somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী দিবসঃ নারীর কেন অত্যাচারিত ? দোষটা কার ? পুরুষ না নারীর?

০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই এই গল্পটা জানি।রাজা একটা বানর পুষতেন,বানরটাকে প্রচুর আদর যত্ন করতেন।নিজ হাতে খাওয়াতেন,নিজ হাতে গোসল করাতেন।কিন্তু প্রতিদিন তিনটি করে বেত্রাঘাত করতেন।এই দেখে সভাসদগণ এক হয়ে রাজাকে জিজ্ঞাসা করলো কেন এমনটি করা হচ্ছে।রাজা তখন কিছু না বলে বেত্রাঘাত বন্ধ করে দিলেন এবং সভাসদগণ কে বানরটিকে পর্যবেক্ষন করতে বললেন। প্রথমদিন বানরটি রাজা মহাশয়ের শরীরে ঘষাঘষি করলো। দ্বিতীয় দিন রাজার উরুতে বসে নাচানাচি, জামা কাপড় ধরে টানাটানি করলো। তৃতীয় দিন বানরটি নাচানাচি করে রাজার মাথায় চড়ে বসলো।

গল্পটি কেন বলা তাতে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।নারী দিবস অনেক বড় বড় ব্যাক্তিত্বের অনেক বক্তব্য শুনে আমরা হাততালি দেই।সবজায়গায় একই ধ্বনি বাজতে থাকতে , পুরুষদের দৃষ্টিভংগি খারাপ।হ্যা অবশ্যই, এই কথাটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই আমাদের দৃষ্টিভংগী খারাপ।ঘরের মধ্যে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের স্ত্রীদের নির্যাতন করছি,প্রেম না করলে এসিড ছুড়ে দিচ্ছি।আজকে যে নারী দিবসটা চলে গেলো এই দিনেও গার্লস স্কুল কলেজ গুলোর সামনে অসংখ্য ইভটিজার হয়তো ইভটিজিং করেছে।বড় উৎসব গুলোতে একটু ভীড় পেলেই আমরা ছেলেরাও যে অসাধারণ হস্তকর্ম করতে পারে তার প্রমাণ রেখেই যাচ্ছি।যানবাহনগুলোতে আবাল-বৃদ্ধ মিলে বনিতার একটু স্বর্গীয় স্পর্শ পাওয়ার জন্য যে অসাধারণ সার্কাস করতেছি তাদের বাসাতেও মা বোন ছিলো,এখনো আছে এবং থাকবে।হ্যা আমাদের দৃষ্টিভংগীতে অনেক সমস্যা।

আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের মানুষের দৃষ্টিভংগি আপনি কতই বা উন্নত চান ? হ্যা অনেক মানুষ আছে যারা এইসব দৃষ্টিভংগী পাল্টানোর ক্যাম্পেইন দিয়ে নিজেদের দৃষ্টি এবং ভংগী উভয়ের পরিবর্তন আনতে পারে কিন্তু তারা কত শতাংশ ? আপনাকে ভালো মানুষ হতে হলে ভালো পরিবেশ লাগবে,ভালো মানুষ হতে হলে উন্নত সামাজিকীকরণ দরকার হয়,কোনটার উন্নতি হচ্ছে।সেটাও ধরে নিলাম হচ্ছে,কিন্তু তা কত দ্রুত? আবার ভালো পরিবেশে থেকেও একজনের দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ হইতে পারে, যেখানে খারাপ পরিবেশে থাকা একটা মানূষের খুব দ্রুত পরিবর্তন আসতে পারে।সুট টাই,হাতে কালো ব্রিফকেইস সহ লোকটা তার স্ত্রীকেই যৌন অত্যাচার করতেছে এমনটাও হয়।( আমার মতে একজন স্ত্রীর সম্মতি বা ইচ্ছা ছাড়া শুধুমাত্র স্বামীর ইচ্ছাতেই যৌন মিলন একধরণের যৌন অত্যাচার)।

আপনারা বলবেন এই পরিবর্তন এক দিনে হবে না, আস্তে আস্তে হবে।আমার জন্মের পর থেকে যতগুলো নারী দিবস গেছে কই আমি তো কোনো পরিবর্ত্ন দেখি নি। নারীরা হয়তো কর্মক্ষেত্রে বেশি সক্রিয় হয়েছে কিন্তু এখন মনে হয় নারী নির্যাতন আগের চেয়ে আরো বেড়েছে, আরো আধুনিক মাত্রা ধারণ করছে। সুতরাং আপনারা দৃষ্টিভংগি পাল্টানোর কথা বলে আসল সমাধানের ব্যাপারগুলো ইগনোর করছেন।

নারীর এ পিছিয়ে পড়ার মূল দোষটা নারীদেরই ।ছোটবেলায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জাগো গো ভগীনি পড়েছিলাম।ওখানে কয়েকটা ব্যাপার এখোনো মাথায় আছে।নারীর দাসী মনোবৃত্তি অর্থাৎ তাদের মধ্যে একটা দাসী মনোবৃত্তি কাজ করে।দুনিয়া অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।এখনও বাংলা সিনেমার গ্রাম বাংলার ঐ সহজ সরল পতির চরিত্রে অভিনয় করলে দিনশেষে মদ খাওয়া নায়কের হাতে অত্যাচারটাই জুটবে,অধিকার আর জুটবে না।

আপনি পাড়ার বখাটেদের কাছে কথা শুনে আত্মহত্যা করতেছেন,আর সবাই উঠে পরে লাগতেছে ইভটিজার এর পেছনে ( আমার মতে ইভটিজার এর ফাসি হওয়া উচিত) আর আপনারা মুল সমস্যাটাকে ইগনোর করতেছেন? এই এক একটা আত্মহত্যা কি জানেন?? নারীর জাতির জন্য এক একটা কলংকের ছাপ।আপনারা মানষিক ভাবে কতোটা দুর্বল।কতটা পিছিয়ে আছে,আপনারা স্টেপ না নিলে কি ঐ ইভটিজার এসে স্টেপ নিয়ে যাবে।প্রাণটা আত্মহত্যায় সপে না দিয়ে ঐ ইভটিজার কে সায়েস্তা করার পেছনে ব্যায় করলে আপনি তো দৃষ্টান্ত হতে পারতেন।

ধরেন বাসে একটা ছেলের পাশে একটা হিজড়া বসল ( আমি রূপক হিসেবে নিচ্ছি, হিজড়াদের প্রতি পূর্ন শ্রদ্ধা রেখে) হিজড়াটা ছেলেটাকে নানাভাবে উত্যক্ত করলো।হিজড়াটাকে আর বাসে থাকা লাগবে না।ওইরকম ছেলে হইলে ওইখানেই মাইর দিয়ে রক্তারক্তি হইতে পারে।আর আপনাদের পাশে একটা ছেলে বসে গুতোগুতি করলে আপনারা মিনমিনায়া বলেন , আপনি এরকম করতছেন কেন, সরেন,ওদিকে চেপে বসেন। আর ছেলেটি দিগুন উৎসাহে তার ক্ষুধা নিবারণ করতে থাকে।কেন আপনাদের কি আল্লাহ তাআলা হাত দেয় নাই।একটা থাপ্পর মাইরা দেখেন না কি হয়।সাহস নাই।মানুষজন কি বলবে তাই তো ? আপনার ভদ্রতা উবে যাবে।অভদ্র মেয়ে হয়ে যাবেন? কে অভদ্রতা দেখাবে আর কে ট্যাগ খাবে তাইতো।তো এইরকম চলতেই থাকবে।আপনারাও সহ্য করেন।আপনারা স্টেপ না নিলে নিবে টা কে??? বাসের ড্রাইভার ??

আমার একটা পরিচিত ফ্রেন্ড আছে, এই ধরণের ব্যাপার টের পাইলে সেইফটিপিন বের করে।ব্যাপারটা শুনে আমি প্রচন্ড খুশি হইছি।নিজেরা না আগাইলে ঐ দৃষ্টিভংগির রেকর্ড বাজিয়ে আর কয়দিন?

বাসের সিটের ব্যাপারে আমি সবসমই একটু উদ্ধত।আমি বয়ষ্ক,শিশু,অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধি ছাড়া আমার বসার জায়গা কাওকে দিয়ে সাহায্য করি না।আসলে ইনাদের জন্য সিট ছেড়ে দেওয়াটা সামাজিক কর্তব্য , সাহায্য।আর মেয়েদের জন্য সিট ছেড়ে দেওয়া তাদের প্রতি করুণা। চিন্তা করে দেখুন আপনারা কোনো ছেলের জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন।যদি আত্মসম্মানবোধ থাকে,জীবনেও ওই ছেলে ওই সিটে বসবে না।আর আপনারা প্রতিনিয়ত আমাদের করুনার প্রার্থী হয়ে নিজেদের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে চলেছেন।

এমনকি আপনারা ছেলেদের পাশে বসতে বিব্রতবোধ করেন।কারণ কি ?আপনারা উত্কাত্রর দিবেন " ছেলেরা সবসময় আমাদের গুতায়, তাই প্রিভেন্টিভ মেজার।আপনিই বলুন কত জায়গায় প্রতিবাদ করবো?আমাদের জায়গা আপনি থাকলে বুঝতেন।" আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন আপনাদের জায়গায় যদি আমরা থাকতাম , যদি জিজ্ঞাসা করতেন যে মেয়েদের পাশে বসে বিব্রতবোধ করার কারণ কি?আমার এখনি এই প্রশ্ন শুনে লজ্জা লাগতেছে।উত্তর আর কি দিবো।অথচ আপনাদের মধ্যে অনেকেই নির্লজ্জের মত হাজারটা কৈফিয়ত শুনিয়ে দেন।

ও আচ্ছা,আপনাদের জন্য তো বাসে সংরক্ষিত আসন আছে।আপনারা আসন হচ্ছে শিশু , প্রতিবন্ধিদের পাশে।প্রত্যেকটা বাস আপনাদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করে যাচ্ছে।বলেই যাচ্ছে আপনারা অসহায় , আপনারা আলাদা জাতি , আপনাদের জন্য আলাদাভাবে জায়গা সংরক্ষিত।আপনারা কি চিড়িয়াখানার জীব নাকি যে আপনাদের আলাদা করে রাখছে ? নিজেদের আত্মসম্মানে লাগে না ??? চিন্তা করে দেখুন আপনাদের কতটা করুনা করা হয়।বেশিরভাগ সময় বৃদ্ধদের জন্য আমি জায়গা ছেড়ে দেই।কই কোনোদিন তো কোনো মেয়েকে নিজের জায়গাটা তাদের জন্য ছেড়ে দিয়ে একটু হলেও কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করতে দেখলাম না (খুব কমই আছেন যারা করেন)।

বানরের গল্পটা একটু হলেও হয়তো বুঝতে পেরেছেন।আপনাদের কারণেই বানরগুলো আপনাদের মাথায় উঠেছে।তাদেরকে পিটিয়ে নামানোর দায়িত্বটা আপনাদের।শত হলেও আমরা বানর পিটিয়ে তো আর ঘোড়া বানাতে পারবো না।

হুম যারা দৃষ্টি ভংগি পাল্টানোর ক্যাম্পেইন করছেন তারা করে যান,কিছু তো উন্নতি তাতে হচ্ছেই,কিন্তু এর সাথে আমি আরো যোগ করবো

Women,raise your voice against all wrong doings happened with you.
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×