somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"কনসেন্ট" নামক পাজলের ভিতর বাহির।

১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি শুধু কন্সেন্ট ই জরুরী নাকি সামাজিকতার প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ? আচ্ছা মানলাম, শুধু কনসেন্ট দেওয়াটাই জরুরী। তাহলে কিভাবে কনসেন্ট দিলে বুঝবো যে প্রকৃত অর্থেই একজন মেয়ে কনসেন্ট দিয়েছে?


আপনি একজনের সম্মতিতে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেন, দু'জনেই খুব ইনজয় করলেন কিন্তু পরদিন দেখলেন মেয়ে আপনার নামে ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিয়েছে তখন আপনি প্রমাণ করবেন কিভাবে যে, এই সম্পর্কে তার সম্মতি ছিলো? হয়তো বলবেন-

ফোন রেকর্ড আছে। ফোন রেকর্ড সিস্টেম তো আসছে সবেমাত্র কয়েকদশক হলো। দশকে দশকে তো আর সিস্টেম চ্যাঞ্জ করা যায় না রে ভাই, তাহলে এমন একটা ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুকতে হবে যেটা যুগ যুগ ধরে চলে আসবে। আর সেই পদ্ধতিটাই লিখিত ভাবে কনসেন্ট দেওয়া। কিন্তু লিখিত ভাবে কনসেন্ট দেওয়ার পর ও তো মেয়ে আদালতে বলতে পারে যে, আমাকে হুমকি দিয়ে, মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে লিখিত সম্মতি নিয়েছে, আমি এই সম্পর্কে সম্মতি দেই নি, আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তখন ও ছেলের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের মতো কিছুই থাকে না। কিন্তু যদি এমন হয় যে-

মেয়ে ছেলের অভিভাবক এর সামনে এবং তার অভিভাবকের উপস্থিতিতে লিখিত ভাবে কনসেন্ট দেয় তাহলে ছেলেকেও আর কখনো ধর্ষণ মামলার ভয় নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে না এবং মেয়েকেও ছেলে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার পর আমাকে ছেড়ে চলে যাবে কিনা সেই ভয় নিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে হবে না।


~এখানে কোন পদ্ধতিতে কনসেন্ট দেওয়ার মাহাত্ম্য বেশি?

শুধু মুখে সম্মতি দেওয়া? নাকি, মৌখিক সম্মতিটাকেই লিখিত আকারে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে দেওয়া?


নিশ্চয় আপনি গরুর মাংস রেখে শুধু ডাল দিয়ে ভাত খাবেন না, যদি না আপনার হার্টে ব্লক থাকে। আগে বাইপাস সার্জারী করে আসেন ভাই।



~নৃ-বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে - লক্ষ লক্ষ বছরের বিনিময়ে মানুষ সামাজিক জীবে পরিণত হয়েছে, ভাতৃত্ব বন্ধন তৈরি করা শিখেছে, দলবদ্ধভাবে বাস করা শিখেছে, সামাজিক মূল্যবোধের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে শিখেছে। হাজারো বছরের বিনিময়ে মানুষ যেগুলোকে ভিত্তি ধরে সভ্য হয়েছে, আধুনিক হয়েছে অথচ সেই আধুনিকতার নামেই যদি কয়েকদশকে মানবজাতির মহান অর্জনকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয় সভ্য জাতি হিসেবে সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?



~মানুষ পতিতালয়ে নিশ্চয়ই ভালোবাসা খুজতে যায় না। পতিতালয়ে যায় নিজের ভিতরের পশুত্বকে উগ্রে দিতে। শিকারী কখনো তার সমজাতীয়ের উপর আক্রমণ করে না, আক্রমণ করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির হরিণীর উপর। এখানে টাকার বিনিময়ে কনসেন্ট কিনে নিয়ে পতিতাকে হরিণী বানিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পরে, নিজের পশুত্ব উগ্রে দিতে।

নষ্ট সামাজিকতার এই নিয়মে পতিতা নিজের ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় টাকার বিনিময়ে কনসেন্ট দিতে বাধ্য হচ্ছে।



~পরকীয়ায় যে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে এতে তো কারোর সন্দেহ নেই। এখন আপনার বউ যদি অন্য কারোর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে আপনার বুকে ব্যথা হবে কিনা?

