somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষাঢ়ের একটি দিন।

২০ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আষাঢ় মাস শুরু হইছে দিন কয়েক আগে। ঘুম থেকেই উঠেই দেখি আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। আষাঢ়ের আকাশ যেমন দেখা যায় আর কি। ঝড় বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে। যাই হোক সকাল থেকে টিউশনি। আজকে ২ টা টিউশন। পরীক্ষা চলতেছে বিধায় চাপ একটু বেশি। গতকাল রাত্রে বৃষ্টি হইছে তাই ঘুম ও বেশি হইছে। অনেকদন পর রাত্রে একটা ভালো ঘুম হইল। পরীক্ষার চাপে বেশি একটা ঘুম হয় না। সকাল ৯ টায় টিউশনি তাড়াতাড়ি করে সকালের নাস্তা শেষ করলাম। আজকের নাস্তা ছিল খুদের ভাত। আমাদের এলাকায় খুবই ট্রেডিশনাল। আর হ্যা আজকে শুক্রবার। প্রতি শুক্রবার আম্মু খুদের ভাত রান্না করে। তার সাথে ছিল শুটকির ভর্তা, আলু ভাজি ও ডিম ভাজি। নাস্তা শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হইলাম। কর্দমাক্ত রাস্তা। হাটতেও খুব কষ্ট হইতাছে। অবশেষে স্টুডেন্ট এর বাসায় পৌছলাম। নতুন টিউশন। এই মাসেই এলাকার এক বড় ভাইয়ের মারফতে পাওয়া। স্টুডেন্ট ক্লাস ফাইভ এর ছাত্র। ভালোই পাড়ে তাই পড়াইতেও বেশি কষ্ট করতে হয় না। আন্টি অনার্স পাশ। উনিই সারাদিন ছেলেকে পড়ায়। আন্টির সাথে কোনদিন দেখা বা কথা হয় নাই। কারন উনি খুব পর্দানশীল নারী। পর পুরুষের সামনে আসেন না। পড়ানো শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পরেই টাপুর টুপুর বৃষ্টি শুরু হইছে। একটু পর আরো জোরে বৃষ্টি শুরু হল। শুধু বৃষ্টি না সাথে বজ্রপাতও। বজ্রপাতের কারণে ঠিকমত পড়ানো যাইতাছে না। স্টুডেন্ট দেখলাম খুবই সাহসী বজ্রপাতের শব্দকে ভয় পায় না। বাইরে বৃষ্টি হওয়াতে আমারও আর পড়াতে ইচ্ছা করতাছে না। একটু পর বৃষ্টি কমলে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আজকে ছাতা আনতে ভুলে গেছি। বর্ষাকালে ছাতা অতি প্রয়োজনীয়। মোবাইল, ওয়ালেটের মতই অনেকটা। বের হওয়ার সময় স্টুডেন্ট এর কাছ থেকে একটা ছাতা নিয়া বের হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাহিরে বের হয়ে দেখলাম মোটামুটি ভালোই বৃষ্টি। ছাতাটা নিয়া খুব উপকারই হইছে। বাসায় আইসা দেখি বিদ্যুৎ নাই। বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ নিলে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যেও আসেনা। জুমার দিন তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করলাম। মসজিদে দেরি করে যাওয়ার অভ্যাস আমার। মসজিদে ঢুইকাই চার রাকাআত কাবলার জুমা পড়ি তারপর খুতবা শুনি। খুতবা শুনা ওয়াজিব। ফরজের পরই ওয়াজিব এর অবস্থান। তাই খুব মনোযোগ দিয়েই শুনতে হয়। কিন্তু আমি মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। আমাকে কেউ আরবি থেকে বাংলায় ট্রান্সলেট করে দিলে খুবই ভালো হইতো। অন্তত কিছুটা বুঝতে পারতাম। কিন্তু আরবিতে সওয়াব আছে তাই এটাও মিস করা ঠিকনা। যতদূর জানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরবির পাশাপাশি নিজের মাতৃভাষায় ও খুতবা পাঠ করে শোনানো হয়।