কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-২ Click This Link
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১ Click This Link
গেরামের মাদরাছাতেই আমার পড়ালেখার মোটামুটি ধরতে গ্যালে পুরাডাই । মেঝ ভাই ঢাকার যাত্রাবাড়ি মাদরাছায় পড়েছিলেন বছর তিনেক । গেরামে তার একটা আলাদা কদর আছে । এখন ঢাকায় মামার কাপড়ের দোকানে ব্লাউজ জাইঙ্গা বেচেন । গেরামে আইলে তার দিকে লুকজনের নজরই আলাদা । আব্বা নিজে সারাবছর তাবলীগ কইরা বেড়াইলেও মেঝ ভাইর কাছ থেকে মাছলা মাসায়েলের জ্ঞান নেন । আপনে কৈরা ডাকেন তারে । আর আমি হাটহাজারি থাইকা পাঁচ পাঁচটা মাস পরে আইলেও গেমারের লুকজনের মুখের ভাবে তেমন কুনো চেইন্জ পাই না । শালারা সম্মান করতে শিখলো না আলেম ওলামাগো । আব্বার চেষ্টাচরিত্রে লুকজন নামাযে যায় মোটামুটি দুই তিনবার । কিন্তু আলেম ওলামার মর্যাদা এখনো ভালোমত দিতে শিখলো না ।
শুধু দুইজন মাইনষের কাছে আলাদা । আম্মাজান বার সন্তানের জননী কিন্তু তারপরও আলাদা কৈরা সবার কতা মনে রাখেন । আমি আসলে কষ্টে পালা হাসটা জবাই করে দেন । সবার আগে আমারে খাইতে বসান । আমি উঠলে তারপর বাকি সবাইরে । মেঝ ভাই আসলেও এর উল্টা হয় না । তখন আমরা দুইজন । বড়মেঝ ভাই , আব্বার কাছ থেকে চেয়ে নেয়া আঁচলের গিঠে বাইন্ধা রাখা ট্যাকা হাতে গুজে দেন মাদরাছায় ফিরে যাবার সময় । নিজের জীবন নিয়া যাই করি আম্মাজানকে কষ্ট দিতে পারবো না আমি কিছুতেই ।
ছুডকালের দুস্ত খুরশিদ এর চাচাত বোন কুলসুমা । কালো মেয়েটার মনে এত দরদ আর কফালে এত দুঃখ দুইটা একসাথে কেন দিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমি বুঝি না । এত দরদ নিয়া কালো মেয়েটাতো জীবনে কেবল কষ্টই পাইব । প্রতিবার তারে বলি কষ্ট না পাওয়ার চেষ্টা করতে । আমার উপর দরদ কমাইতে । কিন্তু কিসে কি , দিনদিন তার মায়াময় চোখ খালি আরো মায়াময় হৈতাছে ।
ভর দুপুরই একমাত্র সময় যখন কুলসুমার সাথে কথা বলা যায় গেরামের সবার চোখ এড়াইয়া । খুরশিদ দুই গেরাম পরের পায়েরখোলা মাদরাছার বোর্ডিং এ থাকে । শনিবারে ও ঐখানেই থাকবে, এটা ভালোমত জাইনাই আমি ভর দুপুরে ওরে খুজতে ওদের বাড়ি যাই । কুলসুমার ভিতরে মনে হয় কোন গায়েবি আয়না আছে । গিয়া দেখি কুলসুমা খুরশিদ এর ছুড বৈনটার চুল আঁচড়াইয়া দিতাছে । পিচ্চিটাও জবর ট্যটন । আমারে দেইখাই কয় সুনো নিয়া আসি । বলে চলে যায় । আসবে না আর ২ ঘন্টাতেও ।
দরজা খোলা রেখে , আমি চৌকিতে কুলসুমা দরজার চৌকাঠে বসে অদ্ভুত মায়াময় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । তাকে বলি আমার মনের যন্ত্রণা অনুশোচনার কথা । খুরশিদ এর বুড়া মা কানে শুনেননা । আর শুনলেও বেশি কিছু কথা আমরা বলি না । দুজনের মাঝে সব কথা বলতে হয় না । মেয়েটা বুঝে বেশি, ভালোবাসে বেশি । যত বলি শুনে না । ভালোবাসে আর কাঁদে । বলে মাগরেবের আধঘন্টাখানেক পরে ওদের বাড়ির পিছনের জংলাতে আসতে । ধমক দিয়ে চুপ করাইয়া দিই ওরে । জগৎ উল্টা হৈয়া গেলেও ওর গায়ে কলংকের কালি লাগতে পারে তার হাজারের মইধ্যে একভাগ সম্ভাবনা আছে এমন কোনো কাজ আমি করতে পারব না । দরকার হৈলে শইল্যের বেয়াড়া অঙ্গটারে কাইট্যা খাসি হৈয়া যামু ।
তয় খালেদার কথা আলাদা । খালেদার কথা আবার কুলসুমাকে বলা যায় না । খালেদা মাগিটার দুধ দিনদিন তালের মত বড় হৈতাছে । চলনবলনে তেমন একটা খেয়াল নাই । কিন্তু ধুরন্ধর মারাত্নক । দুধে হাত দিতে দিব, আন্জা কইরা ধরতে দিব । এর বেশি কিছু চাইলেই মারব দৌড় । আজ ওর কাছে যাবার মত মনের অবস্থা নাই । এত অনুতাপের ভার পরপর দুইদিনে নিতে পারমু না ।
আমার জীবুনটা খাঁখাঁই থাকে । যারে নিয়া থাকতে চাই দিনভর, লুকলজ্জা সমাজের কারণে তার সাথে একান্তে দুইখান কতাও কইতে পারি না । উপরে চাইর চাইরডা ভাই । বিয়া করনের কতা মুখেও আনা যাইব না । হুজুর খালি কয় আল্লার রশিতে দুইন্যায়ও শান্তি, আখেরাতেও মুক্তি । এইডা দুইন্যাতে শান্তি ? । মাঝে মইধ্যে টিভিতে দেখি ইহুদি নাছারাগো সুন্দর সুন্দর সাদা মাইয়ারা বত্রিশটা দাঁতা বাইর কৈরা স্যান্ডু গেন্জি পইরা রাস্তা দিয়া হাঁটতাছে । পাশের পুলাগুলা একেকটা হিরুর মত । আখেরাতে সত্তইরডা হুর দিব বালা কথা দুইন্যাতে কি ঐরকম একটা মাইয়াও দেউন যাইত না আমাগোরে । অত কিছু ও তো চাইনা । কুলসুমারেও কি দেওন যাইত না । কুলসুমার বয়স বাড়তাছে । খালি কালা বৈলা ওর বিয়ায় দেরী হৈতাছে । আর এক বছরের মইধ্যে তো যেকোনমতেই হৈয়া যাইব । আমি মেহমানদারী করমু । বরযাত্রী খাওয়ামু । কানতে কানতে কুলসুমা যাইব । সবাই ভাববো বাপের বাড়ি ছাইড়া যাইতাছে বৈলা কানতাছে । খালি ও আর আমি জানমু কেন এত কান্দে মাইয়া ।
হাটহাজারীতে আমার পরের তিনটি মাস খুব তাড়াতাড়ি কাইটা যায় । মাত্র একবছরের বড় মাদরাছা জীবন অনেক ঘটনা । অনেক স্মৃতি । একসময় মনে হয় খুব কষ্টের আবার আরেকসময় মনে হয় অনেক সুখের । রাতের বাইরে যাবার দুঃসাহসিক সময়গুলার যে থিরিল, সেইডা আরে কিছুতে পাই নাই জীবনে । বাড়ির পিছনে খালেদার দুধে হাত দেয়ার সময়েও না ।
মোন্তাজির এর সাথে সহজ হতে তিন চারদিন লাগে । এরপর আমরা আলাদা বিছানাতেই ঘুমাতাম । সপ্তাহখানেক । তারপর আবার আগের মত । বাজারের আন্ধার ঘরে যাওনের মত সাহস যেহেতু জোগাইতে পারি নাই । বুলু দেইখা আসার দিন একই ঘটনে পরেও ঘটছে । তয় নো টক টাইম এত দীর্ঘ হয় নাই কখনো পরথম বারের মত । মনের অনুতাপের ঝড়ের বেগও কমে আসছিল । একবার ফিলিস্তিন থাইকা এক জামাত আইলো । মোহতারাম ছাব সেই জামাত নিয়া রুমে রুমে ঘুরলেন গভীর রাতে । কোরান ছোঁয়াইয়া শপথ নিলেন কাউরে যাতে এই ঘটনা না বলি । কয়েকজন বিদেশে জামাতে যাবার কথা বলে চলে গেল দুই সপ্তাহের মধ্যে । তাদেরকে আগে আগে গ্র্যাজুয়েট পাগড়ি দিয়ে দেয়া হল অল্প কয়েকজন মিলে । মোন্তাজির চলে গেল । অনেক বলে কয়ে ঠেকাইতে চাইছিলাম । বেচারার অনুশোচনার আগুন অনেক তীব্র । ওর চোখ দেইখা বুঝছিলাম , বাঁচার সাধ নাই । কুলসুমার মায়াময় চোখ জীবনে অন্তত আরেকবার দেখার সম্ভাবনা যদ্দিন আছে, আমি পারমু না ।
পাশ করে গেরামে ফিরা আইসা শুরু হৈল আমার কইলজা খুইলা ঝইরা পড়ার জন্য অপেক্ষা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


