সুন্দর সকাল। অনেক লম্বা একটা রাস্তা সামনেই। চারপাশে গাছগাছালি ভরা। পাখি ডাকছে। আমি একা একা হেটে চলেছি, কাধে ব্যাগ। পথে আর কেউ নেই। আমি চলে যাচ্ছি সবার থেকে অনেক দূরে।
এইত গতকালকের কথা, বাবা আমায় বল্ল যেভাবেই হোক নীলা'ই আমাদের বাড়ির বউ হবে।
নীলা। আমার লাভার। আমাকে ও অনেক ভালোবাসে। ওর সাথে প্রেম করতাম এতদিন। আমার বাবা মা দুজনেরই আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সম্মতি ছিল। বাবা আগেই বলেছিলেন নীলাকেই আমার বিয়ে করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল নীলার পরিবারকে নিয়ে। তারা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তার প্রধান কারন হলো নীলারা আমাদের থেকে অনেক বড়লোক। আমরাও কম যাইনা। তবু তারা অনেক বেশি ধনী। তাই হয়তো মনের মধ্যে এত অহংকার।
নীলা আমাকে বল্ল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি আমার বাবা মাকে জানালাম। তারা আমাকে বল্ল "আমরা তো চাই নীলার সাথেই তোকে বিয়ে দিতে"। "তুই নীলাকে ভালোবেসে থাকলে যা, নিয়ে আয় ওকে"।
আমি গেলাম নীলাদের বাসায়। নীলার বাবা আমাকে অনেক অপমান করল।
- কেন এসেছ?
- নীলাকে নিতে।
- নীলা যাবেনা। আর তুমি ওকে নিয়ে যাবার কে?
- আমি ওর হবু জামাই। আর ও কার সাথে যাবে ,না যাবে সেটা ওই বলবে।
আমি নীলাকে ডাক দিলাম। নীলা আমার ডাক শুনে দৌড়ে বাইরে এল। আমি কাছে গেলাম। দেখি ও কাঁদছে। আমি ওকে কাঁদছে কেন জিজ্ঞেস করে চোখ মুছে দিচ্ছিলাম এমন সময় নীলার বাবার লোকেরা আমাকে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেল। সবাই মিলে আমাকে মারতে থাকলো, নীলার বাবা আমার কাছে এল এবং চাকু দিয়ে পিছন থেকে আমার পিঠে আঘাত করলো। আমি মাটিতে পরে গেলাম। চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। মুখ দিয়ে গাড় লাল রক্ত বেরিয়ে এসেছে আমার। দেখতে পেলাম নীলাকে তারা টেনে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল।
আমি গভীর ঘুমের ঘোরে চলে গেলাম। দেখলাম লাল শাড়ি পরে কে যেন বসে আছে। কাছে গেলাম।
- বৃষ্টি! কেমন আছ?
- তোমাকে ছাড়া আমি যে ভাল নেই।
কত দিন পর দেখা হলো তাই মন ভরে তার সাথে কথা বলে নিলাম।
বৃষ্টি! হ্যা। বৃষ্টি আমার বউ। যাকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতাম।
তখন কলেজে সবে উঠেছি। প্রথমদিনই বৃষ্টির সাথে দেখা। সে আমার ক্লাসমেট। কতযে সুন্দর লাগছিল সেদিন তাকে। প্রথম দেখায় তার প্রেমে পরে গেলাম। পরেরদিন প্রপোজ করলাম। কিছুদিন ঘুরালো তারপর রাজি হয়ে গেল। সেইথেকে দুইটা বছর তার সাথে প্রেম করেছি। কতযে স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমি তাকে অনেক বলেছি চল বিয়ে করি, বিয়ে করি। সে শুধু বলেছে এখন না পরে। শেষে পরীক্ষার পর আমরা দুজন বিয়ে করলাম।
আমি বৃষ্টিকে নিয়ে আমার বাসায় গেলাম কিন্তু আমার বাবা মা বৃষ্টিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল। কারন বৃষ্টিরা গরীব। তার বাবা সামান্য একটা বেসরকারি অফিসের কর্মচারি। বাবা মা আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিলেন না। আমাকে বল্লেন যদি এই মেয়েকে ছাড়তে পারি তবেই আমাকে তারা গ্রহন করবে।
আমি সেদিন বৃষ্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে। আমার নেই কোন চাকরি, নেই কোন টাকা। এক বন্ধুর মেসে রাতটা কাটালাম। পরেরদিন বৃষ্টিকে তার বাসায় দিয়ে বলে এলাম কিছুদিন পর এসে নিয়ে যাব।
একটা ছোটখাটো কাজ পেলাম। প্রতিদিন কিছু কিছু টাকা করে বৃষ্টিকে দিতে থাকলাম। কিন্তু তাকে আমাদের নিজের একটা ঘর দেবার সামর্থ্য আমার হয়ে উঠল না। আমি এক বন্ধুর সাথে মেসে থাকতে লাগলাম আর বৃিষ্ট তার বাবা মার সাথে।
