somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের: আওয়ামীলীগের এমপি গোলাম মাওলা রনি

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলে নেই: আওয়ামীলীগের এমপি গোলাম মাওলা রনির জন্মস্থান সদরপুরে। তিনি বুঝে শুনেই নিচের লেখাটি লিখেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

কাদের মোল্লার মামলার প্রথম বিচার্য বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের নিয়ে। প্রসিকিউশনের দাবি, মিরপুরের কুখ্যাত খুনি কসাই কাদেরই আজকের কাদের মোল্লা। প্রমাণ হিসেবে অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে তৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত কসাই কাদেরের একটি ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। চশমা চোখে দেওয়া কসাই কাদের পাকিস্তানি সেনাকমান্ডার নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো।

অন্যদিকে কাদের মোল্লা তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি যুদ্ধকালীন তার জন্মভূমি ফরিদপুর জেলার সদরপুরে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন। সেখানকার বিখ্যাত মীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে থাকতেন এবং তার দুই মেয়েকে পড়াতেন। আমি (রনি) ধলামিয়া পীর সাহেবকে চিনতাম এবং তার দুই মেয়েকেও চিনি। পীর ধলামিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সমর্থক। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুন্নবী যিনি কিনা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনিও তার সহযোদ্ধা হিসেবে একসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। কাদের মোল্লার জবানবন্দি মতো প্রসিকিউশন যদি এসব বরেণ্য ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারতেন তাহলে বিচারকার্য নিয়ে প্রতিপক্ষ টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতেন না। অন্যদিকে আসামি উল্লেখ করেছেন, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ করতেন। এক্ষেত্রে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্ণধার বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা যেত।

কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! কি ভয়াবহ বক্তব্য। প্রসিকিউশনের উচিত ছিল যথাযথ যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করে এ বক্তব্যটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। কাদের মোল্লা বলেছেন, যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় তিনি পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী। তাকেও সাক্ষী হিসেবে আনা যেত। কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন আরও অনেক নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। তিনি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য_ দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। কাজেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা যেত।

জনদাবি উঠেছে, সরকার যেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় মেনে না নিয়ে উচ্চতর আদালতে আপিল করে। আশা করি, জনতার আবেগকে সম্মান দেখিয়ে সরকার অবশ্যই আপিল করবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি দেশের স্বনামধন্য ও প্রথিতযশা আইনজ্ঞদের এ মামলার প্রসিকিউটর নিয়োগ না করে তবে আমার ভয় হচ্ছে_ 'মহামান্য উচ্চতর আদালত থেকে আরও বিব্রতকর রায় আসতে পারে।'

অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় ঘোষিত হলো ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। এ রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে পক্ষ-বিপক্ষের কেউই খুশি হয়নি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্ম হয়নি সে সব লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের তরুণ মনের আকুতি, 'কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই' বিভিন্ন সামাজিক সাইট বিশেষত ফেসবুকের প্রায় ২০ লাখ সদস্য রায় ঘোষণার পর তাদের তির্যক মতামত ব্যক্ত করেছেন নিজস্ব ওয়ালে। এর পর তারা রাস্তায় নেমে আসেন। এখনো পর্যন্ত সবাই শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। আমার প্রশ্ন, এমনটি কেন হলো। এভাবে চললে ভবিষ্যতে রায়ে আরও হতাশাব্যঞ্জক কিছু আসতে পারে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কিংবা গোলাম আযম যদি খালাস পান তাহলে সেই দায় কে নেবে?

Click This Link
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×