বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এর মাননীয় সদস্যগণ কি (সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ) ব্যবসায়িক দৃষ্টি ভংগীতে আচ্ছন্ন হয়ে শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানীর প্রক্রিয়ায় লৰ-কোটী টাকা আয় উপার্জনে (আরও বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থ উপার্জন- হোকনা সে কথিত দুনর্ীতির মাধ্যমে জনগণের নামে বরাদ্দকৃত গম চাল বিক্রী থেকে শুরম্ন করে এলজিইডি বা সওজ এর সড়ক কালভার্ট ইতাদির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নিজেরাই টেন্ডার-ফেন্ডার ডেকে আত্মসাত করা সহ) মেয়াদকালীন সারা সময় ব্যসত্দ থাকতেই বেশী মনোযোগী হবেন, নাদান ও অসহায় দেশবাসীতো সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে সে সব বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস (নাকি দুঃশাহস) অর্জন করতেই পারেন।
এর মধ্যে গত 23শে অক্টোবর 2006 তারিখে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় "জিনিস পত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় 121 এমপির বেতন আটকে দিয়েছে সংসদ সচিবালয়" (দৈনিক ইত্তেফাক) এ মর্মে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়েছে যে ন্যাম ফ্ল্যাট ও এমপি হোষ্টেলে বসবাস কারী ঐ এমপিদের অধিকারে থাকা জিনিসপত্র বুঝিয়ে না দেয়ায় তাদের বেতনভাতা হচ্ছে না। খবরটিতে সংসদ হিসাব শাখার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে যে অতীতে অনেক কিছু বকেয়া রেখেই এমপিরা হোষ্টেল ছেড়ে যেতেন, যে গুলো পরে আর কখনই আদায় করা সম্ভব হয়নি। "এমপিদের বকেয়া টেলিফোন বিল 06 মাসের মধ্যে আদায়ের জন্য হাইকোটের নির্দেশ" শীরোনামে আরও একটি খবর 'দৈনিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গত 28.04.06 তারিখে। সপ্তাহ খানেক আগে উলিস্নখিত 06 মাস মেয়াদ কাল উত্তীর্ণ হয়েছে। উক্ত খবরটিতে বলা হয় যে 5ম ও 7ম জাতীয় সংসদের 442 জন সংসদ সদস্যের নিকট বকেয়া প্রায় সোয়া 5 কোটী টাকার টেলিফোন বিল আনাদায়ী রয়েছে অনেক বছর যাবত এবং আদালত একই সংগে তার পর্যবেৰণে বলেছেন যে ঐ টাকা আদায়ের ব্যর্থতার জন্য ডাক ও টেলিফোন মন্ত্রণালয় এবং বিটিটিবি দায়ী থাকবে। দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ 8 দফা অভিমত সহ এ রায় প্রদান করেন এবং অভিমতের মূল অংশে বলা হয় যে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র-যা আইনের দ্বারা শাসিত, কোন ব্যাক্তির দ্বারা নয় এবং জনগণই হচ্ছেন রাষ্ট্রের মালিক। সকল সংস্থার দায়ীত্ব প্রাপ্তরা কেবল জনগনের স্বার্থে জনগণের প্রয়োজনেই নিয়োজিত থাকবে। সংসদ সদস্যগণ তাদের দ্বারা প্রণীত আইন দেশের জন্য দেশের অন্যসব সাধারণ জনগণের মতো মানতে বাধ্য। উক্ত রায়ের প্রেৰিতে কত টাকা বকেয়া নির্ধারিত মেয়াদ কালের মধ্যে আদায় হয়েছে- সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়ীত্বে নিয়োজিত মাননীয় উপদেষ্টা গরীব দেশবাসীকে মেহেরবানী করে সেবিষয়ে অবহিত করতে পারেন।
আজ থেকে সাতমাস আগে আর একটি পত্রিকায় "সাংসদদের গাড়ী ব্যবসায়ীদের হাতে" শীরোনামে একটি শিহরণমূলক অণুসন্ধানমূলক খবর বিশদভাবে প্রকাশিত হয় (05.04.06) যাতে বলা হয় যে সাংসদের কোটায় আনা শুল্কমুক্ত গাড়ী চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। কাগজে কলমে নিজেদের নামে থাকলেও অধিকাংশ সাংসদ এগুলি ব্যবহার করেন না এবং বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা নেন মোটা অংকের টাকা। পত্রিকার দুই তরম্নন অণুসন্ধানী সাংবাদিক লিখেছেন, বেশিরভাগ সাংসদের অতিরিক্ত আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে এই গাড়ি- বাণিজ্য। কেবল শুল্কমুক্ত গাড়ির অণুমতিপত্র বিক্রি করেই তারা প্রতি গাড়ি থেকে 10 থেকে 25 লাখ টাকা পর্যনত্দ পেয়েছেন। কম করে গড়ে 15 লাখ টাকা ধরা হলে এই প্রক্রিয়ায় প্রায় 45 থেকে 50 কোটি টাকা পর্যনত্দ আয় করেছেন এসব