somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইক ছাগলা সি লাভস্টোরী .........

২৮ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তাজিনকে ভালোবাসতাম । যেদিন প্রথম ক্লাসে এসেছিলাম , সেদিন থেকেই ।

ভালোবাসতাম বললে কম বলা হবে , তাকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমার মৃগীরোগ সম্বন্ধে ভালো ধারণা লাভ হয় ... আমার পা কাঁপতে থাকে , মাথার ভেতর ভূমিকম্প হতে থাকে , ডিসেম্বরের তীব্র শীতের আমি সোয়েটারের ভেতর কুলকুল করে ঘামতে থাকি । ভেনাস বা ক্লিওপেট্রা কি পদার্থ ছিল সে আমার কাছে আমার জানা নেই , তবে সেই সেমিস্টারে আমি পদার্থবিজ্ঞানে ৮ পাই , ওর সিট আমার পাশে পড়েছিল ।

বাঙালি ছেলেমাত্রই গোঁফ ওঠার পর প্রেমে পড়ে , এটা না হলেই বরং আশ্চর্য হবার কথা .. তবে আমার রেজা্ল্ট বাবার হাতে পড়ার পর তিনি মোটেও আশ্চর্য হলেন না .. বাঘের মত ছোটখাট একটা হুংকার দিলেন .... আমি আশেপাশে রেসকিউ টিম ( অর্থাৎ মা ) কে খুঁজছিলাম , এমন সময় মনে পড়ল , মা গতকাল খালার বাসায় চলে গেছে , এ সপ্তাহে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই ।

" বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু " - কথাটা কে বলেছিল জানি না , আমি আবিষ্কার করলাম আমার প্রকৃতপক্ষে প্রকৃত বন্ধু বলে কেউ নেই । আমি সাহস করে আমার দুরাবস্থার কথা একজনকে খুলে বললাম ... সে আমাকে রীতিমত ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে দিল । তাজিনকে যে কথাটা আমি বলতে পারছিলাম না , সেটা অন্য কেউ যাতে না বলে , তাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য পকেট থেকে প্রয়োজনীয় টিউশনির টাকাটা চলে গেল ........ চীনা খাবার মুখে না থাকলে নাকি মুখ বণ্ধ রাখা যায় না । হায়রে বন্ধুবর্গ !!
তারা আমাকে প্রথবারের মত "ছাগল" উপাধিতে ভূষিত করল ।

আমি ক্রমশ তাজিনের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম , তখন সন্জয় দত্তের মুভি খুব চলত ... ওকে কিভাবে বলব জানার জন্য সবগুলোই দেখে ফেললাম ... কাজের কাজ কিছুই হল না .... আমার মাথার চুল ক্রমশ ঘোড়া-টাইপ হতে লাগল আর দুর্ভাগ্যবশত আমার পিতা কেশরাজি একদিন দেখে ফেলায় দ্বিতীয়বার হুংকার দিলেন ।

এক সৎ বন্ধু পরামর্শ দিল , " দোস্ত , গান্জা খা , গান্জা খাইলে মাথা খুলে " - পরামর্শ ট্রাই করতে গেলাম ... একটান দিয়ে বমি করে রূম ভাসিয়ে ফেললাম । আর একজনের পরামর্শে বাবা সুফী জামালপুরীর দরবারে গেলাম ... গলায় আধাকেজি একটা তাবিজ সঙ্গে বাসায় ফিরলাম ।

ভালোবাসা যে কত খরচান্ত ব্যাপার আমি বুঝতে পারিনি , কি করব .. আমি যতক্ষণ ওকে দেখতাম , আমি হা করে তাকিয়ে থাকতাম ... নিজেকেও আমার প্রথম শ্রেণীর ছাগল মনে হতে লাগল , আমি ক্লাসে কথা খুজে পেতাম না । কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে কথা জড়িয়ে যেত , ও হাসলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে খাকতাম , " মানুষ এতো সুন্দর হলে তো বিশাল সমস্যা "।

তাজিনের বাসার এ্যাড্রেস থেকে ওর গাড়ির নাম্বার , ওর পোষা কুকুরের নাম , ওর পারফিউমের ব্রান্ড - আমার মুখস্ত হয়ে গেল । কিন্তু আমি ভুলে গেলাম ডি মরগ্যানের সূত্র .. ফলশ্রুতিতে আমার পিতা তৃতীয়বার হুংকার দিলেন ... আমি প্ল্যান করতে থাকলাম ... ফেল করার পর কার বাসায় উঠব এবং এবার আমায় পারিবারিকভাবে ছাগল উপাধি দেয়া হল ।

টাইটানিকের রোজ বা হেলেন অব ট্রয় , মেয়েরা এমনই হয় । আমার শান্ত , গোবেচারা টাইপ জীবনে টাইফুন , সাইক্লোন , হারিকেন বয়ে যেতে থাকল ... আমার "জিনা হারাম" করে তাজিন আইসক্রিম খেতে থাকল ... আমি যথারীতি বেকুবের মত দেখতে থাকলাম । ..

আমি হয়ত আরও কিছুদিন বেকুবের মত দেখতাম ... যদি না আমার হাতে ... "বিখ্যাতদের প্রেমপত্র ও প্রেমপত্র লেখার কৌশল" টাইপ একটি বই পড়ত ... বাসে কিনেছিলাম .. পড়তে পড়তে মনে হল , এরকম একটা বই আগে কেন পড়লাম না , লেখক শতকরা শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলেছেন , এমন পত্র লিখলে নাকি পাষাণহৃদয় রমণীর হৃদয়ে বইবে প্রেমের ফল্গুধারা ...........

আমি পুরোপুরি ডিটারমাইন্ড হয়ে গেলাম ... ব্যাটা বদখত অষ্টম হেনরি পারলে আমি কি দোষ করলাম ..... সুনীলের কবিতা সমগ্র থেকে গুণের নির্বাচিতা ... সব নিয়ে বসলাম ..... দুদিন লাগল রাফ করতে ..... চারদিনের মাথায় শেষ হল আমার প্রেমপত্র , জীবনের প্রথম প্রেমপত্র । ছয় পৃষ্ঠা ... তাতে খুঁজলে পৃথিবীর সমস্ত বিখ্যাত প্রেমিক ও কবির প্রেতাত্না পাওয়া যাবে ..... কিন্ত আমার আর কোন উপায় ছিল না ...

তারপর ... ষষ্ঠবার চাইনিজের লোভ দেখিয়ে ...... এক বন্ধুকে রাজী করলাম ওর ব্যাগে পৌছে দিতে ।

পাঠক , বিশ্বাস করুন ... সেই সময় মোবাইল , ফেসবুক , টুইটার - কিছুই ছিল না । ছিল আমার প্রাগৌতিহাসিক বাবা ও তার প্রাগৌতিহাসিক হুংকার .. আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম ... ব্যাগ গোছানো ছিল ..... এসপার নয় ওসপার ...........

আমাকে বেশি রাত নির্ঘুম কাটাতে হয় নি ......... জবাব চলে এল পরদিনই ............. ছোট্ট একটা চিরকুট ........... নিখুঁত হাতের লেখা ............






"তুমি একটা ছাগল"






রাগে-দুঃখে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল তাজিনের ওপর ... আমার ঠিক মনে নেই আমি কি করেছিলাম ..........

মানুষ নাকি অনুভূতির প্রচন্ডতায় মাঝে মাঝে সব ভয় হারিয়ে ফেলে ... আমিও তাজিনের সামনে গিয়ে অনর্গল বলতে থাকলাম ... আমি বহুদিন , বহুভাবে যা বলতে পারিনি ........... আমি জানতে চেয়েছিলাম ......... কেন সে আমাকে এমন আপত্তিকর একটা জন্তুর সাখে তুলনা করল .......


ভাগ্যিস সেদিন আমি এমন করেছিলাম ............. ভাগ্যিস .....

তাজিন , আমি দেখেছিলাম বিস্ময়ে তোমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যাচ্ছে ... তুমি কিছু বলতে চাইছিলে ............ আমার কথার প্রচন্ডতায় বলতে পারনি কিছুই ............





আমি তো আর জানতামনা .... আমার বন্ধু চিঠিটা তোমাকে দেয়নি .......



২.


অনেক অনেক পরের একটি রাত .....


আমার বাসর রাত .... প্রিপারেশনের কোন কমতি ছিল না । বাবা জামালপুরীর তাবিয পকেটে .....


একজোড়া চোখ আমার দিকে তাকাল ... যে চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বিলিয়ে দিতে পারি পৃখিবীর সবকিছু , সব ।


একটি অপূর্ব কন্ঠ বাজল কানের পাশে ..........



" তুমি আসলেই একটা ছাগল "



উৎসর্গ ঃ ব্লগার রাজ ( কারণ তার জন্মদিন আজ )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৪৫
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×