“ - - তোমার মালিকের (বিশাল) বাহিনী সম্পর্কে তিনি ব্যতীত আর কেউই জানে না - -“
সূরা মুদ্দাসসির,আয়াত-৩১
জাতিগত নাম করোনা ভাইরাস, পুরো নাম কোভিড-১৯। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশ থেকে Li Wenliang নামের এক ডাক্তারের কাছ থেকে সর্বপ্রথম মিউটেটেড এই ভাইরাসটির ভয়াভহতার কথা বিশ্ববাসী অবগত হয়। চলমান এই পৃথিবীতে পাল্লা দিয়ে ছুটে মানব সভ্যতার কাঁধে সওয়ার হয়ে মাত্র তিন মাস সময়ের মধ্যে, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ, দূর প্রাচ্য, মধ্য প্রাচ্য, সিংহল সমূদ্র থেকে অন্ধকার মালয় সাগর- সব এখন করোনা ভাইরাসের দখলে। যে ইউরোপিয়ানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে রক্তের হোলি খেলা খেলেছিল, সেই ইউরোপের অবস্থা আজ চিরে চ্যাপ্টা। প্রতি দিন লাশের মিছিলে সামিল হচ্ছে হাজারো মুখ। পালাবার পথ নেই- উপায় নেই গোলাম হোসেন। পার্ল হার্বারে বোমা ফেলার জিঘাংসায় মাত্র দুটি এটম বোমা মেরে হিরোসিমা, নাগাসাকি শহর ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিল যে আমেরিকা, সেই আমেরিকার অবস্থা আজ ঢাল নাই তরোয়াল নাই নিধিরাম সর্দারের মত। করোনা প্রতিরোধ তো দূর অস্ত, শত্রু শনাক্ত করার পর্যাপ্ত সামগ্রী পর্যন্ত তার কাছে নাই। ক্ষুদে এক বাহিনীর কাছে দোর্দন্ড প্রতাপশালী, সউর্য-বীর্যশীল মানব সভ্যতার (?) কী অসহায় আত্মসমর্পণ! যথার্থই মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন কুরআনে বলেছেন, “আসমান সমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তারা সবাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, আল্লাহ্কে সিজদা করে চলছে- - - (সূরা আর-রা’দ, আয়াত ১৫)।“
আজ বাইশে মার্চ, ২০২০ রবিবার দুপুর অব্দি করোনা ঘটিত মৃত্যু শুমারীতে যোগ হয়েছে তের হাজারের বেশী আদম সন্তান, আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখের বেশী। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়ত শুনতে পারি অমুকের কথা, হয়ত সেই অমুকটি হতে পারি আমি নিজেই। ভোগবাদী আধুনিক বিশ্ব এখন এক মহা ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা এই যে, আমরা একদল বুদ্ধিমান মানুষ যখন টয়লেট পেপার আর খাদ্য সামগ্রী স্টক করায় ব্যাস্ত তখন একদল নির্বোধ মানুষ ব্যাস্ত নিজের জীবন বাজি রেখে অন্য অনেক প্রান বাঁচাতে। আরও একদল বোকা মানুষ ব্যাস্ত প্রতিষেধক আবিষ্কার করে লক্ষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য। ঝঞ্জাময় আঁধার রাতে আশার আলোকবর্তিকা বাহক সেই সব নির্বোধ আর বোকা মানুষদের জন্য রইল এক পৃথিবী ভালোবাসা।
সদ্য বুলি ফোটা শিশু থেকে আশি বছরের পৌরাণিক বৃদ্ধ পর্যন্ত আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি তাদের নিত্যকার জীবনে খুব দ্রুত জেনেটিক মিউটেশন ঘটিয়ে দিয়েছে করোনা। সাময়িক ভাবে হলেও “Coronic Mutation” এর বদৌলতে ডাটা প্ল্যান, আই ফোন, আই প্যাড, ফেইস বুক, গেগাবাইট শব্দ গুলো আমাদের Gene থেকে বিলুপ্ত হয়ে লক ডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, সোস্যাল ডিস্টেন্স শব্দ গুলো নতুন ভাবে সংযোজন হয়েছে। ভাল,মন্দ, সাদা, কালো, বোকা, বুদ্ধিমান, ধনী, গরীব যাই হোক না কেন, দিন শেষে আমরা যে মানুষ-জীবন প্রেমিক মানুষ। আমরা যে আমৃত্যু বাঁচতে চাই । এই শব্দ গুলো একদিকে যেমন আমাদের বাঁচতে শেখাচ্ছে আরেক দিকে তেমনই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করেও দিচ্ছে-বড় প্রেম কেবল কাছেই টানে না, ইহা দূরেও ঠেলিয়া দেয়।
এই শারীরিক দূরত্ব যেন মনের ভেতর বাসা না বাঁধে। দোকানে গিয়ে এক বান্ডল টয়লেট পেপার নেবার পর দ্বিতীয়টি ছোঁয়ার আগে যেন আরেকজনের কথা ভাবি। এক ব্যাগ চাল নেবার পর আরেকটি স্পর্ষ করার আগে যেন আরেকটি ক্ষুধার্ত পরিবারে কথা ক্ষণিকের জন্য হলেও ভাবি। প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে- - - (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)- তবে মৃত্যুটি যেন মানুষ হিসেবে হয়। চেষ্টা করি ভাল কিছু কাজ করে এই ধরণী থেকে বিদায় নিতে। অন্ধকার অমাবস্যার দীর্ঘ রজনী শেষে আলোকময় এক নতুন সূর্যের সকাল ধরনীতে আসবে নিশ্চয়ই। সেই মিষ্টি রোদ্দুর মাখা সোনালী সকালের অপেক্ষায় থাকি আর প্রার্থনা করতে থাকি মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে- বেঁচে থাক মানুষ, বেঁচে থাক মানবতা।
Brampton
March 22, 2020