সারাজীবন বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি তাই এই সময়টা আমার কাছে অনেক কষ্টের মনে হচ্ছিল। তবু বৃষ্টির জন্য আমি সব করতে রাজি।
ঐদিকে বৃষ্টিকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু আমি তা জানতে পারিনি।
পাড়ার মানুষ কত কথা বলে। বিয়ে হয়ে গেছে, মেয়ে এখনো বাপের বাড়ি কেন.... আরো নানা কিছু তাকে মুখ বুঝে শুনতে হয়। তার মা বাবাও কটু কথা বলে। অলক্ষুনে। মরে যাস না কেন। তাদের না জানিয়ে বিয়ে করল কেন। এখন আবার তাদের ঘাড়ে এসে পরেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবকিছু যে আমার বৃষ্টি মুখ বুঝে সহ্য করছে আমি তা বুঝতেও পারিনি।
একদিন আমি কাজে ছিলাম। আমার কাছে ফোন আসলো। বল্ল তারাতারি বৃষ্টিদের বাসায় যেতে, বৃষ্টির কি যেন হয়েছে। আমি যেতে চাইলাম কিন্তু এমন কাজ করতাম যে মালিক ছাড়তে রাজি নয়। অনেক দুশ্চিন্তার মাঝে সারাদিন কাজ করলাম।
সন্ধ্যায় বৃষ্টিদের বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার বৃষ্টি আর নেই। সেই কষ্টগুলো সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আমার তখন মনে হচ্ছিল সবশেষ হয়ে গেছে। আমি আর কার জন্য বেচে থাকব।
তারপর তিনমাসের মত আমার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। বাবা মা বৃষ্টির খবর শুনেছে। তারা এসে আমাকে নিয়ে গেছে। তিনমাস পর আমি সুস্থ হলাম। তবে আগের মত আর ছিলাম না আমি। ক্লাবে যেতে থাকলাম। ড্রিংকস, নেশা করতে থাকলাম।
সেই সময়ে নীলার সাথে পরিচয় হয়। কিছুদিনের মধ্যে সে আমাকে ভালোবেসে ফেলে এবং আমাকে এসব থেকে ফিরিয়ে নিতে থাকে। একসময় আমি আগের জীবনে ফিরে এলাম। নীলাকেও আমার ভাল লাগতে থাকে। আমার বাসায় প্রায়ই নীলাকে নিয়ে যেতাম। নীলাকে আমার বাবা মাও অনেক পছন্দ করতো। এভাবেই নীলার সাথে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। বাবা মা নীলার সাথে আমার বিয়ে দিতে চায়। তারা নীলাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। কিন্তু নীলার বাবা মা রাজি হয়নি। বাবা মাকে যা তা বলে ফিরিয়ে দেয় তারা। বাসায় এসে বাবা আমাকে বলে যেভাবেই হোক নীলাকেই আমাদের বাড়ির বউ করতে হবে।
স্মৃতিগুলো খুব স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, হঠাৎ জ্ঞান ফিরল আমার। দেখলাম আমি হাসপাতালে। সকালের রোদ জানালা দিয়ে উকি দিচ্ছে। পাশেই বাবা মা বসে আছেন। আমার অবস্থা একটু খারাপ দেখে তারা কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। আমি উঠতে চাইলাম ডাক্তার আমাকে আবার শুইয়ে দিল। কিন্তু আজ যে আমি কোন বাধা মানব না, সোজা উঠে দৌড়ে হাসপাতালের বাইরে এসে সিএনজি নিলাম। বাসায় এসে আমার ব্যাগে দুইটা কাপড় ভরলাম আর মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম।
বাইরে........ অনেক সুন্দর একটা সকাল। অনেক লম্বা একটা রাস্তা সামনেই। চারপাশ গাছগাছালিতে ভরা। পাখি ডাকছে। আমি একা একা হেটে চলেছি কাধে ব্যাগ নিয়ে। মনে মনে ভাবছি, শুধু এদের এই ধনী-গরীব বৈষম্যের কারনে কত ভালোবাসার মৃত্যু ঘটে, আমার বৃষ্টির মত কত বৃষ্টি এভাবে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়। আজ আমরা নীলাদের থেকে সামান্য গরীব বলে নীলার পরিবার আমাদের মেনে নেয়নি ঠিক একইভাবে বৃষ্টিরা আমাদের থেকে গরীব বলে আমার পরিবারও তাকে মেনে নেয়নি। হঠাৎই মনে পড়ল নীলার কাছেতো বিদায় নেয়া হয়নি। কোন দিক খুজে না পেয়ে ভাবনাগুলো বিলীন হয়ে যেতে চায়। পথে আর কেউই নেই। আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। শুধু হাটছি আর চিন্তা করছি সামনের এই লম্বা পথটার গন্তব্য কোথায়।
আলোচিত ব্লগ
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।
এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন