somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের পেনাং যাত্রা... (ভ্রমণ না ভোজন কাহিনী)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্চ ১৬, ২০১৩। আমার ক্লাস শেষে আমি আর তিনি ক্যাম্পাসে দেখা করলাম আজ।.... :!> :!> । একই ক্যাম্পাসে হবার কারণে আমাদের দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজকের দেখা হবার মধ্যে অন্য মাজেজা আছে। বেশ কিছুদিনের ঝগড়া হবার পর গতরাতে কী কারণে যেন দুজনের মনে হল আমাদের মাঝে এখন একটা ঝগড়ার বিরতি দেওয়া উচিত। /:) /:) আসলে দুজন সমবয়সী হলে মনে হয় রোমান্স থেকে ঝগড়াই বেশি হয়। আল্লাহ জানেন তিনি আসলে কী রেখেছেন আমাদের কপালে, এখনতো ঝগড়া হলে হাতাহাতি থেকে মারামারির পর্যায়ে চলে যায় তা। আল্লাহ দিলে যদি বিয়ে হয় তাহলে কী হবে তা তখনের জন্য তোলা থাক। B:-) :||

তো দেখা হবার সময়টা লান্স আওয়ার তাই দুজনে মনে হল আচ্ছা লান্স সেরে নেই দুজনে। আবার সেই একি ক্যাসাল...
: কোথায় খাইতে যাবা?
: তুমি বল না... ...
: আচ্ছা তুমি বললে সমস্যা কোথায়?
: আমি বলে কী হবে, আমারটাতো শুন না তাই তুমিই বল
: ও আচ্ছা, তাই নাকি?
: তাই নাকি কথাটা আমার সামনে বলতে নিষেধ করছি না, আবার বল কেন?
: তো কোথায় খাইতে যাবা বলতে সমস্যা কোথায়?
: আচ্ছা এইটা নিয়া এত্তো পেঁচাও কেন?
: আচ্ছা চল পেনাং যাই?
: পেনাং এ যাবা? নাকি নিরবে যাবা?
: তুমি কই যাইতে চাও?
: আচ্ছা ঠিক আছে যেখানে তোমার ইচ্ছা, চল।

দুজনে রিক্সা করে রওনা দিলাম। যেতে যেতে বলে রাখি পেনাং হল ঢাকা মেডিকেলের পুরান গেটের দিকে রাস্তার অপর পাশের একটা আধা চাইনিজ আধা বাংলা রেস্তোরা। যারা ডি এম সি বা বুয়েটের তারা ভালো বলতে পারবেন। আর নিরব হল চাংখারপুলের আদি অনন্ত সেই হোটেল। এখন সেটাও চাইনিজ এন্ড বাংলা হোটেল হয়ে গেছে। যাহোক আমরা প্রায় এসে গেছি বুয়েট আর মেডিকেলের মাঝে দিয়ে। তাই এখন আর কথা বলতে পারব না আপনাদের সাথে।

: আচ্ছা শুন তোমার তো দেরি হই যাবে, আজ নিরবে না যাই, পেনাং এই খাই আজকে?
: পেনাং এ খাবা?
: এখন দেখ কয়টা বাজে, নিরবে যাইতে যাইতে তো তিনটা বাজবে, খাবার খাইই কি দৌড় দিবা নাকি বাসের জন্য। তার থেকে এখানে খাই তার পরে তোমার বাস ধরতে পারবা কার্জনে গিয়া।
: হুম তাও ঠিক। আচ্ছা ঠিক আছে চল।
: এই যে মামা এই দিকে রিক্সা ঘুরায়ে অই পাশে নিয়া সাইড করেন, এইখানেই নামব।

ঢুকতে ঢুকতে আরও কিছু বলে নেই। এই হোটেল খানার খবর আমাকে তিনিই আগে জানিয়েছিলো। তার কোন বান্ধবিদ্বয় নাকি এখানে এসে খেয়ে গিয়ে এর খুব প্রশংসা করেছিলো। তবে এখানে আসার আর একটা কারণ আছে, ভেতরটা "নিরব" থেকে অনেকটাই নিরিবিলি। তার জন্য দুজনের কাছে এটা একটু ভালো লাগে।

