somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের আগে তোমার বিদায়... ......

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আগেরদিন পর্যন্ত খুব সকালবেলা (বলা চলে মধ্যরাত) ঘুম থেকে উঠেছি। কিন্তু আজ উঠেছি সকাল ৬-৭টার মাঝে। যখনই ঘুমাই ৬টা-৭টার মাঝে আমার একবার ঘুম ভাঙেই... আর ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই মনে হল নীলক্ষেতের চিকেন স্যুপ দিয়ে নাস্তা করা গেলে ভালো লাগতো। ঘুম থেকে উঠেই শেভ করে হাত মুখ ধুতেই বাবার জিজ্ঞাসা কোথাও বের হচ্ছি কিনা? হুম বলার পরে আম্মার জিজ্ঞাসা তো নাস্তা করেইনা বের হবি। আর এত্ত সকালে কোথায় যাচ্ছি। বললাম নাস্তা করতে বের হচ্ছি, নীল্কখেত যাবো।


অনেকদিন পরে এসেছি বাসায় বলার উপায় নাই যে তার সাথে নাস্তা করতে বের হব। গতদিন তিনি এয়ারপোর্টে আসলেও আমি বাসায় যাওয়া পর্যন্ত আমার সাথেই ছিল, তাকেও আবার ঈদের জন্য তার বাসায় চলে যেতে হবে, আবার ছুটিতে তাকে একদিন সময় দিতেও আবদার করে আছে। তাই ভাবলাম সকালের নাস্তাটা বাইরেই করি আর তার সাথে আরো একবার দেখাও করি। গতকাল আমি সাথে থাকাকালীন সময়েই তার বাসা থেকে কল করেছিল। বেচারি পড়ে গেছে উভয় সংকটে। আমার সাথেও তার থাকতে ইচ্ছা করতেসে আবার বাসাতেও যেতে বলতেসে। বাসায় আর বলতে পারতেসে নাহ যে আমার সাথে আছে।


যেহেতু অনেকদিন পর বাসায় আসলাম তাই আর আম্মাকে না করি নাই। একটা রুটি আর মাংসের ঝোল কোনরকমে পেটে পুরেই(ডাইনিং হল স্টাইল... সময় ৩০ সেকেন্ড) বের হয়ে গেলাম। সকাল ৮টার কাছাকাছি সময়ে বের হলাম। তাকেও জানায়ে দিলাম যে বের হব।ম্যাডামের বাসা থেকে তাকে পিক করতে হবে। ম্যাডামের হুকুম বলে কথা। একবার চিন্তা করলাম অনেকদিন পর কি আমি আসলাম ঢাকাতে নাকি সে আসলো? পরে মনে হল অনেকদিন পর দুইজনের দেখা হচ্ছে এটাই আসলে বড় ব্যাপার। কে গেল কে গেল না সেটা এখন হিসাব করার বিষয় নাহ। বাসার কাছাকাছি যেয়ে হাটাহাটি করছিলাম। আনুমানিক তখন ৯টা বাজে বাতার কিছু বেশি। খুব সকালে একটা কাপল দেখি আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তারা দুইজনই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হিরঞ্চি ভেবে বসে নাইতো আবার? ভাবতেও পারে, কিন্তু গায়ের জামা কাপড় তো অন্তত আমাকে হিরঞ্চির অপবাদ থেকে দূরে রাখার কথা। জিন্স প্যান্ট (আগে খুব টাইট হলেও এখন সেটাই অনেকটাই লুজ হয়ে গেছে), আর টি-শার্ট।

যাই হোক তারা পার হয়ে যাবার পর মনে হল ম্যাডাম আসতে আসতে একটা জুস কিনে খাই, আর তাকে তাড়া দেই যে যত দেরি করে আসবা তত মিস করতে থাকবা। কিন্ত কপাল খারাপ আমার কেনার জন্য দোকানের দিকে হাঁটা দিতেই দেখি তিনি হেটে আসতেছেন। অবশ্য আমি আগে খেয়াল করি নাই, আতার আগেই আমার কাছে এশে হাত ধরল আমার। জানালাম যে নাস্তা করতে যাবো নীলক্ষেত। আর তিনি জানালো ঠিক আছে তারপরে বসুন্ধারাতে যেয়ে আমাকে একটা সানগ্লাস কিনে দেবে। যদিও আমি সানগ্লাস খুব একটা ইউজ করি নাহ। কিন্তু আব্বা প্রায়ই ইউজ করতে বলে। যাহোক সানগ্লাস পরে দেখা যাবে আগে নাস্তা করে নেই বলে হাঁটা দিলাম। বাসে উঠতে যাবো তখন মানা করে দিলেন ম্যাডাম, বাসে উঠলে পাশাপাশি বসতে পারবে না তাই। তা আর কি করা রিক্‌সা করেই রওনা হলাম।

একটা দোকানে নিয়মত খেতাম সকালবেলা। কিন্তু আজ যেয়ে দেখি তাদের স্যুপ শেষ হয়ে গেছে। পাশের দোকানে যেতে হল। খাওয়া শুরু করবো এমন সময়ে তার বাসা থেকে ফোন। বাসায় যাবার জন্য বের হয়েছে কিনা তা জানতে চেয়ে তার বাবা কল করেছেন। হালকা ধমকও খেয়েছেন ম্যাডাম, করুণ মুখ দেখে বোঝা ঝাচ্ছে এই হাল্কা সেই হাল্কা না একটু ভারী হাল্কা।

