somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিশাচ সংসার ২ (পর্বঃ ৩)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বের লিংকঃ Click This Link

আমার বড় ছেলে শাফিনের জন্মের চার বছর পর আমার ছোট মেয়ে শিরিনের জন্ম ৷ শাকিলের অপ্রিয় সত্যটা শুধু আমি জানতাম ৷ আর ধীরে ধীরে শাকিল একদম ভালো হয়ে গিয়েছিলো ৷ কিন্তু বিপদ কখনো বলে কয়ে আসেনা ৷ আমার জীবনে আবারো এক অনাকঙ্খিত বিপদ এসেছিলো ৷ যা কেউ জানেনা এমন কি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু লাল মলাটের ডায়েরী, সেও জানেনা ৷ আমার ডায়েরীতে সব লেখা আছে আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিন্তু এটা আমি লিখতে পারিনি কেনো পারিনি জানিনা ৷

শিরিনের বয়স তখন ১৮ দিন মাত্র ৷ ওকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি ৷ শাফিন সেদিন মার বাসায় গিয়েছিলো আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলের জন্মদিনে ৷ মা ই ওকে নিয়ে গেছিলো জোর করে ৷ হঠাৎ শিরিনের কান্নার আওয়াজ আসে কানে জেগে যাই ৷ আর জেগে যা দেখলাম তা আমার কল্পনারও বাহিরে ৷ শাকিল ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলিয়ে শিরিনকে পেচিয়ে ধরে রেখেছে ৷ আমার দম মনে হয় আটকে গিয়েছিলো কারণ শাকিল শিরিনকে ছেড়ে দেয়া মাত্র মেয়েটা ঝুলে পড়বে আর তার পরের সিচুয়েশন ভাবার মতো দুঃসাহস আমার নেই ৷ শিরিন জন্মের সময় নরমাল ডেলীভারী হয় আমার কিন্তু ফরসেপ করতে হয় এমনিও অনেক অসুস্থ ছিলাম ৷ শিরিন আমার পেটে থাকা অবস্থায় প্রথম তিন মাস ভালই ছিলাম কিন্ত পরের চার মাস মনে হতো আমি প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি এতো খারাপ অবস্থা হয়েছিলো ৷ শেষ পর্যন্ত ছ মাস ১৮ দিন প্রায় সাত মাসই বলা যায় তার মাথায় আমার ব্যাথা ওঠে ৷ ছয় বা সাত মাসের বাচ্চা না বাঁচার চান্স থাকে অনেক বাঁচলেও অনেক অসুস্থ হয় এমনটাই জানতাম কিন্তু মেয়ে আমার পুরা স্ট্রংবেবী কোনো প্রবলেম হয়নি ওর কিন্তু আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম ৷

এরকম অবস্থাতে যদি বাবা আর মেয়েকে এই অবস্থায় দেখি কি রকম লাগবে? আমার এতটুকু শক্তিও নেই যে উঠে শাকিলকে আটকাবো ৷ যাও পারতাম কিন্তু চোখের সামনে এরকম ভয়ংকর দৃশ্য দেখে সব শক্তিই হারিয়েছি আমি ৷ আমি শাকিলকে ভালোবাসি বলার সাহসটাও পাচ্ছি না কারণ এটা শুনে ও যদি শিরিনকে ছেড়ে দেয় তাহলেই সর্বনাশ!!!

কিন্তু শাকিল আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছিলো না ৷ আমি সুযোগটা কে হাত ছাড়া করলামনা ৷ ওপরওয়ালার নাম নিয়ে উঠতে চেষ্টা করলাম বিছানা থেকে ৷ আসলেই সন্তানের জন্য মা সব পারে আমিও পারলাম কোনরকমে উঠে শিরিনকে ধরে শাকিলকে ধাক্কা দিলাম আশ্চর্যভাবে শাকিল টলতে টলতে পরে গেলো ৷ আর শিরিনের কান্নাও বন্ধ হয়ে গেলো ৷ সে মুহূর্তে শাকিলের দিকে খেয়াল করার অবস্থা আমার ছিলো না কিন্তু শাকিল আলতোভাবে আমাকে ডাকলো ৷ ওর চোখ মুখ নীল বর্ণের হয়ে গিয়েছিলো আমি শিরিনকে বিছানায় রেখে শাকিলের পাশে পড়ে গেলাম ৷ প্রচুর ব্লিডিং শুরু হলো আমার ৷ শাকিল আমাকে বললো আমার দিকে তাকাবেনা একবারও ৷ আমি চোখ সরালাম কারণ আমি ওকে বিশ্বাষ করি ৷ আমি জানি ও যা ই করুক নিজের ইচ্ছাতে করেনা ৷ ও আমাকে কিছু কথা বললো কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছিলামনা ঠিকমতো ৷ যতটুকু আবছা শুনেছি তা হলো---

" তুমি ঠিক করোনি ৷ আমাকে বিশ্বাষ করা উচিত ছিলো"

এরপর আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলামনা ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ও নিথর হয়ে পরে আছে আমার কিছু বলার বা কাঁদার শক্তিটাও ছিলো না ওর দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা ছিলো না আমার ৷

যখন জ্ঞান ফিরলো আমি হসপিটালে ৷ প্রথম জিগেস করেছিলাম আমার মেয়ে কোথায় মা বললো মেয়ে ভালো আছে ৷
এরপর বললাম শাকিল কোথায়? মা বললো শাকিলকে এতোবার ফোনে ট্রাই করলাম কিন্তু পাচ্ছি না ৷

এরপর আর কখনো আমি আমার শাকিলকে পাইনি ৷ আমি জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত যার হাত ধরে ছিলাম সে কোথায় চলে গেলো?? আমি কাউকে বলতেও পারিনি সেদিন শাকিল আমার সাথেই ছিলো কারণ তাহলে এক সত্য ঢাকতে সবার হাজার প্রশ্নের হাজার মিথ্যে বলতে হবে ৷ আমি কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না শাকিলের এভাবে চলে যাওয়া ৷ ও কি আসলেই চলে গিয়েছিলো নাকি অন্য কিছু হয়েছিলো আমি আজো জানিনা ৷

প্রায়ই রাতে স্বপ্ন দেখতাম শাকিল বলছে আমি আসবো নাদিয়া ৷ কতগুলো বছর ওর অপেক্ষায় কাটালাম আজো ও এলো না ৷ আমি যে কি ভাবে দিন পার করেছি আমি ই জানি ৷ আমি এমন একজন মেয়ে যে কারো সাথেই কিছু শেয়ার করতে পারিনা ৷ কিভাবেই বা করবো??? আমার সংসার জীবন টা তো স্বাভাবিক ছিলো না ছিলো পৈশাচিক ৷ শাকিল আমাকে ওই একবারই আঘাত করেছিলো যেদিন ওর সম্পর্কে আমি জেনেছিলাম ৷ কিন্তু আমার ভালোবাসা সব ঠিক করে দিয়েছিলো ঠিকই তবে আমার মানষিক অশান্তি কখনো দুর হয়নি ৷ সব সময় ভয়ে থাকতাম নিজের জন্য না আবার কারো বিপদ না হয় এই ভয়ে ৷

কিন্তু বিপদের মানুষটাই তো হারিয়ে গেলো ৷ সবাই জানে ও বিমান ক্র্যাশ এ নিখোঁজ ৷ কারণ আমিই বলেছিলাম ও ওর জবের একটা কাজে মালেশিয়া যেতে বিমান ক্র্যাশ করে ৷ আর সবার এতো টাইম নেই যে এটার সত্যতা যাচাই করতে যাবে ৷ সবাই এটা মেনে নিয়েছে কারণ শাকিল এমনিও মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যেতো ৷

কিন্তু আজ এতো বছর পর এভাবে কালো গোলাপ সমেত মার্ডার হচ্ছে আমি তো শিওর হলাম শাফিন নয় ৷ কিন্তু আমাকে খুজতে হবে কে আছে এর পেছনে ৷ তাহলে আমার কাছে অপশান আছে আর দুটো ৷ হয় শাকিল ফেরত এসেছে আর না হয় আমার মেয়ে শিরিন!!!

চলবে....

পরের পর্বের লিংকঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×