somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার কতটা মারাত্মক হতে পারে বলে মনে করেন??

২৩ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনৈক রোগী তার সমস্যা নিয়ে গেলেন এক ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর একখানা প্রেস্ক্রিপশন দিলেন। কিন্তু রোগীর সেটা মনপুত হল না। তিনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন, -একটা এন্টিবায়োটিক দিলেন না? রোগীকে যতই বলা হোক, তার এন্টিবায়োটিক চাই-ই চাই। অগত্যা ডাক্তার তাকে একটা এন্টিবায়োটিক দিয়েই দিলেন। তাতে উনার তো কোন ক্ষতি নেই, বরং তার পরিচিত কোম্পানীর একটা ঔষধ বিক্রি হলে তার-ই লাভ ;)

কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের কতটা ক্ষতি করছি তা কি জানি?



যেকোন ঔষধ মানেই এমন রাসায়নিক বস্তু যা আমাদের শরীরে থাকার কথা না। উল্টো সময়মত সেগুলো বের করে দেবার জন্য বিশাল কলা-কৌশল বিদ্যমান রয়েছে। যার আবার Xenobiotic বলে আলাদা একটা নামও আছে। তাই ঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহার করা অনুচিৎ। আর এন্টিবায়োটিকের বেলায় তো সেটা আরো বেশি মারাত্মক। আমাদের এক শিক্ষকের ভাষায় যারা এমনটা করে, তারা "সমগ্র মানবজাতির শত্রু"। কিসের ভিত্তিতে এ কথা তিনি বললেন, সে নিয়েই একটু আলোচনা করছি।

এন্টিবায়োটিক মূলত প্রাকৃতিকভাবে মানে বিভিন্ন ফাঙ্গাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়া থেকে পাওয়া কিংবা ল্যাবে সিন্থেসিস করা এমন কিছু ঔষধ যেগুলো বিভিন্ন জীবাণু (সাধারণত ব্যাক্টেরিয়া) ধ্বংস করে বা তাদের বৃদ্ধিকে থামিয়ে দেয়। অন্য ওষধের সাথে এর একটা তফাৎ হল এগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত খেতে হয়, যেমন ৩-৫ দিন, কোনটা আবার ১৪ দিনও খাওয়া প্রয়োজন হয়। আর এর ভিতর যদি একটা ডোজ নিতে ভুল করা হয়, তবে মহাবিপত্তি। আবার অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক সেবন করাও ঠিক না। বাইরের অনেক দেশেই ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে মোড়ের সেই ছোট দোকানটাতেই সুলভ মূল্যে তা পাওয়া যাচ্ছে এই জিনিস।

এন্টিবায়োটিকের ভুলভাবে সেবন করা যেই সমস্যা তৈরি করে তা হল antibiotic resistance সৃষ্টি হওয়া। প্রতিটি জীবেরই নিজস্ব survival techniques আছে। ছোট ছোট জীবাণুর সেই survival technique হল mutation করা। আর এই মিউটেশনের মাধ্যমে এরা নিজেদের ভিতর এমন ক্ষমতার সৃষ্টি করতে পারে যে তখন এন্টিবায়োটিকে এরা আর মরবে না বা ধ্বংস হবে না। এটাই antibiotic resistance। আর এই সক্ষমতা এরা অন্যকে এমনকি অন্য প্রজাতির কোন ব্যাক্টেরিয়ার সাথে আদান-প্রদান করতে পারে। কথাটা আধ্যাতিক ধরণের মনে হলেও এটা সত্য। তবে সেই কলা-কৌশল এখানে আলোচনা করা সম্ভব না, শুধু জেনে রাখুন এমনটা হয় এবং হচ্ছেও।









কিভাবে এই resistance এর সৃষ্টি হয়?
আগেই বলেছি এর উপায় হল mutation বা নিজের ভিতর একটা পরিবর্তন আনা।

আর এমনটা ঘটে প্রথমতঃ এন্টিবায়োটিকের ডোজে অনিয়ম হলে কিংবা তা সম্পূর্ণ না হলে। একটা জীবাণু শুধু তখনি রোগ সৃষ্টি করে যখন তা থেকে তৈরি হইয়া কোন ক্ষতিকর পদার্থ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় শরীরে। এখন এন্টিবায়োটিক দিয়ে এই জীবাণুর সংখ্যা ফেললে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণও কমে যাবে। রোগী তখন হয়তো নিজেকে সুস্থ ভেবে আর এন্টিবায়োটিক নেবে না, আর এখানেই মস্ত ভুলটা করে। কারণ, জীবাণু তখনও রয়েছে, তবে পরিমাণে অল্প বলে কোন উপসর্গ দেখাচ্ছে না। এগুলো সুযোগ পেলেই আবার বংশবৃদ্ধি করে ফেলবে। এর জন্য চাই জীবাণুকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে মাইরের উপর রাখা যাতে একটাও শেষ পর্যন্ত বেঁচে না থাকে।

একই ব্যাপার ঘটে যদি ভুল করে এক বেলা ট্যাবলেট না খায়। এতে করে জীবাণু যে বংশবৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে তার মধ্যেই কোন একটা প্রজন্ম resistance দেখানো শুরু করে। অর্থাৎ তাদের আর সেই এন্টিবায়োটিকে মারা যাবে না। প্রয়োজন হবে নতুন এন্টিবায়োটিক ডিজাইন করা যেটা কতটা সময়-সাপেক্ষ তা না হয় না-ই বা বললাম।




যারা ভাবছেন এমনি এমনি এন্টিবায়োটিক খেলে কিছু হবে না, তাদের ভুলটাও ভেঙ্গে দিই।
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে হাজার রকম ব্যক্টেরিয়া বিদ্যমান থাকে সব সময়। এগুলো খারাপ নয়, বরং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে এদেরও অনেক ভূমিকা আছে। এন্টিবায়োটিক অনেক সময় এইসব ব্যক্টেরিয়ার উপরও প্রভাব ফেলে, এই কারণে আমাদের দেহের সিস্টেম আপসেট হয়ে যায়।

অকারণে এন্টিবায়োটিক খেলে তা সরাসরি এ জাতীয় ব্যক্টেরিয়ার উপর কাজ করলে তারাও survive করার চেষ্টা করে। ফলে resistant strain এর উদ্ভব হয়। এই ব্যক্টেরিয়া মল-মূত্র বা অন্যভাবে যখন প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন ব্যক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসলে সেটাকে resistant করে ফেলতে পারে। আবার শরীরে কোন ব্যক্টেরিয়ার ইনফেকশন হলে সেটাকেও resistant করে ফেলতে পারে, কারণ আগেই বলেছি এটা আদান-প্রদান করা যায়।

সুতরাং, এখানে নিজের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি অন্যদেরও ক্ষতির কারণ হচ্ছে।



Antibiotic resistance বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এর কারণে কিছুদিন পর পর নতুন এন্টিবায়োটিকের ডিজাইন করতে হচ্ছে। অনেক এন্টিবায়োটিক বাজার থেকে উঠে গেছে তাদের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে গেছে বলে। সেই ঐতিহাসিক পেনিসিলিনও এখন আর নেই। একের পর এক জেনেরেশন পার করছে এন্টিবায়োটিক। নতুন জেনেরেশনে অনেক শিল্প বন্ধ করে নতুন শিল্প গড়ে তুলতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল অনেক মানুষ বিনা-চিকিৎসায় মারা যাবার মতও অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।



তাই আমাদের সকলের উচিৎ যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক সেবনের এ প্রবণতা পরিহার করা। এতে যেমন নিজে সুস্থ থাকবেন, অন্যরাও সুস্থ থাকার সুযোগ পাবে, পকেটের পয়সাও বাঁচবে।


ছবিঃ গুগল থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৩৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×