(৭)
খাবার একটুকুও ছুঁয়ে দেখেনি আমার স্বামী,অজানা একজন কেউ পাশে বসেছিল যেন,
মনের কথাগুলো বলে অবশ্য বিরাট একটা বোঝা নেমে গেছে।রহস্য ফাঁস হয়ে গেছে,মদের আমেজে তখন আমি নতুন কেউ,একা নই আমি,জেকব কোনিগ তোমাকে ধন্যবাদ।
“তোমার কি ডাক্তার দেখানো,দরকার”?
জানি না,জানলে সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতাম না,সমস্যার সমাধান করতে চাই আমি,নিজেই।
“মনের মধ্যে কথা এভাবে চেপে রেখে নিশ্চয় কম যন্ত্রনায় ভোগান্তি হয়নি তোমার?বলে ভালই করলে,এখন মনটা হাল্কা হয়ে গেছে,তোমার।আগে বল নি কেন,এ ভাবে শুধু নিজেকে কষ্ট দিয়ে গেলে?আমি তো তোমারই একজন”।
এজন্যেই যন্ত্রনাটা এখন অসহনীয়,সকালে ছোট বেলা আর কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম,এই হতাশার শেকড় লুকানো হয়তো আমার কৈশোরে কোথাও।তবে মনে হয় না,আমার মন এলেমেলো উত্তরে অস্থির হয়ে আছে।একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা আমার,বয়স থেকে বয়সে যাওয়ায় কোন আলোড়নের ঝড়ও ছিল না,কোথাও।জানি না,তবে সমস্যাটা কোথায়?আগে তোমাকে বলিনি,ভাবতাম সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারবো,কিন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি।
“না,না,তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাওনি।আমি কোন কিছুই খেয়াল করিনি,এমন না যে তুমি কথায় কথায় রেগে যাও,তোমার ওজন কমে যাচ্ছে তাও না।মনের আবেগকে বশে আনার নিশ্চয় কোন উপায় আছে”।
(স্বামী হঠাৎ করে ওজন কমার কথাটা কেন বললো?)
“ডাক্তারকে বলবো,তোমাকে ঘুমের ওষুধ দেয়ার জন্যে।না হয় বলবো ওষুধটা আমার জন্যেই।ঠিকমত ঘুম হলে,ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।ছেলেমেয়েরাও আনন্দে থাকবে,আমরা সবসময় শুধু কাজ,কাজ করে যাচ্ছি,সেটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর অবস্থা না”।
কথাটা ঠিক না,আমি কাজে তেমন একটা মজে নেই।আজে বাজে বিষয় নিয়ে লিখে কিছু না হোক নিজেকে ব্যাস্ত রাখি,আর অন্ততঃ সরিয়ে রাখি দুঃশ্চিন্তার ঢেউ।
“তুমি যাই বলো,আমাদের আরও মানসিক ব্যায়াম দরকার,বাইরে একটু ঘোরাঘুরি করতে যাওয়া দরকার। বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগও অনেকটা কমে গেছে,বন্ধুবান্ধব একটা জানালার মত আনন্দের হাল্কা বাতাসটা আসে জানালায়”।
সাজিয়ে কি আর মনকে ভাল রাখা যায়,ওটা হবে একটা দুঃস্বপ্নের মত!মেকী হাসি দিয়ে বন্ধুবান্ধবদের আপ্যায়ন করা,আর অপেরা আর যানজটের গল্প ছাড়া আর কি আছে।ওখানেই শেষ না,ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ধাক্কাটাও আছে।
“চল এই সপ্তাহের শেষে জুরা পার্কে ঘুরে আসি,অনেকদিন বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি”।
এই সপ্তাহে ইলেকশন,কাগজের পক্ষ থেকে ইলেকশনের সমন্ধে কিছু একটা লিখতে হবে,
দলগুলোর অফিসের খোজখবর নিতে হবে।
খাচ্ছিলাম,মাঝে ওয়েটার বার দুয়েক ঘুরে গেছে,সবকিছু ঠিক আছে কি না জেনে গেল।আমাদের খাওয়া আটকে ছিল কথায়,মদের দ্বিতীয় বোতলটা শেষ হয়ে গেল।
(ভাবছিলাম স্বামীর মনের অবস্থাটা, “কি ভাবে সাহায্য করতে পারি আমার গিন্নীকে?কি ভাবে সরাতে পারি তার মনের হতাশার মেঘ?”
তবে কিই বা করতে পারে সে,যা করছে তার চেয়ে বেশী কিছু।খুবই খারাপ লাগবে,যদি এক বাক্স চকলেট,ফুলের তোড়া নিয়ে স্বামী হাজির হয় আগামীকাল।)
মদটা বেশীই খাওয়া হয়ে গেছে,গাড়ীটা রেস্তোরায় রেখে ট্যাক্সিতে বাড়ী ফিরলাম।শ্বাশুড়ীকে ফোনে বললাম,অসুবিধা না হলে ছেলেমেয়েরা রাতে তার বাড়ীতেই থাকুক,সকালে আমি স্কুলে নিয়ে যাব।
“কেন হতাশায় ভুগছো তুমি,তোমার জীবনে শূন্যতাটা কোথায়?”
জিজ্ঞাসা করো না,উত্তর আমার জানা নেই।জানি না সমস্যাটা কোথায়,এ ধরণের সমস্যায় আরও কেউ ভুগছে নাকি,সেটাও জানা নেই?শুনলাম এক বন্ধু ক বছর মানসিক যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে,এখন ওষুধ খাচ্ছে।জানি না আমারও ওষুধ খাওয়া দরকার কি না,বন্ধুর উপসর্গগুলোর সাথে আমার উপসর্গের কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পাইনি।অযথা ওষুধ খাওয়ার জন্যে অস্থির হতে চাই না।
(প্রেমে ভেঙ্গে পড়া মন,হতাশায় ভেসে যাওয়া মানুষ সকলের কি ওষুধ খাওয়ার দরকার?
সৃষ্টির আদি থেকেই মন ভাঙ্গার পর্ব চলছে,যখন মানুষ আবেগ,ভালবাসা এগুলো কি বুঝতে পারলো?)
“ডাক্তারের কাছে যদি যেতে না চাও,ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে দেখ,ক্ষতি তো নাই”।
চেষ্টা যে করিনি তা না,মানসিক সমস্যার ওয়েবসাইটগুলো অনেকদিন ধরেই নাড়চাড়া করছি।মনোযোগ দিয়ে ইয়োগাও করছি,বইগুলো দেখনি,অনেকদিন ধরেই তো বাসায়
আনি।তুমি কি ভাবছো সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আমি আধ্যাত্মিক হয়ে গেছি,উত্তর খুঁজছি প্রতি মুহুর্তে।গোটা দশেক আত্মসমালোচনার বইও পড়লাম,উত্তর ওখানে নেই।কিছুটা সময়ের জন্যে মনে শান্ত হলেও,ও টুকুই,হারিয়ে যায় বই বন্ধ করার সাথে সাথে।শুধু কথার ফুলঝুরি,আদর্শ পৃথিবী কোথাও নেই,এমন কি লেখকদের রাজ্যেও।
“তোমার কি একটু ভাল লাগছে,এখন?”
(অবশ্যই,তবে আমার জানা দরকার নতুন এই আমি টা,কে?জানা দরকার এই পরিবর্তনের রহস্য।দেখতে পাচ্ছি,স্বামী চেষ্টা করছে যদি কোনভাবে সাহায্য করতে পারে,না হলে সেও হারাবে এই যুদ্ধে।উপসর্গ,অন্যান্য অনেক কিছু নিয়ে বলছিল আমার স্বামী,তাকে বুঝিয়ে বললাম,এটার কোন উপসর্গ নেই।অনেকটা যেন সৌরমন্ডলের ব্ল্যাক হোলের মত,একেবারেই অজানা,ওখানে হারিয়ে যাওয়া আর সবই অজানা।)
“জানা নেই,আমার”।
এটাই সেই রহস্য।
আশ্বাস দিয়ে সে বললো,কোন না কোন ভাবে এই যন্ত্রনার সমাধান করতেই হবে।কোন কিছু বিচার করাটা ঠিক হবে না,ও তো আমারই দলে।
“আলো আছে কোথাও,মনে রাখবে আলো আছে-ঐ অন্ধকারের দেশেও আলো আছে”।
বিশ্বাস করতে চাই,তবে আমার পা দুটো যেন কঙ্ক্রিটে গেথে গেছে,আটকে আছি,নড়তে পারছি না কোনভাবেই।যুদ্ধ করে যাচ্ছি,মাসের পর মাস-যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
এ ধরণের দুঃস্বপ্নের যন্ত্রনায় আগেও যে ভুগিনি তা না,তবে সময়ে সেটা কেটে গেছে।আমি এখনও বিশ্বাস করি ঘুম থেকে উঠে একদিন আমি বের হয়ে আসবো ঐ ব্ল্যাকহোল থেকে।
রেস্তোরার বিলটা দিয়ে,দুজনে হাত ধরে একটা ট্যাক্সিতে বাড়ী ফিরলাম,প্রিয়জনের নির্ভরতা সবসময়ই মনটাকে ভাল পথেই নিয়ে যায়।
(জেকব,জেকব কোনিগ কি করছো,তুমি আমার বিছানায়,কেন তুমি ঠেলে দিচ্ছ আমাকে এই দুঃস্বপ্নে।তোমার তো ব্যাস্ত থাকার কথা,ইলেকশনের আর মাত্র তিনটা দিন।তোমার মুল্যবান সময়ের অনেকটাই নষ্ট করেছ লা পার্লে ডু লাকে আমার সাথে দুপুরের খাবারে,অযথা পার্ক ডেস ইয়াক্সে গল্প করে।ওটা কি যথেষ্ট না?কেন এসেছ আবার আমার স্বপ্নে?তুমি যা বলেছ আমি ঠিক তাই করেছি;আমার স্বামীর সাথে কথা বলেছি আমি,তার ভালবাসা আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে।তারপর আমাদের যৌনসঙ্গম সেটা ছিল অভাবনীয়,সরে গেছে আমার মনের হতাশার মেঘটা।
দোহাই তোমার চলে যাও,রেহাই দাও আমাকে।আগামীকালটা আমার জন্য বেশ কষ্টকর হবে,সকালে ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিয়ে,রাজনীতি নিয়ে কথা বলার প্রস্ততি হবে।দোহাই তোমার জেকব কোনিগ,রেহাই দাও আমাকে।
বিয়ে করে সুখে সংসার করছি,কেন জ্বালাতন করছো আমাকে,তুমি তো জান না তোমার কথা ভাবছি,আমি।যদি আমার পাশে এমন কেউ থাকতো যে গান গাইতো,কিন্ত আমি ভাবছি শুধু তোমার কথা।নিজের উপরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলছি,আমি।প্রায় সপ্তাহখানেক আগে তোমার সাথে দেখা,তবু তুমি যেন বসে আছ আমার পাশে।
যদি চলে না যাও,তোমার বাড়ি গিয়ে-তোমাদের দুজনের সাথে চায়ের আসরে বসে দেখবো,
কত সুখী,তোমরা।জানি আমি কেউ না,তুমি ইচ্ছা করেই সেই চুমুর জ্বালে জড়াচ্ছ আমাকে।
তুমি হয়তো জান,আমি অক্ষম,জড়পদার্থ তোমার ছোয়ায়।)
একটা ওয়েবসাইটে দেখলাম আত্মবিশ্লেষনের পদ্ধতি,লেখা “তুমি কি মানসিক সমস্যায় ভুগছো?”আর আত্মবিশ্লেষণের জন্যে মানসিক সমস্যার একগাদা হিসেব,কোনটার সাথে মিল খুঁজে পেলাম না।আমি।
কম্পিউটারে গুগলকে জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা ছিল, “মনের মানুষ খোঁজার পদ্ধতি”,তা না লিখে নিজের অজান্তেই লিখলাম ,“হতাশা”,কি হচ্ছে এটা আমার মধ্যে।।তা উত্তরে তেমন কিছু ছিল না,এটুকুই, “জীবনের একটা ঝড়ো পর্ব কাটাচ্ছ,তুমি।তবে নিঃসন্দেহে তুমি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছো না।দরকার নেই তোমার কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার-কেটে যাবে এটা সময়ে”।
আমিও তো একই কথা ভাবছিলাম,ও সব তো আমার জানাই।হয়তো আমি সকলের মাঝে প্রাধান্য খোঁজার চেষ্টা করছি,যা কিছু করছি,চারপাশের সবার আর্কষনের জন্যে।এমনও হতে পারে হয়তো জীবনের একঘেয়েমি থেকে পালানোর চেষ্টা করছি।সমস্যা থাকলেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে,আর নিজেকে ব্যাস্ত রাখার এটা তো সুন্দর একটা উপায়।স্বামীর উপদেশটাও খুব একটা খারাপ না,ডাক্তারের কাছ থেকে যদি কিছু ঘুমের ওষুধ আনে,না হয় জোর ঘুমে কটা দিন আরামে কাটালে খুব একটা খারাপ হবে না।এমনও হতে পারে এই ইলেকশনের টানাপোড়েন আমাকে অধৈর্য করছে,সংসার আর কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে জীবনে আগানো কি কম কষ্টকর!