সাংসদ। আর এতে সরকারের রাজস্ব ৰতি হয়েছে প্রায় 280 কোটি টাকা। খবরটিতে বলা হয়েছে, সাংসদরা সবাই গাড়ি আমদানি করার কাগজ বিক্রি করে দিয়েছেন, তা নয়। ব্যতিক্রমও আছে। তবে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা যায়। স্পিকার ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দিন সরকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অল্পসংখ্যক সাংসদ তাদের আমদানি করা গাড়ি ব্যবহার করছেন। অষ্টম সংসদের 300 সাংসদের প্রায় সবাই গাড়ি আমদানির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন।তবে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ চার সাংসদ (এপ্রিল 06 পর্যনত্দ) তাদের গাড়ি আমদানি করেননি বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে সাংসদের নামে আমদানি করা শুল্কমুক্ত গাড়ির তালিকা থেকে দেখা যায়, দু-একজন ছাড়া প্রায় সবাই উচ্চ দামের গাড়ি এনেছেন। বিএমডবিস্নউ থেকে মার্সিডিজ কিংবা হামার বা পোরশের মতো কোনো দামি ব্র্যান্ডই বাদ নেই এ তালিকা থেকে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি সংসদের সদস্যদের আমদানি করা 275 টি শুল্কমুক্ত গাড়ির মধ্যে 55টিই বিএমডবিস্নউ গাড়ি ও জিপ। শুল্ক ছাড়া এগুলোর সবের্াচ্চ মূল্য 84 লাখ টাকা পর্যনত্দ। মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি ও জিপ আনা হয়েছে 40 টি। এই ব্র্যান্ডের জিপের দাম সবের্্বাচ্চ 73 লাখ টাকা ও গাড়ির সর্বোচ্চ দাম 1 কোটি 18 লাখ টাকা। বিশ্বের অন্যতম দামি গাড়ি পোরশে। এগুলোর দাম সর্বোচ্চ 3 কোটি টাকা পর্যনত্দ। সাংসদদের নামে পোরশে এসেছে 10টি। লেক্সাস গাড়ি ও জিপ আনা হয়েছে 23টি। লেক্সাস জিপের দাম 47 লাখ টাকা পর্যনত্দ এবং গাড়ির সর্বোচ্চ 48 লাখ টাকা। ল্যান্ড রোভার রেঞ্জ রোভার 16 টি। এগুলোর দাম সর্বোচ্চ 54 লাখ টাকা। প্রায় 50 লাখ টাকা পর্যনত্দ মূল্যের ক্যাডিলাক আনা হয়েছে চারটি। আনত্দর্জাতিক বাজারে হামার জিপের দাম 91 লাখ টাকা পর্যনত্দ, এগুলো এসেছে চারটি। টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার কেনা হয়েছে 42টি, এগুলো পাওয়া যায় 34 লাখ থেকে 35 লাখ টাকার মধ্যে। লিনকন জিপের দাম সর্বোচ্চ 50 লাখ টাকা, এসেছে তিনটি। 56 ইনফিনিটি গাড়িও এসেছে তিনটি, এগুলোর মূল্যও 40 লাখ টাকা। মিতসুবিসি পাজেরো ভিসিক্স আনা হয়েছে 37 টি, এগুলো পাওয়া যায় 25 লাখ টাকায়। সাংসদদের নামে নিশান পেট্রোল এসেছে 15টি ও নিশান পাথফাইনডার দুটি, এগুলোর মূল্য সর্বোচ্চ 31 লাখ টাকা। এর বাইরে আনা হয়েছে দুটি টয়োটা জিপ এবং একটি টয়োটা করোলা। শূল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির কোটায় সবচেয়ে কম দামের গাড়ি এনেছেন স্পিকার ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দিন সরকার। তিনি এনেছেন 1500 সিসির টয়োটা করোলা। এটির মূল্য প্রায় 10 লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, কোটি টাকা দামের গাড়ি কেনার মতো অর্থ তার নেই। অন্য সাংসদদের বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা হয়তো সামর্থ্য অণুসারে এনেছেন। সাংসদদের গাড়ি-বাণিজ্য সম্পর্কে স্পিকার বলেন, এ ধরনের কথা তিনি শুনেছেন। তবে তিনি তা বিশ্বাস করতে চান না। জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানীর ইতিহাস বিধৃত করে প্রায় 07 মাস আগে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটিতে উলেস্নক করা হয় যে জাতীয় সংসদের সাংসদদের শুল্কমুক্ত গাড়ি দেওয়া শুরম্ন হয় এরশাদ আমলে। 1988 সালের 24 মে সরকার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে সাংসদদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির অণুমোদন দেয়। এই আইন একবার সংশোধিত হয় 2002 সালের 28 আগস্ট। তবে তা কার্যকর হয় ওই বছরেরই 1 জুলাই থেকে। এই সংশোধনীতে বলা হয়, একজন সাংসদ প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর বা সম্পূরক শুল্ক ছাড়াই একটি মোটরকার বা জিপ আমদানি করতে পারবেন। তবে তিনি দ্বিতীয়বার বা অন্য যেকোনো সময়ে আবার নির্বাচিত হলে আট বছরের ব্যবধানে আরেকটি গাড়ি আমদানি করতে পারবেন। একজন সাংসদ যতবারই নির্বাচিত হন না কেন, এই সুবিধায় তিনি দুটির বেশি গাড়ি আমদানি করতে পারবেন না। এমনকি আমদানি করা গাড়ি তিনি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন না।
