somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ ব্যবস্থার অব্যবস্থা

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। এটিকে মোকাবিলা করতে হলে হাসপাতালে যেমন ডাক্তার, নার্সদের দরকার, তেমনি ভাইরাসটি কেমন, কিভাবে আমাদের দেহে ঢুকে আমাদের অসুস্থ করে ফেলে, এটিকে কিভাবে ডায়গনোসিস (সনাক্তকরণ) করা যেতে পারে, কিভাবে এটির ভ্যাক্সিন তৈরী করা যেতে পারে, ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কতটুকু এই কাজগুলোর জন্য ইমিউনোলজি, মলিকিউলার বায়োলজি, ভাইরোলজি, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্ট, ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্টদের দরকার। ডাক্তারদের মধ্যে অনেকে ভাইরোলজিষ্ট আছেন, বাস্তবিক অর্থে তারা মেডিক্যাল ভাইরোলজিষ্ট। মেডিক্যাল ভাইরোলজি আর হার্ডকোর ল্যাবরেটরী ভাইরোলজি এক জিনিষ না। করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি বোঝার জন্য দরকার হার্ডকোর ল্যাবরেটরী ভাইরোলজিষ্ট, করোনা কিভাবে আমাদের ফুসফুস সহ অন্যান্য টিস্যুর ক্ষতিসাধন করে, তা বোঝার জন্য দরকার ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট ডায়াগনোসিসে সাহায্য করতে পারেন, ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্ট ভ্যাক্সিন তৈরী করবেন এবং এর কার্যকারিতা দেখবেন। এভাবে সবাইকে নিয়ে একটি সম্বন্বিত পরিকল্পনা তৈরী করা দরকার।

কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। চীন, ইটালী, স্পেনে কি হইছে, এটা আমরা দেখছি। প্রস্তুতি নেয়ার মত যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে ছিল, Mass screening করতে হবে, জানা ছিল। তখন থেকেই ডাক্তারদের PPE সংগ্রহ করে রাখা দরকার ছিল, Ventilator-গুলা কাজ করছে কিনা দেখে রাখা দরকার ছিল। ডায়গনোসিসের জন্য RT-PCR টেকনোলজী ব্যবহার করতে হবে, তাও জানা ছিল। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে ল্যাবে আগে থেকেই RT-PCR মেশিন আছে, প্রশিক্ষিত জনবল আছে, তাদের তৈরী রাখা দরকার ছিল। এসবের কিছুই হয় নি। দুদিন পর পর সংবাদ সম্মেলন করা ছাড়া IEDCR/ মীরজাদী সেব্রিনা এসবের কিছু করে নাই। এমনকি, IEDCR থেকে একশ কদম হাটলে ICDDRB আছে, যেখানে আর্ন্তজাতিক মানের ল্যাব সেটআপ আছে, সেখানে World Leading ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্টরা কাজ করে। IEDCR/ মীরজাদী ICDDRB-এর সাথে কোন কোলাবোরেশন করা তো দূরের কথা, শুরু দিকে ICDDRB-কে করোনা ডায়গনোসিসের অনুমতিও দিতে চায় নাই। যখন রোগীর ঠেলা সামলাতে পারে নাই, তখন বিভিন্ন জায়গায় ল্যাব সেটআপ করতে বাধ্য হইছে।

গত ১৮ই এপ্রিলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৭সদস্যের একটি জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়, যার সবাই ডাক্তার। সেখানে কোন ল্যাবরেটরী ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্ট ও ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্ট নাই। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দোষ দিয়ে লাভ কি? ডাক্তারদের ভাইরোলজি, মলিকিউলার বায়োলজি জ্ঞান যে নাই, সেটা ডাক্তাররা নিজেরাও ভাল করেই জানে। স্বাস্থ্য সচিবকে ডাক্তাররা নিজেরা কোনদিন বলেছে, করোনা মোকাবিলায় ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্টদেরও দরকার?

করোনা ভাইরাস ডায়গনোসিসের জন্য ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় RT-PCR মেশিন বসানো হয়েছে। কেবল RT-PCR মেশিন বসালেই হবে না, RT-PCR টেকনলজী কিভাবে কাজ করে, তাও জানা প্রয়োজন। RT-PCR-এর চারটি ধাপ: ১) রোগীর স্যাম্পল কালেকশন ২) RT-PCR-এর জন্য স্যাম্পল প্রিপারেশন, ৩) RT-PCR করা ৪) RT-PCR-এর ডাটা এনালাইসিস করে করোনার উপস্থিতি আছে কি-না তা নির্ণয় করা। কেউ করোনায় আক্রান্ত কি-না, তা জানার জন্য উক্ত ব্যক্তির গলার Swab ও রক্ত সংগ্রহ করে VTM (Viral transport media)-তে করে ল্যাবে পাঠানো হয়। VTM করোনা ভাইরাসের RNA-কে অক্ষত রাখে। ল্যাবে RT-PCR করলে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি-না তা জানা যায়। যেসব ল্যাবে সম্প্রতি RT-PCR মেশিন বসানো হয়েছে, বায়োকেমিষ্ট্রি, মাইক্রোবায়েলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটরা সেখানকার ডাক্তার ও ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের VTM-এর মাধ্যমে স্যাম্পল হ্যান্ডেলিং, RT-PCR ইত্যাদি ট্রেনিং করিয়ে এসেছে। ক'দিন পর এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (নামটা ইচ্ছা করেই বল্লাম না) গিয়ে দেখা গেল, সেখানে VTM ছাড়া নরমাল স্যালাইনে স্যাম্পল প্রসেসিং করছে! করোনা ভাইরাসের RNA নরমাল স্যালাইনে ডিফর্ম হয়ে যায়। নরমাল স্যালাইনে প্রসেসকৃত কোন স্যাম্পলই টেস্টে পজেটিভ আসবে না, এমনকি রোগী করোনাতে আক্রান্ত হলেও না।

RT-PCR-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, RT-PCR-এর পরে ডাটা এনালাইসিসের সময় ডাটার ইর্ন্টানাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল (QC) ঠিক আছে কি-না, এটা ভীষণভাবে মেনে চলতে হয়। এর হেরফের হলে RT-PCR-এর ফলাফলও বদলে যেতে পারে। অন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (নামটা ইচ্ছা করেই বল্লাম না) RT-PCR মেশিন বসানোর পরে সেখানকার ডাক্তার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের ট্রেনিং দেয়ার একসপ্তাহ পর সেখানে গিয়ে দেখা গেল, RT-PCR-এর QC না দেখেই করোনা পজেটিভ-নেগেটিভ বলে দেয়া হচ্ছে। কি ভয়ংকর বিষয়? ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে নিজের বাহাদুরী জাহির করার কোন দরকার আদৌ আছে কি-না, আমি জানি না।

ঢাবি থেকে একটি এক্সপার্ট প্যানেল তৈরী করে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য সচিবের কাছে পৌছানোর আগেই ডাক্তাররা আটকে দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে ডাক্তাররা মেডিক্যাল সাইন্সকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে। নন-মেডিক্যাল কারোর সেখানে কথা বলার অধিকার সেখানে নেই। অথচ এই ডাক্তারগুলাই যখন বিদেশে ট্রেনিংয়ে যায়, তারা দেখে, সেখানে ডাক্তার, রিসার্চার সবাই একসাথে কাজ করছে। দেশে ফিরে তারা সব ভুলে যায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডাক্তারদের বলছি, এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় দয়া করে এক্সপার্টদের সঙ্গে নিন। এটা মাতবরী করার সময় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪২
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×