somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।।--লস্ট এন্ড ফাউন্ড--।।

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দ্যা মিথ

"এই পাথরের মূর্তিটার একটা বিশেষত্ব আছে।’‘
"কি সেটা?"
’‘জানি না।’
"তাহলে?"
"দেখে মনে হলো।"


আমি নুবি এর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। এই মেয়েটা বড় বেশি কল্পনাপ্রবন।

নুবি আমার দিকে তাকিয়ে বললো- "হাসছো কেন?“
"তোমার কথা শুনে।”
“আমার কথা শুনে মানে? আমি কি হাসির কিছু বলেছি?”
“হাসির না হলেও ছেলেমানুষি।”

নুবি এবার রেগে গেলো। রেগে গেলেই সে চিৎকার করতে শুরু করে। তবে সেটা শুরু হয় আস্তে আস্তে এবং সময়ের সাথে সাথে তীব্র থেকে তিব্রতর হয়।

“জুড, তোমার সমস্যা কি জানো? তুমি নিজেকে মহা পণ্ডিত মনে করো। তোমার ধারনা, তুমি নিজে যা ভাবো, সেটাই ঠিক। বাকি সবার সব কথা ভুল।”
“আচ্ছা তো বলো, কেন তোমার মনে হলো যে এই পাথুরে মূর্তিটা অন্যরকম?”
"অনেকগুলো কারন।"
"দু একটা বলো।"
"এক নাম্বার কারন-তৈরির সময় মূর্তিটার সৌন্দর্যের ব্যাপারে কোন গুরুত্বই দেওয়া হয় নি।"
"যেমন?"
"তুমি খেয়াল করে দেখো ভালো করে। মূর্তিটা একটা ছেলে মানুষের। নাক, মুখ এবড়ো থেবড়ো। মুখটা চেনা যায় না ভালো করে। অবশ্য পুরনো পাথর, ক্ষয়ে যেতে পারে। মূর্তিটার উচ্চতা খুবই সাধারন। সাধারণত একজন শিল্পী কি করে? সে এমন একটা কিছু বানাতে চায় যা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে একবার তাকায়। তোমার কি মনে হয় এই মূর্তিটা তেমন?"
" না, তেমন নয়। তবে হতে পারে, মূর্তিটা শুধুমাত্র একটা ভাস্কর্য হিসেবে তৈরি করা হয় নি। হতে পারে, মূর্তিটা আসলে বিশেষ কোন মানুষের স্মরণে তৈরি করা। হতে পারে না?"
"সে কে?"
"সম্ভবত এই ইন্সটিটিউট এর বিখ্যাত কেউ।"
"নাম ধাম তো নেই।"
"পুরনো মূর্তি। মুছে গেছে।"
"উহু। ভালো করে খেয়াল করে দেখো। নাম ফলকের কোন জায়গাই ছিলো না।"
"আচ্ছা। আর?"
"মূর্তিটা কোথায় বানানো হয়েছে, দেখেছো? চত্বরটাকে ডানে রেখে বাম পাশে। দেখে মনে হচ্ছে রাস্তার মধ্যেই অনেকটা। এটা কি মূর্তি বানানোর জায়গা হলো? দেখে মনে হচ্ছে না এখানে এটা বেমানান?"
"হু, তা কিছুটা।"

"তাছাড়া আরও একটা ব্যাপার আছে।"
"কি সেটা?"
"দেখে মনে হয়-"
"কি মনে হয়?"

নুবি চিন্তিত মুখে বললো- বুঝতে পারছি না।

আমি একটা হাই তুলে বললাম- "তোমার পর্যবেক্ষণ শক্তি ভালো। তবে পর্যবেক্ষণ শক্তি ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর ক্ষমতা ভালো না। তুমি যা বলেছো, তা দিয়ে কিন্তু মূর্তিটার বিশেষত্ব প্রমানিত হয় না। বরং বলা যায়-একজন অপটু কারিগরের হাতে তৈরি করা মূর্তিটা খুবই সাধারন, এর মাঝে বিশেষত্ব বলতে কোন জিনিস নেই।"

বলেই আমি সম্মতি পাওয়ার আশায় অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে নুবি’র দিকে তাকালাম। কারো মতের বিপক্ষে কথা বলে আবার তার দিকে সম্মতি পাওয়ার দৃষ্টি দিলে তার মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা। হলোও তাই। নুবি রাগে থমথম করছে। তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। এই মেয়েটা রাগ করলে আমার দেখতে ভালো লাগে।

নুবি বললো- "তুমি এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরো। তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। অসহ্য।"
"কই যাবো?"
"জানি না।"
"আজ না আমাদের মিঃ ফ্রাঙ্ক এর কাছে যাওয়ার কথা ছিলো?"