2005সালের 22 আগস্ট সংশোধন করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অণুযায়ী শূল্কমুক্ত গাড়ি পেতে হলে শপথ নেয়ার পর সংসদের মেয়াদ কমপৰে দুই বছর থাকতে হবে। এর ফলে সাংসদ হয়েও শুল্কমুক্ত গাড়ি পাননি সংরৰিত আসনের মহিলা সাংসদরা। 8ম সংসদের মাননীয় মহিলা এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ী সংগ্রহের জন্য পাগল প্রায় ছিলেন, মর্মে পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের খবরাখবর প্রকাশিত হয়। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছিল, একজন সাংসদ প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার সাত বছর পর আবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেেবন। আবার একবার গাড়ি কেনা হলে চার বছর পর্যনত্দ হসত্দানত্দরও করা যাবে না। এ সময় শুল্কমুক্ত আমদানির জন্য গাড়ির সি সি ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সাংসদরা 1650 সিসি পর্যনত্দ কার ও 3000 সিসি পর্যনত্দ জিপ শুল্ক ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন। 8ম সংসদের সাংসদরা অবশ্য আগের নিয়মেই গাড়ি আমদানি করেছেন।
মাননীয় সাংসদদের শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানী বিষয়ে "জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন উধর্্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, "সাংসদরা যেভাবে তাদের দেওয়া বিশেষ সুবিধা বিক্রি করে দিচ্ছেন তা অনৈতিক। এর ফলে একদিকে ব্যবসায়ীরা কোনো শুল্ক না দিয়ে গাড়ি ব্যবহার করছেন আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। যারা আইন তৈরি করেন, তাদের এ ধরনের অনৈতিক কাজ দুঃখজনক"।
তিনি বলেন, সাংসদদের এই গাড়ি-বাণিজ্য এনবিআরের অজানা নয়। কিন্তু সাংসদদের বিরম্নদ্ধে করনীয় কিছু নেই বলে জানালেন একজন উধর্্বতন কর্মকর্তা। তবে সাংসদের গাড়ি ব্যবহার করেন, এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীর সন্ধান জানা আছে এনবিআরের। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এ রকম কিছু ব্যবসায়ীর দাখিল করা আয়কর রিটার্ন পর্যালাচনা করে দেখেছে যে তারা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করলেও রিটার্নে এর উলেস্নখ নেই। কয়েকজনকে তলবও করে তারা। ব্যবহৃত গাড়িকে কালো টাকা ধরে এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এনবিআর সাড়ে 7 শতাংশ হারে কর আদায় করেছে। আইন অনুযায়ী সাড়ে 7 শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান ছিল জুন 2006 পর্যনত্দ। দুই তরম্নন সাংবাদিকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেবল চারটি গাড়ি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানই কিনে নিয়েছে প্রায় 200 সাংসদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির পারমিট। এসব পারমিট পরে 20 শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার কোনো পরিবেশক আরেক পরিবেশকের কাছে বেশি দামে পারমিট বিক্রি করেছে, এমন উদাহরণও রয়েছে।
