somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মৌমাছি ও একজন পুরুষ মানুষ (পর্ব-৪)

০৮ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন বুঝতে পারলাম লাইলীর একজন মজনু আছে, তখন আমি দ্বিধা অনুভব করলাম এবং পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার সাথে কেন লায়লী কোন ধরণের সম্পর্কই রাখতে চায় নি। আমার উচিৎ ছিল ওর সাথে কোন ধরণের যোগাযোগের চেষ্টা না করা, এবং মনেমনেও ওকে না খোঁজা। কারণ, মনে মনে খুঁজলেও ওর রক্তে প্রচ্ছন্ন অসুখ হয়! এসব আমি বুঝতে পেলাম লাইলীর সমগ্র জীবন পর্যালোচনা করে। যেহতু আমি নিজের সাথে একটি দীর্ঘ বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি ওর শুভাকাঙ্খী বা ভাল বন্ধু হতে চাই না। প্রেমিক ছাড়া অন্য কোন প্রকার সম্পর্কের ব্যাপারে আমি কোন ধরণের আকর্ষণ অনুভব করি না। বরং ওর ভাই-বন্ধু-স্বজন হতে গেলে যে আমার জীবনের কোন মানেই থাকে না!

সুতরাং আমার শেষ সিদ্ধান্ত এই যে, আমি ওকে চিরদিন ভালবাসব এবং তা হবে নিঃশর্ত। তাহলে ওর আত্মা সুখ বোধ করবে। নিঃশর্ত বৃত্ত গোলাকার নাও হতে পারে এবং নিঃশর্ত ত্রিভুজে তিনটি সরলরেখা নাও থাকতে পারে। আমি রক্তের ভেতর নিঃশর্ত ভালবাসার বীজ ছিটিয়ে দিলাম- লাইলীর ভবিষ্যৎ প্রশান্তির কথা ভেবে। যদিও নিজের ওপর খুব সন্তুষ্ট হলাম, কিন্তু আমার জীবনে আমি মৃত্যু যন্ত্রণার প্রচণ্ড এক হাতছানি দেখলাম এবং কাল্পনিক একটি ছায়ামূর্তির ‘লাশ, লাশ’ বলে হাঁক দেয়া শুনতে পেলাম। পাশাপাশি আমার শরীরের জ্বর হুহু করে বাড়ছিল। আমি তখন আমার অস্তিত্বের মধ্যে গভীর শোক অনুভব করলাম।

খুব ক্ষুধা আর ক্লন্তি নিয়ে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার নিঃশ্বাস ততক্ষণে প্রায় খরস্রোতা নদীর মত লম্ফঝম্ফ করছে আর আমার শরীর উত্তাপের চরম সীমা অতিক্রম করছে। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। পায়ের তলায় শিরশির অনুভব হচ্ছে। কারণ, একটি পিঁপড়া সেখানে চলাচল করছে। আমার ক্লান্তি আমাকে পিঁপড়াটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে বাঁধা দিচ্ছে। পিঁপড়াটি যে আমার আধো ঘুম আধো জাগরিত অবস্থায় কত বার কামড়েছে, তার কোন পরিমাপ আমি করতে পারলাম না। এই পিঁপড়াটি কি আমার মৃত্যু কামনা করছে? বুঝতে পারছিলাম না কেউ আমাকে সত্যিকার অর্থেই মৃত্যুর এই প্রবাহ থেকে সরাতে পারবে কিনা! যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শর্তহীনভাবে ভালবাসবো, সেহেতু এই পিঁপড়াটি কেন অমার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবে? আমি পিঁপড়াটির প্রতি তীব্র মমতা বোধ করলাম এবং নিজের নেয়া ‘কখনো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা’র সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানালাম।

এটা বুঝতে পরলাম যে পিঁপড়াটির কামড়েই আমার জ্বর এসছে এবং এ ব্যাপারে আমি সচেতন ছিলাম না। হঠাৎ আমার রুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলাম। একজন নারী কড়া নাড়ছে, সেটা শব্দের প্রাবল্যেই টের পাওয়া যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। আমি গত রাত থেকে কিছু না খেয়ে রুমের ভেতরে পড়ে আছি এবং তখন তীব্র ব্যথায় এলোমেলো প্রলাপ বকছি। দরজা খোলার কোন সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে চিৎকার করতে থাকলো, “মিল্টন সাহেব, আপনার মা এসেছেন।” বাডিওয়ালার মেয়ের নাম ছিল নূপুর।

পুনশ্চঃ তখন আমি তখন ছন্নছাড়া বেকার এক যুবক। আমার বসবাস তখন ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার ছোট্ট একটি মেসে। সেখানে আমার খোঁজ নেবার মতো কেউ ছিল না, কারণ আমি একাই থাকতাম চিলেকোঠার একটি ঘরে। বিল্ডিংটি ছিল ছয় তলা এবং বাড়িওয়ালা থাকতো ছয় তলাতে। বাকি ফ্ল্যাটগুলো ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং কর্মজীবীদের কাছে ভাড়া দেয়া ছিল।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×