নাস্তা শেষ করে মনে হল থাক আর আটকে না রাখি। এমনেই ঈদের মৌসুম। বাস পাওয়া যাবে কি যাবে না, রাস্তায় জ্যাম সব মিলিয়ে এখন রওনা হলে আবার কখন বাসায় পৌঁছাবে কে জানে। আমার ইচ্ছা করছিল তাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি, কিন্তু এদিকে আবার সমস্যা বাসায় মামা মামী আসবে আমার সাথে দেখা করতে নাকি। আমি অনেকদিন পর বাসায় এসেছি এই জন্য নাকি। আমাকে দেখতে আসবে। মামা–মামীর বিবাহযোগ্য মেয়ে নাই আগেই বলে রাখি।

যাই হোক আবার একই আবদার, রিক্সা করে যেতে হবে। নীল্কখেত থেকে রিক্সা নিয়ে রওনা হলাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে। সারাটা পথ প্যান প্যান আমার যাইতে ইচ্ছা করতেসে নাহ, আজকের দিনটা থাকি। আজকে আমাকে সময় দেও। যেতে দিতে আমারো ইচ্ছা করছিলো নাহ, বিয়া করা বউ হলে জোর করেই রেখে দিতাম। কিন্তু এখনতো তিনি একজন বাবার মেয়ে, আমার থেকে বাবার দাবি তার উপরে অনেক অনেক বেশি। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাসে তুলে দিতে গেলাম।

বাসস্ট্যান্ডে বাস নাই। বিআরটিসি এসি বাস নাই, ডাবল ডেকারে করে তারা সার্ভিস চালু রাখসে, আর ডেকে ডেকে লোক তুলতেছিল। কি আর করা। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। সেটাতেই তাকে উঠায়ে দিতে হল। উঠতে যেয়ে একজন মহিলা হয়তো বুঝতে পেরেছেন তিনি একা যাচ্ছেন। মহিলা ডেকে তার পাশে বসতে বললেন। সিট পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই জাগাতে একজন মহিলা ডেকে সিট দিলেন। ভাগ্য ভালোই তার বলতে হবে।

নেমে গিয়ে কিছু খাবার, জুস আর পানি কিনে এনে দিলাম তাকে। বাসও ছাড়ি ছাড়ি তখন। তাকে রেখে চলে আসতে হল। বাস থেকে নামার পরেই তার ফোন, বাসের সামনে এসে দাঁড়াই থাকো। তোমাকে দেখবো। কি আর করা, হুকুম তামিল করতে নেমে পড়লাম। এবার বলে দাঁড়াইয়া আছো কি করতে? বাসের সামনের রাস্তা দিয়া সোজা হাঁটতে থাক। তোমাকে দেখি আমি বাস না যাওয়া পর্যন্ত। কি আর করা তাই করতে হল।

বাস চলে যাবার পরে ফোনে আরো একটু কথা হল, বাসায় যেয়ে জানাবা, খাবা নিয়মিত ইত্যাদি ইত্যাদি... ...। যদিও একটু একটু পর পর কল এসএমএস দিয়ে যোগাযোগ হয় বাসায় গেলে। বড় কোন ঝগড়া হলে সে অন্য কথা।

জুন ২০০৮ তোমাকে প্রথম এভাবে বাসে উঠিয়ে দিতে গিয়ে নিজের কাছেই কেমন যেন লেগেছিল। সেই সময়ে কিছু বলি নাই সেদিনের কথা। পাছে তুমি কিছু মনে করে বস। পরে অবশ্য বলেছি। তুমিও তোমার খারাপ লাগার কথা জানিয়েছো। সেই ছুটিতে একদিন(২৪জুন) হঠাৎ মধ্যরাতে ফোন করে যা বলে ছিলে পরে তুমি সেটা আর স্বীকার কর নাই। তবে আমার ভালোই লেগেছিল শুনতে। এরপর থেকে দু জনের মাঝের দূরত্বটা একটু একটু করে কমতে থাকে। আরো আরো শেয়ারিং কেয়ারিং বাড়তে থাকে।

এরপরে এমন অনেক হয়েছে হয়তো তোমার যাবার সময় আমি সাথে ছিলাম না, হয়তো ব্যস্ততার কারনে কিংবা ঝগড়া ছিল। কিন্তু এখনো সেই মুহূর্তের অনুভূতি একেবারেই প্রথম দিনের মতন, প্রথম তোমাকে বাসে তুলে দেবার মতন... ...। যেন আগামী দিনগুলোতেও তা একই রকম থাকে... সবসময় যেন ভালোবাসা-সম্মান আর মায়া থাকে দুই জনের মাঝে... ... সম্পর্কের প্রথম সময়ের মতন......


ঈদ মোবারক... ভালো থেকো...

(লেখার পরে আবার পড়ে দেখতে ইচ্ছা করে না, তাই ভুল থাকলে নিজ দায়িত্বে ঠিক করে নেবেন, মনে চাইলে কমপ্লেইন জানাবেন কমেন্ট করে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×