somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বালানি বিহীন বিদ্যুৎ - চট্টগ্রামের তরুণের সামনে এখন স্বপ্নের হাতছানি!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন পরপরই ই-মেইল বার্তা আসছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত বাণিজ্য কোম্পানী ডয়েস, জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা বিএমডব্লিউওসহ বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানও অভিনন্দন জানিয়েছে, আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তরুণের উদ্ভাবিত বিদ্যুৎবিহীন জ্বালানির ব্যাপারে। অনেকের জিজ্ঞাসা, ‘বিস্ময় যুবক গিয়াস উদ্দিন কচির জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের খবর কী?’ এর মধ্যে অতি আগ্রহী কেউ কেউ আবার ফোন করেছেন, কেউবা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি শতকোটি টাকায় কিনে নেয়ারও প্রস্তাব দিচ্ছেন। কিন্তু আশার এসব বার্তা নিয়ে কচির জীবনকে জীবন বদলানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তেমনি আশংকাও কম নয়। কারণ পর্যাপ্ত পড়াশোনা না করায় নিজের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ডায়াগ্রাম, প্যাটার্ন কিংবা পাইলট প্রজেক্ট তৈরি করতে পারছেন না তিনি। আবার কৌশল ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাহায্যও নিতে পারছেন না অন্য বিশেষজ্ঞদের। অথচ জ্বালানি ছাড়াই তার উৎপাদিত বিদ্যুৎ এক কিলোওয়াট থেকে এখন বেড়ে গেছে ১০ কিলোওয়াটে।

গিয়াস উদ্দিন কচির পৃষ্ঠপোষক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি এমএ লতিফ বলেন, ‘কচি প্রকৌশল শাখায় শিক্ষিত হলে এতোদিনে শতকোটি টাকার বিদেশী প্রস্তাব গ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে গর্বিত করতে পারতাম আমরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্কুলের গন্ডিও পেরোয়নি সে। তাই বাস্তবে যা সম্ভব হচ্ছে কাগজে-কলমেই তা হয়ে উঠছে দুরূহ।’

ঝিনাইদহের যুবক গিয়াস উদ্দিন কচি পড়াশোনা করেছেন ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত। তারপর স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বছর কয়েক পরে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। বর্তমানে ২ ছেলে-মেয়ের বাবা তিনি। সংসারের চাপে এক সময় আঁকাআঁকির কাজ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তারপর একদিন হঠাৎ করে তা ছেড়ে পাড়ি জমালেন চট্টগ্রামে। দিন বদলের এতোসব ঘটনার মধ্যেও অবশ্য জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। প্রায় ৫ বছরের সাধনায় অবশেষে সফলও হলেন কচি। সাংবাদিক হাসান নাসির ও ব্যবসায়ী এমএ লতিফের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ১৯ এপ্রিল নিজের উৎপাদিত ঐ বিদ্যুৎ দিয়ে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সামনে লাইট, ফ্যান এবং ড্রিল মেশিনও চালিয়েছেন তিনি। এ সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই অভিনন্দনের ফুলঝুরিতে ভাসতে থাকেন কচি।

জাতিসংঘ থেকে কচিকে অভিনন্দন জানিয়ে ই-মেইল পাঠানো হয়। মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইং ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে তার প্রজেক্টের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমেরিকার বিখ্যাত কোম্পানী জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্সও অভিনন্দন জানিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন তার কাছে। আর বিশ্বখ্যাত কোম্পানী ডয়েসের প্রতিনিধি সশরীরে এসে কচির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রয়োজনে শত কোটি টাকায় কিনে নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে তারা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ডায়াগ্রাম ও প্যাটার্ন তৈরি করতে হবে কচিকেই।

এরপর ডায়াগ্রাম তৈরিতে মনোনিবেশ করেন কচি। গত ৩ মাস নিরলস সাধনা করেও কাগজে-কলমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্যাটার্ন দাঁড় করাতে পারেননি তিনি। তবে পাইলট প্রজেক্ট তৈরি করার মতো অবস্থায় পৌঁছানো গেছে বলে দাবি করেছেন কচি। দৈনিক ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ‘ডায়াগ্রাম তৈরি করতে না পারলেও প্রজেক্ট আকারে পুরো বিষয়টি তুলে ধরার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারণে এতোদিন তা আপনাদের দেখাতে পারিনি। এবারে আশা করছি মাসখানেকের মধ্যে পুরো প্রজেক্টটা দেখাতে পারবো।’ পর্যাপ্ত শিক্ষা না থাকাটা প্রকল্প তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আরেকটু পড়াশোনা থাকলে হয়তো এতোদিনে একটা অবস্থানে পৌঁছে যেতো আমার প্রকল্প। আবার এও মনে হচ্ছে, শিক্ষা না থাকাটাই ভালো হয়েছে। কারণ শিক্ষা থাকলে হয়তো বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচলিত সূত্রে ঘুরপাক খেয়ে মাঠেই মারা যেত আমার জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা।’

উল্লেখ্য, কচির প্রযুক্তিতে জ্বালানি হিসাবে তেল, গ্যাস কিংবা কয়লার প্রয়োজন হবে না। প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির পার্থক্য হচ্ছে - প্রচলিত প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারের একদিক দিয়ে প্রবেশ করে শক্তি ক্ষয় করে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু নতুন প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ চক্রাকারে ঘুরে শক্তি উৎপাদন করতে থাকে। উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চলে যায় ক্যাবলে। এভাবে মাত্র ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ পুনঃ উৎপাদন করা যায় নতুন প্রযুক্তিতে। গত ১৯ এপ্রিল সরেজমিনে এসে এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) আবুল কাশেম, আরপিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) শহীদ উদ্দিন আহমেদ, জিইসি’র ম্যানুফেকচারিং ডিরেক্টর এডিএমএ বাসেত ও বিশ্বখ্যাত কোম্পানী ডয়েসের সার্ভিস ম্যানেজার সৌমেন চক্রবর্তী প্রমুখ।

উদ্ভাবিত প্রযুক্তির কাগজে-কলমে রূপ দেয়া গেলে সত্যিই এর দাম ছাড়িয়ে যাবে শতকোটি টাকা। ‘পৃথিবীতে সবকিছুই এখন জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই ক্রমশ নিঃশেষ হচ্ছে গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে শুধু এ জ্বালানিই সংরক্ষণ হবে না, পাল্টে যাবে বিশ্ববাসীর জ্বালানির চিত্র। যেমন তখন জ্বালানিচালিত ইঞ্জিন ছাড়াই তৈরি হবে গাড়ি। কারণ ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশী ক্ষমতা রাখবে বিদ্যুৎচালিত ইঞ্জিন।’ তাই কচির উদ্ভাবিত প্রযুক্তির দাম শতকোটি টাকা হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন অনেকে। জানা যায়, ‘পাইলট প্রজেক্ট দাঁড় করাতে পারলে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার আমন্ত্রণ জানানো হবে। ডায়াগ্রাম ও প্যাটার্ন যদি তারা নিজেদের প্রকৌশলী দিয়ে তৈরি করার শর্ত মেনে নেয়, তবে মানব কল্যাণে ব্যয় করতে পারবো জ্বালানি ছাড়া উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ।’

Daily Ittefaq: 12.09.2008
৩৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×