দুর্ঘটনা তো কতোই ঘটে থাকে।।দিন নেই রাত নেই,সকাল-বিকাল,পথে-ঘাটে,রাস্তায়-আকাশে- সমুদ্রে।।দুর্ঘটনা কখন ঘটবে তার কোনো সময় ও নাই।।কিন্তু কিছু কিছু দুর্ঘটনা জন্ম দেয় এমন কিছু অধ্যায়ের যা অনেক সময় পরিবর্তন করে দেয় গোটা পৃথিবীর মানুষের চিন্তা ভাবনা,আশা আখাঙ্খা।।পরিবর্তন করে দিতে পারে অনেক ইতিহাস।।জন্ম ও দিতে পারে নতুন ইতিহাসের।।
যেমন ধরুন উরুগুয়ান এয়ারফোর্স ফ্লাইট ৫৭১ ,১৯৭২ এর ১৩ই অক্টোবর ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে।।আন্দিস পর্বতমালাতে বিমানটি বিদ্ধস্ত হয়।।১৯৭২ এর ২৩শে ডিসেম্বর প্রচন্ড বিরুপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে যখন বিদ্ধস্ত বিমানটি খুজে পাওয়া যায়,তখন সেখানে ১৫ জন জল জ্যান্ত মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেচে ছিলো।।ঘটনাটি “আন্দিস ফ্লাইট ডিজাস্টার’ অথবা “মিরাকল ইন দ্যা আন্দিস” নামে পরিচিতো।।
এখন আসি আসল কথায়।।
৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫৮ সাল।।তখনকার সময়ের ইংল্যান্ডের সব থেকে শক্তিশালী ফুটবল দল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তাদের ইউরোপীয়ান ম্যাচ খেলতে যুগোস্লোভিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেডের মাঠে গেছিলো।।খেলা শেষে তারা নিজ দেশের পথে যাত্রা শুরু করে,বৃটিশ ইউরোপীয়ান এয়ারোয়েজের ফ্লাইট ৬০৯ এ করে।।বিমানে যাত্রী ছিলো মোট ৪৪ জন।।এদের মাঝে তখনকার আলোড়ন তোলা “বাসবী বেবিস” নামে খ্যাত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ইউরোপীয়ান দল,কিছু সামর্থক ও কয়েকজন সাংবাদীক আর ৬ জন বিমান ক্রু ছিলো।।তখনকার এই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড দলটি ক্রমশ ইউরোপের শক্তিশালী দলে পরিনত হচ্ছিলো, বাসবী বেবিস বলার কারন ম্যানেজার ম্যাট বাসবী তার দলটি কে তরুন,প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছিলেন,যারা ১৯৫৮ এর আগে এক বার এফ এ কাপ ও দুই বার লীগ শিরোপা জয় করে।।তারা তখন পর পর তিন বার লীগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছিলো।।দলটি ইউরোপীয়ান কাপের সেমিফাইনালে ওঠে ও পর পর ১১ টি ম্যাচ জয়ের ধারাবাহীকতায় ছিলো।।
যাই হোক পথে জ্বালানী নেবার জন্য বিমানটি অবতরন করে জার্মানীর মিউনিখ বিমান বন্দরে।।রিফিউলিংএর পরে বিমান উড্ডয়ন কালে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে বিমানটি রান ওয়েথেকে একটু উপরে উঠেই বিদ্ধস্ত হয়।।সাথে সাথেই বিমানের ৪৪ জন যাত্রী ও ক্রুর ২০ জন মারা যায়।।যার মাঝে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রথম সারীর ৭ জন খেলোয়াড় মারা যায়।।পরবর্তীতে ১৫ দিন হাস্পাতালে অসুস্থ থেকে মারা যান ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকাতে স্থান পাওয়া ২১ বছর বয়সী খেলোয়াড় ডংকান এডওয়ার্ডস।।এ ছাড়াও কোচ স্যার ম্যাট বাসবী ও মারাত্মক আহত হন,কিন্তু সেরে ওঠেন।।এছাড়াও ৮ জন সাংবাদিক ও মারা যান।।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের যে সকল খেলোয়াড় মারা যান তাদের নাম নিম্নরূপঃ
১.রজার ব্রায়েন ( ২৮) ।
২.মার্ক জোনস (২৪) ।
৩.ডেভিড পেগ (২২) ।
৪.টমী টেইলর (২৬) ।
৫.জিওফ বেন্ট (২৫) ।
৬.লেম হুইলান (২২)।
৭. এডি কোলম্যান (২১) ।
৮.ডাঙ্কান এডওয়ার্ডস (২১) ।
এছাড়াও জনী বেরী ও জ্যাকী ব্লাঞ্চফ্লাওয়ার ইঞ্জুরীর কারনে আর মাঠে নামতে পারেননি।।
"“অফ টপিকঃএই ঘটনার পরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কে নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সামর্থকরা কম মজা করেনি।। তারা অনেক সময় বলতো “man U man U going abroad to play , man u man u never came back again” তখন থেকে এক সারীর বিকৃত মশ্তিষ্কের সামর্থক Manchester United কে man u অথবা Manu বলে ডাকা শুরু করে।।এছাড়াও manure (প্রানীর বিষ্ঠা থেকে তৈরী সার বিশেষ) শব্দ টিকে তারা ছোটো করে manu বানিয়ে Manchester united কে অবজ্ঞা করার চেস্টা করে।।আসলে Manchester United এর নাম Man Utd/Man United/United/Red Devils, কখনই Man U না।।আমরা যারা Man U বলে ডাকি তারা নিজের অজান্তেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কে ছোটো করি এবং মিউনিখ ট্রাজেডীর নিহতদের অসম্মান করে থাকি।।এ দিকে সবাই একটু খেয়াল রাখলে ভালো হয়”---সুত্রঃম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ফোরাম।।"
এই ঘটনার ১০ বছর পরে ১৯৬৮ সালে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড প্রথম ইংলিশ দল হিসাবে ইউরোপীয়ান শিরোপা জয় করে,সেই মওসুমে জর্জ বেস্ট ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচীতো হন।। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ ম্যাট বাসবী ইংল্যান্ডের রাণী কতৃক “নাইট হুড” সম্মাননা লাভ করে হয়ে যান "“স্যার ম্যাট বাসবী"”।।২০০৮ এর ৫০ তম বার্ষীকীতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তাদের ইতিহাসের তৃতীয় বারের মতো ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় করে ও তা এই মিউনিখ ট্রাজেডীর শিকার দল “বাসবী বেবিস” কে উতস্বর্গ করে।।
আজ ৬ই ফেব্রুয়ারী মিউনিখ ট্রাজেডির ৫৩ তম বর্ষ।।একজন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ফ্যান হিসাবে যখনি এই কথাটা মনে পড়ে,মনে হয় কি হতো এই ঘটনা না ঘটলে।।হয়তো ইউরোপের ফুটবল ইতিহাসটা অন্যভাবে লিখা হতো।
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া
www.manutd.com
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