নুবি চিৎকার করে উঠলো- "গেলেও তোমার সাথে যাবো না।"


আমরা এই শহরে এসেছি সপ্তাহ দুয়েক হলো। ছোট্ট ছিমছাম শহর, নাম স্নিগ। তবে ছোট হলেও স্নিগ বেশ বিখ্যাত, শহরটা অনেক প্রাচীন। তাছাড়া গোটা শহরটা পাহাড় দিয়ে পুরোপুরি পরিবেষ্টিত। মাঝে মাঝে মনে হয়, পাহাড়েরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো সযত্নে ঘিরে রেখেছে শহরটিকে। চারিদিকে পাহাড় বলে শহরটিতে ঢুকবার একটা মাত্রই পথ। সেটি যেয়ে আবার মিশেছে ভালগ্রায়। ভালগ্রার সাথে স্নিগ এর সম্পর্কও বেশ ভালো। যেন পাশাপাশি থেমে থাকা দুই ভাই।

শান্ত শহর স্নিগ। ঠিক যেন ছবির মতো। লোকসংখ্যাও তেমন একটা বেশি নয়। বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মাঝে দৃষ্টি দূর দিগন্তে মিলিয়ে যেতে যেতেও পাহাড়ে একসময় আটকে যায়। আর মাথার উপরে ভেসে বেড়ায় অজস্র সাদা মেঘের টুকরো। শুনেছি, স্নিগে বসন্তকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এখনও বসন্ত চলছে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, ভুল কিছু শুনিনি। সময়ে অসময়ে এখানে বৃষ্টি নামতে দেখছি কয়েকদিন ধরে।


আমরা এখানে পড়তে এসেছি। আমি আর নু্বি। আমরা এসেছি বার্নিগ থেকে। এখানে আমাদের মতো আরও অনেকেই আছে, যারা আরও দূর দুরান্ত থেকে পড়তে এসেছে। বিদেশী শিক্ষার্থীরা, যারা স্নিগে আসে তাদের সবার আসার উদ্দেশ্য একটাই- সেটা হচ্ছে ঈনিয়ন। ঈনিয়ন স্নিগের বিখ্যাত আর্ট ইন্সটিটিউট। আর্টের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য যাকে বলে একেবারে তীর্থস্থান। লোকে বলে- ঈনিয়নে আসার সুযোগ যে সব শিক্ষার্থীরা পায়, তারা সব দিক থেকেই অনেক বেশি সৌভাগ্যবান। কারন হচ্ছে স্নিগ একটি ছবির মতো সুন্দর শহর। এখানে শৈল্পিক সত্ত্বার বিকাশ হয় খুবই দ্রুত। আর একটা হচ্ছে-ঈনিয়নের শিক্ষার মান; যেটার ধারে কাছেও অন্য কোন আর্ট ইন্সটিটিউট পড়েনা। তবে একটা ব্যাপার হচ্ছে- ঈনিয়নে প্রতিবছরই বিদেশী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায় অন্যদের চেয়ে বেশি। এই কারনে ইন্সটিটিউট হিসেবে ঈনিয়ন এর সুখ্যাতিও সমস্ত পৃথিবী জুড়েই ছড়িয়ে আছে। আর প্রায় ছয়শরও বেশি বছর ধরে সে তার ঐতিহ্য রক্ষা করে আছে, এক চুল আঁচড়ও তাতে পড়েনি।


আমি ফিরে আসার পথে এইসব ভাবছিলাম। ডরমেটরিতে পৌঁছেছি মাত্র, এইসময় দেখি নুবি ফোন করেছে।

"আমি এখন মিঃ ফ্রাঙ্ক এর বাসায় যাচ্ছি।"
"ভেরি গুড। যাও।"
"যাও মানে? আমি একা কিভাবে যাবো?"
"হেঁটে হেঁটে।"

নুবি কিছুক্ষন থমকে থেকে বললো- "আমি তোমাকে ফোন করেছি।"
"তো?" আমি সরল গলায় বললাম।

নুবি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আমি জানি সে কেন ফোন করেছে। সে আমাকে ছাড়া কোথাও চলতে পারে না। একটু আগে চিল্লাচিল্লি করেছে, এখন বলতেও পারছে না যে- আসো। এটা বলতে তার আত্মসম্মানে লাগছে। আমিও এমন ভাব করছি যে আমি কিছুই বুঝিনি। তার তো একা যাওয়ার কথা। একা যাওয়াই কি ভালো না?

