somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মদিনার তিনটি ইহুদি গোত্রের বিতাড়ণ -এপোলোজেটিক এবং এটাকিং ভার্শন

০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ : বানু কাইনুকা

বানু কাইনুকা ছিলো স্বর্ণকার গোত্র । বদর যুদ্ধের কিছুদিন পরেই তাদের বাজারে এক মুসলিম মেয়ের সাথে এক দোকান কর্মচারীর বান্দরামি থেকে ঘটনার শুরু । গহনার জন্য অপেক্ষার সময় ঐ কর্মচারী মুসলিম মেয়েটির পোশাককে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দিলে, উঠতে গিয়ে তার জামা ছিঁড়ে যায় । এক মুসলিম পথচারী এটা দেখে খেপে গিয়ে ঐ কর্মচারীকে কতল করলে, তার পক্ষের লোকেরা ঐ মুসলিমকে কতল করে । এখান থেকে কতল পাল্টা কতলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু । পরে মোহাম্মদ তার দলবল নিয়া হাজির হৈলে বানু কাইনুকা যুদ্ধে হেরে যায় । তাদের সমস্ত সম্পত্তি গণিমতের মাল হিসেবে মুসলিমরা ভাগ করে নেয় । তাদের অভাবী অবস্থা কেটে যাওয়া শুরু হয় । মোহাম্মদ নিজের জন্য মোট গণিমতের পাঁচ ভাগের একভাগ রাখে ।

এপোলোজেটিক ভার্শন : বানি কাইনুকা অনেকদিন থেকেই মুসলিমদের অপমান এবং উস্কানি দিয়ে আসছিলো । বাজারে ঘটনাটা তারই একটা উদাহরণ মাত্র । তাদের এই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো ।

এটাকিং ভার্শন : অপমান এবং উস্কানি দেয়ার অন্যকোন বর্ণনা নাই । বাজারের ঘটনার পর মোহাম্মদের উচিৎ ছিলো পরিস্থিতি কিভাবে শান্ত করা যায় প্রথমে সেই চিন্তা করা । তা না করে অল-আউট যুদ্ধে নেমে যাওয়াটা তার লোভের পরিচায়ক ।

২ : বানু নাদের

বানু নাদের ছিলো মদীনার বাইরের দিকে বসবাসকারী গোত্র । তাদের মূল ব্যবসা ছিলো খেজুর উৎপাদন । একটা সংঘর্ষে মুসলিম এবং ইহুদি(বানু নাদের গোত্রের) উভয়পক্ষের লোকজনের দ্বারা অন্য গোত্রের দুইজনের খুন হওয়ার ঘটনায় , ক্ষতিপূরণের একটা অংশ বানু নাদেরেরও বহন করা উচিৎ এই দাবী নিয়া মোহাম্মদ তাদের কাছে গেলে ঘটনার সূত্রপাত । বানু নাদের গোত্রের লোকজন মোহাম্মদকে বাইরে রেখে ভিতরে আলোচনা করার জন্য সময় নিয়ে যায় । এমন সময় জীব্রাঈল এসে মোহাম্মদকে খবর দেয়, বানু নাদেরের লোকরা বাড়ির ছাদ থেকে পাথর ফেলে মোহাম্মদকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে । জীব্রাঈল এর বাণী পাওয়ার পর মোহাম্মদ বানু নাদেরের লোকজনের সাথে আর কোন কথা না বলে , নিজের অঞ্চলে ফিরে এসে সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করে । অবরোধের সময়ে বানু নাদেরের খাদ্য সরবরাহের উৎস তাদের খেজুর গাছগুলিকে জ্বালিয়ে দেয় মোহাম্মদের বাহিনী । ফলে চৌদ্দ দিনের মাথায় তারা আত্মসমর্পণ করে । তাদেরকে মদিনা থেকে বিতাড়ণ করা হয়, এবং শর্ত দিয়ে দেয়া হয়, তারা তাদের গায়ে এবং উঠের পিঠে যতটুকু বোঝাই করা যায় এর বেশি কিছু সঙ্গে নিতে পারবে না ।

