somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসা শিক্ষা সমাচার। শেষ পর্ব

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাদ্রাসা শিক্ষা কতটুকু নৈতিক শিক্ষা ধারন করে?
মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে প্রধান যে যুক্তিটা দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে মাদ্রাসা ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা দেয়। সমাজের সর্বস্তরে বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে চলছে মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে তা দূর করার সম্ভাবনার কথাও বলা হয়ে থাকে।
বাস্তবে এই দাবির কোন প্রাসঙ্গিকতা কিংবা যুক্তি নেই। কারন বাস্তবে যে পুঁজিবাদী অবক্ষয়ী আর্থসামাজিক ব্যবস্থাই যে নীতি, নৈতিকতা, মুল্যবোধসমুহকে সংহার করে চলছে, এ ঐতিহাসিক ও বাস্তব সত্যকে উপেক্ষা করে যতই ধর্মশিক্ষার কথা বলা হোক না কেন, তা কার্যত নীতিহীনতার পথেই নিয়ে যেতে বাধ্য। সেই জন্যই গত ৪২ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে মসজিদ মাদ্রাসা শত গুন বাড়লেও অন্যায় অপরাধ এক চুল ও কমে নি, বরং হাজার গুন বেরেছে। বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা কি পরিমানে দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত তা বিভিন্ন সময় পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হল শুধু মাত্র ধর্ম শিক্ষার জন্যই কি এত মাদ্রাসা? মাদ্রাসা ছাড়া ধর্ম শিক্ষা দেওয়া সম্বব কিনা? যে কোন জ্ঞানপিপাসু মানুষের জন্যই ধর্মশিক্ষা তার ইতিহাস চেতনার জন্য প্রয়োজন। ইতিহাসের কোন কালপর্বে কোন ধর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল , ধর্মীও সংস্কার আন্দোলনগুলো সমাজবিকাশের ক্ষেত্রে কখন কি ভূমিকা রেখেছিল এবং তার পরিনতি কি, এ সকল বিসয়ে ইতিহাস ও বিজ্ঞানসম্মত ধারনা অর্জন করাই হলো ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা। জে.ডি বার্নাল লিখেছিলেন ''সভ্যতার আদি পর্বে পৃথিবীর প্রত্যেকটি বড়ো বড়ো ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল বিক্ষোভমথিত যুগে। একেবারে মূলগত এবং জরুরী সামাজিক সমস্যার সমাধানকল্পেই প্রতিটি ধর্মের উদ্ভব। কনফুসিয়াস, লাওৎসে, বুদ্ধ, মহাবীর, জরথ্রুষ্ট, হিব্রু, ঋষিরা, যিশু খৃষ্ট, মুহাম্মদ তারা প্রত্যেকেই প্রবল অর্থনৈতিক ও সামাজিক রুপান্তরের পর্বে তৎপর ছিলেন। নিজ নিজ যুগের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে এরা প্রত্যেকেই তিব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন। এরা প্রত্যেকেই মানুষের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্বন্ধে নতুন ছক তৈরি করেছিলেন। শুধু তাই নয় সংস্কারকরা প্রায় দাবি করতেন যে তারা অতীতের অপেক্ষাকৃত ন্যায়পরায়ন ও সুস্থিত সমাজ সম্পর্কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন মাত্র। কিন্তু সমাজজীবনে তো তখনো পিছু হাঁটা যায় না; তাই জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, বড় বড় ধর্ম সংস্কারকরা প্রত্যেকেই নতুন নতুন সমাজ সম্পর্কের উদ্ভাবক হয়ে উঠেছিলেন। কাজেই মিশর, ব্যাবিলোনিয়া আর গ্রীসের প্রকৃতি-বিসয়ক দার্শনিকরা যেমন ভৌত বিজ্ঞানের বনেদ তৈরি করে দিয়েছেন । এরাও তেমনি সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করে দেন।''