মেঘ গুড়গুড় করছে। মনে হয় বৃষ্টি নামবে। এই অবস্থায় বের হওয়ার কোন মানেই হয় না।

নুবি বললো- "তুমি ৫ মিনিটের মধ্যে বের হও।"
"কেন? তুমি না একটু আগেই বললে আমার সাথে যাবে না?"
"মিঃ ফ্রাঙ্ক আমাদের একসাথে যেতে বলেছে।"
"এখন বৃষ্টি নামবে।"
"নামুক। আমি এখনই যাবো। তুমিও যাবে।"
"মিঃ ফ্রাঙ্ক কে যেয়ে বললেই তো হয় যে জুড আসেনি।"
"এতো বেশি কথা বলো কেন? যা বলেছি, তাই করো। ৫ মিনিটের মধ্যে আসো। আমি অপেক্ষা করছি।"

বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো সে।


মিঃ ফ্রাঙ্ক এর বাসা এখান থেকে অনেক দূর। নেইভ পাহাড়ের কাছাকাছি। পাহাড়ি রাস্তা বলে এখান থেকে যেতে হয় হেঁটে হেঁটে। সময় লাগে, তবে এতো পথ হাঁটতে আসলে খারাপ লাগে না। বিশেষ করে আবহাওয়া চমৎকার থাকলে। আজ অবশ্য কথা ভিন্ন। এখন থাকার কথা কি সুন্দর একটা রোদেলা বিকেল। অথচ আকাশটা কেমন কালো হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, ভারী একটা বৃষ্টি হবে আজ।

পথের মাঝে তেমন কোন ঘরবাড়িও নেই। থাকলেও অনেক দূরে দূরে, একটা দুইটা। বিশেষ করে মাঝ পথের এই জায়গায় তো একেবারেই নেই। আমি আকাশের অবস্থা দেখে দ্রুত পা চালানোর চেষ্টা করছি। নুবি আবার পাহাড়ি পথ হাঁটতে শেখেনি এখনও। এরই মাঝে পিছিয়ে পড়েছে সে।

"তাড়াতাড়ি পা চালাও। বৃষ্টি নামলে পথের মাঝে ভেজা ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না।" আমি চেঁচিয়ে বললাম ওকে।

নুবি পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কিছু একটা জবাব দিলো। সেই জবাব আমার কান পর্যন্ত পৌঁছল না, শুধু মুখ নড়তে দেখলাম। এরই মধ্যে বাতাস বইতে শুরু করেছে।

আশে পাশে কিচ্ছু নেই। শুধু ডেসিমাসের বাড়িটা আছে, সেটাও এখান থেকে কিছুটা দূর, তবে দ্রুত হাঁটলে খুব সম্ভবত ১০-১৫ মিনিটে পৌঁছানো যাবে। আমি নুবিকে কষে একটা রাম ধমক দিতে যাবো, ঠিক এইসময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো।

কি বড় বড় ফোঁটা! আর এমন জোরেই নেমেছে বৃষ্টি যে মনে হচ্ছে পুরো আকাশটা নিয়ে নিচে নেমে আসবে। এই বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার কোনই উপায় নেই, স্রেফ দৌড়ানো ছাড়া। আমি সেটাই করছি, লক্ষ্য এখন ডেসিমাসের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া। নুবিও আর কোন উপায় না পেয়ে দৌড়াবার চেষ্টা করছে এখন। সব তো ওরই দোষ। কি দরকার ছিলো খামোখা এই আবহাওয়ায় ফ্রাঙ্ক এর বাসায় যাওয়া?

দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা এসে হাজির হলাম ডেসিমাসের বাড়িতে। ততক্ষনে অবশ্য বৃষ্টিতে ভিজে দুজনেই ভেজা কাক হয়ে গেছি। তাড়াতাড়ি দরজায় কড়া নাড়তেই ডেসিমাস দরজা খুলে দিলো।

"কি ব্যাপার, তোমরা এখানে? অনেক ভিজে গেছো দেখছি। এসো, এসো, চলে এসো ভিতরে।"

ডেসিমাস ঈনিয়নের অনেক পুরনো একজন কেয়ারটেকার। তার কাজ মুলত ঈনিয়নের বাগানগুলোর দেখাশোনা করা। সে গাছ ভালোবাসে। আমার সাথে ডেসিমাসের সখ্যতা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। বাগানে কয়েকটা স্কেচ করতে গিয়ে তার সাথে পরিচয়। মানুষটা ছোটখাটো এবং হাসিখুশি। তার অন্যতম একটা গুন হলো, সে খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। এবং কথাও বলে প্রচুর। তবে কেউই তাতে কখনো বিরক্ত বোধ করেনা, বরং সে এমনভাবে বলে, যে আগ্রহ ভরে শোনে।

"এতো ভিজলে কি করে?" বললো সে।

"আর বোলো না।" বললাম আমি। নুবিকে দেখিয়ে বললাম-"এনার হঠাৎ সখ হয়েছে মিঃ ফ্রাঙ্কের বাসায় যাবে। মিঃ ফ্রাঙ্কই অবশ্য আমাদের যেতে বলেছিলো। কোন এক পেইন্টিং এর দুর্লভ একটা বই দেখাবে না যেন কি। তা যেতে তো হবেই, এবং তা অন্য কোন দিনে না, আজকেই। বললাম, বৃষ্টি নামবে। সে তা শুনলো না। আমার আসার ইচ্ছা ছিলো না মোটেও। খালি একা একা এই ভীতু মেয়ে আসবে এতোদূর পথ-ভয় টয় পাবে, তাই নিয়ে এলাম আরকি।"

নুবিকে দেখে মনে হচ্ছে আমাকে কাঁচাই গিলে ফেলবে। তবে তার আগে সে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে যেটা করতে পারে সেটা হলো, সে চাইলেই আমার পিঠে দড়াম করে একটা থাপ্পড় বসাতে পারে। তার ভাবগতিকও বেশি সুবিধার ঠেকছে না। আমি লাফ দিয়ে দূরে সরে এলাম।

"আচ্ছা, আচ্ছা, যাই হোক।" ডেসিমাস আমাদের দিকে শুকনো তোয়ালে এগিয়ে দিলো। "মুছে নাও, আর আগুনের কাছে এসে বসো। বৃষ্টি বেশিক্ষন হবে না, থেমে যাবে একটু পরেই।"

"তোমাদের শহরটা এমন হতচ্ছাড়া আর উদ্ভট কেন! বলা নাই কওয়া নাই, যখন তখন বৃষ্টি নামে। একটু রয়ে সয়ে নামতে পারে না? কাল দেখলাম দুপুরে ঠা ঠা রোদ, তার মাঝেও বৃষ্টি হচ্ছে।"

নুবি এর কথা শুনে ডেসিমাস হেসে ফেললো।

"ও আচ্ছা, হ্যা। একটু অদ্ভুত বটেই। এখানে বৃষ্টির কোন ঠিক ঠিকানা নেই। তবে আশেপাশের কোন শহরে কিন্তু এমনটা হয় না। শুধু এই শহরেই। এই বৃষ্টি নিয়েই এখানে অনেক পুরনো একটা মিথ প্রচলিত আছে।

"কি সেটা?"


"স্নিগের এক তরুন কোন এককালে ভয়াবহভাবে কোন এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা তাকে প্রত্যাখান করে। সে সম্ভবত অন্য একজনকে ভালোবাসতো। কিন্তু তার প্রতি তরুনটির প্রেম ছিলো অনেক গভীর। তার অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে গেলো, যে তাকে না দেখে সে একদিনও থাকতে পারতো না। সবকিছু জেনেও সে মেয়েটির জন্য চুপচাপ অপেক্ষা করে যেতো। তার বিশ্বাস ছিলো, মেয়েটি একদিন অবশ্যই তার ভালোবাসা বুঝতে পেরে তার কাছে আসবে।

কিন্তু কোন এক কারনে তরুনটির একসময় স্নিগ ছেড়ে চলে যেতে হয়। যদিও সে জানতো মেয়েটাকে কিছু বলা অর্থহীন, তবু যাওয়ার আগে সে মেয়েটিকে বলে যায়, সে আবার ফিরে আসবে এবং তার জন্য একইভাবে অপেক্ষা করবে। মেয়েটা অবশ্য সেই কথায় কোন কর্ণপাত করলো না। সে তরুণটিকে একেবারেই ভালোবাসতো না।

