ব্লগে লেখালেখি করিনা প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময়। আমি অবশ্য তেমন জ্ঞানগর্ভ লেখা লিখতে পারিও না। জ্ঞানীজনেরা লেখালেখি করে সেগুলো পড়ি। পড়ে জ্ঞানাহরণের চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে মন চায়। লিখতে গেলে সেলফ সেন্সরশিপের প্রয়োজন হয়। লিখে যদি পাছে কোন বিপদ হয়। অর্থাৎ মনের ইচ্ছা স্বাধীনভাবে প্রকাশ না করে এডিট করে নিতে হয়। নিজের মনের কথা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারলে বরং চুপ থাকাই ভাল। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার মতামত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফেইসবুকের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে এদিক সেদিক হলেই রাজাকার অথবা ভারতীয় দালাল বলে ট্যাগ দেওয়া হয়। কেউ কেউ আরও অনেক নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে। সবকিছুতেই যেন একটা অসহিষ্ণু ভাব পরিলক্ষিত হয়।
কয়েকদিন যাবত মিরপুরে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো অথবা দর্শকদের পাকিস্তানের সমর্থন নিয়ে হইহুল্লোড় চলছে। ভাবখানা এমন যেন পাকিস্তান বাংলাদেশ দখল করতে আসছে। বাস্তবে তেমন কোন সম্ভাবনাও নাই। যদি কেউ পাকিস্তানকে ভালবাসে সেও অর্থসম্পদ পাচার করে পাকিস্তানে বাড়িগাড়ি করার স্বপ্ন দেখে না। আর দখল তো আরও পরের বিষয়। কারণ সে জানে পাকিস্তান একটি অনিরাপদ ও বসবাসের জন্য অন্যতম অযোগ্য একটি দেশ। এসব বিষয় অন্য কোন দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কোন সম্ভাবনা নাই এব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। পতাকা নিয়ে উন্মাদনা আমাদের উপমহাদেশের দেশগুলোতেই বেশি দেখা যায়। ইউরোপ-আমেরিকায় পতাকা দিয়ে অন্তর্বাস বানালেও কারও এসব নিয়ে মাথাব্যথা নাই।
দেশপ্রেম মানুষের একটি সহজাত বিষয়। আপনি দেখবেন একেবারে ছোটবেলা থেকেই আপনার গ্রামে একপাড়া বা মহল্লার বিপক্ষে অন্য পাড়া বা মহল্লার কাবাডি, ফুটবল বা ক্রিকেট খেলায় আপনি আপনার পাড়া বা মহ্ল্লার পক্ষ নিবেন। এমনকি অন্য পাড়ায় আপনার মামা, খালা, ফুফু সব আত্মীয় থাকলেও আপনি আপনার পাড়ার পক্ষ নিবেন। একই ভাবে আপনার গ্রামের বিপক্ষে অন্য গ্রামের, আপনার থানা, জেলা, বিভাগ বা দেশের বিপক্ষে অন্য থানা, জেলা, বিভাগ বা দেশের খেলা হলে আপনার নিজের এলাকার পক্ষ নিবেন। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে বুঝতে হবে এর পিছনে কোন আক্রোশ বা কারণ রয়েছে। সেই কারণটা খুঁজে বের করে তার সমাধান করতে হবে। আপনি জোর করে কারও মত বদলাতে পারবেন না।
খুব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যত বানী দিচ্ছেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সেভাবে কথা বলতে দেখা যায় না। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে আমাদের দেশেও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এটা খুবই যুক্তি সঙ্গত। কিন্তু গত বছর যখন তেলের মূল্য প্রায় শুন্যের কোঠায় চলে আসল। সারা পৃথিবীতে কমলেও বাংলাদেশে কেন কমল না এই বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করে না। তেলের মূল্য বৃদ্ধির কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবার বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও তা কমবে কিনা সেটা নিয়েও হৈচৈ হওয়া উচিত।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিজেল বা পেট্রোল চালিত যানবাহনের ভাড়া বাড়ার কথা কিন্তু দেখা গেল সবধরনের যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি পেল। যারা তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে তারা ও পরিবহণ মালিকরা মিলে ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধি করল। কিন্তু যারা এই ভাড়া পরিশোধ করবে তাদের কোন প্রতিনিধির মতামতের প্রয়োজন পড়ল না।
শিক্ষার্থীদের যানবাহনে হাফ ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে পুরো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের মতো কোন বড় সংগঠন তাদের সাথে আন্দোলন করছে না। বরং কোন কোন সংগঠনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের বিরোধিতার অভিযোগ আছে। যদি ছাত্রদের কল্যাণে কোন ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা করার সুযোগ বা সাহস না থাকে তাহলে এই রকম সংগঠন করার উদ্দেশ্য কি?
গত দুই সপ্তাহে কক্সবাজার ও শেরপুরে মোট ৭ টি হাতি হত্যার খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃতি ও তার প্রাণী সম্পদ আমাদের ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ক্ষতি করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যঘাত না ঘটাব। অবৈধ ভাবে বনজঙ্গল যারা দখল করে হাতিদের বাসস্থান ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। বরং দখলদারিত্ব ক্রমেই বাড়ছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ নেয় না এই বিষয়েও যেন কথা বলতে অনিচ্ছুক আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ।
যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ও জনগণের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে সেই বিষয়ে মৌনতা দেখিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আবেগটাকে বেশি ফুটিয়ে তুলি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৫৪