somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেরাক্লেস / হারকিউলিস : এক পৌরাণিক গ্রীক মহাবীর ।।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৌরানিক ঘটনা বা কাহিনীর জন্য যে জাতি বিখ্যাত ,তা হল গ্রীক জাতি । গ্রীকদের সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের অন্যতম উপায় হল তাদের এসব পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে জানা । গ্রীক পুরানে প্রাপ্ত কাহিনীগুলো প্রথমদিকে লোকমুখে শ্রুতির মাধ্যমেই বিস্তার লাভ করে , পরবর্তীতে লিপিবদ্ধ করা হয় । এসব কাহিনীতে প্রাপ্ত
অনেক চরিত্র কাল্পনিক হলেও তা থেকে প্রাক্তন গ্রীক রীতিনীতি বা জীবনধারা সম্পর্কে বেশ ভালো রকম ধারনা পাওয়া যায় । এসব পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে অন্যতম একটি পুরান হল হেরাক্লেস সম্বন্ধীয় পুরান ।


হেরাক্লেস

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে হেরাক্লেস ছিল এক গ্রীক মহাবীর । হেরাক্লেসের আরেক নাম হারকিউলিস , বস্তুত হেরাক্লেস থেকে হারকুলেস , আর হারকুলেস থেকে হারকিউলিস নামের উদ্ভব ঘটে।
হেরাক্লেস এর পিতা জিউস , মাতা আল্কমেনি ।আল্কমেনি ছিলেন আম্ফিত্রায়ন এর স্ত্রী । সেই হিসেবে আম্ফিত্রায়ন ছিলেন হেরাক্লাসের পালক পিতা । ইফিক্লেস ছিল আল্কমেনি এবং আম্ফত্রায়নের প্রকৃত ছেলে , এবং হেরাক্লেসের ভাই , যেহেতু তাদের মাতা অভিন্ন কিন্তু পিতা ভিন্ন ।



হেরাক্লেস ছিল গ্রীক পুরানের সবচেয়ে শৌর্যবীর্য সম্পন্ন মহাবীর ।
অচিন্তনীয় শক্তি ,সাহস আর পুরুষত্বে ভরপুর ছিল এই গ্রীক নায়ক । কথিত আছে , হেরাক্লেস শিশু অবস্থায় খালি হাতেই বিষধর সাপ মেরে ফেলেছিল গলা টিপে ধরে ।



পুরানে বর্ণিত আছে , গ্রীসের এক উপত্যকা ,নেমিয়া তে এক বিরাটাকার সিংহের উপদ্রব ছিল । সিংহ টি মানুষ ,পশু , নির্বিশেষে সকলের উপরই আক্রমন করতো । পশুটি ছিল ভয়ঙ্কর কারন তাকে মারা ছিল দুঃসাধ্য । পশুটির গায়ের চামড়া এতটাই পুরু ছিল যে ব্রোঞ্জ তীর তার গায়ের চামড়া থেকে ছিটকে যেত । হেরাক্লেস তাকে মারার জন্য ওক গাছের কাঠ থেকে বিশাল বড় একটা লগুর তৈরি করল ।লগুড়টা এতোটাই ভারী ছিল যে ২০ জন শক্তিশালী মানুষও ওটাকে তুলতে পারে নি । হেরাক্লেস লগুড়টাকে নিয়ে একাই সিংহ এর গুহায় ঢুকল । সিংহ তাকে প্রথমে আক্রমন করলেও লগুড়ের আঘাতে পরক্ষনেই পরাস্ত হল । অবশেষে হেরাক্লেস সিংহ টিকে গলা টিপে হত্যা করে ।




হেরাক্লেসের বীরত্ব এর আরেক কাহিনী হল হাইড্রা বধ । হাইড্রা ছিল এক লারনিয়া নামের এক জলাশয়ের দানব , যা অনেক অনিষ্ট করতো মানুষের । অনেক পশুপাখির পাল খেয়ে ফেলত চোখের নিমিষেই। মুলত এটি ছিল একটি সাপ ,যার মাথা ছিল ৯ টি । এর মধ্যে ৮ টি মাথা ছিল মরণশীল ,একটি অমর । তার শরীর ছিল চকচকে আইশে পরিপূর্ণ । হেরাক্লেস একদিন হাইড্রার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল । কিন্তু সে আবিস্কার করল একটা মাথা কেটে ফেললে ওই জায়গা থেকে নতুন ২ টি মাথা জন্মাচ্ছে । অবশেষে হেরাক্লেস লোলাউসের সহযোগিতায় সাপের মাথা কেটে সেই কাটা অংশ পুড়িয়ে দিলেন । ফলে ,আর কোন নতুন মাথা জন্মাতে পারল না ।




যখন সব মাথাগুলিই নষ্ট হল ,শুধুমাত্র অমর মাথাটি বাকি থাকল , তখন হেরাক্লেস হাইড্রাকে পাতালে গেঁথে ফেলল , এবং হাইড্রার শরীরের ভয়ঙ্কর বিষ নিজের তীরে মাখিয়ে হাইড্রা কে বধ করল ।



