আলোর পথে একজন শামসুর রহমান স্যার..............
তিনি তখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই থেকে শুরু করেছিলেন। এখনো আছেন। এরই মধ্যে চল্লিশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। বয়স ষাটের ঘরে ছুই ছুই করছে। চুলে পাক ধরেছে অনেক দিন থেকে। মুখের বলি রেখা দিনদিন স্পষ্ট হচ্ছে। শারীরিক সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে এলেও মনের শক্তি এতটুকু কমেনি তার। আজো তিনি নিরবে- নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ শুধু একটাই, শিক্ষার আলোয় সমাজটাকে আলোকিত করা। শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িয়ে পড়ার ৪০ বছর ইতোমধ্যে অতিবাহিত গেছে। কিন্তু একদিনও তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেননি। ভোগ করেননি প্রাপ্ত নৈমিত্তিক ছুটি। বিদ্যালয়টিই তার ধ্যান ও জ্ঞান। এলাকায় শিক্ষার হার ও মান বাড়াতে নিজেকে এতই আত্ম নিয়োগ করেছেন েয, বিয়ে করার প্রয়োজন মনে করেননি, তাই বিদ্যালয়টাকে তিনি তার সংসার মনে করেন। আর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যেন তার প্রিয় সন্তান। প্রচার বিমুখ ব্যতিক্রমী এই মানুষটি হলেন সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুর রহমান।
১৯৭০ সালে ছাত্রাবস্থায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যারা (অবৈতনিক) শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বে-সরকারি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একসময় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলে তখন তিনি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী শিক্ষক থেকে যখন তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিলেন তখন থেকেই তার একটাই ধ্যান ও জ্ঞান কিভাবে বিদ্যালয়টাকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা যায়। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় শতভাগ পাশের কৃতিত্ব অর্জন করে। নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক শামসুর রহমানের শ্রমে ঘামে আর নিরলস প্রচেষ্ঠায় কামালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট বিভাগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮ম স্থান অধিকার করে। চাকুরী জীবনের নির্ধারীত মেয়াদ অতিবাহিত হলে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দপ্তর ২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তাকে অবসর প্রদান করলেও তিনি শিক্ষকতার মহান পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেননি। অবৈতনিক ভাবে তিনি প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজো শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।
শুরু থেকে যে কাজগুলো তিনি করতেন তা এখনো করেন। চার দশক ধরে যেভাবে তিন প্রতিদিনের মতো বিদ্যালয়ের কাজগুলো করতেন ঠিক সেই কাজগুলো আজো করেন। শরীরের শক্তি তার হ্রাস পেলোও মনের শক্তি তার এতটুকু কমেনি। তাই এখনো তিনি প্রতিদিনের মতো বিদ্যালয়ের ফটকের তালা নিজ হাতেই খুলেন। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের জানালা দরজা তিনি নিজেই খুলে শ্রেণিকক্ষগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখেন শৌচাগারগুলো। তারপর শ্রেিণকক্ষে পাঠদান শুরু করেন। বিদ্যালয়ের শুরু থেকে শেষের ঘন্টিটি তিনি নিজ হাতেই বাজান। ছুটি হবার পর শ্রেণিকক্ষের জানালা-দরজা বন্ধ করে সবার শেষে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। এ কাজগুলো করতে পেরে তিনি তৃপ্তবোধ করেন। চিরকুমার নিবেদিত এ শিক্ষকের বাড়ি একই উপজেলার নিয়ামতপুর (শান্তিপুর) গ্রামে।
বিদ্যালয়ে একদিন: গত ১৯ নভেম্বর কামালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, শামসুর রহমান দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠদান করছেন। ছাত্রছাত্রীরা উত্সাহ নিয়ে তার সাথে আবৃত্তি করছে। ক্লাস শেষ হলেকথা হয় ১ম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেনের সাথে। সে বলে, সে বলে " স্যার আমরারে খুব মায়া করইন। তাইন(স্যার) ক্লাসো আইলে খুব ভালা লাগে, আমরা খুব আনন্দ করি।। এরই মধ্যে প্রথম শিফটের ছুটির ঘন্টা বাজান শামসুর রহমান। সাথে সাথে দুটি শিফটের ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সারিবদ্ধভাবে দাড়ায়। বাঁশিতে ফু দেয়ার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন শারীরিক কসরত করতে থােক শামসুর রহমানের নেতৃেত্ব। পরে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙগীত শেষ হলে দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস শুরু হয়।
