আহ করোনা, হায় করোনা।
যেখানে করোনা নিয়ে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর রীতিমতো লেজেগোবরে অবস্থা, সেখানে ৯০% মুসলিমদের বাংলাদেশ নিয়ে একটা আশার বাণী ফেসবুকে/সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে জোরেশোরে৷ এই ভাইরাসে মুসলমানদের কিছু হবে না। এটা কাফেরদের জন্য আজাব/গজব ইত্যাদি ইত্যাদি।
যখন চীনের উহানে এটা প্রথমে শনাক্ত হয় তখন বাঙালির মধ্যে একটা গ্রুপ এটা আল্লাহর গজব বলে পুরো ফেসবুকজুড়ে প্রচারণা চালাতে থাকে ৷তাদের মতের স্বপক্ষে যুক্তি ছিলো, হুই আর উইঘুরদের নির্যাতনের ফলেই এই গজব। সুতরাং মুসলিমদের ভয় নেই। চাইনিজরা সব আজেবাজে জিনিস খায়, মরা জীবজন্তু খায়, সাপ খায়, ব্যঙ খায়, বাদুড় খায়, এমনকি রাস্তার কুত্তাও খায় ৷ তাদেরই হওয়াই উচিৎ। এতদিন কেন হয়নি এই নিয়ে অনেককে আফসোসও করতে দেখা গেল ৷
তারপর যখন সেটা ইরানে মুসলমানদের উপর ব্যাপক আকারে নেমে এলো তখন তারা বলতে লাগলো ইরানে ঠান্ডা বেশি ৷ এটা কম তাপমাত্রায় ছড়ায়। কিন্তু তারা তো মুসলিম না। তারা শীয়া, আর শীয়া কাফের। এই ভাইরাসে মুসলিমদের কিচ্ছু হবে না ৷ তাছাড়া বাংলাদেশে অনেক গরম থাকবে তখন, চৈত্রের তালুফাটা রোদে এটা দুই ঘন্টাও টিকবেনা ৷ সুতরাং ভয় নেই ৷ যখন পাশের দেশ ইণ্ডিয়ায় করোনা ছড়ানোর খবর এলো তখন তাদের মধ্যে অনেকেই ‘আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ’ ‘আল্লাহ মালাউনদের এইভাবেই ধ্বংস করবেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি বলা শুরু করেছে।
কিন্তু যখন দেখা গেলো বাংলাদেশে দুজন শনাক্ত হলো তখনই বাজারের সব মাস্ক উধাও। ৫ টাকার মাস্ক ২০ টাকা, ২০ টাকার মাস্ক ৮০ টাকা, ১০০ টাকার মাস্ক ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ সহ সেল্পি’ দিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসছেন তাদের অনেকেই। কিচ্ছু হবেনা মুসলমানের ৷ এসব ইহুদী নাসারার ষড়যন্ত্র । এসব ইহুদিদের পণ্য বিক্রির গুজব।
দিন যায়, ভাইরাস ক্রমাগত তার তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে কঠোরভাবে। আজপর্যন্ত -
চায়নায় কেড়ে নিলো ৩২২৬ জন।
ইতালিতে ২১৫৮ জন।
ইরানে ৯৮৮ জন।
স্পেন ৪৯৯ জন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮১ জন সহ পুরো বিশ্বে ৭৪৮৮ জন মানুষ কেড়ে নিলো ঠিক তখনো বাঙালির অসচেতনতা, এ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ব্যাপক লক্ষনীয়।
এটা আল্লাহর গজব হলেও হতে পারে ৷ এ নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। কিংবা অন্যকিছু হলেও হতে পারে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের কি করা উচিৎ? ধর্মের আগে মানবিক হওয়া উচিৎ আমাদের।
জানতাম ধর্ম মানুষকে স্মার্ট করে, কিন্তু দেখছি ধর্ম বাঙালিকে পশুতে রূপান্তর করেছে। এর একটাই কারণ, আমরা এখনো মানবিক হতে পারিনি। যদি সত্যিকারের মানুষ হই, তাহলে ধর্মের ৯০% বিধান মানবতার সাথে মিলে যাবে। কিন্তু আগে মানুষ নাহলে ধর্মকে ব্যবহার করে দিন দিন অসভ্য আর অমানুষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষকে অমানবিক হতে বলে না।
মনে রাখা উচিৎ - চরম সাম্প্রদায়িকতার এ যুগে করোনা ভাইরাস চরম অসাম্প্রদায়িক একটা ভাইরাস। যে মানেনা কোন ধর্ম, চেনেনা কোন জাতি, দেখেনা কোন বর্ণ - কালো-সাদাও সে দেখেনা। সে সবাইকে বুকে টেনে নেয় অহিংসানীতিতে। কিন্তু মানুষ? আহ হা, করোনাও শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের। কিন্তু বাঙালি সতর্কতার চেয়ে অসতর্ক থাকতে পছন্দ করে।
মেডিকেল সাইন্স আর মানবতা একমাত্র বাঙালির কাছেই হেরে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৭