কোন কিছু পচানোর জন্য সেখানে এমন কিছু থাকার দরকার যা পচন সৃষ্টি করে। এই পচন সৃষ্টিকারী জীবটির নাম হল ব্যাক্টেরিয়া। মধু পচে না বলে আমাদের ধরেই নিতে হবে যে মধু এমন এক ইউনিক অরগানিক কম্পাউন্ড দিয়ে গঠিত যা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে।
মধুর বেশিরভাগ অংশই সুপারস্যাচিউরেটেড বা অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত। এই অংশটুকু হাইড্রোস্কোপিক বা পানিশোষণকারী অংশ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি পানির প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর তাই ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য মাইক্রোঅর্গানিজম মধুর সংস্পর্শে আসলে শুষ্ক হয়ে যায় যার অর্থ ব্যাক্টেরিয়া এর মৃত্যু। অবশ্য মধুর এই সুপারস্যাচিউরেশন অবস্থার জন্য মধু ইস্ট এবং অন্যান্য ফাংগাল স্পোরের বসবাসের স্থান হয়ে ওঠে।
মধুর pH হল ৩.২৬ থেকে ৪.৪৮ যা ব্যাক্টেরিয়ার জন্য একটা কিলিং ফিল্ড। এই এসিডিটি ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল দুর্বল করে দেয়। সুতরাং উপরের হাইড্রোস্কোপিক প্রভাব আর এই pH মিলে যে অবস্থার সৃষ্টি করে তা ব্যাকটেরিয়া তাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু সেটাও যদি যথেষ্ট না হয়? মৌমাছিরা মধু একটা বিশেষ এনজাইমের সাহায্যে প্রস্তুত করে। এর নাম গ্লুকোজ অক্সাইডেজ। এটা শ্যুগারকেভেঙ্গে গ্লুকোনিক এসিড এবং হাইড্রোজেন পারক্সাইড তৈরি করে। এই গ্লুকোনিক এসিডই মধুর ওইরকম pH এর জন্য দায়ী। কিন্তু আপনারা কি জানেন গ্লুকোজ অক্সাইডেজ আরও একটা জিনিস তৈরি করে? এই জিনিসটাকে আগে ‘পেনিসিলিন এ’ বলা হত। এখন নোটাটিন বলে। সত্যি ব্যাকটেরিয়ার কপাল মন্দ!
কিন্তু মধুর এতো বড় ব্যাক্টেরিয়ারোধী ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিন্তু মধুর জারের ঢাকনা খুলে রাখা যাবে না। এই হাইড্রোস্কোপিক সুপারস্যাচিউরেটেড শ্যুগার সলিউশন খোলা অবস্থায় রাখলে তার হাইড্রোস্কোপিক গুণের জন্য বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণ করবে এবং ধীরে ধীরে তার ব্যাক্টেরিয়ারোধী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
সর্বশেষ সতর্কতা! আপনারা নিশ্চই জানেন খাদ্যে বিষক্রিয়া বা বটুলিজমের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াটি হল ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম। মধুতে এই ব্যাক্টেরিয়ার নিষ্ক্রিয় স্পোর থাকতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি এটার জন্য অসুস্থ হবেন না। কিন্তু একটা শিশুর পরিপাকনালী মধু পরিপাক না করে লঘু বা ডিলিউট করে। তাই শিশুরা খুব সহজেই মধু খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই গামা রের রেডিয়েশন দ্বারা যেসব মধুর স্পোরগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে সেগুলোই শিশুদের খেতে দেয়া উচিৎ অন্যথায় দেয়া উচিৎ নয়।
(রাফির প্রশ্নের উত্তরে)