somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীতে শিশুর পরিচর্যা

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতে সকলেই কাবু হয়, তবে বেশী ভুক্তভোগী হয় শিশু ও বৃদ্ধরা। এ সময় শিশুরা ডায়রিয়া, সর্দি কাশি, বংকোলাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, র‌্যাস (শরীরে লাল দানা / ফুসকরী) যুক্ত অসুখ বিশেষত-হাম,চিকেনপক্স,ম্যানিনজাইটিসে বেশী ভোগে। মামস্ও হতে দেখা যায় । চোখ উঠার অসুখেও তারা ভোগতে পারে ।

সাধারন পরিচর্যা :
এই সময় নবজাতক শিশু,বিশেষত যাদের বয়স দুইমাসের কম এবং যারা কম ওজন নিয়ে অথবা সময়ের আগে জন্ম নিয়েছে তাদেরকে শীত থেকে রার বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বাড়তি কম্বল।আটসাট করে পেঁচিয়ে রাখার পরিবর্তে লেপ কম্বল দিয়ে ঢিলে ঢালা করে জড়ানো উত্তম, এতে ফাঁক ফোকরে গরম বাতাস আটকে থেকে শিশুকে গরম রাখতে সাহায্য করে । শরীরে তেল মালিশ ও মাথায় তেল দেয়ার উপকারিতার বদলে অপকারিতা বেশী। শীতে তেল, লোশন, ভেসিলিন দেয়ার প্রয়োজন হবে তখনি যখন চামড়া শুকনো ও খসখসে থাকে ।এ ক্ষেত্রে ভেসিলিন কিংবা অলিভ অয়েলই উত্তম।

চরম অপুষ্টির শিকার শিশুরা শীতের রাতের ধকল একদম সইতে পারে না, তাই এ সময় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।এ জন্য গরম রাখার পাশাপাশি রাতের বেলাতেও তাদের কয়েকবার খাওয়াতে হবে। কারণ, প্রধানত খাদ্যের বিপাকের ফলে তৈরি শক্তিই আমাদের দেহের ভিতরের তাপামাত্রা বজায় রাখে। দুগ্ধপায়ী সন্তানের মা ঘুমন্ত অবস্থায় তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন (বুকের দুধ ছাড়া অন্য খাবার ঘুমের মধ্যে দেওয়া বিপদজনক), এ অভ্যাস গড়ে তোলা সব মায়ের জন্যই জরুরী। রাতে শিশুকে বুকের দুধ দিলে মায়ের দুধ কমে যাওয়ার সমস্যাও দূর হয়। কারন এ সময় মায়ের দেহ থেকে এক রকমের হরমোন নিসৃত হয়ে মাতৃ দুগ্ধ তৈরিতে সহায়তা করে। ছোট শিশুদেরকে মা তার উদাম গতরে নিয়ে ঢেকে রাখলে শিশুর উত্তাপ কমে যাওয়ার সমস্যা চমৎকারভাবে সমাধা হয়। একে বলা হয় 'ক্যাংগারু বেবি কেয়ার '। নবজাতক শিশুর প্রথম গোসল তিনদিন বয়সে এবং ছোট ওজনের ক্ষেত্রে বিশেষত শীত কালে পাঁচ সাতদিন দেরিতে কিংবা শিশু ষ্টেবল হলে তবেই দিতে হবে। এবং পরবর্তিতে দুই তিন দিন অন্তর অন্তর গোসল দিতে হবে। গোসলের সময় শিশুর যেন ঠান্ডা না লাগে তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গোসল করাতে হবে ঘরের মধ্যে, শরীরের উষ্ণতার সমপর্য্যায়ের পানিতে, গামলায় বসিয়ে। প্রথমে শরীরে ও শেষে মাথায় পানি দিতে হবে। মাথায়ও গরম পানিই দিতে হবে, ঠান্ডা পানি নয় ,শরীরে গরম ও মাথায় ঠান্ডা পানি দেওয়ার প্রচলিত রেওয়াজ ভাল নয় বরং এতে ঠান্ডা লেগে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।গোসলের পানিতে ডেটল-সেভলন দেওয়ার কোন দরকার নাই।গোসলের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে উদাম বুকে নিয়ে শুকিয়ে কাপড়ে জড়াতে হবে। যে সব শিশুরা বাড়তি খাবার শুরু করেছে তাদের প্রচুর শাকসবজি, তৈল ও আমিষ জাতীয় খাবার দিতে হবে। তবে জোড় করে শিশুদের খাওয়ানো বা পিড়াপিড়ি করে খাওয়ানো একদম উচিত নয়।
শীতে শিশুদের পারত পক্ষে বাইরের ঠান্ডা বাতাসে বেড়াতে নেওয়া ঠিক নয়। ভোরে স্কুলে যাওয়ার সময় মাথা, কান,গলা,বুক সর্বোপরি সারা শরীর গরম কাপড়ে মোড়ানো উচিত ।

