somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভ্রুন হত্যা এবং আমরা অমানুষেরা।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :












এলো মেলো স্বপ্ন নিয়ে বসে থাকি। কষ্টের কবুতর আর এক ঝাঁক ডানা ভাঙা পাখি আমার বুকের ভেতর ছট ফট করে। আমি বসে আছি ছাদের নির্জনতায় একা একা। নির্ঘুম রাতের চন্দ্র প্রহরে আমি স্বপ্ন দেখি, সুন্দর আগামীর। মনের ভেতর একটা নাম ঝাকি দিয়ে যায় "নিতু"। সেই নিতু, কৈশরের প্রেম আমার। অসমাপ্ত প্রেমের কথা গুলো বলে ছিলাম একবার নিতু কে, ও শোনেনি আমার কথা গুলো। জীবন বোধের কোন এক অদৃশ্য দেয়াল ওকে বার বার আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছিল, বয়ে যাওয়া ঝর্নার পানির মতন। আমি ওকে বার বার কাছে পেতে চেয়েছি, এখন ও মাঝে মাঝে একলা কোন পথে ওকে কাছে পেতে মন কেমন করে? হেড ফোনটা কানে লাগাই আমি। গান শুনি " কত বেদনা দেবে তুমি? কত ব্যাথা দেবে আমায়?" আমার জেনারেশনের সবাই শোনে রক এনড রোল, জাষ্টিন বেবার, হিপ হপ, কলাবেরী। আমি কেবল শুনি, "কত বেদনা দেবে? বন্ধুরা বলে সেকেলে।" আমি নিশ্চুপ থাকি, নিরবে হেটে যাই- শাহবাগ মোড়, রমনা লেক, লেক তো নয় যেন ডোবা তবুও ভাবি আমার গ্রামের খাল। পাশে গিয়ে বসি কিছুক্ষন, কষ্টের বুনটের সুতা ছিড়ে যায়। ভালো লাগে না কিছুতেই, কেবল একটা নাম "নিতু" বুকের ভেতর ঝাপায় দাপায়। আমি কবিতা লিখি, কত আঁকি-বুকি মাথার ভেতর, মনে। তবুও ঋন শোধ হয় না, নিতুর। "নিতু" ওকে ভালো বেসে আমি শিখে ছিলাম বড় হতে, বেচে থাকতে। অবাক হয়ে দেখেছিলাম, এক দিন নিতু এই গেও আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। নির্জন এই অন্ধকারে আমি কেবল অপে ক্ষায় ছিলাম, ও আসবে আমার কাছে বলবে সব ভুলে যাও। এখনও ভালো বাসি তোমায়। বলেনি কোন দিন, আর বলবেও না। বলার কথাও না। যে নিতু কে আমি তিল তিল করে ভালো বেসে ছিলাম সেই নিতুর এক দিন কি যে হল?! জানিনা। কেবল জানি নিতু হারিয়ে গেছে, ও আর ফিরবেনা জীবনের গতি পথে।
নিতু নামের প্রচন্ড উচ্ছল এক স্বপ্ন তরুনীর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছে গ্রামের এক মামার বিয়েতে। মোবাইল নাম্বার টা ওই দিয়েছিলো আমাকে, বলে ছিলো- "মন খারাপ লাগলে ফোন দিও।" দিয়ে ছিলাম আমি ফোন এক শ্রাবন সন্ধ্যায়। ফোন পেয়ে মেয়াটা আবেগী হয়ে, কেঁদে ছিলো। বলে ছিলো-" ভালো বাসি।" পরে জেনে ছিলাম এরকম ভালো বাসা ও অনেক কেই দিয়ে ছিলো। আমি ও কে অভিশাপ দেই নি, দেবোওনা কোন দিন। কেবল চেয়ে ছিলাম ও ফিরে আসুক সঠিক ধারায়। এক দিন বলে ছিলাম বিয়ে করবো তোমায়, ও বলে ছিলো বিয়ে সে তো ছেলে খেলা নয়, হাতের মোয়াও না। তোমার মতন বেকার কে বিয়ে করে আমি আমার জীবন নষ্ট করব নাকি? আজব।! আমি বিয়ে করব রন্টিকে, আমার স্বপ্ন পুরুষ- আমার প্রেম।
আমি জানতে চেয়ে ছিলাম তাহলে আমি?! তুমি তো আমার দোস্ত, শ্রেফ ফ্রেন্ড। আমি আর কিছু বলিনি ভেবে ছিলাম ও আর ফিরবেনা, ফেরেনি।