তারপর, অনেক চড়াই বাধা উৎরিয়ে, অনেক কষ্ট করে একদিন তরুন আবার ফিরে এলো পুরনো স্নিগে। এসে সে আগের জায়গায় মেয়েটিকে খুঁজলো অনেক, কিন্তু কোথাও পেলো না। সে বুঝলো, মেয়েটার খুব সম্ভবত বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও, তার দেওয়া কথামতো সে ঠায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো দিনের পর দিন।

এভাবে অপেক্ষা করতে করতে সে পাথর হয়ে গেলো।

মেয়েটাও ঠিক সেই জায়গায় ফিরে এলো অনেকদিন পর। সে ভুল করেছিলো। যদিও সে আশা করেনি কেউ তার জন্য সত্যিই অপেক্ষা করবে, তবু সে বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে দেখলো- তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একজন পাথরে পরিনত হয়েছে।

মেয়েটা অনেক কাঁদলো। যে সত্যিকারের ভালোবাসাকে এতোদিন উপেক্ষা করেছে সে, তা সে ফিরে পেতে চাইলো। সে পাথরের মূর্তিটাকে জড়িয়ে ধরে প্রতিদিন কাঁদতো। কান্নার জল দিয়ে সে পাথরটাকে জাগাতে চাইতো। আর এইভাবে কাঁদতে কাঁদতে সে পরিণত হলো বৃষ্টিতে।

এই কারনেই স্নিগে বসন্তকালে এতো বৃষ্টি হয়, কারন তাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো কোন বসন্তে; এবং তাই বৃষ্টি সেই পাথরকে কান্না মিশ্রিত ভালোবাসা দিয়ে ভিজিয়ে আবার জীবন্ত করে তুলতে চায়।"


নুবি নিঃশ্বাস বন্ধ করে গল্পটা শুনছিলো। শেষ হওয়ার পর দেখি একদম চুপ হয়ে গেছে সে। বোঝা যাচ্ছিলো তার মন কিছুটা খারাপ হয়েছে। ডেসিমাসের বাড়িতে সেদিন আর আড্ডা জমলো না।


"চলো, ফিরে যাই। বৃষ্টি থেমে গেছে আর এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এই অবস্থায় মিঃ ফ্রাঙ্ক এর বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে না।"

নুবি দেখলাম চুপচাপ মেনে নিলো। কোন উচ্চ বাচ্য করলো না।

পথে ফিরে আসতে আসতে নু বললো, "মিথটা আসলে সত্যি। তাই না?"
"কে বললো?"
"আমি জানি। কেন, ওই যে ওই পাথরের মূর্তিটা? ওইটাই সেই ছেলে। ছেলেটা নিশ্চয়ই ঈনিয়নের কোন ছাত্র ছিলো। আর মেয়েটাও।"
"যতোসব গাঁজাখুরি গল্প! কিসের সাথে কি মিলাচ্ছো? নুবি, তুমি কি রাত দিন গাঁজা টানো? আর টানো তো টানোই, যারা টানে তাদের কথাও বিশ্বাস করো।"

নুবি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে একা চলে গেলো। কিছু বললো না। বোধহয় বলার রুচি হয় নি কিছু।

আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, গাঁজাখুরি বললেও আমি জানি নুবি'র অনুমানটাই সত্যি। প্রতি রাতের শেষ দিকে ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি হতে আমি দেখেছি। ঈনিয়নে আসার আগেই আমি মিথটা জানতাম। আমি এও জানি, মূর্তিটা কার, সে কোথা থেকে এসেছিলো। তার নাম ছিলো -"রু"। সত্যি বলতে, আমার ঈনিয়নে পড়তে আসার কারন এটাই। নুবি সেটা জানেনা। আমি নুবিকে জানাতেও চাইনা যে আমি "রু" এর একজন বংশধর।

"রু" এর ডায়েরির একটা অংশ আমার কাছে আছে। সেটা তার ঈনিয়নে আসার আগের অংশ। আমি জানি, ঈনিয়নের কোথাও না কোথাও '"রু" এর ডায়েরির বাকি অংশটুকু লুকিয়ে আছে। সেটা আমার খুঁজে পাওয়া দরকার।

পাথর হয়ে যাওয়া মানুষটির পুরনো দিনগুলোর সব গল্প আমার যে এখনও অজানা।



(লস্ট এন্ড ফাউন্ড- প্রথম পর্বঃ দ্যা মিথ)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×