
দেশের অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে ফ্রিল্যান্সাররা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলছে। ডলার সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং আজ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক আয়ের উৎস। ঘরে বসেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণী গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং ও কনটেন্ট রাইটিংয়ের মতো কাজে বিদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করে নিয়মিত ডলার আয় করছে, যা সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।
কিন্তু এই সম্ভাবনাময় খাতটি আজও নানা কাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত। সবচেয়ে বড় শূন্যতা হলো জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ের অনুপস্থিতি—যাকে অনেকেই “The PayPal Vacuum” বলে আখ্যায়িত করেন। এর ফলে ফ্রিল্যান্সারদের বাধ্য হয়ে বিকল্প ও মধ্যস্থতাকারী প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হয়, যেখানে অতিরিক্ত চার্জ কেটে নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে উপার্জনের একটি বড় অংশ শুধু ট্রানজ্যাকশন ফিতেই হারিয়ে যায়।
এর পাশাপাশি Payoneer, Fiverr ও Upwork-এর সঙ্গে অ্যাকাউন্ট লিঙ্কিং জটিলতা, কার্ড ভেরিফিকেশন সমস্যা, সরাসরি ব্যাংক সংযোগের অভাব এবং পেমেন্ট ছাড় হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় টাকা হাতে না পাওয়ার মতো বাস্তব সমস্যাগুলো ফ্রিল্যান্সারদের মানসিক ও আর্থিকভাবে চাপে ফেলে। সময়মতো পারিশ্রমিক না পেলে কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, আবার পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা।
ফ্রিল্যান্সাররা শুধু নিজেদের জন্য কাজ সৃষ্টি করছে না; তারা বেকারত্ব কমাচ্ছে, উদ্যোক্তা মানসিকতা তৈরি করছে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তির পরিচয় তুলে ধরছে। অথচ এই খাতের টিকে থাকা ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় নীতিগত সহায়তা, আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালু, সহজ ব্যাংকিং সংযোগ, কম চার্জে লেনদেন ব্যবস্থা এবং ফ্রিল্যান্সারবান্ধব আর্থিক নীতি।
যদি এসব সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান করা যায়, তবে ফ্রিল্যান্সিং খাত শুধু ব্যক্তিগত আয়ের মাধ্যম নয়, বরং জাতীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সারদের অবদান আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই—এখনই সময় তাদের কথা শোনা এবং পাশে দাঁড়ানোর।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