একজন মানুষ; তিনি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান যেই ধর্মের লোকই হোক না কেন, তিনি সকল ধর্মের উত্থান, বিষয়বস্তু, মুল্যবোধ সম্বলিত সামাজিক আন্দোলন-সংস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা এবং ধর্মসাধক মহান মানুষদের চরিত্র, জীবন সাধনা এবং তাদের আবির্ভাবের আর্থ-সামাজিক পটভূমি ইত্যাদি বিষয় জানা দরকার। নইলে ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায় অজানা থাকবে। সমাজতত্ত্বের জ্ঞানের অসুম্পুর্নতা থেকে যাবে। এবং এই জ্ঞান আধুনিক সমাজ কে বিশ্লেষণ করে নতুন কিছু পাওয়া যাবে।
একটা নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের অভ্যন্তরে সমাজ বিকাশের যে নিয়ম-নীতি কার্যকর থাকে, তার সাথে সংগতিপুর্ন জীবনাদর্শ ও জীবন সংগ্রামের মধ্যেই নৈতিকতা ফুটে উঠে। নৈতিকতার কোন শাশ্বত রুপ নেই। একটা সময়ে একটা আদর্শ যে নইতিকতাবোধ সৃষ্টি করেছিল, তার কার্যকারিতা হারাবার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট নৈতিকতার মানও নেমে যেতে বাধ্য। এ সত্য অনুধাবন না করলে নৈতিকতার দোহাই দিয়েই আমরা অনৈতিকতার পঙ্কে ডুবতে থাকবে।
অধ্যাপক আলী আনোয়ার লিখেছেন, "মাদ্রাসা কমিশনসমূহ যখন সরল বিশ্বাসে ঘোষণা করেন যে মাদ্রাসাসমূহের লক্ষ্য হল যথাযথ মুসলমান তৈরি করা তখন ভাবতে অবাক লাগে যে তাঁরা ভুলে যান কি করে যে গত ১০০ বছর ধরে এদেশে যে সব মুসলমান বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী চিন্তানায়কে আমরা বরেণ্য বলে মনে করে এসেছি তাঁরা সবাই 'ধর্মহীন' পাশ্চাত্য শিক্ষার ফসল? মীর মোশাররফ হোসেন, আমির আলী, মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, এমদাদ আলী, আব্দুল হামিদ খান, ইয়সুফ জাই, ফজলুল করিম, আকরাম খান, ইব্রাহীম খান, আবুল হাশেম, এনামুল হক, কাজী মোতাহের হোসেন, মুনসুর উদ্দিন, ডঃ শহীদুল্লাহ, আব্দুল হক ফরিদী এরা-এর বিক্ষিপ্ত কটি উদাহরণ মাত্র।"
এ বিষয় গুলো বুজতে না পারলে ধর্মপান মানুষেরাও আজ ধর্মব্যবসায়ী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির স্বরূপ বুজতে পারবে না। কুসংস্কারের বেরাজাল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মনের ও সামাজিক পরিবেশের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারবে না। সে জন্যই আজ উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মতই ধর্মশিক্ষা বিষয়টিকে দেখতে হবে। শিক্ষানীতিতে তাই একই ধারার আধুনিক শিক্ষার উচ্চস্তরে ধর্মশিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
মাদ্রাসা শিক্ষার দুর্বলতা, অকার্যকারিতা নিয়ে যখনই কোন আলোচনা হয় তখন মাদ্রাসা শিক্ষকদের মধ্যে চাকুরি হারানোর ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে বেকার করে রেখেছে। চাকুরি চলে গেলে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হবে। ফলে 'মাদ্রাসা' শিক্ষার প্রয়োজন নেই- এ কথা বললে চাকুরি হারানোর আতংক তাদেরকে ব্যাকুল করে তোলে। 'মাদ্রাসা বিপন্ন'- এ জিগির তুলে কায়িমী সার্থবাদী মহল যে উম্মাদনা সৃষ্টি করে তা মূলত শাসকগোষ্ঠীর পরিকল্পনাকেই বাস্তবায়নে সহায়তা করে। মাদ্রাসা শিক্ষকরাও এর শিকারে পরিণত হন। দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘোলাটে আবহাওয়ায় দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তাদের সার্থ উদ্ধার করে নেয়। মাদ্রাসা-ছাত্রদেরও একটা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করে।
ফলে আজ দেশের উন্নতির সার্থে, সত্যিকারের ধর্মীও জ্ঞান আরহনের প্রয়োজনে, গরিবের প্রতি ধনিকশ্রেণীর এই নির্মম ধর্মীও প্রতারণা ও পরিহাস থেকে মুক্তির জন্য যুক্তির পথে আসতে হবে। সাহসের সাথে সত্য কথা বলতে হবে। একই পদ্ধতির শিক্ষা চালু করতে হবে এর অর্থ এই নয় মাদ্রাসা শিক্ষকদের কর্মচ্যুত যুক্তিসঙ্গত। মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং বাকিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×