড়ুক, আমি অন্তত নড়ে চড়ে বসি।
“ওদের হুমায়ূনী সাতোর থেরাপী দিতে হবে?” বিজ্ঞের মত ঘোষণা করে সে।
“হুমায়ূন, মানে বাদশাহ হুমায়ূন?”, আমার প্রশ্ন।
“না, না, হুমায়ূন আহামেদ, লেখক হুমায়ূন আহামেদ!”
সাহিত্য জ্ঞান সম্পর্কে বিশেষ ভাবে অজ্ঞ হলেও, আর দশটা আম বাংলাদেশীর মত আমিও জানি যে হুমায়ূন আহামেদ বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন-একেবারে সব্যসাচী। কিন্তু উনি যে থেরাপিস্টও ছিলেন তা ঘুণাক্ষরেও জানতাম না। আগেই বলেছি বন্ধুটি বুদ্ধিজীবী পর্যায়ের, তার ওপর আবার হুমায়ূন আহামেদের ডাইরেক্ট ছাত্র। তাই পাকনামী না করে আমি বলি, “সাতোর থেরাপী, এইটা কি জিনিস?”
সে বলে,” কেন, হুমায়ূন আহামেদের নাটকে দেখেন না? গ্রামের শেয়ানা পাগলটা গ্রামের বদ চেয়ারম্যান, অথবা শহর থেকে আসা ফাজিল মার্কা কোন চরিত্রের সামনে গাছ থেকে আচমকা লাফ দিয়ে পরে জিগায়,অই মিয়া সাতোর জানো? বেচারা বদ চেয়ারম্যান কোন রকমে বলে, না জানিনা। ব্যাস তারপর আর যায় কই? দে ধাওয়া। ধাওয়া দিতে দিতে একেবারে নূহাশ পল্লীর পুকুরে ফেলে নাকানি চুবানি।“
আমি হাসতে হাসতে বলি, “ হ্যা, হ্যা, অনেক নাটকে দেখেছি।“
সে আবার বলতে থাকে, “ শোনেন তাহলে-
এয়ার কন্ডিশন রুমে বসে বি,এন,পি-র কেন্দ্রিয় নেতারা যখন বাণী দিবে,তখন আচমকা জোরে সোরে, একটা ধমক দিয়ে বলতে হবে, ওই মিয়ারা সাতর জানো? কেউ কেউ সাতার জানলেও পানিতে নামার ভয়ে এক বাক্যে সবাই বলবে, না জানিনা। তখন স্বরটা নরম করে বলতে হবে, চলেন স্যার আপনাদের সাতার শেখাবো। যেতে চাইবে না কেউ। কিন্তু আধা বেলা আওয়ামী রিম্যান্ডের ভয় দেখালেই সুর সুর করে সবাই রাজী হয়ে যাবে। লাক্সারী বাসে করে ওদের তারপর নিয়ে যেতে হবে বঙ্গোপসাগরে। সাগরের তীরে এসে কেউ কেউ বেঁকে বসতে পারে। অসুবিধা নাই, পকেটে দুই পুরিয়া করে ইয়াবা চালান দিয়ে পশ্চাত দেশে মৃদু আঘাত করে বলতে হবে, নাম, পানিতে নাম, ইয়ের পুত। সাগরের লোনা পানিতে কিছুক্ষণ 'ও দরিয়ার পানি, তোর মতলব জানি’ বলে দাপাদাপি করে ডাঙ্গায় ফেরত আসতে চাইবে। কিন্তু চেতনা লীগ, হেলমেট লীগ, ফুলিশ লীগ, আরও কত শত লীগের চৌকশ সেনারা ততোক্ষণে পুরো সাগর তীর ঘিরে ফেলেছে। যে কোন সময় জয় বাংলা বলে ‘চিক্কুর দিয়ে’ ঝাপিয়ে পরবে। বেঁচে থাকতে হলে বি,এন,পি-র চর্বি ওয়ালা নেতাদের সামনে তখন দুইটি পথ খোলা থাকবে।
প্রথম পথ- তাদের সাতরাতে হবে। সাতরাতে সাতরাতে সাগর পাড়ি দিয়ে গন্তব্য আন্দামান। আর দ্বিতীয় পথ- তীরে এসে মোকাবেলা করা। বেঁচে থাকতে হলে বীরের মত নেতৃত্ব দিতে হবে। ডু অর ডাই। “
ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