দুজনে বসলাম একেবারের ভেতরের একটা টেবিলে। রাস্তা দেখা যায় এখান থেকে, ভেতর থেকে পর্দা দিয়ে ঢাকা।
: আচ্ছা কী খাবা তাড়াতাড়ি অর্ডার দেও, খাবারের পরে যেন বাস ধরতে পারি
: তুমি দেও
: তুমি দিলে সমস্যা কী, এখানে আসার কথা তো আমিই বললাম তাই না?
: কই তুমি বললা? এখানে আসার কথা কি আমি না তুমি আগে বলছ?
: আমি আগে বলছি, আর সব আমাকেই বলতে হয়।
(বলে কী মাইয়া?:-*:-* কথা শুনে আমি পুরাই টাস্কিতো:-*:-* !! আবার একটা বুদ্ধিও আসলো)
: আচ্ছা ঠিক আছ, সবকিছু তো তুমিই আগে বল তাহলে এটাও তুমিই বল।;);)
: আচ্ছা তাই নাকি? আমি বলব?

কথার মধ্যে কেমন যেন সুযোগ সন্ধানীর ভাব:-*:-*:-*
: দেখ আমার বাজেট ৫০০টাকা। এর বেশি আসলে আমি কিন্তু আমাকে তোমার ব্যাগে হাত দিতে হবে।
: আরে বাবা তাই নাকি?
: আচ্ছা দেও না, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো

অর্ডার দিতে দিতে আবার কথা বলে নেই। এখানের শ্রিম্প কারি আর ফ্রাইড রাইস আমাদের দুজনেরই প্রথমবার খুব ভালো লেগেছিলো। কিন্তু দ্বিতীয়বার আর তেমন ভালো লাগে নি। অবশ্য সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের দুজনেরই তাড়া ছিল আর রান্নাটাও সেদিন ভালো হয় নি। যাহোক শ্রিম্প পাওয়া গেলো নাহ। টাকার চিন্তায় তিনি ফ্রাইড রাইস অর্ডার করলো, আর আমি সাথে শ্রিম্প উইথ চিকেন দিতে বললাম।

: আচ্ছা আমি সামনে বসে আছি, আর তুমি এতো মোবাইলে কী টিপাটিপি কর?X((
: কিছু করি নাহ, দেখি।
: ছবি তুলতে হবে না আমার। :|| :|| :|| :||
: হেহ , ছবি তুলতেসি কে বলল?
: দেখি তাইলে মোবাইল দেখাও?
: মোবাইল দেখাইতে হবে কেন?
: আচ্ছা ঠিক আছে, দেখাইয়ো না।
: তো বোতল দিয়ে মুখ ঢাকতেস কেন?
: ঢাকলে তোমার কী? তুমি মোবাইল টিপতেস মোবাইল টিপ।
: তো এই জন্য এটা মুখের সামনে ধরে রাখতে হবে?
: তো কী হইসে ধরে রাখলে? তুমি তো আর ছবি তুলতেস নাহ।
: আচ্ছা বোতলটা সরাও
: না, সরাবো না।
: আরে ভাই সরাও না, কী হয় সরাইলে?
: আচ্ছা তাহলে মোবাইল দেও আমার হাতে, দেখি কী ছবি তুলস, ছবি পছন্দ না হলে ডিলিট করে দিবো

এভাবেই নানা হাবিজাবি কথা বলতে বলতে খাবার এসে পড়লো
: আজকের ফ্রাইড রাইসটা ভালোই লাগতেসে খাইতে
: হুম, কিন্তু এইটা কী দিলো?
: আল্লাই জানে, মনে হয় চিংড়ি আর মুরগি একসাথে ভাজি করসে।
: কিন্তু খাইতে কেমন লাগতেসে, পোড়া পোড়া...
: আচ্ছা দাঁড়াও ব্যাটকে ডাক দেই, ভাইয়া একটু এই দিকে আসেন তো
: আচ্ছা আমরাতো শ্রম্প উইথ চিকেন অর্ডার দিলাম, তো এইখানে শ্রিম্প কই?
: জ্বী ম্যাডাম চিকেন ফ্রাই করার জন্য যে মিক্সার রেডি করা হয় তাতে শ্রিম্প দেওয়া আছে।

বলে কী ব্যাটা শুনে দুজনেই মুখ চাওয়া চায়ি করলাম।
: আচ্ছা এটা মনে হচ্ছে পোড়াও গেছে, কেমন যেন মনে হচ্ছে।
: না ম্যাম ওটার স্বাদটাই এমন

হালার ব্যাটা তাও দোষ স্বীকার করব না মনে হচ্ছে। আবার মুখ চাওয়া চায়ি।
: আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান এখন
: আর কিছু কী দেব, ম্যাম? কোল্ড ড্রিংক্স?
: না, লাগলে আপনাকে ডাকব