আজ শনিবার,ইলেকশনের আগের দিন।আমার এক বন্ধুর কাছে সপ্তাহ শেষের এ দুটো দিন খুবই কষ্টকর-ষ্টক মার্কেট ও দুটো দিন বন্ধ,ওটা ছাড়া সংসারে উত্তেজনার আকাশ আর কোথায়।স্বামীর এ কথাটাও ঠিক,শহরের এ জঞ্জাল থেকে কিছুটা সময় আমাদের বাইরে কাটানো দরকার,ছেলেমেয়েদের জন্যেও একটা হৈ হুল্লোড় করার সূযোগ।সারা সপ্তাহ কাটানো
সম্ভব হবে না,কেন না আমাকে রোববারে কাজ করতে হবে।নাইওনে যাব,স্বামী আমাকে জগিং করার পোষাকটাও নিতে বললো।নাইওন একটা পুরোনো রোমান শহর,হাজার বিশেক লোকের বাস।স্বামীকে বুঝিয়ে বললাম,জগিং এর পোষাকটা মানানসই হবে না,ওটা বাড়ীর আশেপাশে পরা যায়,বাইরে পরাটা ঠিক হবে না,অবশ্য সে যদি বলে পরে যাব আমি।
বেশী বাদানুবাদ করার ইচ্ছে ছিল না,জগিং এর পোষাক পরেই চললাম।জেনেভা থেকে ঘন্টা আধেকের পথ,জেকব হয়তো এখন তার সহকর্মীদের সাথে ইলেকশনের শেষ পর্ব নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে,নতুন পরিসংখনের হিসেব মত-নতুন কিছু করা দরকার কি না।তার বৌ সারাটা রাত্রি হয়তো এপাশ ওপাশ করে গেছে,তবে কারণটা হয়তো অন্য কিছু,হয়তো পরিকল্পনা চলছে বিজয় পর্বের অনুষ্ঠান নিয়ে।সকালে হয়তো জেকবের বৌ রু ডে রাইভের বাজার থেকে ফলমুল,দামী পনির আর মাংস কিনে আনবে,সেখান থেকে হয়তো যাবে সাতিগনো আঙ্গুরের বাগানে,মদের জন্যে বেশ বিখ্যাত জায়গা-বেশ কিছু নামকরা লোকজন আসবে।ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরবে জেকবের বৌ,তবে মন আনন্দে ভঁরা।
জেকব তখনও ইলেকশনের প্রচার চালাচ্ছে,তবে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্যে সবকিছু ঠিক করে রাখতে দোষ কোথায়।হয়তো মনে পড়বে জেকবের বৌ এর,পনির কেনার পরিমানটা ঠিক হয়নি,গাড়ীতে চড়ে আবার ছুটবে বাজারের দিকে।সাজানো নানান পনিরের মধ্যে পচ্ছন্দ করবে নানান স্বাদের কানটনের গ্রুয়ার পনির (সবচেয়ে দামী পনির,প্রায় নয় থেকে বার মাস লাগে তৈরী করতে),টমে ভাউদয়িস(নরম,চমৎকার স্বাদ),লে এটিভাজ(আলপাইন পাহাড়ে ঘাস খাওয়া গরুর দুধে বিশেষ তামার পাত্রে,কাঠের আগুনে তৈরী)কোন একটা দোকানে পরার জন্যে নতুন কিছু একটা কেনা কি খুব খারাপ দেখাবে?হয়তো ভাববে, মিলানে কেনা ভেড়ার চামড়ার পোশাকটাই ভাল হবে,যেটা পরে সে জেকবের সাথে শ্রমিক আইনের সম্মেলনে গিয়েছিল।
জেকবের অস্থিরতা কেমন হবে তখন?ঘন্টায় ঘন্টায় বৌকে টেলিফোন করছে,বলবে এ রাস্তা ও রাস্তা ঘুরে,লোকজন কি বলা বলি করছে জানার জন্যে।জেনেভা ট্রিব্রয়ুনের ওয়েবসাইট নতুন কোন খবর আছে নাকি?বৌ এর পরামর্শমত মনের অস্থিরতা কাটানোর চেষ্টা করবে জেকব।পার্কে জেকব বলছিল,রাজনীতিতে ছোটাছুটি যা করার,সেটা করে তার বৌ,যদিও সেটা জেকবের অপচ্ছন্দের,তবে তাতে বোঝা যায় তাদের ভালবাসার গভীরতা।
