১৯৮৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত—এই দীর্ঘ ২৯ বছরের পথ পরিক্রমায় দেশের পোশাক শিল্প আজ একটা বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের দক্ষিণ হালিশহরের একটি ইপিজেড থেকে এখন দেশে ইপিজেডের সংখ্যা ১৮টি। এই ১৮টি ইপিজেড ও এর বাইরে অবস্থিত পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ৪০০০ অতিক্রম করেছে। ২৫,০০,০০০ শ্রমিক এই সেক্টরে শ্রম দিচ্ছে। এই শিল্পের বিকাশের জন্য সরকার অনেকগুলো সুবিধা দিয়ে রেখেছেন গার্মেন্টস মালিকদের। মেশিন, যন্ত্রপাতি, কাপড়, সুতা, এক্সেসরিজসহ গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট সবকিছু সংগ্রহ, আমদানি ও রফতানিতে একগুচ্ছ সুবিধা দীর্ঘকাল ধরে ভোগ করছেন গার্মেন্টস মালিকপক্ষ। এর পরে যোগ হয়েছে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ। দীর্ঘকালব্যাপী নির্যাতিত গার্মেন্টস শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার ২০০৬ সালের বিরাজিত শ্রম আইন সংশোধন করেন এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি স্কেল ঘোষণা করেছেন। নতুন মজুরি স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়নে চুক্তি করলেও গার্মেন্টস মালিকরা তাতেও শুভংকরের ফাঁকির আশ্রয় নিয়েছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে একজন সাধারণ গ্রাহককে ১৮% সুদ দিতে হয়। সেই জায়গায় গার্মেন্টস মালিকরা মাত্র ৭% সুদে ঋণ পান।
নতুন প্রণীত শ্রম আইনে বলা হয়েছে যে, কোম্পানির মোট মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকদেরকে দিতে হবে। এখন গার্মেন্টস মালিকরা শ্রম আইনের এই ধারাটি বাতিল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক যে বেতন পান তাতে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। ঘর ভাড়া ও দুই বেলা খাবার জোটাতেই বেতনের পুরোটা শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে মাস শেষে মা-বাবার কাছে কিছু টাকা পাঠানো এবং একটি ভালো জামা তৈরির জন্য ওভারটাইমে ডিউটি করে অনেক শ্রমিক। তারপরও মাস শেষে ঐ শ্রমিকরা ন্যায্য ওভারটাইমের টাকাটাও ঠিকমতো পায় না। তাই সময় এসেছে আজ নতুন করে ভাবার, সিদ্ধান্ত নেবার এবং বাস্তবায়নের।
মে দিবস শ্রমিকদের দিবস। এই দিনেও অনেক কারখানার মালিক কারখানা খোলা রেখে জরুরি শিপমেন্টের দোহাই দিয়ে শ্রমিকদের খাটিয়ে নেন। তাই পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, সভা সেমিনার আর মিছিলের মতো লোক দেখানো ও পত্রিকায় ছবি উঠানোর মতো কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থেই এদেশের ৭৬ ভাগ বৈদেশিক আয়ের যোগানদাতা গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম সুবিধাগুলো নিশ্চিত করে,পরিবর্তিত শ্রম আইনের বাস্তবায়ন এবং ন্যূনতম মজুরি ৫০০০ টাকা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করে শ্রমিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তার জন্য কর্তিপক্ষের কাছে বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। এটাই মে দিবসের প্রাক্কালে একান্ত কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১২ সকাল ৮:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




