somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৩

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-২ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১ Click This Link

গেরামের মাদরাছাতেই আমার পড়ালেখার মোটামুটি ধরতে গ্যালে পুরাডাই । মেঝ ভাই ঢাকার যাত্রাবাড়ি মাদরাছায় পড়েছিলেন বছর তিনেক । গেরামে তার একটা আলাদা কদর আছে । এখন ঢাকায় মামার কাপড়ের দোকানে ব্লাউজ জাইঙ্গা বেচেন । গেরামে আইলে তার দিকে লুকজনের নজরই আলাদা । আব্বা নিজে সারাবছর তাবলীগ কইরা বেড়াইলেও মেঝ ভাইর কাছ থেকে মাছলা মাসায়েলের জ্ঞান নেন । আপনে কৈরা ডাকেন তারে । আর আমি হাটহাজারি থাইকা পাঁচ পাঁচটা মাস পরে আইলেও গেমারের লুকজনের মুখের ভাবে তেমন কুনো চেইন্জ পাই না । শালারা সম্মান করতে শিখলো না আলেম ওলামাগো । আব্বার চেষ্টাচরিত্রে লুকজন নামাযে যায় মোটামুটি দুই তিনবার । কিন্তু আলেম ওলামার মর্যাদা এখনো ভালোমত দিতে শিখলো না ।

শুধু দুইজন মাইনষের কাছে আলাদা । আম্মাজান বার সন্তানের জননী কিন্তু তারপরও আলাদা কৈরা সবার কতা মনে রাখেন । আমি আসলে কষ্টে পালা হাসটা জবাই করে দেন । সবার আগে আমারে খাইতে বসান । আমি উঠলে তারপর বাকি সবাইরে । মেঝ ভাই আসলেও এর উল্টা হয় না । তখন আমরা দুইজন । বড়মেঝ ভাই , আব্বার কাছ থেকে চেয়ে নেয়া আঁচলের গিঠে বাইন্ধা রাখা ট্যাকা হাতে গুজে দেন মাদরাছায় ফিরে যাবার সময় । নিজের জীবন নিয়া যাই করি আম্মাজানকে কষ্ট দিতে পারবো না আমি কিছুতেই ।

ছুডকালের দুস্ত খুরশিদ এর চাচাত বোন কুলসুমা । কালো মেয়েটার মনে এত দরদ আর কফালে এত দুঃখ দুইটা একসাথে কেন দিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমি বুঝি না । এত দরদ নিয়া কালো মেয়েটাতো জীবনে কেবল কষ্টই পাইব । প্রতিবার তারে বলি কষ্ট না পাওয়ার চেষ্টা করতে । আমার উপর দরদ কমাইতে । কিন্তু কিসে কি , দিনদিন তার মায়াময় চোখ খালি আরো মায়াময় হৈতাছে ।

ভর দুপুরই একমাত্র সময় যখন কুলসুমার সাথে কথা বলা যায় গেরামের সবার চোখ এড়াইয়া । খুরশিদ দুই গেরাম পরের পায়েরখোলা মাদরাছার বোর্ডিং এ থাকে । শনিবারে ও ঐখানেই থাকবে, এটা ভালোমত জাইনাই আমি ভর দুপুরে ওরে খুজতে ওদের বাড়ি যাই । কুলসুমার ভিতরে মনে হয় কোন গায়েবি আয়না আছে । গিয়া দেখি কুলসুমা খুরশিদ এর ছুড বৈনটার চুল আঁচড়াইয়া দিতাছে । পিচ্চিটাও জবর ট্যটন । আমারে দেইখাই কয় সুনো নিয়া আসি । বলে চলে যায় । আসবে না আর ২ ঘন্টাতেও ।

দরজা খোলা রেখে , আমি চৌকিতে কুলসুমা দরজার চৌকাঠে বসে অদ্ভুত মায়াময় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । তাকে বলি আমার মনের যন্ত্রণা অনুশোচনার কথা । খুরশিদ এর বুড়া মা কানে শুনেননা । আর শুনলেও বেশি কিছু কথা আমরা বলি না । দুজনের মাঝে সব কথা বলতে হয় না । মেয়েটা বুঝে বেশি, ভালোবাসে বেশি । যত বলি শুনে না । ভালোবাসে আর কাঁদে । বলে মাগরেবের আধঘন্টাখানেক পরে ওদের বাড়ির পিছনের জংলাতে আসতে । ধমক দিয়ে চুপ করাইয়া দিই ওরে । জগৎ উল্টা হৈয়া গেলেও ওর গায়ে কলংকের কালি লাগতে পারে তার হাজারের মইধ্যে একভাগ সম্ভাবনা আছে এমন কোনো কাজ আমি করতে পারব না । দরকার হৈলে শইল্যের বেয়াড়া অঙ্গটারে কাইট্যা খাসি হৈয়া যামু ।

তয় খালেদার কথা আলাদা । খালেদার কথা আবার কুলসুমাকে বলা যায় না । খালেদা মাগিটার দুধ দিনদিন তালের মত বড় হৈতাছে । চলনবলনে তেমন একটা খেয়াল নাই । কিন্তু ধুরন্ধর মারাত্নক । দুধে হাত দিতে দিব, আন্জা কইরা ধরতে দিব । এর বেশি কিছু চাইলেই মারব দৌড় । আজ ওর কাছে যাবার মত মনের অবস্থা নাই । এত অনুতাপের ভার পরপর দুইদিনে নিতে পারমু না ।

আমার জীবুনটা খাঁখাঁই থাকে । যারে নিয়া থাকতে চাই দিনভর, লুকলজ্জা সমাজের কারণে তার সাথে একান্তে দুইখান কতাও কইতে পারি না । উপরে চাইর চাইরডা ভাই । বিয়া করনের কতা মুখেও আনা যাইব না । হুজুর খালি কয় আল্লার রশিতে দুইন্যায়ও শান্তি, আখেরাতেও মুক্তি । এইডা দুইন্যাতে শান্তি ? । মাঝে মইধ্যে টিভিতে দেখি ইহুদি নাছারাগো সুন্দর সুন্দর সাদা মাইয়ারা বত্রিশটা দাঁতা বাইর কৈরা স্যান্ডু গেন্জি পইরা রাস্তা দিয়া হাঁটতাছে । পাশের পুলাগুলা একেকটা হিরুর মত । আখেরাতে সত্তইরডা হুর দিব বালা কথা দুইন্যাতে কি ঐরকম একটা মাইয়াও দেউন যাইত না আমাগোরে । অত কিছু ও তো চাইনা । কুলসুমারেও কি দেওন যাইত না । কুলসুমার বয়স বাড়তাছে । খালি কালা বৈলা ওর বিয়ায় দেরী হৈতাছে । আর এক বছরের মইধ্যে তো যেকোনমতেই হৈয়া যাইব । আমি মেহমানদারী করমু । বরযাত্রী খাওয়ামু । কানতে কানতে কুলসুমা যাইব । সবাই ভাববো বাপের বাড়ি ছাইড়া যাইতাছে বৈলা কানতাছে । খালি ও আর আমি জানমু কেন এত কান্দে মাইয়া ।

হাটহাজারীতে আমার পরের তিনটি মাস খুব তাড়াতাড়ি কাইটা যায় । মাত্র একবছরের বড় মাদরাছা জীবন অনেক ঘটনা । অনেক স্মৃতি । একসময় মনে হয় খুব কষ্টের আবার আরেকসময় মনে হয় অনেক সুখের । রাতের বাইরে যাবার দুঃসাহসিক সময়গুলার যে থিরিল, সেইডা আরে কিছুতে পাই নাই জীবনে । বাড়ির পিছনে খালেদার দুধে হাত দেয়ার সময়েও না ।

মোন্তাজির এর সাথে সহজ হতে তিন চারদিন লাগে । এরপর আমরা আলাদা বিছানাতেই ঘুমাতাম । সপ্তাহখানেক । তারপর আবার আগের মত । বাজারের আন্ধার ঘরে যাওনের মত সাহস যেহেতু জোগাইতে পারি নাই । বুলু দেইখা আসার দিন একই ঘটনে পরেও ঘটছে । তয় নো টক টাইম এত দীর্ঘ হয় নাই কখনো পরথম বারের মত । মনের অনুতাপের ঝড়ের বেগও কমে আসছিল । একবার ফিলিস্তিন থাইকা এক জামাত আইলো । মোহতারাম ছাব সেই জামাত নিয়া রুমে রুমে ঘুরলেন গভীর রাতে । কোরান ছোঁয়াইয়া শপথ নিলেন কাউরে যাতে এই ঘটনা না বলি । কয়েকজন বিদেশে জামাতে যাবার কথা বলে চলে গেল দুই সপ্তাহের মধ্যে । তাদেরকে আগে আগে গ্র্যাজুয়েট পাগড়ি দিয়ে দেয়া হল অল্প কয়েকজন মিলে । মোন্তাজির চলে গেল । অনেক বলে কয়ে ঠেকাইতে চাইছিলাম । বেচারার অনুশোচনার আগুন অনেক তীব্র । ওর চোখ দেইখা বুঝছিলাম , বাঁচার সাধ নাই । কুলসুমার মায়াময় চোখ জীবনে অন্তত আরেকবার দেখার সম্ভাবনা যদ্দিন আছে, আমি পারমু না ।

পাশ করে গেরামে ফিরা আইসা শুরু হৈল আমার কইলজা খুইলা ঝইরা পড়ার জন্য অপেক্ষা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৭
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১১



একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×