somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বার্থ সাটিফিকেট এবং পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় সত্যায়িতকরণ অভিজ্ঞতা

০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বার্থ সার্টিফিকেট কি সেটা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে বিদেশে যেতে বা অন্যান্য কাজে বার্থ সার্টিফিকেটের দরকার হয়। বার্থ সার্টিফিকেটটি অবশ্য ইংরেজীতে। শুধু বার্থ সাটিফিকেট হলেই হয় না, পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় থেকে তা সত্যায়িতও করাতে হয়। আমারও সেরকম কারণেই বার্থ সার্টিফিকেটের দরকার পড়ল। বছর পাচেক আগেও একবার নিয়েছিলাম, এখন আবার দরকার পড়ল। যেহেতু আমি ঢাকার বাসিন্দা, পুরোনো কপিটি সাথে নিয়ে সোজা চলে গেলাম ঢাকা সিটি করপোরেশনে। মনে মনে দুরু দুরু ভয়, শুনেছি সিটি করপোরেশনে অনেক ধান্দাবাজ আছে। এরা অহেতুক মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে, মিথ্যা কথায় অর্থ আত্মসাৎ করে। তবু সাহস করে চলে গেলাম ঢাকা সিটি করপোরেশনে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিশাল গেট দিয়ে ঢুকে সিড়ি বেয়ে খানিকটা উঠতেই দেখলাম রিসিপশন ডেস্ক। ভাবলাম, এখানে জিজ্ঞেস করে নিই, ফরম কোথায় পাওয়া যাবে, কত তলায় এবং কার কাছে ফরম জমা দিতে হবে, কত ফি, হাতে পেতে কতদিন লাগবে। রিসিপশন ডেস্কে সাদা পান্জাবী পড়া, মাথায় টুপি দাড়িওয়ালা একজনকে বসে থাকতে দেখে ভাবলাম, ভালই হল, এই লোক নিশ্চয়ই ধান্দাবাজ হবে না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই উনি জানালেন, ফরম উনার কাছে আছে, মূল্য ১০টাকা। ফরম পূরণ করে করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে, আর বার্থ সার্টিফিকেট হাতে পেতে দুই সপ্তাহের মত সময় লাগবে। অথবা আমি তার মাধ্যমে করাতে পারি, উনি চারদিনের মধ্যে করিয়ে দিবেন, উনাকে ৫০০টাকা দেয়া লাগবে। বোঝা হয়ে গেল, এ্ই দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা পান্জাবী পরিহিত লোকটি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা হলেও দালাল ছাড়া আর কিছু নন। সামনে অগ্রসর হয়ে দু'একজনকে জিজ্ঞেস করতেই তারা বলল, বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য ৯তলা, ১২তলা কিংবা ১৫তলায় যান। লিফট চড়ে ৯তলায় উঠে সেখানে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখা পেলাম। উক্ত শাখার জনৈক ভদ্রলোকের সাথে দেখা করতেই উনি জানালেন, উনি করিয়ে দিতে পারবেন, উনাকে ৪০০টাকা দেয়া লাগবে এবং ৪দিনের মধ্যে উনি করিয়ে দিতে পারবেন। বাহ্ একতলা থেকে ৯তলায় উঠতেই ১০০টাকা কমে গেল। তাহলে আরো উপরে উঠে দেখি, আরো কত কমে। এবার চলে এলাম, ১২তলার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখায়। জনৈক ভদ্রলোকের সাথে দেখা করতেই উনি জানালেন, উনি করিয়ে দিতে পারবেন, উনাকে ৩০০টাকা দেয়া লাগবে এবং উনিও ৪দিন সময় চাইলেন। আরো ১০০টাকা কমল। এবার ১৫তলায় যাওয়া যাক। দেখি আরো কত কমে। ১৫তলার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখার জনৈক ভদ্রলোকের সাথে দেখা হতেই মনে পড়ল, পাঁচ বছর আগে ইনিই ৬০০টাকার বিনিময়ে আমার বার্থ সার্টিফিকেট করিয়ে দিয়েছিলেন। পুরানো কপিতে উনারও স্বাক্ষর আছে। যদিও মূল স্বাক্ষরদাতা হলেন, সিটি করপোরেশনের তৎকালীন চীফ হেলথ অফিসার। পূর্বের কপিটি দেখে উনি জানালেন, উনি করিয়ে দিতে পারবেন, উনাকে ২০০টাকা দেয়া লাগবে আর উনি ২দিন সময় চাইলেন। আমি বললাম, আগের কপিটি তো আপনারই করা, আমি তো পুরোনো কপিরই আরেকটি কপি চাচ্ছি। তাহলে ২০০টাকা চাচ্ছেন কেন, তাছাড়া আমার একটু জরুরী ভিত্তিতে দরকার। আধঘন্টা ভেবে উনি জানালেন, ঠিক আছে, কালকে আসেন, আর টাকা কিছু বাড়িয়ে দিয়েন। আমি রাজী হয়ে গেলাম। পুরানো কপিটি তার কাছে দিয়ে চলে এলাম। পরদিন গেলাম সংগ্রহ করতে। বার্থ সার্টিফিকেটটি হাতে পেয়ে মনটা ভাল না হয়ে ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। কারণ মূল স্বাক্ষরদাতা হিসাবে সিটি করপোরেশনের চীফ হেলথ অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসির উদ্দিনের স্বাক্ষর। প্রথমত: বার্থ সার্টিফিকেটের সবকিছুই ইংরেজীতে হলেও উনার স্বাক্ষরটি বাংলায়। এবং দ্বিতীয়ত, কোনমতেই একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের স্বাক্ষর এমন হতে পারে না (খুবই কাচা হাতের স্বাক্ষর)। আমার অফিসের পিওনও বাংলা এবং ইংরেজীতে এর চেয়ে ভাল স্বাক্ষর করতে পারবে। স্বাক্ষরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই উক্ত ভদ্রলোক জানালেন, ব্রিগেডিয়ার সাহেব অনেক ব্যস্ত, এসব ছোটখাট ব্যাপারে তার তেমন মাথাব্যথা নেই। চরম ব্যস্ততার ফাঁকে উনি খুবই দ্রুততার সাথে স্বাক্ষর করেন, তাই এমন হয়েছে।
বিরস বদনে সেখান থেকে চলে আসতে হল। এবার পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় থেকে তা সত্যায়িতকরণ। চলে এলাম, মতিঝিল পাড়ায়, যেখানে অনেকগুলো অনুবাদ কেন্দ্র রয়েছে। বেশ কয়েকটিতে ফুঁ মারলাম। সকলেই চীফ হেলথ অফিসার ব্রিগেডিয়ার সাহেবের বাংলা স্বাক্ষর এবং স্বাক্ষরের ধরন নিয়ে সন্দীহান প্রকাশ করল। আমিও আমার অসহায়তা তাদের কাছে বর্ণনা করলাম। একটি অনুবাদকেন্দ্রের লোকেরা জানাল, কোন একবার চীফ হেলথ অফিসারের স্বাক্ষরবিহীন বার্থ সার্টিফিকেটও নাকি পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় সত্যায়িত করেছে। যাই হোক, পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত করিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন অনুবাদ কেন্দ্র ৫০০ থেকে ১০০০টাকা পর্যন্ত চাইল। সবনিম্ন ৫০০টাকা যারা চাইল, তাদের কাছে বার্থ সার্টিফিকেটটি দিয়ে চলে এলাম। পরদিন পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় কর্তৃক সত্যায়িত বার্থ সার্টিফিকেট কপিও হাতে পেলাম। অ্যাম্বেসীতে জমা দিলাম, তারাও তা গ্রহণ করল। বোধ করি, তারা পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় কর্তৃক সত্যায়িত কিনা সেটিই ভাল করে দেখল।

সবশেষে নিজেকে প্রশ্ন করলাম:
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা হয়েও ৯, ১২, ১৫তলার সবাই নিজের ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত। তাহলে বার্থ সার্টিফিকেট সংগ্রহের অফিসিয়াল উপায় কি? চীফ হেলথ অফিসার যদি এতই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে এই দায়িত্বটি উনি অন্য কাউকে দিলেই পারেন। পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় কিসের ভিত্তিতে আমার বার্থ সার্টিফিকেট সত্যায়িত করল? ইংরেজী বার্থ সার্টিফিকেটে চীফ হেলথ অফিসারের বাংলা স্বাক্ষর একবারও কি তাদের চোখে পড়ে নি? আমাদের দেশ কি কোনদিনও বদলাবে না? আর কত অধঃপতনের দিকে আমরা যেতে থাকব?
আমাদের এক নেত্রী দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বলে মিথ্যাচার করছেন, অন্য নেত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের অলীক স্বপ্নে জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন।
সবশেষে আমজনতার একজন হয়ে নিজেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম: আজব দেশের আজব সিটি করপোরেশন এবং আজব তার পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয়!!!

বি.দ্র.: বার্থ সার্টিফিকেটে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো আমি মুছে দিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×