somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিধবাবিবাহ নাকি (অন্যের) প্রেমিকাবিবাহ, কোনটা ভাল?

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড দীর্ঘদিন পর দেশে আসল বিয়ে করবে বলে। এসেই আমাকে জানাল, বাসা থেকে তার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে, তার ইচ্ছা সামনের দুই মাসের মধ্যে বিয়ে করা। আমাকে বলল, যদি আমার পরিচিত কোন মেয়ে থাকে তাকে যেন জানাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেমন মেয়ে চাস? সে জানাল, মেয়ে অবশ্যয় শিক্ষিত, সুন্দরী, ধার্মিক ও সাংসারিক হতে হবে। আমি বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে। তোকে আমি পরে জানাচ্ছি"।
দুইদিন পর তাকে জানালাম, দোস্ত তোর জন্য একটা মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। মেয়ে একাউন্টিং এ অনার্স মাস্টার্স, বেশ সুন্দরী বলা যায়, হাইটও ভাল ৫ ফিট ৪। আমার পরিচিত মেয়ে, ওর নাম সায়মা। মেয়েটি যেহেতু একটি ধার্মিক পরিবারে জন্য, সেহেতু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি সে যথেষ্ট ধার্মিক। সাংসারিকও বটে। আমার বর্ণনা শুনে সে সায়মাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। তাকে এমন উৎসাহী দেখাল যেন সে আজ বিকেলের মধ্যেই মেয়ে দেখার কাজ সেরে ফেলতে চাচ্ছে। আমি সায়মার সম্পর্কে আরো ক্লিয়ার করার জন্য বললাম, "দোস্ত, তবে মেয়েটার একটা এক্সসিডেন্ট আছে।" সে থমকে গিয়ে বলল, "কি এক্সসিডেন্ট?" আমি বললাম, "মেয়েটা শর্ট ডিভোর্সি। তার সাথে যে ছেলেটার বিয়ে হয়েছিল, বিয়ের এক মাসের মধ্যে তারা নিশ্চিত হয় সে এডিক্টেড। অনেক চেষ্টা করেও যখন তাকে ফিরানো যাচ্ছিল না, ৬ মাসের মাথায় সায়মার পরিবার সায়মার ভবিষতের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয় ডিভোর্স করাতে।"
এবার সে ফুটো বেলুনের মত টুপ করে চুপসে গেল। আমাকে খুব বাজে ভাষায় ধমক দিয়ে বলল-
: তুই আর মেয়ে পেলিনা? আমার জন্য শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সি মেয়ে দেখলি?
: তাতে সমস্যা কি? সায়মা শিক্ষিত, সুন্দরী, ধার্মিক, সাংসারিকও। তোর সব রিকুয়ারমেন্ট ফুলফিল করেছে।
: তার সব চেয়ে বড় সমস্যা সে ডিভোর্সি।
: ডিভোর্স সমস্যা হতে যাবে কেনো? ডিভোর্স তো তার নিজের কারণে হয়নি। তার কপাল খারাপ হয়েছিল বলেই তো হয়েছে। তার আগের স্বামী যদি ভাল হত তাহলে তো তাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হত না।
: দোস্ত, এইসব বলে লাভ নাই। একে তো আমি মেনে নিতে পারব না, তার উপর আমার পরিবার আত্মীয়স্বজন তারাও কোন দিন মেনে নিবে না। এটা আমার ফার্স্ট বিয়ে। তুইও কি মেনে নিতে পারবি এমন একটা মেয়েকে বউ হিসেবে?
প্রশ্নটা আমার জন্য কঠিন হয়েগেল। কোন জবাব দিতে পারলাম না। এরপর আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম। এর মাঝে সে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমিও করিনি।
প্রায় সাপ্তাহ দুয়েক পর সে আমাকে জানাল,
: দোস্ত, সামনের সাপ্তাহে আমার আকদ। চলে আছিস।
খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
: কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, তোর?
: তোদের এলাকার মেয়ে তানিয়ার সাথে।
তানিয়ার নাম শুনে আমি চমকে উঠলাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
: তুই কি তানিয়ার সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়েছিলি?
: হুম, সব জেনেই তো বিয়েটা ফাইনাল করলাম।
: দোস্তা তানিয়ার সাথে আমাদের ফ্রেন্ড মনিরের ৬ বছরের রিলেশন ছিল।
: ব্যাপার না, বিয়ের আগে এমন রিলেশন সবার থাকে।
: দোস্ত, তুই কি বুঝতে পারছ এই যুগে ৬ বছরের রিলেশন মানে কি? এটা মোর দেন হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ...
সে আমাকে থামিয়ে বলল- বললাম তো, সমস্যা নেই, বিয়ের আগে এরকম সম্পর্ক থাকতেই পারে। সংসার করতে চাইলে এযুগে এইসব মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
: ওকে, ফাইন। তাহলে তুই তানিয়াকে বিয়ে করতে পারলে কেনো সায়মাকে নয়?
: কারণ সায়মা ডিভোর্সি।
: তানিয়া কিন্তু ব্রেকাপ!!
: ডিভোর্সি আর ব্রেকাপ কিন্তু এক নয়।
: অবশ্যয় এক। তবে ডিভোর্স পবিত্র, স্বীকৃত, আর ব্রেকাপ অপবিত্র, অবৈধ।
সে বিদ্রুপ হেসে বলল,
: ডিভোর্স পবিত্র হয় কি করে?
: দেখ ডিভোর্স হতেহলে প্রথমে বিয়ে হতে হয়
* বিয়ে হচ্ছে বৈধ, যা শরিয়ত সম্মত।
* বিয়ে হচ্ছে এমন একটা বৈধ প্রক্রিয়া যেখানে দুজন নরনারীকে একসাথে থাকার স্বীকৃতি দেয়।
* বিয়ে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুজন নরনারী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, সেটাও বৈধ।
* এরপর যদি তাদের দুজনের মধ্যে বনিবনা না হয়, তাহলে তারা শরিয়ত ও প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ডিভোর্স প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যেতে পারে।
আবার অন্যদিকে ব্রেকাপ হতে হলে অবশ্যয় দুইজন নরনারী মধ্যে বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক থাকতে হবে।
* বিবাহবহির্ভূত প্রেম একটি শরিয়ত বিরোধী অবৈধ কাজ।
* এর ফলে দুইজন নরনারী অবৈধভাবে মিলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
* বর্তমানে বেশীরভাগ প্রেমে দৈহিক সম্পর্ক হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ, জেনা বা ব্যভিচার।
* দুইদিন পর এই নরনারী মধ্যে যখন মতের অমিল হয় তখন তাদের মধ্যে ব্রেকাপ হয়। যেহেতু বিয়েবহির্ভূত প্রেম অবৈধ, সেহেতু এই প্রেম ব্রেকাপও অবৈধ।
এবার তুই বল, তুই তানিয়াকে মেনে নিতে পারলে কেন সায়মাকে মেনে নিতে পারলি না? প্রেমের ব্রেকাপকে স্বীকৃতি দিতে পারলে কেন বিয়ের ডিভোর্সকে স্বীকৃতি দিতে পারলি না।
সে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, দোস্ত, সায়মার বিয়ে হয়েছে এটা যেমন সবাই জানে, ডিভোর্স হয়েছে সেটাও সবাই জানে। কিন্তু তানিয়া মনিরের সাথে প্রেম করেছে এটা যেমন অনেকে জানে না, এটাই হয় তো পার্থক্য।
: বাহ, তার মানে যে অবৈধ কাজটা গোপনে করা হয় সেটা খারাপ হলেও ঠিক, আর যে বৈধ কাজটা প্রকাশ্যে করা হয় সেটা ভাল হলেও বেঠিক।
: দোস্ত এক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নেই। আমরা সমাজ দ্বারা শাসিত। পরিবার নিয়েই থাকতে হয়।
আসলেই তার কিছুই করার ছিল না, তাই তো শেষ পর্যন্ত সে তানিয়াকেই বিয়ে করল। তবে কিছু দিন আগে শুনলাম, তানিয়া নাকি আবার তার পুরানো প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। ডিভোর্সি সায়মার এমন ঝুকি থাকে না। যাই হোক, আমাদের মেন্টালিটি এমন হয়েগেছে যে আমরা বিয়ের ক্ষেত্রে ডিভোর্সি মেয়ে মেনে নিতে না পারলেও একটা ব্রেকপা মেয়ে ঠিকই মেনে নিচ্ছি। থাকুন না তার যত ইতিহাস। যেহেতু এটা ব্রেকাপ হওয়া মেয়েটার প্রথম বিয়ে, তাই সেই ভাল সর্বোৎকৃষ্ট।।
অনেকদিন পর এত বড় লিখা লিখলাম, তাই এই সম্পর্কে আপনাদের মতামত আশা করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।
© বঙ্গ মিত্র
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×