: মনে হয় মিক্সার বানানোর সময় চিংড়ি ধোয়া পানি দিসেরে... :#) :#)
: খাই দেখ কেমন যেন চিংড়ি চিংড়ি গন্ধ কিন্তু খাচ্ছি চিকেন
: হুম।

এভাবে কথায় কথায় খাওয়া শেষ হল দুজনের। বিল দেবার পালা। ওয়েটার এসে একটা ছোট ফাইলের ভেতরে বিলটা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। (ছোট এই ফাইলের মত বস্তুটার নাম আমার জানা নাই) এটা দেখে আমি টাকা তাতে দিয়ে ব্যাটাকে বিল রাখতে বললাম। ক্যাশে নিয়ে গেলো ফাইলটা। তারপরে আবার একটু পরে সেটা নিয়ে এসে আমাদের টেবিলে রেখে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কেন তা বুঝতে পারলাম।
: আচ্ছা এইটা একটু পরে এসে নিয়ে যান।
: আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।

এই বলে আমাদের থেকে কিছুটা দুরের একটা টেবিলে যেয়ে বসে ছিলো ওয়েটার। অপেক্ষা আমরা উঠে গেলে তার প্রাপ্য টিপস কালেক্ট করা।

: কী খানা খাইয়া কী ম্যাডাম খুশি? :)
: ধুর কিসের খুশি, তোমার সাথে না আসলেই ভালো হইতো, এগুলা খাওয়া লাগতো না। তার থেকে আমি হলেই খাই নিতাম দুপুরে। :-P
(মানে ঝগড়ার বিরতি উদ্‌যাপন তার কাছে মনে হয় ভালো লাগে নাই।)
: আচ্ছা ব্যাটাকে এখন কত দেওয়া যায়?
: আমি জানি কী, তুমি দিবা তুমি জান কত দিবা
: আমারতো কিছুই দিতে ইচ্ছা করতেসে নাহ, যেই খাওয়া খাওয়াইসে X( X( X(( X((
: দেও তাহলে ৫-১০টাকা যা খুশি
: এহ ৫-১০টাকা, এমন একটা খাবারের জন্য ব্যাটাকে আবার বকশিষ দিবো
: এখন কিছুতো দিবা তাই না, না দিলে কেমন দেখায়।

এমন সময় মেডিকেলের কিছু স্টুডেন্ট আসলো। বেশ কয়েকজন। আমাদের বসে থাকতে দেখে ওয়েটার তাদের দিকে মনযোগ দিল কিছুটা। মনে মনে ভাবি এহ কেমন দেখায়? আমার মোটেই ইচ্ছা করতেসে নাহ কিছু দিতে। শালার খাবার ভালো না আবার টাকা দিয়া যাবো?

তখন মাথায় আর একটা বুদ্ধি আসলো। ব্যাগ থেকে কলম বের করলাম। বিলের কাগজের নিচে লিখলাম।
“বাবুর্চিকে আগে চিকেন ফ্রাই কোর্স করান তার পরে টিপসের আশা কইরেন”

লেখা দেখে তিনি হাসতে হাসতে শেষ। দুজনে হাসতেসি :-B :-B =p~ =p~ =p~ =p~

: খুব ভালো কথা লেখছ। এখন যাবা কেমনে, ব্যাটা দেখবে না?
: দেখার জন্যই তো লিখলাম
: তোমার ইজ্জত থাকবে কিছু?
: ইজ্জতের কথা ভেবে কি যা খাওয়াবে তা দিয়াই খুশি হতে হবে নাকি? তাও যদি খাবার ভালো হইতো তাহলে কথা ছিলো, তার তো উলটা কথা "খাবার ঠিকই আছে" X( X(
: তো এখন বের হবা কেমনে?
: আমরা আর একটু বসি
: বাস চলে গেলে?
: বেশি না, দাঁড়াও ওদের অর্ডার নিয়া ব্যাটা ভেতরে গেলেই আমরা বের হব।
: আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর ব্যাটা ভেতরে চলে যাওয়া মাত্রই
: উঠ উঠ আস্তে ধীরে বের হয়ে যাই।

আস্তে ধীরে দরজা দিয়ে বের হয়ে ওটার সামনে থেকে সরে যাবার পরেই দুজনে কার্জনের দিকে দৌড়... ... হাসতেছি আর দৌড়াচ্ছি......

=p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ B-)) B-))
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৩৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×