পাতলা পায়খানা বমি জ্বর :
এ সময় সবচে বেশী হয় ডায়রিয়া। বিশেষত ‘রোটা ভাইরাস’ জনিত ডায়রিয়া। এ ডায়রিয়ার জীবানু শীতকালে দেহের বাইরের পরিবেশে এক মাসের মত জীবিত থাকতে পারে। আক্রান্ত শিশুর মলে ও তার ব্যবহৃত পাত্র ও খেলনায় এ ভাইরাস লেগে থাকে।এটা খুবই ছোঁয়াছে ।পানি,খাদ্য ও আঙ্গুলের মাধ্যমে তা সহজেই একজন থেকে আরেক জনে ছড়িয়ে যায়। অসুখ ভাল হবার পরও রোগী অন্তত দশ দিন রোগ ছড়ায়।এ অসুখ সেলফ্ লিমিটিং অর্থাৎ এমনিতেই সেরে যায় । তিন থেকে নয় দিন এ অসুখ স্থায়ী হতে পারে।
এ ডায়রিয়ায় এন্টিবায়টিক কার্যকর নয়। বমি বন্ধের অসুধও ফলদায়ক নয়। জিংক ও খাবার সেলাইন দিয়েই এর উত্তম চিকিৎসা করা যায়, অতিরিক্ত বমি ও পাতলা পায়খানার জন্য যেন পানি ও লবণ ঘাটতি না হয় তা ই লণীয়। শিশু নেতিয়ে গেলে, চোখ ডেবে গেলে, পেটের চামড়া ঢিল মনে হলে, বারবার হাপুস হাপুস করে স্যালাইন বা পানি খেতে চাইলে অবশ্যই সিরার স্যালাইন দিতে হবে , নতুবা জীবন বিপন্ন হতে পারে । বমি হবার পনের বিশ মিনিটের মধ্যে স্যালাইন বা খাবার দিলে আবার বমি হয়ে যেতে পারে। তাই এ সময়টা বিরতি দিয়ে ধীরে ধীরে চামচে কেটে স্যালাইন/পানি দিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় স্যালাইন যে খাওয়াতেই হবে তা নয়। যে কোন পানীয় যেমন ডাবের পানি, চিরার পানি, ডালের পানি, সাধারণ পানি দিয়েই এ সময় পানির ঘাটতি পূরণ করা যাবে।