এই ব্যথা হওয়াটাই স্বাভাবিক, কেননা অনেকজনের উপস্থিতিতে আপনার প্রতি তার সম্মতি দেওয়ার পর মৌখিক সম্মতিতে (পরকীয়া প্রেমে) অন্য পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না, এটা স্পষ্টত প্রতারণা। সামাজিকতার বেড়াজাল ছিড়ে যাকে ইচ্ছে তাকে কনসেন্ট দিতে চাইলে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে কে বলেছে? এসকর্ট সার্ভিসে যোগ দিলেই তো হয় বরং উপড়ি কিছু ইনকাম ও হবে।



~মেয়েদের সাইকোলজি বলে, তারা যাকে ভালোবাসতে পারে না তার সাথে শরীর শেয়ার করতে ঘৃণা করে। পাঁচ সাত বছর চুটিয়ে প্রেম করেছেন, বয়ফ্রেন্ড স্টাবলিশড নয় বলে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে মুড সুইং এর নাম দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করবেন না অথচ লিখিত ভাবে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে কনসেন্ট দিয়েছেন এমন হিপোক্রেসি কেন?




এই যে টাকার বিনিময়ে পতিতাকে কনসেন্ট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পরও ভালোবাসার অভিনয় করে তার সম্মতি আদায় করে নেওয়া হচ্ছে, আপনি একজন নারী হিসেবে স্বামীর সাথে শরীর শেয়ার করতে পারছেন শুধুমাত্র এই কারণে যে আপনার মনে অন্য ছেলে বাসা বেধে আছে তাহলে এসব ক্ষেত্রে কনসেন্টের মূল্য থাকলো কোথায়? তাহলে, কনসেন্ট দেওয়া বলতে ঠিক বুঝায়?



~কনসেন্ট যেমন একটা মেয়ের দেওয়ার অধিকার আছে ঠিক তেমনি একটা ছেলের ও আছে। ছেলের কনসেন্ট না দেওয়াটাকে তার শারীরিক দুর্বলতা হিসেবে ধরা হয় কেন?



~স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ একজন অ্যাসেক্সুয়াল হলে দিন শেষে মেয়েটিকেই কষ্ট পেতে হয়। বৈবাহিক ধর্ষণ এই সম্পর্কে বেশি ঘটে থাকে। এই সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার সহজ উপায় থাকা দরকার ছিলো যাতে করে দু'জন আলাদা হতে পারে। কিন্তু তা না করে দেন-মোহরের চাপে পুরুষকে পিষ্ট করে রাখলে সে ডিভোর্স কেন দিবে? তার বউ অ্যাসেক্সুয়াল, এতে তার দোষ কি? সে কেন এতো টাকা দিয়ে সেই মেয়ে কে ডিভোর্স দিবে? বিবাহের আগে কি মেয়ে বলেছিলো যে সে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে অক্ষম? এখানে ছেলের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব কষেছেন কখনো?



শুধু কনসেন্ট দেওয়াতে কখনো একটা সম্পর্ক বৈধ হতে পারে না। কনসেন্ট দেওয়ার বৈধতা পাওয়ার জন্য আগে সামাজিক/রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত পথে পা বাড়াতে হবে ঠিক যেই কারণে একটা মেয়ের বয়স ১৬ না হওয়ার কারণে তার সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরও এই সম্পর্ককে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হচ্ছে।



~বৈবাহিক সম্পর্কে দু'জন মানুষ কিভাবে মিলিত হবে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এই সম্পর্কে মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা জানতে চাইলে এও জানা জরুরী যে মেয়ে কেন কনসেন্ট দিচ্ছে না। কতগুলো পরিবারের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে কত শতাংশ পরিবারে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে সেটা না জেনে দু'চারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ভিত্তি ধরে ৩/৪ কোটি পরিবারের মধ্যে যেই বৈবাহিক সম্পর্কের বৈধ এবং প্রতিষ্ঠিত প্রথা রয়েছে তার দিকে আঙ্গুল তোলা নিতান্তই বোকামি। সমীক্ষা ছাড়া ঢালাওভাবে বৈবাহিক ধর্ষণ ঘটছে বৈবাহিক ধর্ষণ ঘটছে সেই গান গাওয়া পাগলের প্রলাপের সামিল।



একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবেঃ মানুষ কুকুর বিড়ালের মতো নয় যে যখন যাকে ইচ্ছা যেখানে সেখানে তার সম্মতিতে লাগাইলাম আর সন্তান হলে কুকুর বিড়ালের মতো এখানে সেখানে কিংবা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসবো। কুকুরছানা ডাস্টবিন থেকে উঠে নিজের অন্য জোগাড় করতে পারবে, কিন্তু-

মানবছানা আকৃতিতে মানুষের মতো হলেও তাকে লালন পালন করে তার মধ্যে মনুষ্যত্বের বীজ বপন করতে হয় আর ঠিক এই কারণে মিলিত হওয়ার পূর্বে কনসেন্টের সাথে সাথে কমিটমেন্ট করার ও প্রয়োজন পরে নিজেদের না হোক অনাগত ভবিষ্যতের লালন পালন করার প্রয়োজনে...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:০৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×