একদিন হয়তো সে আমাদের দেশের প্রেসিডেন্টও হতে পারে,অবশ্য সুইজারল্যান্ডে সেটা এমন কোন একটা বিরাট ব্যাপারা না,এখানে তো প্রেসিডেন্ট বদলায় প্রতি বছর।কিন্ত কে না গর্ব করে বলতে চায় তার স্বামী সে দেশের প্রেসিডেন্ট।তা ছাড়া কত নতুন ধরণের সূযোগ সুবিধা আসবে,বড় বড় কোম্পানীতে যাতায়াত করার সূযোগ,ঝলমলে আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেয়ার সূযোগ হবে,মন্দ কি।কোনিগ পরিবারের ভবিষৎ বেশ উজ্জল,আমার কি যায় আসে,আমি তো জগিং এর পোশাক পরে দুরের এক শহরে বেড়াতে যাচ্ছি।
নাইওন এ পৌছানোর পর আমরা গেলাম রোমান মিউজিয়ামে,তারপর ছোট্ট একটা পাহাড়ে প্রত্নতাত্বিক ধ্বংসাবশেষ দেখতে।ছেলেমেয়েরা হাসাহসি,দৌড়াদৌড়িতে মত্ত,আমার মনটাও বেশ কিছুটা হাল্কা হয়ে গেছে,স্বামীকে মোটামুটি সব কিছুই বললাম।আমাকে আর ভান করে হাসিমুখের সুখী ভাব করে চলতে হবে না।
“চল লেকের ধার দিয়ে দৌড়ে আসি”।
ছেলেমেয়েরা কি করবে।
আমাদের পরিচিত এক বন্ধু তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসে আইসক্রীম খাচ্ছিল, “ওদেরকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয়?ছেলেমেয়েদের আমরাও না হয় আইসক্রিম কিনে দিলাম,বসে বসে খাবে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না”।
আমাদের দেখে কিছুটা অবাক হলো তারা,ছেলেমেয়েদের রেখে গেলাম লেকের ধারে,ছেলে অভিযোগ করলো আইপ্যাডতা গাড়িতে,বসে বসে কিছু করার নেই,গাড়ী থেকে আইপ্যাড এনে দিতে হলো বাধ্য হয়ে।আমরা গেলাম লেক লেহমানের দিকে,বিদেশীদের কাছে যা লেক জেনেভা।দৌড়াচ্ছিলাম দুজনে,লেকের পাশে সুন্দর বাগান,আরেক পাশে দমকা বাতাসে ভেসে যাওয়া শঙ্খচিল,নৌকার পালের খেলা,এ যেন অন্য আরেক পৃথিবী।সেই যে বাতাসের পাগলামিটা শুরু হলো তিনদিন না ছয়দিন,এখনও থামেনি,হয়তো চলে যাবে বাতাসের খেলা সাথে নিয়ে যাবে নীল আকাশ আর কদিনের চমৎকার আবহাওয়াটা।মিনিট পনের দৌড়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেছি আমরা,নাইওন শহরটা বেশ কিছুটা ধোঁয়াটে তখন,এখন ফিরে যাওয়াটাই ভাল।
দৌড়াদৌড়ি করা হয়না অনেকদিন,মিনিট কুড়িতেই হাপিয়ে গেলাম আর যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না,কোনমতেই,হেটেই যেতে হবে বাকী পথটা।
“ক্ষান্ত দিও না,পারবে,অবশ্যই পারবে”,স্বামী দৌড়াতে দৌড়াতে আমাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছিল, “থামবে না,দৌড়াও”।
০০০০০০০০০০
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ১:৫৩