এক দিন শুনলাম নিতু খুব অসুস্হ। বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো, কি হলো নিতুর?! ছোটন আমার ছোট বেলার গ্রামের বন্ধু, ফোন করলো আমাকে। বলল-
অনুপ নিতুকে কেউ ক্ষতি করেছে।
-ক্ষতি মানে?
মানে ওকে কেউ বান মেরেছে।
-কিভাবে বানলো, রশি দিয়ে। তাহলে রশিটা ছিড়ে ফেলছিসনা কেন?
আরে সেই বান না, কুফরি কালাম দিয়ে বান মেরেছে।
-আমি বিশ্বাস করিনা, ওসব কুসংস্কার।
তুই শহুরে তুই মানবিনা, আমরা মানি।
-ওর সিমটম কি?
ব্লিডিং হচ্ছে এক নাগারে, থামছেনা। থামবেও না মনে হয়।
-কোথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে?
আরে ভাই মিনেষ্টিসনে যেভাবে হয়, সেভাবে।
-ওর তো মনে হয় ইউটারাসে সমস্যা।
ধুর ব্যাটা গ্রামের হাসপাতালে নিয়ে গেছিল, ওরা কোন রোগ খুজে পায় নাই। ওঝা এসে ছিলো, বলে ছে বান মেরছে। সবাই সন্দেহ করছে তুই মেরে ছিস বান ওকে।
-আমি!
হ্যা তুই, তুই তো ওরকাছ থেকে প্রত্যাক্ষাত হয়েছিস।
-যা ব্যাটা এই আধুনিক যুগে কি সব কথা বলছিস, জাদু- টোনা-বান বলে কিছু নেই।
তোর বিশ্বাস তোর কাছে, তবে ভুলেও গ্রামে আসিস না। সবাই তোকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবে, তক্তা মানে বুঝিস তো "চেরা কাঠ"।
আমি বুঝিনা কি, বলব? কেবল বুঝি কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, মস্ত বড় ভুল।
এর পরো চলতে থাকে জীবন। আমি গ্রামে যাই না, তক্তা হয়ে লাভ কি? অযথা তক্তা হয়ে জীবন দিয়ে কি হবে? কিন্তু জীবন দিয়ে দেয় নিতু। অতি ব্লিডিং এ মারা যায় নিতু। আমি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছিলাম, আর বেচে ছিলাম হয়তো স্বপ্ন ভংগের ইতিহাস লেখার জন্য। নিতু মরার কিছু দিন পর ওর স্বপ্ন পুরুষ রন্টি বিয়ে করে ফেলেছিলো, আহারে ভালো বাসা। আমি এখন ও বিয়ে করতে পারলাম না, কাকে বিয়ে করব? বলাতো যায় না কাকে না কাকে ওঝা বান মেরে রেখেছে।

যে ওঝা নিতুকে বান মেরেছে বলে ঘোষনা দিয়ে ছিলো তার সাথে একবার দেখা হয়েছিলো আমার। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছিল, আমি তখন ডাক্তার হয়ে গেছি, নিতুর বেকার যুবক তখন এম বি বি এস পাস। ওঝা কে বলেছিলাম- কি হয়ে ছিলো নিতুর? ওঝা বলেছিলো এ্যাবর্সন করাইছিল লতা পাতা দিয়া, মেয়েটার। আহারে চান্দের মতন মেয়ে। কোন জায় গায় যেনো প্যাট বাজাইছে, কে জানে? মাইয়্যার মায় আমরে কইলো ওঝা মান বাচাও? সবাইরে কও বান মারছে কেউ আমার মাইয়ারে। পাচশ ট্যকার দুই হান নোট হাতে গুইজা দিলো আমার। গরিব মানুষ অভাবে স্বভাব নষ্ট, দিন আনি দিন খাই ।পয়সার মায়া বড়ই মায়ারে বাপ ধন।

পরে বুঝছিলাম রন্টিই নিয়ে গিয়েছিলো নিতুকে মৃত্যুর ওপারে। নিতুটা বুঝলোনা, রন্টি কোনদিন ভালোবাসে নি নিতুকে যেমন নিতু বাসেনি আমাকে। রন্টি চেয়েছিলো কেবল ভোগ করতে নারী শরীর, করেও ছিলো তাই। বুনে দিয়ে ছিলো বিজ ওর শরিরের ভেতর, বিজ হত্যার এক করুন শিকার নিতু। যাকে আমি রাত জেগে জেগে ভালো বেসেছি, যার বিরহে শহরের রাস্তা ঘাট লোকালয় জিয়া উদ্দ্যান, রমনা পার্ক অথবা গুলসানের ডিজে পার্টি কে লেগেছে স্যত স্যতে মরা শ্যাওলার মতন।

এখনো পূর্নিমার চাঁদের আলোয় আমি ওর ছায়া দেখি। সেই ছায়ার মুখে আমি ক্লান্তি দেখি, বহু দুর হেটে আশা পথিকের মুখের ক্লান্তির মতন। আমি ওর দিকে কাতর হাত বাড়াই কিন্তু ওকে ধরা যায়না, ছায়াদের কি ছোঁয়া যায়? যায় না।

তারা চমকানো আকাশের দিকে তাকাই, মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয় না। তবুও আমার আকাশের সবচেয়ে জ্বল জ্বল করা তারাটাকে নিতু ভেবে বড় আপন মনে হয়। আমি ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাই, "কিরে কেমন আছিস?" ও কিছু বলে না কেবল একবার জ্বলে উঠে, খসে পড়ে। তারা খসে পরতে দেখলে কি কিছু চাইতে হয়ে? এরকম কি একটা মিথ আছেনা। আমার মাথার ভেতরে কেউ একজন বলে ওঠে আরে ধুর ওসব কুসংস্কার।

মুখ বন্ধঃ এই গল্পের প্রায় সব গুলো চরিত্রই কাল্পনিক, আমারটা ছাড়া। ভিন্ন ধারায় লিখলাম লেখাটা। ইন্টারের যুগে এরকম ভাবে লিখতাম, পরে কালের পরিবর্তনে লেখার ধারাও পাল্টে গেছে আমার। এখনও যখন ঘোরে চলে যাই মাথার ভেতর ঘোর পাক খায় শব্দ গুলো। তখনকার সময়ে নিউজ প্রিন্টের খাতায় কলম দিয়ে ভরিয়ে তুলতাম, নানান আঁকি-বুকি লেখা। এ্যালজেব্রার খাতায় লেখা থাকত "মরুর বুকে চাঁদ নামের কবিতা।" তখন তো আর কম্পিউটার ছিলো না। হত দরিদ্র বাবার হত দরিদ্র সন্তানের কি আর বিলাসিতা চলে? লেখার কাগজ ফুড়িয়ে গেলে ও গল্প গুলো থেমে থাকেনা। মার্বেলের মশৃন তলের উপর বয়ে চলে জীবন, আর আমরা পুতুল হয়ে ঘুড়ে বেড়াই সুতোর টানে।

বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ক কখোন ভালো কিছু আনতে পারনা। আমাদের সমাজে দিন দিন নানান রোগে ভরে যাচ্ছে, কিছু কিছু আছে মহামারী হয়ে এসে সামনে দ্বাড়ায় মানুষের সামনে। যদি কেউ ভাবে কিভাবে মহা মারি হয় পাপ? সহজ উত্তর পাপ করার ভয় মুছে যাচ্ছে মানুষের মন থেকে। মানে আমরা ধর্ম হীন হয়ে পরছি, আর সেই সুযোগেই খাবলে খাচ্ছে ব্যাবিচার সমাজের শিরায় শিরায়।


ছবিঃ ফেইসবুক(গুগোল হতে পাওয়া)


ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ

View this link

আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
একটি পরীর শরীর এবং একজন অমানুষ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১১
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×