কথা হল বিদ্যালেয়র ৫ম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত রহমানের সাথে। শামসুর রহমান স্যারের কথা বলতে গিয়ে সে বলে, স্যার আমাদের মা বাবা। আমাদের সব খবর তিনি রাখেন। আমরা সবকিছু উনাকে খুলে বলি। উনি আমাদের খুব আদর করেন।কারো কোন কিছুর প্রয়োজন হলে তিনি তা কিনে দেন। অভিভাবক রেণু বেগম বলেন, শামসুর রহমান স্যার থাকায় ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকি। ছেলেমেয়রা নিরাপদ থাকে। তিনি এত ভাল মানুষ যে কোন ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে তার খোজ খবর নেন। কেন বিদ্যালয়ে আসেনি জানতে চান। কোন ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হলো তিনি তাকে দেখতে যান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহিন সুলতানা বলেন, শামসুর রহমান স্যার বিদ্যালয়ের প্রাণ। বিদ্যালয়ের সবকিছু তিনি নিজ হাতেই করেন। বিদ্যালয়ে ৩শ৭৫জন ছাত্রছাত্রী অধ্যণন করছে।। এ বিদ্যালয়কে সিলেটের একটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, শামসুর রহমান স্যার শিক্ষাঙ্গণের একরোল মডেল। এ প্রতিষ্ঠানে তিনি ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি বিনাপারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সব কাজ তিনি একাই করেন। ব্যতিক্রমী শিক্ষক সাদা মনের মানুষ হলেন শামসুর রহমান।
টিফিনের বিরতীকালে কথাবলি শামসুর রহমান স্যারের সাথে। তিনি বলেন, ৪০ বছরের মধ্যে বিদ্যালয়ে অনুপিস্থত হইনি কিংবা নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করিনি এটা এমন কিছু নয়। তবে এ বিদ্যালয়টা আমার প্রাণের স্পন্দন। স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মা তখন মৃত্যু পথযাত্রী। চিন্তায় পরিবারের সবাই যখন অস্থির, তখন আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্খনা করেছিলাম েয এমন একটি দিনে তার মৃত্যু দাও যাতে আমার বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। শুক্রবারে তার মৃত্যু হয়েছিল। মা এর এ কথা বলতে গিয়ে তিনি অস্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন এ বিদ্যালয় ছাড়া আমি কিছু চিন্তা করতে পারিনা। আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় শান্তিবাগে একটি বেসরকারি স্কুল স্থাপন করেছি কিন্তু আমার কামালগঞ্জ সরকাির প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে যাইনি, কোনদিন যাবও না। শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা এক শিফটে করতে হবে। ২য় শিফটের ছাত্রছাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে খেলাধূলা করে। এতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, কথন যে বেলা চলে গেল টের পাইনি। বিয়ে করে সংসার করেননি এতে তার দু:খ নেই। বিদ্যালয়টা আমার সংসার। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর নানা প্রান্তে আমার সন্তানরা (ছাত্র-ছাত্রীরা) ছড়িয়ে আছে এতেই আমার পরম সুখ। আমার চাওয়া আমি যেন এই প্রতিষ্ঠানেই শেষ নি:শ্বসটা ত্যাগ করতে পারি। এভাবে সমাজটাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে অবিরাম ছুটে চলেছেন সকলের প্রিয় শামসুর রহমান স্যার...................।
[পুনশ্চ: বিদ্যালয় সরজমিন পরিদর্শনে প্রতিবেদক প্রিয় জুয়েল খান এর সঙ্গী থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।]
নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে
গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে
আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।
প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।
ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাম গাছ (জামুন কা পেড়)
মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান
গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
অনির্বাণ শিখা
রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।
আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=
©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....
মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।
ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন