
নানীর গল্প: সরল জীবনযাত্রার স্মৃতি
যারা আমার ব্লগ নিয়মিত পড়েন, তারা হয়তো জানেন, আমি আমার শৈশবের বড় একটি অংশ নানীর সাথে কাটিয়েছি। সেই সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে গল্পময় অধ্যায় ছিল। নানী গল্প না শোনালে আমার ঘুম আসত না। তার জীবনের সরল, সাদামাটা অভিজ্ঞতাগুলো আমার শৈশবের বড় প্রাপ্তি।
নানীর দাদা একজন দলিল লেখক ছিলেন। ভদ্রলোকের নাম আমার মনে নাই, তবে তার জমির পরিমাণ আর কাজের ধরণ নিয়ে বেশ গল্প করতেন। তার অনেক জমি ছিল এবং তিনি ধান চাষ করতেন। ধান কাটার পর সেই ফসল সারা বছর চলে যেত। এছাড়া তার গরু ছিল অনেক। নানী বলতেন, তার দাদার বালতি ভর্তি দুধ হতো প্রতিদিন।
নানীদের বাড়ির কাছেই ছিল নদী। তাই মাছ তাদের কিনতে হতো না। পরিবারের কেউ না কেউ নদীতে মাছ ধরতে গেলে রাতের খাবারের আয়োজন হয়ে যেত। তবে তারা গোশত খাওয়ার সুযোগ খুব কম পেতেন। বছরে একবার কুরবানীর সময় গরুর গোশত খাওয়া হতো। আর বাড়িতে জামাই এলে বিশেষ আয়োজনে মুরগীর ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়া হতো।
নানী প্রায়ই বলতেন, “আমাদের জীবনটা ছিল একদম সাদাসিধা, কিন্তু সুখের কমতি ছিল না।” সত্যি বলতে, এমন জীবনযাত্রা আজকাল কল্পনাতীত। সবকিছু এত পরিবর্তিত হয়েছে যে সেই সরল দিনগুলো যেন এখন রূপকথার গল্পের মতো শোনায়।
নানীর জীবন আর তার সময়ের গল্পগুলো শুনে মনে হয়, তখনকার মানুষের চাহিদা যেমন কম ছিল, তেমনি তাদের জীবনের শান্তি ছিল বেশি। আর এখন? প্রতিদিন জীবন যাপনে মূল্যস্ফীতি আমাদের পকেটে ছুরি চালিয়ে দেয়। যে জিনিস একসময় সহজলভ্য ছিল, তা আজ বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।
আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রা এত দ্রুতগতির আর ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যে নানীর সেই সরল জীবনধারাকে স্মরণ করাও কঠিন। তবুও, তার গল্পগুলো শোনার পর মনে হয়— সরলতা আর আত্মনির্ভরশীলতাই হয়তো প্রকৃত সুখের চাবিকাঠি।
মূল শিক্ষা: সময় বদলেছে, কিন্তু নানীর সরল জীবনযাত্রার স্মৃতিগুলো এখনো আমাদের শেখায় কীভাবে সামান্য চাহিদার মধ্যেও সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

