somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা আগর

৩১ শে মে, ২০০৯ রাত ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগর গাছ অতি মূল্যবান গাছ। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের অনেক জায়গায় আগর চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এ সম্পর্কিত তথ্য, প্রশিক্ষণ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ না থাকাতে আগর উৎপাদনকারী এবং আগর গাছের বাণিজ্যিক বি¯-ারে অনেক বিষয়ে অজ্ঞতা কাজ করে। সাধারণ মানুষ এতটুকু বুঝে যে, আগর গাছ লাগালে তারকাটা মারলে যদি আগর আসে তবে এক একটি গাছ ২-৩ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করা যাবে। আসলে আগর কি? কীভাবে আগর আসে? আগর আসার জন্য অন্য কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় কিনা এ সম্পর্কিত অনেকের মাঝে সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

আগরের বৈজ্ঞানিক নাম Aquilaria agallocha আগর বাণিজ্যিকভাবে “Agor”, “Aloe Wood” “Eagle Wood” নামে পরিচিত। আগর গাছের রেসিন (জবংরহ) অংশ হতে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে আগর তৈল উৎপন্ন করা হয়। আগরের এই রেসিন উৎপন্ন হয় তখন, যখন নির্দিষ্ট কিছু ছত্রাক আক্রমণ করে আগর গাছের ভেতর বি¯-ারলাভ করে। সাধারণত পূর্বে দেখা যেত যে সম¯- গাছে পুরাতন ক্ষত বা গর্ত থাকতো সে সম¯- গাছেই ছত্রাকের বি¯-ার ঘটতো। এ ধারণা থেকে আগর গাছে কৃত্রিমভাবে তারকাঁটা গেঁথে ছত্রাক উৎপাদনের বা বি¯-ারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হয় এবং এ জন্যই তারকাঁটা লাগানো হয় বর্ষার শেষে বা শরতের প্রথম দিকে যেন ছত্রাকের বি¯-ারের অনুকূল তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা থাকে।

বর্তমান সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগর উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম, পাপুয়া নিউগিনি, ভুটান, ভারত উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার ও সিলেটের কিছু এলাকায় আগর শিল্প ধীরে ধীরে বি¯-ারলাভ করছে। তবে বেশিরভাগ মানুষ আগর গাছ লাগায় বেশি টাকা উপার্জনের জন্য। কিন্তু আগর গাছ বা আগর সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। অথচ বাণিজ্যিকভাবে আগর গাছে রেসিন পেতে হলে এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, তবেই সে অল্প সময়ে সর্বাধিক সংখ্যক গাছ হতে রেসিন তথা আগর তৈল উৎপন্ন করতে পারবে।

আগর হল ট্রপিক্যাল পত্রপতনশীল উদ্ভিদ। এটি যে কোন পরিবেশে জন্মাতে পারে। তবে যে সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি, সুনিষ্কাশিত ভূমি, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা, রেসিন উৎপাদনে সহায়ক ছত্রাকের জন্য উপযোগী সেসব অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আগর চাষাবাদ করা উচিত। বাংলাদেশে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা আগর শিল্প প্রসারের জন্য উপযুক্ত। আগর গাছ বীজ দ্বারা বংশবি¯-ার করে এবং বীজ হতে চারা উৎপন্ন করে জুন-জুলাই মাসে। ১০-১২ ফুট দূরত্বে রোপণ করে ৫-৮ বছর পর তারকাটা দ্বারা গাছে রেসিন উৎপাদনের মাধ্যমে ডিসটিলেশন প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে আগর তৈল পাওয়া যায়।

সত্যিকার আগর তৈল পানির চেয়ে ভারী। এই তেল সুগন্ধি আগরবাতি, আতর, পারফিউম, লোশন, তেল, ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় এবং ভেষজগুণ সম্বলিত বলে ভেষজ ওষুধে ব্যবহৃত হয়। আগর তেলের বাজারমূল্য কল্পনাতীত। ১ কেজি আগর তেল আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রয় হয়। তাই আগর শিল্প প্রসারে সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং সেই সাথে এর গবেষণা অতীব আবশ্যক, যাতে আমরা ছত্রাক কৃত্রিমভাবে গাছের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে অতি অল্প সময়ে সর্বাধিক গাছ হতে আগর উৎপাদন করতে পারি। যদি আমাদের পার্বত্য পতিত জমিতে আগর গাছ লাগানোসহ আগর শিল্পের প্রসারে উদ্যোগ নেই তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আগর সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

-কৃষিবিদ মো. ফসিউল আলম ভূঁইয়া মাসুম
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×