গল্পের চরিত্রটির নাম অরণ্য।মাধ্যমিক পাশ করার পাঠ সবেমাত্র চুকেছে।মাথায় ভূত চেপেছিলো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে।এবং হলো ও।
নতুন ভার্সিটি। নতুন পরিবেশ।সব মিলিয়ে নতুন এক অনুভূতি । কিন্তু অরণ্যের আছে ভয়ানক কাজল কালো নিকষ অন্ধকারের অজানা গল্প।
এক প্রকার রিলেশনে জড়িয়ে গিয়েছিলো এই ক্লাস ১০ নাগাদ। যদিও সে তখন বয়েসে ছোটো,বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে বড় হবার ব্যাপারে কারো কোনো বাঁধা ছিলো না বিধায় এক প্রকার অকাল পক্ক্ব হয়ে গিয়েছিলো বটে।
সে কথা আর অরণ্য মনে করতে চায় না।কস্ট হয়,তাও,লুকিয়ে রাখে । এবার অবশ্য কথার জেদ থেকে,ঠান্ডা মাথায় ভাবে,সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।কথার হেরফের করে না,তাই বলে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত??? শুধুমাত্র কথার নড়চড় না হবার জন্য??
"যাকগে সে সব কথা" বলে অরণ্য মুখের সামনে থেকে মাছি তাড়ানোর বাহানায় হাত নাড়ায়।এইসব আগের কথার পাঠ চুকে গেলেই সে বাঁচে। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডাবাজি করা কেমন যেনো নেশায় পেয়ে বসেছে,সাথে বন্ধু যা পেয়েছে--দায়সারা ভাবে বন্ধুর অভাব কেটে যায়।কিন্তু অরণ্য কে ভালো করতে হবে,সামনে তার অনেক বড় জীবন পড়ে রয়েছে।কিন্তু যেটা অরণ্যের আসল নেশা??????????
সেটা কিভাবে ছাড়বে?
না অরণ্য ছাড়তে চায় না,আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেও চায় না।এসব নিয়ে ভাবলেই মাথা গুলিয়ে যায় অরণ্য এর ।
ভাবতে ভাবতে চোখ খুলে দেখে চারিদিক নিস্তব্ধ,চোখে আলো পড়তেই ঝাপসা চোখে নিজেকে আবিস্কার করে নিজের রুমে।ঘড়িতে চোখ গেলেই দেখতে পায় রাত প্রায় পোঁনে দুটো।আস্তে আস্তে উঠে বসে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস নেয় অরণ্য।হটাত চোখ যায় খাটের কিনারায় যত্ন করে ভাঁজ করা রুমাল এর দিকে।সাথেসাথে শিরদাড়া খাড়া হয়ে যায় অরণ্যের,বিকেল থেকে সন্ধ্যার বেলাটুকু পুরোটাই চোখের সামনে ভেসে উঠে,তেমনিভাবে আরেকবার রিভিশন করে নেয় অরণ্য।মুচকী হেঁসে আলতো হাতে সুতি রুমালখানা তুলে নেয় অরণ্য।
সেদিন সন্ধ্যার কথাই তো!!!! শুধু শুধুই কেনো এতো নিষ্ঠুর হতে গেলো???
যাই হোক।সবকিছুরই একটা ভালো দিক আছে।নাহয় এমন একটা সন্ধ্যা কি পেতো সে?
হারিয়ে যেতে পারতো দুজনে চেনা শহরের বুকে।
সেদিন বিকেল বেলারই তো কথা! আধুনিক যুগের আর পাঁচটা ছেলের মতোই অরণ্য আপণ মনে নিজের কাজ গুছাতে গুছাতে কথা বলছিলো আপন মনেই । না , এবার নিজের সাথে নয়,নতুন পরিচয় হওয়া এক মানবীর সাথে। সাত পাঁচ না ভেবেই অনেক দূর এগিয়ে গেছে অরণ্য। দু-মাস ও হয়নি ।এরই মাঝে একজন অপরিচিতা কে মনের সমস্ত কথা বলার ব্যপারে সে দু দণ্ড দ্বিধা হয়তো করেছিলো, কিন্তু পরে ভাবে যে "আরে ধুর আমার জীবনে লুকানোর মতো আদৌ কি কিছু আছে ।" তাই হয়তো মানবী টি জীবনের অনেকাংশ জেনে ফেলে অরণ্যর আর জড়িয়ে যায় ভালোলাগার বেড়াজালে । তার পরিণতি অজানা।
যাই হোক কোনো একটা বিষয় নিয়ে হয়তো অরণ্য এর মনে কোনো খোঁচা লাগে,সে শুরু করে ভিন্ন ভাবে প্রতিশোধ নেয়ার। কথার প্রতিশোধ। তাদের রিলেশন হয় হয় এমন একটা অবস্থা যেখানে দুজনের অবস্থাই খুব বেশি সেনসেটিভ। আর এমন অবস্থায় সে বলে বসে "আমি কনফিজড তোমার ব্যাপারে"
- কি বলছো এইসব>>??
-হ্য যা বলছি সেটাই
এভাবে অনেক ক্ষণ কথা বলতে বলতে মানবীর চোখের ধারা যখন অব্যহত। তখন অরণ্য বোঝে যে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে।
বিনত গলায়,"দেখা করা যাবে কি???"
ওপাশ থেকে সম্মতি আসতেই কাজ রেখেই বেরিয়ে যায় অরণ্য ।৬ নম্বর বাসে চেপে ভার্সিটির সামনে নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় আরেক পথচলা। এবার কিন্তু আর একা না। চার জোড়া পা একসাথে।
যদিও সেদিন মানবী কে মানাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই সিক্ত রুমাল খানা কিন্তু সে অতই যত্নে কাবাডে সংগ্রহ করে রেখেছে অরণ্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৭