somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭২ এর সংবিধান ও আমাদের স্বপ্ন

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ১৯৯০ সালের পর থেকে অনেক দেশে নতুন সংবিধান রচিত হয়েছে। ২০১৫ সনে নেপালে নতুন সংবিধান তার একটি উদাহরণ।

গত সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার আদি ১৯৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, প্রতারণার নির্বাচনে জয়ী হলেও বর্তমান সংবিধান যে গণতন্ত্রের বিরোধী সে উপলব্ধি উনারও ছিল। অন্যদিকে বুদ্ধিজীবি বদরুদ্দীন উমর বলেন, বর্তমানের সংবিধানে এত বেশি কাটাছেঁড়া হয়েছে যে তা নতুন করে লিখতে হবে। এছাড়াও কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন নতুন সংবিধান লেখার প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরেই বলে আসছে, এর মধ্যে রাষ্ট্রচিন্তা এবং বুদ্ধিজীবি ফরহাদ মজহার রয়েছেন। তবে ২৪এর গণঅভ্যুত্থানের চালিকাশক্তি ছাত্রদের নতুন সংবিধান লেখার দাবির পরে এটি নিয়ে বাস্তবিক কাজ শুরু হচ্ছে।

সম্পূর্ণ সংবিধান রচনা একটি ব্যাপক প্রজেক্ট এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকির মাশুল অত্যন্ত ব্যায়বহুল, প্রাণসংহারি এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।

১৯৭২ সনের ১১ই এপ্রিল ৩৪ সদস্য নিয়ে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়, কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড: কামাল হোসেন। কমিটির অধিকাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের। বিরোধী দল থেকে ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নির্দলীয় ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।

১৯৭২ সনের ১০ই জুনের মধ্যে খসড়া সংবিধান জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা পেশ করতে ১২ই অক্টোবর লেগে যায়। সংবিধান প্রণয়ন কমিটি মোট ৭৪টি বৈঠক করেন এবং প্রায় ৩০০ ঘন্টা সময় আলোচনা করেন।

কমিটির বাইরে থেকেও প্রস্তাবনা আহ্বান করা হয় এবং ৯৮টি প্রস্তাবনা আসে। এরপরে গণপরিষদের সদস্যগণ ৭৭৫টি প্রস্তাব জমা দেন, ৩৩ সদস্যের একটি উপকমিটি প্রায় ৮০টি প্রস্তাব গ্রহণ করে গণপরিষদে উত্থাপন করেন। মোট ১৬৩টি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয় এবং ৮৪টি গৃহীত হয়।

১৭৫ জন বক্তব্য দেবার সুযোগ চান এবং ৪৮জন সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবার সুযোগ পান। গণপরিষদে ১০টি বৈঠকে ২৪ দিন আলোচনা হয়। এখানে অধিক সংখ্যক সদস্যদের সুযোগ না দেয়াতে কিছুটা অসহিষ্ণুতা পরিলক্ষিত হয় এবং সদস্যদের পরিষদ থেকে বের করে দেবার হুমকিরও অভিযোগ আসে।

পক্ষান্তরে ভারতের গণপরিষদে তিন বছরে ১১৪ দিন খসড়া সংবিধান নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার পরে গৃহীত হয়।

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির ৩৪ জনের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা যেগুলো প্রস্তাব এবং সংশোধনী এনেছিল তার অধিকাংশই গৃহীত হয়নি, যেগুলো গৃহীত হয়েছিল তাতে ভাষার কিছু পরিমার্জনা ছিল কিন্ত বিষয়ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তি ছিল নেহায়েত কম। সেই সময়ে আরো কিছু রাজনৈতিক দল ছিলো যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং অনেক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তাঁদেরকে প্রণয়ন কমিটিতে নেয়া গেলে তা বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তিমূলক হতো এবং সংবিধান নিয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা হতো এবং আওয়ামী দলীয় সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে আরো সার্বজনীন হতো। এই অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীর সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে কাদেরকে নেয়া হবে সেই বিষয়ে সকলে মনোযোগ দেবেন। সেইসঙ্গে কমিটির সকলকে গ্রহণমূলক মানসিকতার (accepting mentality) হতে হবে নতুবা তা অহম ও আত্মতৃপ্তির খোয়াড়ে পরিণত হবে।

সংবিধানে গণতন্ত্র চারটি মূলনীতির একটি। তার সংজ্ঞা নিম্নরূপ

“প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে”

গণপরিষদের আলোচনায় তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন,
“সংবিধান নামক বইয়ের মধ্যে কতগুলি সুন্দর, প্রাঞ্জল ভাষা, কতগুলি সুন্দর শব্দের বিন্যাস ঘটলেই তার উপর নির্ভর করে না সংবিধানের উৎকর্ষ। তা নির্ভর করে এর প্রয়োগ যদি সাচ্চা জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকে; তাহলে অপপ্রয়োগ কোনো দিন হবে না।”

তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় যে চূড়ান্ত অপপ্রয়োগ হয় চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে, তাঁর সাক্ষীও তিনি হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে মূলনীতিতে গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা ও পরিধি তা কি কারণে একদলীয় শাসন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলো না তার ভাবনা কি নতুন সংবিধান লেখায় প্রেরণা দেয়? অথবা ভবিষ্যতেও আবার একদলীয় শাসনে পতিত হবে না তার কি কোন গ্যারান্টি দেয়?

বর্তমানে এমন এক সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থা রয়েছে যে সাচ্চা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ৫৩ বছর পরেও স্বপ্নই রয়ে গেছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনে যারা আসবেন তাঁদের ভাবতে হবে সংবিধানে কি কি দুর্বলতা রয়েছে যা সাচ্চা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অন্তরায়। তাঁদের আলোচনা পর্যালোচনায় যেন কোন অসহিষ্ণুতা না থাকে।

একথা সত্য যে একটি সংবিধান যেমন গণতন্ত্র আনতে পারে না তেমনি একটি সত্যিকারের গণতন্ত্রর জন্য প্রয়োজন সংবিধান। স্বাধীনতা অথবা গণঅভুত্থান অথবা বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এটি একটি জরুরি বিষয় বিধায় সেই সকল দেশ সংবিধান রচনা করে।




সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×