উলিস্নখিত অণুসন্ধানী খবরটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাননীয় সাংসদ গণ (8ম জাতীয় সংসদের) কে কি মডেল ও মূল্যের শুল্কমুক্ত গাড়ি ক্রয় করেছেন তার বিশদ বিবরণ উক্ত প্রতিবেদনে তোলে ধরেন। একই পত্রিকায় 04 ঠা নভেম্বর 2006 তারিখে বিএনপির দুই সাবেক "সাংসদের শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানীতে জালিয়াতি" শীরোনামে প্রকাশিত খবরে সিলেটের এবং খাগড়াছড়ির অধুনালুপ্ত দুই সাংসদের আমদানীকরা শুল্কমুক্ত দুটি গাড়ী খালাস করতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় কোটী টাকা দামে পোরশের সর্বশেষ মডেলের এ দুটী গাড়ী কিভাবে আনা হলো এবং চট্রগাম বন্দরে খালাস করা হলো সে কাহিনী এবং ইতিহাস অত্যনত্দ বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ দুটী গাড়ী প্রক্তন সাংসদদ্বয় নিজেরা ব্যবহার না করে আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য নিজ রাজনৈতিক দলেন এক তরম্নন কান্ডারীকে উপটোকন প্রদানের খবরও ঐ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আগামী 27 শে জানুয়ারী 2007 এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অণুষ্ঠানের কথা। সে লৰ্যে কেয়ার টেকার সরকার গঠনের কাজ কিছুদিন আগে সম্পন্ন হয়েছে। বিরোধী জোটের দাবী অণুযায়ী কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান এর পদে যোগ দিতে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান মাতৃভূমি ও জনগনের স্বার্থে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ এবং তার তিন সহকর্মীকে স্বস্ব পদ থেকে সরে গিয়ে সুষ্ঠু অবাধ এবং নিরপেৰ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দাবী জানিয়ে 7 দিনের আলটিমেটাম প্রদান করা হয়েছে 14 দলীয় জোট এবং সমাজের সুশীল ও কম সুশীল বিভিন্ন মহল থেকে। বিগত ও বিদ্যমান অবস্থায় প্রতীয়মান জনাব আজিজকে তাঁর সহকর্মীগণসহ সম্ভবতঃ খুব তাড়াতাড়ি সরে দাড়াতে হতে পারে। পরম পরিতাপের বিষয় হলো দায়ীত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমান সিইসি জনাব এম এ আজিজ তাঁর চেয়ারের মর্যাদা ইচ্ছাকৃতভাবেই অবমাননা করেছেন এবং তাঁর চলনে বলনে আচার আচরণে অপ্রকৃতস্থ লোকদের মতো অভিনয় (!) করেছেন- যা তিনি ইচ্ছে করলে সর্বতোভাবে পরিহার করতে পারতেন। কোন সুস্থ ব্যক্তি তাঁর মতো অস্বাভাবিক আচার আচরণ করেছেন মর্মে শোনা যায়নি।
কেয়ারটেকার সরকার প্রধান এবং সিইসি কে কেন্দ্র করে দেশে এখনো অস্বসত্দিকর অবস্থা বিরাজমান। একদিকে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার রাজনীতির অংশীদার আর অন্যদিকে ভোট ও ভাতের দাবী আদায়সহ আসছে সাধারণ নির্বাচনে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোটারগণ কতর্ৃক নির্বিঘ্নে এবং নিরাপদে ভোট দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে উভয় রাজনৈতিক জোট দেশবাসীকে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন-অনবরত । নাদান ভোটারগণ জানেন না নির্বাচনে পাঁচ বছরে মাত্র একদিন ভোট দেয়ার গুরম্ন দায়ীত্ব পালন করার পর তাঁদের আর কিছু করনীয় আছে কিনা। তাঁরা ইহাও জানে না তাঁদের ভোটে নির্বাচিত মাননীয় এমপিরা বিগত আমলের বিভিন্ন সাংসদদের মতো শুল্কমুক্ত গাড়ী বাণিজ্যে, কিংবা বিভিন্ন ধরনের টেন্ডার বাজি, ফেরেববাজি, ধোকাবাজি এবং অস্বচ্ছ ও বিভিন্ন ধরনের নোংড়া কাজকামে অতিশয় ব্যসত্দ হয়ে যাবেন কিনা। ভোটাররা এও জানে না বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলির কর্ণধারগণ সুস্থ চরিত্রের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে সিন্ধানত্দ মূলক ভূমিকা রাখতে সৰম হবেন কিনা, নাকি মনোনয়ন বেচাকেনা নিয়ে নগদ ব্যবসা বাণিজ্যে নিজেদেরকে তালগোলে জড়িয়ে ফেলতে বেশী আগ্রহী হবেন? গত সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে আশান্বিত হবার খুব একটা ভরসা খোঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অংগীকার ব্যক্ত করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ কান্ডারীগন যেমন সোচ্চার, নিজ দলে গণতন্ত্র চচ্র্চায় এরাই আবার গভীরভাবে নিরব। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? বড় বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ কর্ণধারগণ এ বিষযে অবদান রাখতে পারেন। কাজটি খুবই কঠিন- তবে অসম্ভব নয় মোটেই। [লেখক: সাবেক সচিব]
ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 11.11.2006 ঃঃ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



