ঘড়ির কাটা সন্ধ্যা ছুই ছুই। প্রতিদিনের মত ল্যাব থেকে কাজ সেরে আমি বাড়ি ফিরছি। ল্যাব থেকে আমার পায়ে হাটা ৫মিনিটের পথ। মাঝখানে কেবল একটা চাররাস্তার মাথা পার হতে হয়। চৌরাস্তার মুখে আসতেই পুলিশের গাড়ির তীব্র সাইরেনে কান ঝালাপালা হবার জোগাড়। বাংলাদেশে যেসব হোন্ডা আরোহী পুলিশরা কেবল প্রধানমন্ত্রী বা সমপর্যায়ের ভিআইপিদের এসকর্ট দেয়, সেরকম হোন্ডা আরোহী এক পুলিশ চৌরাস্তার ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে চারপাশের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দিল। ভাবলাম, আমাদের কুলাঙ্গার প্রধানমন্ত্রী, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, রাস্তা বন্ধ করে ঢাকার রোজকার অসহনীয় যানজটের সাথে কিছু বাড়তি যানজট জনগণের কাধে চাপিয়ে দিয়ে নিজে এসি গাড়িতে নিবির্ঘ্নে চলে যায়, এদেশেও তাহলে সেইরকম কিছু নেতা বা মন্ত্রী আছে। ভীষণ আগ্রহ নিয়ে এদেশীয় ভিআইপিদের দেখার জন্য আমিও দাড়িয়ে রইলাম চৌরাস্তার একমাথায়। খানিকবাদে সাইরেনের আওয়াজ আরো বাড়ল। ভাবলাম, শালার নেতা আসছে। মুহুর্তে আরেকজন হোন্ডা আরোহী পুলিশ তীব্র বেগে এসে এদিক ওদিক চেয়ে ওয়াকিটকিতে কি যেন বলল, তারপরই সাদামাটা চেহারার একটা অ্যাম্বুলেন্স তীরবেগে আমাকে পাশ কাটিয়ে সোজা আমার মেডিকেল কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। এবার ভাবলাম, ব্যাটা মন্ত্রী আবার কোন অসুখে পড়ল? উৎসুক হয়ে এগিয়ে গিয়ে উকি দিলাম। একে তাকে জি্জ্ঞেস করে যা শুনলাম, তা হল, রোগী কোন মন্ত্রী না, মন্ত্রীর কোন চেলাও না, আমার আপনার মতই সাধারণ একজন নাগরিক। তার অবস্থা মরণাপন্ন, রাস্তার সিগন্যাল এড়িয়ে দ্রুত তাকে হাসপাতালে পৌছানোর জন্যই এই পুলিশ এসকর্ট। মনের অনেক গভীর থেকে আপনা আপনিই একটা দীর্ঘশ্বাস চলে এল। বাসায় ফেরার পথ ধরে ভাবতে লাগলাম, মরণাপন্ন ব্যক্তি বহনকারী এই অ্যাম্বুল্যান্সটি যদি ঢাকার এমন কোন সিগন্যালে আটকা পড়ত, যেখানে আমজনতার সব গাড়ি দাড়িয়ে আছে কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য, তাহলে কি হত? মরণাপন্ন রোগীর কথা ভেবে এসকর্ট প্রদানকারী পুলিশ কি অ্যাম্বুল্যান্সটিকে হাসপাতালে যাবার অনুমতি দিত? মানবিক বোধোদয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসকর্ট প্রদানকারী কোন পুলিশ অফিসার যদি অ্যাম্বুল্যান্সটিকে পার হয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতও, তাহলে সেই অফিসারের চাকরি কি ঠিক থাকত?
পুলিশের তীব্র সাইরেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স, আর একটি মানবিক প্রশ্ন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।