While in Rome be a Roman কথাটা মানলে পশ্চিমা শৌচাগার ব্যাবহার শিখতে কয়দিন লাগে?
এদেশে আসার পর অনেক ম্যানার শিখেছি। এপার্টমেন্টে এলিভেটরে উঠার জন্য ছুটে আসছি, দরজায় এসে দেখলাম একজন সাদা মানুষ দরজা খোলা রাখার বাটন চেপে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সেদিন কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে উঠেছিল। আমি তখন সদ্যই সিঙ্গাপুর থেকে এখানে অভিবাসন করে এসেছি, সিঙ্গাপুরের চায়নিজদের মধ্যে এই ম্যানার দেখিনি।
চাকুরীর প্রথম বছর গাড়ি ছিল না, বাসে যাতায়াত করতাম। একদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বাস ধরার জন্য হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছি, এমন সময় একটা গাড়ি রাস্তার পাশে এসে আমার কাছে দাঁড়ালো, জানালার কাঁচ নামিয়ে বলছেন, শুভ সকাল। ‘শুভ সকাল’ উত্তর দিয়ে তাঁকিয়ে দেখি আমাদের কোম্পানির প্রেসিডেন্ট। তিনি বললেন, হাসান উঠে পড়ো, আমি অফিসেই যাচ্ছি। এরপরে কত যে তাঁর কাছ থেকে রাইড পেয়েছি তার ইয়ত্তা নাই! তিনি এত আন্তরিক ও ফ্রেন্ডলি যে আমি কোনদিন বুঝতে পারিনি আমি বিদেশী ও বাদামি চামড়ার।
আমি বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যখন চাকুরী শুরু করি তখন সব মিলিয়ে জনা বিশেক মানুষ ছিলো। বাইশ বছর আগে এ প্রতিষ্ঠানে আমি একমাত্র বাদামী চামড়ার ছিলাম, বাকি সবাই সাদা। এখন প্রায় নব্বই জন। বছর দুই হলো স্থান সংকুলান না হওয়ায় আগের চেয়ে বড় আয়তনের অফিসে স্থানান্তর হয়েছে।
গত কয়েক বছর হলো আমাদের প্রতিষ্ঠানে অনেক জাতের মানুষ জড়ো হয়েছে। একটা বড় অংশ ভারতীয় ও চায়নিজ। চায়নিজরা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে কোন হায়,হ্যালো বলে না, চোখের দিকে তাকায় না, মনে হয় মহাশুন্যের কানা গলি দিয়ে হাটঁছে। এরা ক্যাফেটেরিয়ায় এসে শুঁটকি খাবার গরম করে খায়। আমি শুঁটকি মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারি না, সেজন্যে লাঞ্চ আওয়ারের অনেক পরে যাওয়া শুরু করলাম। কিছুদিন পরে দেখি ইমেইল নোটিশ, এখানে অনেকের মাছে মারাত্মক এলাৰ্জি আছে তাই সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে কোন ফিশ আইটেম মাইক্রোওয়েভে যেন গরম করা না হয়।
আমি একজন ভারতীয়কে(নাম সুভিস) আমার টিমে নিয়েছিলাম। কথা বলেন অত্যন্ত শান্তভাবে নিচুস্বরে, মাথায় প্রচুর তেল (গন্ধযুক্ত) ব্যাবহার করেন, হয়ত আয়ুর্বেদিক মসলাযুক্ত। একদিন এইচ আর ম্যানেজার আমারে রুমে ঢুকে বললেন, দরজা বন্ধ করি? বললাম, নিশ্চয়। ক্লোজড ডোর মিটিং। তিনি বললেন, সুভিস হাঁটলে (দূর)গন্ধ বের হয়, অনেকেই কমপ্লেইন করেছে, তাঁর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করো। আমি কি যে এক শৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছিলাম সেদিন তাঁকে সেটা বলতে! ইদানিং ওয়াশরুমে যাওয়া নিয়ে নানান সমস্যা। আমি দেখেছি একজন ভারতীয় ইউরিনালে (দাঁড়িয়ে মূত্র ত্যাগ করার জায়গা) যেয়ে মূত্র ত্যাগ না করে টয়লেটে যাচ্ছে এবং দাঁড়িয়ে সে কাজটি করেন। এরপরে সেই টয়লেটে আর যাওয়ার অবস্থা থাকে না। এদের ছোট বাচ্চার মত টয়লেট ট্রেনিং করার জন্য দেখি আজ সকালে এই ছবিটা টয়লেটে আটকিয়ে দেয়া।
তো ভাবছি, এই ছবিটা প্রিন্ট করে আমার বাসার গেস্ট টয়লেটে লাগাবো, কিছু অতিথি পুরুষ দাওয়াত খেতে এসে টয়লেটে যান এবং দাঁড়িয়ে সে কাজটি করেন। পরে নাকে কাপড় গুঁজে ক্লোরিনযুক্ত ক্লিনার দিয়ে মেঝে, টয়লেট পরিষ্কার করতে হয়। আফটার অল, আমরাও তো ভারত উপমহাদেশের!