শ্বাস-কাশের অসুখ :
বংকোলাইটিস হলে বুকে শব্দ (বাঁশির মত) ও শ্বাসকষ্ট হয়। এ সময় সালবুটামল দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। বেশী শ্বাসকষ্ট হলে নেবুলাইজেন লাগে।
এ সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুর এজমা বাড়তে পারে। ব্রংকলাইটিস এর মতই এর চিকিৎসা। তবে যেহেতু এটি দীর্ঘস্থায়ী ও বারবার হবার মত অসুখ তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এলার্জির কারণ ঘটায় এমন পরিবেশ ও খাদ্য (কদাচিৎ) থেকে শিশুকে বাঁচাতে হবে। ধুয়া ,ধুলা, মশার কয়েল, স্প্রে, ধুমপান পরিত্যাজ্য। পোষা কুকুর,বিড়াল ইত্যাদির লোম, কীট পতংগ বিশেষত তেলাপোকা ইত্যাদি এলার্জির কারণ । মাইট নামের অতি ক্ষুদ্র পোকা যা কার্পেট, মেট ,বিছানা-বালিশ, সোফা, লোমঅলা খেলনায় থাকে তা এলার্জির অন্যতম কারণ। ফুলের রেনু ও কচি ঘাসের ডগা থেকেও সংবেদনশীলতার সৃষ্টি হয়। স্যতস্যতে ঘর ও পোশাক-বিছানা পত্র শিশুর জন্য অনুপযোগী।
সাধারণ সর্দি-কাশিতে তথাকথিত কাশের সিরাপের কোন নিট্ উপকারিতা প্রমাণিত নয়। ঘরের ঐতিয্যময় চিকিৎসা যেমন মধু, গরম পানি, লিকার চা, তুলশির রস ইত্যাদি উপকারী। নাক বন্ধ থাকলে অবশ্যই তা খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্যালাইন পানিই এ জন্য উত্তম। মনে রাখতে হবে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়ার কৌশল রপ্ত করতে পারে না। তাই নাক বন্ধ থাকলে তাদের অসস্থির সীমা থাকে না। তারা তখন কাঁদতে থাকে, দুধ খেতে পারে না এবং সর্দি ফুসফুসের নলে চলে যায়। এ সময় জ্বর হলে পেরাসিটামল দিতে হবে। বার বার পানি ও খাদ্য দিতে চেষ্টা করতে হবে। শিশু নীল, নিস্তেজ বা খিঁচুনীতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট নিতে হবে , শিশুর ঘন ঘন শ্বাস ফেলা ও নিশ্বাসের সময় বুকের তলদেশে পেট ডেবে যাবার লণ দেখা দিলে ভেবে নিতে হবে যে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে ।

সকল সময়ের জন্য দুটি পরামর্শ:
দুটি পরামর্শ মেনে চললে শুধু শিশুরাই নয় সবাই এবং শুধু শীত বলে কথা না সবসময়েই আমরা আনুমানিক শতকরা আশি ভাগ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো। এতে চিকিৎসার কারনে দেশের বিরাট অংকের অর্থ অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
এর প্রথমটি হল - আমরা যখনই হাঁচি-কাশি দিব তখন অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করবো। রুমাল না থাকলে কনুই ভাঁজ করে হলেও তা ছড়ানো রোধ করবো ।মনে রাখতে হবে এ কাজে হাতের তালু ব্যবহার করে সেই হাত দিয়ে যা কিছু ধরি না কেন সবখানেই রোগ ছড়াবে । শিশুদেরকে বাসায় এবং স্কুলে এ অভ্যাস গড়তে এবং যেখানে সেখানে কফ-থুতু না ফেলতে শিখানো উচিত ।
দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে- খাবার পানি ও খাবার বিশুদ্ধ হতে হবে। মাছি ধূলাবালি থেকে খাবারকে ঢেকে রা করতে হবে।খাবার আগে ও পায়খানা থেকে এসে হাত অবশ্যই সাবান বা ছাই দিয়ে ধুতে হবে। দিনে অনন্ত তিন চারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস মানুষকে অনেক রোগ থেকে রা করতে পারে। ওজুর এটি একটি বাহ্যিক উপকারিতা তা এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত। হাত ধোয়ার একটা পদ্ধতি আছে। হাতের সামনে পিছনে এমনকি আংগুলের প্রতি অংশ ও ফাঁকে সাবানের ফেনা মেখে অন্তত বিশ সেকেন্ড অপো করে তার পর হাত ধুলে এ থেকে সম্পূর্ণ উপকার আমরা পাব।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×