সম্রাট আভগিয়াসের পাঁচ হাজার ষাঁড় ছিল । কিন্তু তার আস্তাবল ৩০ বছর ধরেই নোংরা ছিল । আভগিয়াস হেরাক্লেস কে একদিনেই আস্তাবল পরিস্কারের দায়িত্ব দেন । সেদিন আভগিয়াসের সাথে তার অতিথিদের ভোজ চলছিলো । হেরাক্লেস তখন পার্শ্ববর্তী ২ টি নদী আলফিয়াস ও পেনিয়াসে বাধ দিয়ে পানির গতিবেগ রুদ্ধ করে । এবং ওই পানিকে আস্তাবলের উপর থেকে চালনা করে একদিনেই আস্তাবল পরিষ্কার করে ।





এবার সোনার আপেলের গল্প । সোনার আপেলের খোঁজে হেরাক্লেস অনেক বিশাল পথ পাড়ি দিয়েছিলো । গ্রীস থেকে অনেক দূরে , হেস্পিরিডিস নামক এক জায়গায় ছিল সোনার আপেল ।



হেরাক্লেস লিবিয়া ,ইজিপ্ট , ইথিওপিয়া , এশিয়া অতিক্রম করে অ্যাটলাস পর্বতে পৌছায় । যাত্রা পথে হেরাক্লেসের দেখা হয় প্রমিথিউস এর সাথে । প্রমিথিউস তাকে আরেক মহাবীর আতলান্ত্যস এর সাথে দেখা করতে বলে ।তার জন্যই অ্যাটলাস পর্বতে পৌঁছল হেরাক্লেস । সেখানে গ্রীকরা মনে করতো ,আকাশ মাটিতে গিয়ে মিশেছে এবং আতলান্ত্যস নিজেই পৃথিবীর উপর অর্ধবৃত্তাকার মহাকাশ ধরে রেখেছে । এই বীরের নামানুসারেই পরবর্তীতে আটলান্টিক মহাসাগরের নামকরন হয় । হেরাক্লেস প্রমিথিউসের কথানুসারে আতলান্ত্যস কে সোনার আপেল পেড়ে আনার জন্য পাঠাল । হেরাক্লেস কে দেবার জন্য আতলান্ত্যস যখন আপেল পাড়তে গিয়েছিল তখন হেরাক্লেস কেই নিজের কাধে আকাশ ধরে রাখতে হয়েছিল ।প্রচণ্ড ভারের ফলে যদিও তার পা ,হাঁটু পর্যন্ত ডেবে যায় , তবুও আতলান্ত্যস ফেরত না আসা পর্যন্ত হেরাক্লেস আকাশ কাধে নিয়েই অপেক্ষা করছিল ।




হেরাক্লেস কে নিয়ে আরও অনেক পুরান কাহিনী আছে । এই মহাবীরকে গ্রীকগণ অনেক সম্মান করতো । দেবদেবীরাও হেরাক্লেস কে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করত ।

ছবি ও তথ্য : ইন্টারনেট ।

Click This Link
Click This Link
Click This Link
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দাসপ্রথার নিগড় ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে দ্বিগুণ উৎপাদন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

দাসপ্রথার নিগড় ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে দ্বিগুণ উৎপাদন

এআই এর সহায়তায় তৈরি ইমেজ।

প্রায় ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার অপশাসনের সময়টা ছিল এক অলিখিত আধিপত্যবাদের ছায়া। সাধারণ নাগরিকদের এক কাপ চা পান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

সদ্য প্রকাশিত (year 2026) কিউএস র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 584 তম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। । দ্বীতিয় স্থানে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খামেনিকে হত্যা করা হলে ইরানে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭


খামেনেইকে হত্যা করা ইজরায়েলের অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য : স্পষ্ট করলেন নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির মৃত্যু দেশটির জন্য কেবলমাত্র একটি নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডঃ ইউনুস তারেক রহমান বৈঠকঃ কতটুকু নিশ্চয়তা দিলো সুষ্ঠু, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক উত্তরণের?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:২৫



তারেক রহমানের সাথে ডঃ ইউনুসের সাম্প্রতিক বৈঠকের ফলাফল নিয়ে বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনেকেই অনেক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, অনেকেই দারুণ আনন্দিত। অনেকেই, বিশেষ করে যারা বিএনপি করেন, মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাইপাঁশ

লিখেছেন আরোগ্য, ২০ শে জুন, ২০২৫ রাত ২:০৭

মধ্যিরাতে আমি আর আমার গাঁথা। না কবিতা প্রসব করার মত শক্তি নেই। মস্তিষ্কে চাপ দিতে ইচ্ছে করছে না। শব্দগুলো যেন মরুভূমির ধু ধু প্রান্তরে হারিয়ে গেছে। সেগুলো খুঁজে আনার সাধ্যি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×