somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ফুটবল দ্বৈরথ, বাঙালিদের নষ্ট বিবেক!

১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই বাণী ছাড়ে, বুলিং করবেন না, রেসিজমকে না বলুন, হেইট স্পীচকে ঘৃণা করুন অথচ সবাই বাস্তবিক জীবনে সেগুলোরই চর্চা করে।

একটা সময় ছিলো যখন মানুষের ভার্চুয়াল লাইফ আর রিয়াল লাইফের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিলো কিন্তু এখন ভার্চুয়াল লাইফে মানুষ যেটা করে রিয়াল লাইফে ঠিক সেটারই প্রতিফলন ঘটে।

~ খেলাধুলা বিনোদনের জন্য। বিনোদন নিতে হয় নিজের সাপোর্টেড টিমের দুর্দান্ত পাসিং, স্ট্রাইকারের ফিনিশিং, মিডফিল্ডারদের ড্রিবলিং, গোলকিপারের অসাধারণ সেভিং থেকে আর বিপক্ষ দলকে নাকানিচুাবানী খাইয়ে ট্রফি জেতার মাধ্যমে। হেরে যাওয়া টিমের সাপোর্টারদের বুলিং করা, তাদের বিরুদ্ধে হেইট স্পীচ ছড়ানো কখনো বিনোদনের মাধ্যম হতে পারে না।

~ ব্রাজিল আর্জেন্টিনার দ্বৈরথকে বাংলাদেশে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় আদতে বিশ্ব ফুটবলে সেটার অতটা ঐশ্বর্য নেই। কিন্তু এটা বলতে দ্বিধা নেই যে এই সময়কার ফুটবল প্রেমিরা যখন থেকে খেলা শিখেছে তখন এই দুই দল বিশ্ব ফুটবলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। একই মহাদেশীয় হওয়ার সাথে সাথে সর্বকালের সেরা দুই খেলোয়াড় দুই দেশের, পাশাপাশি লিডিং পজিশনে থাকা ক্লাবগুলোর সেরা খেলোয়াড় হওয়ার কারণে অজ্ঞাত সরে বাংলাদেশী ফুটবল প্রেমিদের কেন্দ্রবিন্দুতে তারা জায়গা করে নিয়েছিলো। এটা ভিন্ন কিছু নয়।



~ব্রাজিল যেমন পেলে, রোনালডো আর নেইমারের মতো তারকায় ঠাসা তেমনি আর্জেন্টিনার ও রয়েছে ম্যারাডোনা, বাসিস্তুতা আর মেসির মতো অসাধারণ কিছু তারকা। এটা স্বীকার করতে দোষ নেই যে, ট্রফি অনেক সময় আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা প্লেয়ারকে লিডিং পজিশনে নিয়ে আসে। সেই জায়গা থেকে ফুটবলে আর্জেন্টিনা থেকে ব্রাজিলের ঝুলিতে থাকা ট্রফির সংখ্যার সাথে সাথে তাদের তারকার সংখ্যা ও বেশি। কিন্তু এটাও বলতে দ্বিধা নেই যে আর্জেন্টিনা যতটা শান্তিময় ফুটবল খেলে ব্রাজিল ততটাই এগ্রেসিভ ফুটবল খেলে। দুই দলের খেলার স্ট্র‍্যাটাজি, অর্জন, গৌরবে আসলে ভিন্নতা এতোই বেশি যে তাদের মধ্যে তুলনা করা নিতান্তই বোকামি।

~খেলা ভালো করে বুঝে তারপর পছন্দ মতো কোনো দলকে সাপোর্ট করেছে এমন ফুটবল প্রেমী বাংলাদেশে একজন ও খুজে পাওয়া যাবে না। ছোট বেলায় বাবা, চাচা ও ভাইদের সাথে খেলা দেখতে গিয়ে তারা যে দলের খেলা বেশি দেখতো যে দলকে সাপোর্ট করতো যে দলের এক দুইজন প্লেয়ারের নাম খুব সহজেই মনে রাখা যেত তারা ধীরে ধীরে সেই দলেরই সাপোর্টার হয়ে যেতো।



বাঙ্গালীদের ফুটবল প্রেম ছোট বেলার আবেগ। প্রথম যৌবনের প্রেমিকাকে যেমন কখনো ভোলা যায় না তেমনি ছোট বেলায় যাদের খেলা দেখে ফুটবল শিখেছি তাদের হার কখনো মেনে নেওয়া যায় না। কেউ ৩০ বছর ট্রফির দেখা না পাক কেউ বা সর্বাধিক বিশ্বকাপের অধিকারী হয়ে বিশ্বকাপের মতো অতো বড় মঞ্চে ৭ গোল খাক দুইটাই দু'জনের জন্য বেদনাদায়ক।


ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল দেওয়াটাকে ব্রাজিলের ফ্যানরা যতটা অবজ্ঞার সুর দেখে বৈশ্বিক ফুটবলে সেটা হ্যান্ড অভ গড নামে ততটাই পূজনীয়। এই ব্রাজিলই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করে জয়লাভ করেছিলো কিন্তু সেটা কয়জন জানি? লিখিত ইতিহাসই যেখানে সময়ের গেঁড়াকলে ঢাকা পড়ে যায় সেখানে আমি আপনি দূর দেশের কোন সাপোর্টারের অলিখিত মারামারি কাটাকাটির ইতিহাস সেটা কে মনে রাখবে? ফুটবলের রাজপুত্র পেলের গোলকিপারকে আঘাত করে তার হাত থেকে বল কেড়ে নেয়ে গোল দেওয়ার নিন্দিত ইতিহাস জেনারেশন গ্যাপের কারণে আমাদের কাছে পৌঁছায় নি। তারপর ও যেটা নিন্দিত যুগের আবর্তনে সেটাই নন্দিত।

~ আপনি তাকে স্পন্সর করেন নি, আপনি তাকে লীড দেন নি, আপনি সেই দলের হয়ে খেলেন নি এমন কি আপনি সেই দেশের অধিবাসী ও না তাহলে আপনার পছন্দের টীম জয় লাভে আপনার ক্রেডিটটা কোথায়? তেমনি ভাবে যেই সাপোর্টারের টীম হেরেছে সেখানেও তার পাওয়া না পাওয়ার কিছু নেই। শুধুমাত্র প্রথম যৌবনের প্রেমের বিচ্ছেদের মতো একটা সাময়িক বেদনা কাজ করে। চোখের কোণ নোনতা জ্বলে সিক্ত হয়। সেই সময় বন্ধু আপনার মুখ থেকে, 'খেলায় হার জিত থাকবেই এতে মন খারাপ করিস না।' এই কথাটা শুনতে চায় তখন আপনি সেটা না করে বরং কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেন।

~আপনার আত্মীয়ের রক্ত লাগবে বলে যে বন্ধু এক ঘণ্টার মধ্যে রক্ত ম্যানেজ করে দেয়, মাস শেষের অর্থনৈতিক দূরাবস্থায় যে বন্ধুকে পাশে পাচ্ছেন, সম্পর্কের অবনতিতে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকাকালীন যে মানুষটা আপনাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে যাস্ট একটা খেলাকে ঘিরে তিলে তিলে গড়ে তোলা সেই সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো মানে নেই।

জড় বস্তুর আঘাত দু'দিন পর ভালো হয়ে যায়, কিন্তু কথার আঘাত মানুষ কখনো ভুলতে পারে না।


তাই জয়ী দলের সাপোর্টাররা এমন কোনো আচরণ করবেন না যাতে আপনার বিপরীতে থাকা মানুষটি আপনার দূরাবস্থায় সেই আচরণ দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়!

~ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলাকে ঘিরে বিগত সময়ে বাংলাদেশে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এবার ঘটুক সেটা চাই না। আপনি কিংবা আপনার কোনো বন্ধু আহত হলে মেসি কিংবা নেইমার আমাদের জন্য চিকিৎসার খরচ পাঠাবেন না। যেই খেলা থেকে বিনোদন নেওয়ার পরিবর্তে আহত হয়ে নিজের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে এমন বিনোদনেরই বা প্রয়োজন কি!!!

তবে, এবার কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলাকে ঘিরে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তার একমাত্র এবং কেবলমাত্র দায়ভার বর্তাবে সংবাদ মাধ্যমগুলোর উপর, যারা দায়িত্বশীলতার পদে থেকে মূর্খের মতো বিগত কয়েকদিনে অপ্রয়োজনীয় স্ট্র‍্যাটাজি, ইতিহাস ইত্যাদি তুলে ধরে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ফ্যানদের মধ্যে চলমান আগুনে কয়লা ঢেলে দিয়েছে। যেখানে-

নতুন করে চালানো দৈব পরীক্ষায় কোন ফলাফলটা আসবে সেটা পূর্বের ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন, যাদের সম্ভাবনার এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও নেই!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×