এপোলোজেটিক ভার্শন : নবীরে হত্যাপ্রচেষ্টা, আর জিব্রাঈলের খবরেতো ভুল হওনের কোন সম্ভাবনা নাই । অতএব ঠিকই আছে , বানু নাদের তাদের প্রাপ্য শাস্তিই পাইছে ।

এটাকিং ভার্শন : যেকেউইতো তাইলে একটা কাল্পনিক দূতের নাম দিয়া যে কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনতে পারে । স্বতঃসিদ্ধই যদি হয় , তাইলে......

৩ : বানু কুরাইজা

বানু কুরাইজার অবস্থান ছিলো খন্দকের যুদ্ধে কাটা খালের পাশে, মদীনার বাইরে । তাদের সাহায্য পাইলেই কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব হৈত খাল পার হয়ে মদীনায় ঢুকা । কুরাইশরা তাদের প্রতিনিধি পাঠায় কুরাইজা গোত্রের লোকজনের কাছে, তাদেরকে খাল অতিক্রমে সাহায্য করার জন্য । কিন্তু কুরাইজার লোকেরা এক অদ্ভূত প্রস্তাব দিয়ে বসে । তারা বলে যদি কুরাইশদের দশজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে জিম্মি হিসাবে বানু কুরাইজার কাছে হস্তান্তর করা হয় তবেই তারা কুরাইশদের সাহায্য করবে । কুরাইশরা এটা মেনে নিতে অস্বীকার করে । ফলঃত খাল অতিক্রম না করতে পেরে তাদের ফিরে যেতে হয় ।

কিন্তু কুরাইশরা ফিরে যাবার পর মোহাম্মদ জিব্রাঈলের মারফতে আল্লার নির্দেশে বানু কুরাইজাকে আক্রমণ করে , বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ দিয়ে । পরে তাদের বন্দী করে , বিচারের ভার দেয়া হয়, তাদেরই গোত্র থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়া একজনকে । তার রায় হয়, সকল গুপ্তকেশ গজানো পর্যন্ত বয়সের পুরুষকে হত্যা করা হোক, এবং নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হোক । মোহাম্মদ তার এই বিচারে খুশি হয়ে সম্মতি দেয় । মদিনার বাজারে গর্ত খুড়ে একদিনে প্রায় সাতশ লোককে কতল করা হয় এবং তাদের নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হয় ।

এপোলোজেটিক ভার্শন : বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাওয়ার জন্য এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য । আর তাছাড়া বিচারতো মোহাম্মদ নিজে করেন্নাই । তাদের গোত্রেরই একজনকে দেয়া হৈছিলো বিচারের ভার ।

এটাকিং ভার্শন : বিশ্বাসঘাতকতা করলেওতো এত বিশাল শাস্তি তাদের প্রাপ্য হৈতে পারে না । সেইখানে কেবল প্রচেষ্টার জন্য ... । আর বিচারক নাইলে নিষ্ঠুর রায় দিলোই, সেইখানে মোহাম্মদের দয়া কোথায় গেলো । আর অন্যের কাছে বিচার তুলে দেয়ার ঢংটাই বা কেনো ।

তথ্যসূত্র : ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুল্লাহ এবং তারিখ-আল-তাবারি
-----------------------------------------------------------------------------
বানু নাদেরের ঘটনা > ইবনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , (অনুবাদ এ.গুলিওম) পৃষ্টা ৪৩৭-৪৩৮

বানু কুরাইজার ঘটনা > বনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , (অনুবাদ এ.গুলিওম) পৃষ্টা ৪৬৪

রেফারেন্স দিলাম ।

বানু কাইনুকার ঘটনাডা ইবনে ইসহাকে বিস্তারিত নাই, ঐটা তাবারিতে আছে । হাতের কাছে তাবারি নাই এখন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৯
১০৬টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×