আমাদের দেশে এটা করলে সমস্যা কি বুঝলাম না। হজের সময়ও খুতবা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ফরয নামাজ শেষে চার রাকাআত সুন্নত পড়ে মসজিদ থেকে বের হইলাম। নামাজের শেষে বাড়ির সামনে জমপেশ একটা আড্ডা হয়। আজকেও তেমনি হইল কিন্তু আড্ডার সদস্য কমই ছিল। আড্ডা শেষে বাসায় ফিরলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের বিছানায় একটু শুইলাম। দুপুরের ঘুম অনেক দিনের অভ্যাস। করোনার লকডাউনের সময় থেকেই এই অভ্যাস টা হইছে। আমি আবার শুয়ে পরলেই ঘুমাই যাই। ঘুমানোর আগে জানালায় তাকাইয়া দেখলাম আকাশ ঘন কালো হইয়া আছে। আসরের নামাযের একটু আগে ঘুম থেকে উঠলাম। উযু শেষ করে মসজিদের দিকে রওনা দিলাম। তখনও বাহিরে ফোটা ফোটা বৃষ্টি। নামাজ শেষ করে বের হইয়াই নদীর দিকে হাটা শুরু করলাম। বর্ষাকালের নদী পানিতে টুইটুম্বুর। কয়েকদিন যাবত সারাদেশেই বৃষ্টি। বিভিন্ন জেলায় দেখা দিছে বন্যা। অনেক নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। এবার এস এস সি পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বন্যার কারণে। নদীতেও বেশিক্ষন দাড়ানো গেল না।আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ফিরে এসে বাড়ির সামনের চৌকিতে বসলাম। নানরকম বিষয় নিয়ে আড্ডা দেওয়া হইল। স্থির হইল মাগরিবের পর কোথাও খাইতে যাওয়া হবে। মাগরিবের নামাযের সময় অনেক বৃষ্টি। তারপরও ছাতা নিয়ে বের হইলাম নামাযের জন্য। নামায শেষে বৃষ্টির মধ্যেই বের হলাম রেষ্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে। রেষ্টুরেন্টটা খুব কাছেই। রেষ্টুরেন্টের মালিক আমার ছাত্রীর দুলাভাই। সম্পর্কে আমার এলাকার বর ভাই হয়। ওপেন হইছে বেশিদিন হয় নাই।গত রমজান মাস থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করছে। ম্যানেজমেন্টা এখনও অনেক দূর্বল। খাবার তেমন মজাদার না। এটলিস্ট আমার কাছে ভালো লাগে নাই। তারপরও সবার সাথে যাইতে হয়। যেকোন রেস্টুরেন্টের ডাইনিং এ খাওয়ার আলাদা একটা মজা আছে। এই বিষয় আরেক দিন লিখব। বের হইতেই বৃষ্টি। মানে ঝুম বৃষ্টি। ব্রীজের নিচে এক জায়গায় অনেকক্ষন দাড়াইয়া থাকলাম। বৃষ্টি একটু কমলে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় পৌছায়াই দেখি স্পেশাল রান্নাবান্না চলতেছে। পোলাও, গরুর মাংস ও চিকেন ফ্রাই। আম্মুর হাতের রান্না আমার খুব পছন্দের। আবার সাথে সেই বৃষ্টি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বৃষ্টি নামলেই আমার রবীন্দ্রনাথের লেখা চিরচেনা সেই উক্তিটির কথা খুব মনে পড়ে যায়, "গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে’ আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হ’ল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খর-পরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।"

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ পিতা-মাতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি নেই, তাই শূন্য লাগে

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

তোমার চলে যাওয়ার পর
ঘরে আর আলো জ্বালাই না,
অন্ধকারে নিজের মতো করে
সবকিছু চিনে নেই।

জানো, আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখলাম
চিনি শেষ,
ভাবলাম ঠিক আছে,
মিষ্টি না থাকলেও চা হয়।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ
তোমার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×