somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাপ্রলয় :কেয়ামতের বৃহত্তম নিদর্শনসমূহ (৬ষ্ঠ খন্ড )

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'' ইয়াজূজ-মাজূজের উদ্ভব ''

ইয়াজূজ এবং মাজূজ হচ্ছে আদম সন্তানের মধ্যে দু’-টি গোত্র, যেমনটি হাদিস এবং বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।হাফেয ইবনে হাজার রহ.এর মতে- তারা নূহ আ.-এর পুত্র ইয়াফিছের পরবর্তী বংশধর। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ অস্বাভাবিক বেঁটে, আবার কিছু অস্বাভাবিক লম্বা।
বরং তারা হচ্ছে সাধারণ আদম সন্তান। বাদশা যুল কারনাইনের যুগে তারা অত্যাধিক বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। যুলকারনাইনের নির্মিত সুদৃঢ় প্রাচীরের দরুন দীর্ঘকাল তারা পৃথিবীতে আসতে পারেনি। প্রাচীরের ওপারে অবশ্যই নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা জীবন যাপন করছে। তবে অদ্যাবধি তারা সেই প্রাচীর ভাঙতে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
নবী করীম সা. বলে গেছেন যে, ঈসা নবী অবতরণের পর তারা সেই প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। আল্লাহর আদেশে ঈসা আ. মুমিনদেরকে নিয়ে তূর পর্বতে আশ্রয় নেবেন।

অতঃপর স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো আমরা পর্যায়ক্রমে ।

ঐতিহাসিক সেই প্রাচীর নির্মাণ
যুল কারনাইনের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক বলেন- “আবার সে পথ চলতে লাগল। অবশেষে যখন সে দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে এক জাতিকে পেল, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বললঃ হে যুলকারনাইন! ইয়াজূজ ও মাজূজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। সে বললঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন সে বললঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন সে বললঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজূজ ও মাজূজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে-ও সক্ষম হল না।” (সূরা কাহফ ৯২-৯৭)

কে সে যুল কারনাইন?
তিনি হচ্ছেন -এক সৎ ঈমানদার বাদশা। নবী ছিলেন না (প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী)। পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলকারনাইন বলা হয়। অনেকে আলেকজান্ডার কে -যুলকারনাইন আখ্যা দেন, যা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, যুলকারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। তাছাড়া তাদের দু-জনের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বৎসরের ব্যবধান। (আল্লাহই ভাল জানেন)

বিশ্ব ভ্রমণকালে তিনি তুর্কী ভূমিতে আর্মেনিয়া এবং আযারবাইজানের সন্নিকটে দু-টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছেছিলেন। এখানে দু’টি পাহাড় বলতে ইয়াজূজ-মাজূজের উৎপত্তিস্থল উদ্দেশ্য, যেখান দিয়ে এসে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত, ফসলাদি বিনষ্ট করত। তুর্কীরা যুলকারনাইন সমীপে নির্ধারিত টেক্সের বিনিময়ে একটি প্রাচীর নির্মাণের আবেদন জানাল। কিন্তু বাদশ যুলকারনাইন পার্থিব তুচ্ছ বিনিময়ের পরিবর্তে আল্লাহর প্রতিদানকে প্রাধান্য দিলেন। বললেন- ঠিক আছে! তোমরা আমাকে সহায়তা করো! অতঃপর বাদশা ও সাধারণের যৌথ পরিশ্রমে একটি সুদৃঢ় লৌহ প্রাচীর নির্মিত হল। ইয়াজূজ-মাজূজ আর প্রাচীর ভেঙে আসতে পারেনি।

ইয়াজূজ-মাজূজের ধর্ম কি? তাদের কাছে কি শেষনবীর দাওয়াত পৌঁছেছে?

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, তারা হচ্ছে আদম সন্তানের-ই এক সম্প্রদায়। হাফেয ইবনে হাজার রহ.এর মতে- তারা নূহ আ.-এর পুত্র ইয়াফিছের পরবর্তী বংশধর।
ইমরান বিন হুছাইন রা. থেকে বর্ণিত, কোন এক ভ্রমণে আমরা নবীজী সাথে ছিলাম। সাথীগণ বাহন নিয়ে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। নবীজী উচ্চকণ্ঠে পাঠ করলেন- “হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব বড় কঠিন।” (সূরা হাজ্ব ১-২) নবীজীর উচ্চবাক্য শুনে সাহাবাগণ একত্রিত হতে লাগলেন, সবাই জড়ো হলে বলতে লাগলেন- “তোমরা কি জান- আজ কোন দিবস? আজ হচ্ছে সেই দিবস, যে দিবসে আদমকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বললেনঃ জাহান্নামের উৎক্ষেপণ বের কর! আদম বলবেঃ জাহান্নামের উৎক্ষেপণ কি হে আল্লাহ..!? আল্লাহ বলবেন- প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন জাহান্নামে আর একজন শুধু জান্নাতে!! নবীজীর কথা শুনে সাহাবাদের চেহারায় ভীতির ছাপ ফুটে উঠল। তা দেখে নবীজী বলতে লাগলেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! সেদিন তোমাদের সাথে ধ্বংসশীল আদম সন্তান, ইয়াজূজ-মাজূজ এবং ইবলিস সন্তানেরা-ও থাকবে, যারা সবসময় বাড়তে থাকে (অর্থাৎ ওদের থেকে নয়শ নিরানব্বই জন জাহান্নামে, আর তোমাদের থেকে একজন জান্নাতে)। সবাই তখন আনন্দ ও তৃপ্তির নিশ্বাস ছাড়ল। আরো বললেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! মানুষের মাঝে তোমরা সেদিন ঊটের গায়ে ক্ষুদ্রচিহ্ন বা জন্তুর বাহুতে সংখ্যাচিহ্ন সদৃশ হবে।-” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ হাশরের ময়দানে ইয়াজূজ-মাজূজ, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি এবং ইবলিস বংশধরদের উপস্থিতিতে তোমাদেরকে মুষ্টিমেয় মনে হবে। ঠিক উটের গলায় ক্ষুদ্র চিহ্ন আঁকলে যেমন দেখা যায়, হাশরের ময়দানেও তোমাদের তেমন দেখাবে।

সামনে আরো বিস্তারিত বিবরণ আসছ...
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×